এক হওয়ার ‘সময় হয়নি’ তিনজনের

সিভয়েস২৪ প্রতিবেদক

প্রকাশিত: ১০:১১, ৪ মে ২০২৪
এক হওয়ার ‘সময় হয়নি’ তিনজনের

চট্টগ্রাম শিক্ষাবোর্ডের বর্তমান সচিব ও সাবেক পরীক্ষা নিয়ন্ত্রক অধ্যাপক নারায়ণ চন্দ্র নাথের বিরুদ্ধে উঠা ফল জালিয়াতির অভিযোগ তদন্তের জন্য ‘এক’ হতে পারছেন না তদন্ত কমিটির কর্মকর্তারা। মন্ত্রণালয় থেকে ১৫ কার্যদিবসের সময় বেঁধে দিলেও এখনো তদন্তই শুরু করতে পারেনি তদন্ত কমিটি। কারণ হিসেবে নিজেদের নানারকম ‘ব্যস্ততায়’ ‘এক’ হতে না পারার কথা বলছেন তাঁরা।

অথচ মাউশির নির্দেশনা অনুযায়ী আরও ১০দিন আগেই শেষ হয়েছে তদন্ত প্রতিবেদন জমা দেওয়ার সময়। বারবার সময় বেঁধে দেওয়ার পরেও তদন্ত শুরু না হওয়ায় উদ্বেগ প্রকাশ করছেন বোর্ডসংশ্লিষ্টরা। 

তদন্ত শুরু না হওয়ার কারণ জানতে চাইলে তদন্ত কমিটির আহ্বায়ক ও মাধ্যমিক ও উচ্চ শিক্ষা অধিদপ্তরের (মাউশি) মনিটরিং অ্যান্ড ইভালুয়েশান উইংয়ের পরিচালক অধ্যাপক মো. আমির হোসেন সিভয়েস২৪কে বলেন, ‘এই সময়ের ভেতর আমাদের অনেক কাজ জমে গেছে, আমার পারিবারিক একটু ব্যস্ততা আছে আর আমার সাথে যারা আছে এদেরকেও একসাথে করা খুব কঠিন হচ্ছে। কেউ ট্রেনিংয়ে এটা সেটা কারণে হচ্ছে না। আমরা অচিরেই করবো। দুই একদিনের মধ্যে ডেইট ঠিক করে যেতে পারি।’

অন্য কোন কারণ নেই ব্যস্ততাই মূল কারণ জানিয়ে তদন্ত কমিটির এ সদস্য বলেন, ‘এটার অন্য কোনো কারণ নাই। আমাদের ব্যস্ততাই মূল কারণ। ঈদ পরবর্তীতে অনেকগুলো কাজ পড়ে গেছে। একেক জনে একেক কাজে ব্যস্ত। তিনজনে একত্রে সময় পাচ্ছি না। আমরা সর্বাত্মক চেষ্টা করবো সুষ্ঠু তদন্ত করতে।’ 

এদিকে, গত ১ এপ্রিল মাধ্যমিক ও উচ্চ শিক্ষা অধিদপ্তরের (মাউশি) মহাপরিচালক অধ্যাপক নেহাল আহমেদকে চিঠি পাঠায় মন্ত্রণালয়ের মাধ্যমিক ও উচ্চ শিক্ষা বিভাগের শৃঙ্খলা বিষয়ক শাখার উপ-সচিব মো. শাহীনুর ইসলাম। ওই চিঠিতে 'চট্টগ্রাম শিক্ষা বোর্ডের বর্তমান সচিব ও সাবেক পরীক্ষা নিয়ন্ত্রকের বিরুদ্ধে আনীত অভিযোগের বিষয়ে উপযুক্ত কর্মকর্তা দ্বারা ১৫ কার্যদিবসের মধ্যে তদন্তপূর্বক সুস্পষ্ট মতামতসহ প্রতিবেদন দাখিল করতে নির্দেশ দেওয়া হয়।' পরবর্তীতে মন্ত্রণালয় থেকে নির্দেশনার ১৬ দিন পর গত ১৭ এপ্রিল তিন সদস্যের কমিটি গঠন করে মাধ্যমিক ও উচ্চ শিক্ষা অধিদপ্তর (মাউশি)।

তদন্ত কমিটির বাকি দুই সদস্য হলেন— মাউশি ঢাকা অঞ্চলের সহকারী পরিচালক (এইচআরএম) আশেকুল হক ও সিনিয়র সিস্টেম অ্যানালিস্ট (ইএমআইএস সেল) খন্দকার আজিজুর রহমান। 

এ বিষয়ে ক্ষোভ প্রকাশ করে বোর্ডের সাবেক এক কর্মকর্তা বলেন, ‘মাউশি থেকে তদন্ত কমিটিকে সময় দিয়েছিলো ৭ কর্মদিবস। মন্ত্রী পরিষদ বিভাগ বলেছিলো ১৫ কর্মদিবসের মধ্যে জানাতে। সবার দাবি ছিলো (সচিব নারায়ণ চন্দ্র নাথ) প্রত্যাহার করে তদন্ত করার। কিন্তু প্রত্যাহার দূরে থাক তদন্তই শুরুই হয় নি। জালিয়াতির অসংখ্য প্রমাণ থাকার পরেও এখনো বহাল আছে দায়িত্বে। কয়দিন আগে অডিও ফাঁস হয়েছে। এরপরেও কোনো ব্যবস্থা নেয়নি মন্ত্রণালয়। চট্টগ্রাম শিক্ষাবোর্ডকে লুটেপুটে শেষ করে দিয়েছে এই সিন্ডিকেট।’ 

জানা গেছে, চট্টগ্রাম ক্যান্টনমেন্ট পাবলিক কলেজ থেকে ২০২৩ সালের এইচএসসি পরীক্ষায় অংশ নিয়েছিল সাবেক পরীক্ষা নিয়ন্ত্রক ও বোর্ড সচিব অধ্যাপক নারায়ণ চন্দ্র নাথের ছেলে। প্রভাব খাটিয়ে ছেলেকে পাশ করিয়েছেন, এমন সন্দেহে উত্তরপত্র পুনঃনিরীক্ষণের আবেদন জানিয়েছেন অজ্ঞাত এক ব্যক্তি। সে সময় রহস্য উন্মোচনে তদন্ত এবং প্রভাবমুক্ত পুনঃনিরীক্ষণের দাবি জানিয়েছেন শিক্ষাবিদেরা। কিন্তু সেটিও একসময় ধামাচাপা পড়ে যায়। পুনঃনিরীক্ষণ থামাতে গত ৫ নভেম্বর নগরের পাঁচলাইশ থানায় জিডি করেন বোর্ড সচিব নারায়ণ চন্দ্র নাথের স্ত্রী বনশ্রী নাথ। 

পরবর্তীতে চলতি বছরের ২৫ জানুয়ারি চট্টগ্রাম শিক্ষা বোর্ডের সাবেক সচিব অধ্যাপক আব্দুল আলীম ও অধ্যাপক ইদ্রিস আলীর বিরুদ্ধে সাইবার নিরাপত্তা আইনে প্রতারণা, কম্পিউটারে বেআইনি প্রবেশসহ গণমাধ্যম ও সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে বক্তব্য দেওয়ার অভিযোগে ডিজিটাল নিরাপত্তা আইনে মামলা করেছেন নারায়ণ চন্দ্র নাথের স্ত্রী বনশ্রী নাথ। ট্রাইব্যুনাল অভিযোগ গ্রহণ করে পুলিশের কাউন্টার টেরোরিজমকে মামলাটি তদন্তের নির্দেশ দিয়েছেন।

প্রসঙ্গত, বাংলাদেশ মুক্তি সংগ্রাম ও মুক্তিযুদ্ধ গবেষণা কেন্দ্র ট্রাস্ট, চট্টগ্রামের চেয়ারম্যান বীর মুক্তিযোদ্ধা ডা. মাহফুজুর রহমান (বিএলএফ কমান্ডার) অধ্যাপক নারায়ন চন্দ্র নাথের বিরুদ্ধে শিক্ষামন্ত্রণালয়ে ফল জালিয়াতির অভিযোগ করেন। সেই অভিযোগের প্রেক্ষিতে মাউশিকে সচিবের ফল জালিয়াতির অভিযোগ তদন্ত করার নির্দেশ দেয় মন্ত্রণালয়।

সিভয়েস/এসআর

 

সর্বশেষ

পাঠকপ্রিয়