Cvoice24.com

শিক্ষক নিয়োগ/
‘পছন্দের প্রার্থীর জন্যই যোগ্যতা শিথিলের সুপারিশ?’

চবি প্রতিনিধি

প্রকাশিত: ১৪:৪৯, ৬ সেপ্টেম্বর ২০২৩
‘পছন্দের প্রার্থীর জন্যই যোগ্যতা শিথিলের সুপারিশ?’

‘নির্দিষ্ট প্রার্থীকে নিয়োগ দিতেই যোগ্যতা শিথিল করার করা বলছে প্রশাসন’— চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের (চবি) ফিজিক্যাল এডুকেশন অ্যান্ড স্পোর্টস সায়েন্স বিভাগে শিক্ষক নিয়োগে যোগ্যতা শিথিলের সুপারিশ করার প্রেক্ষিতে এমন মন্তব্য করেছেন একাধিক সিন্ডিকেট সদস্য।শিক্ষক নিয়োগের নীতিমালা পুনঃনির্ধারণে গঠিত কমিটি এমন সিদ্ধান্ত নিয়েছেন বলে জানা যায়। 

বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক নিয়োগে আবেদনের জন্য অনার্স ও মাস্টার্স পরীক্ষায় অন্তত প্রথম শ্রেণি (৬০ শতাংশ মার্কস) থাকার নিয়ম রয়েছে। অথচ সম্প্রতি চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের (চবি) ফিজিক্যাল এডুকেশন এন্ড স্পোর্টস সাইন্স বিভাগে শিক্ষক নিয়োগে এ নিয়ম শিথিল করে দ্বিতীয় শ্রেণি (সেকেন্ড ক্লাস) করা হয়েছে। এদিকে বিরোধীতা করা সিন্ডিকেট সদস্যদের দাবি, নতুন বিজ্ঞপ্তি নিয়ে ৫ বছর আগের বিজ্ঞপ্তিতে উল্লিখিত যোগ্যতা শিথিল করে দ্বিতীয় শ্রেণি বা বিভাগে উত্তীর্ণ কাউকে শিক্ষক হিসেবে নিয়োগ দেওয়া শিক্ষকতা ও উচ্চশিক্ষার জন্য হুমকি। এমন সিদ্ধান্ত ব্যক্তিস্বার্থ ছাড়া আর কিছুই নয়। তারা বলছেন শিক্ষক নিয়োগের নীতিমালা সম্পর্কিত একটি গুরুত্বপূর্ণ কমিটি এক সদস্যবিশিষ্ট হওয়া অযৌক্তিক।

কর্তৃপক্ষ বলছে, বিশ্ববিদ্যালয়ের নীতিমালা অনুযায়ী শিক্ষক পাওয়া যাচ্ছে না বলে আত্তীকরণের মাধ্যমে একজন শিক্ষক নিয়োগ দেওয়া হবে শিথিল করা যোগ্যতার ভিত্তিতে।

বিশ্ববিদ্যালয় সূত্রে জানা যায়, প্রভাষক পদে তিনজন শিক্ষক নিয়োগের জন্য ২০১৮ সালে বিজ্ঞপ্তি প্রকাশ করে বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ। এতে উল্লেখ করা হয়, গ্রেডিং পদ্ধতিতে উত্তীর্ণ প্রার্থীদের ক্ষেত্রে এসএসসি এবং এইচএসসি (সমমান) পরীক্ষায় আলাদাভাবে নূন্যতম জিপিএ ৩.০০ অথবা দুটি পরীক্ষায় মোট নূন্যতম ৭.০০ থাকতে হবে।

অনার্স ও মাস্টার্স ডিগ্রিতে পুরোনো গ্রেডিং পদ্ধতিতে উত্তীর্ণ প্রার্থীদের ক্ষেত্রে ন্যূনতম সিজিপিএ একটিতে ৩.৫০ ও অন্যটিতে ৩.৩০ থাকতে হবে। অথবা বর্তমান পদ্ধতিতে উত্তীর্ণ প্রার্থীদের ক্ষেত্রে স্নাতক এবং স্নাতকোত্তরের একটিতে ন্যূনতম সিজিপিএ ৩.৫০ এবং অন্যটিতে ৩.৪০ থাকতে হবে বলে উল্লেখ করা হয়েছিল। তবে বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ নতুন বিজ্ঞপ্তি না দিয়েই বলছে, নীতিমালা অনুযায়ী শিক্ষক পাওয়া যাচ্ছে না।

শিক্ষক নিয়োগ শাখার ডেপুটি রেজিস্ট্রার মো. হাছান মিয়া বলেন, ২০১৮ সালে যখন স্পোর্টস সায়েন্স বিভাগে শিক্ষক নিয়োগ বিজ্ঞপ্তি দেয়া হয়, তখন ৪-৫ জন প্রার্থী আমরা পেয়েছিলাম। কিন্তু তাদের মাস্টার্সের রেজাল্ট প্রকাশ হতে হতে আমাদের আবেদনের সময় শেষ হয়ে যায়। ফলে আর শিক্ষক নিয়োগ দেয়া সম্ভব হয়নি। এরপর আর কোনো বিজ্ঞপ্তি দেওয়া হয়নি। 

সংশ্লিষ্টরা জানান, বর্তমান উপাচার্যের দায়িত্ব গ্রহণ করার চতুর্থ বর্ষে চলতি বছরের ৪ মার্চ বিশ্ববিদ্যালয়ের ৫৪৩তম সিন্ডিকেট এক সদস্যের একটি কমিটি অনুমোদন করে। এতে আইন বিভাগের অধ্যাপক ড. আবদুল্লাহ আল ফারুককে নিয়োগ দেওয়া হয়। সর্বশেষ অনুষ্ঠিত ৫৪৪তম সিন্ডিকেটে তিনি যোগ্যতা শিথিল করে নীতিমালা পুননির্ধারণের সুপারিশ করেন।

বিভাগে কর্মরত কর্মকর্তাদের আত্মীকরণের মাধ্যমে শিক্ষক হিসেবে নিয়োগসহ প্রভাষক পদে নিয়োগের যোগ্যতা শিথিল করা হয়েছে। এছাড়াও সুনির্দিষ্টভাবে উল্লেখ করা হয়নি সিজিপিএ অথবা গ্রেড, যা ২০১৮ সালের বিজ্ঞাপ্তিতে সুস্পষ্ট ছিল। এ নিয়ে একাধিক সিন্ডিকেট সদস্য বিরোধিতা করেছেন এবং শিক্ষক মহলে শুরু হয়েছে বিরূপ প্রতিক্রিয়া।

বিভাগে কর্মরত কর্মকর্তাদের আত্তীকরণের মাধ্যমে শিক্ষক হিসেবে নিয়োগসহ প্রভাষক পদে নিয়োগের যোগ্যতা শিথিল করা হয়েছে। এছাড়া সুনির্দিষ্টভাবে উল্লেখ করা হয়নি সিজিপিএ অথবা গ্রেড, যা ২০১৮ সালের বিজ্ঞাপ্তিতে সুস্পষ্ট ছিল। এ নিয়ে একাধিক সিন্ডিকেট সদস্য বিরোধিতা করেছেন এবং শিক্ষক মহলে শুরু হয়েছে বিরূপ প্রতিক্রিয়া।

কী আছে সুপারিশে?

সুপারিশে বলা হয়েছে, পুরোনো ডিভিশন পদ্ধতিতে উত্তীর্ণ প্রার্থীদের ক্ষেত্রে অনার্স ও মাস্টার্স ডিগ্রিতে কমপক্ষে দ্বিতীয় বিভাগ থাকতে হবে। তাছাড়া স্বীকৃত কোন শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান বা বিশ্ববিদ্যালয় হতে থাকতে হবে প্রথম বিভাগসহ বিপিএড এবং এমপিএড ডিগ্রি।

এতে আরও বলা হয়েছে, চবি শারীরিক শিক্ষা বিভাগে বর্তমানে কর্মরত উপরোক্ত যোগ্যতাসম্পন্ন কর্মকর্তা যাদের ফিজিক্যাল এডুকেশন এন্ড স্পোর্টস সায়েন্স বিভাগের বিভিন্ন তত্ত্বীয় ও ব্যবহারিক কোর্সে খন্ডকালীন শিক্ষক হিসেবে পাঠদানের অভিজ্ঞতা রয়েছে, তাদেরকে বর্তমান পদমর্যাদা ও অন্যান্য যোগ্যতাকে যথাযোগ্য পদে রূপান্তরপূর্বক নিয়োগ বা আত্মীকরণ করা যেতে পারে।

এক্ষেত্রে তাদের বর্তমান বেতন স্কেল (গ্রেড) ও মূল বেতন ব্যক্তিগত ক্ষেল ও বেতন হিসেবে বহাল রাখা যেতে পারে। এছাড়াও অনির্দিষ্টভাবে জীবনের দুটি স্তরে প্রথম শ্রেণি থাকলে প্রভাষক পদে আবেদনে যোগ্য হবে বলা হয়েছে।

সুপারিশে আরও বলা হয়, বিভাগ সংশ্লিষ্ট বিভিন্ন তত্ত্বীয় ও ব্যবহারিক কোর্সে খন্ডকালীন শিক্ষক হিসেবে একাধিকক্রমে কমপক্ষে ৫ (পাঁচ বছর) পাঠদানের অভিজ্ঞতা রয়েছে এবং সংশ্লিষ্ট বিষয়ে উচ্চতর ডিগ্রি (এমফিল/পিইচডি) রয়েছে, কিন্তু শিক্ষাজীবনের যে কোন স্তরে দু'টি প্রথম শ্রেণি/বিভাগ রয়েছে, তারা প্রভাষক পদে আবেদনের জন্য যোগ্য হিসেবে বিবেচিত হবেন।

বিরোধীতাকারী সিন্ডিকেট সদস্যরা যা বলেন

এ বিষয়ে  সিন্ডিকেট সদস্য মোহাম্মদ আলী বলেন, আমরা শিক্ষকদের নির্বাচিত প্রতিনিধি হিসেবে ৫৪৪তম সিন্ডিকেটে প্রথম অংশগ্রহণ করেছি। এর আগে সিন্ডিকেটে কোনো শিক্ষক প্রতিনিধি ছিলেন না। সে সময় এক সদস্যের এ কমিটিকে অনুমোদন দেয় সিন্ডিকেট। একজনের কমিটির এ নীতিমালা খুবই অদ্ভূত।

আরেক সিন্ডিকেট সদস্য ড. নঈম হাছান আওরঙ্গজেব চৌধুরী বলেন, এক্ষেত্রে একাধিক শিক্ষকের সমন্বয়ে একটি প্রতিনিধিত্বশীল কমিটি গঠন করে সিদ্ধান্ত নেওয়া দরকার ছিল।

সিন্ডিকেট সদস্য ড. নঈম হাছান আওরঙ্গজেব চৌধুরী বলেন, অন্যান্য বিশ্ববিদ্যালয় থেকে ইতোমধ্যে অনেকেই স্নাতক এবং স্নাতকোত্তর সম্পূর্ণ করে বেরিয়েছেন। পুনরায় বিজ্ঞাপন দিলে যোগ্য শিক্ষক পাবো বলে আমার বিশ্বাস।

সর্বশেষ

পাঠকপ্রিয়