Cvoice24.com

মশারি টাঙায়নি চট্টগ্রামে ডেঙ্গু আক্রান্ত ৪০ শতাংশ রোগী

সিভয়েস প্রতিবেদক

প্রকাশিত: ১৯:৫২, ১৫ নভেম্বর ২০২৩
মশারি টাঙায়নি চট্টগ্রামে ডেঙ্গু আক্রান্ত ৪০ শতাংশ রোগী

মশারি টাঙানোর উদাসীনতাই কাল হয়েছে চট্টগ্রামে ডেঙ্গু আক্রান্ত ৪০ শতাংশ রোগীর জন্য। সম্প্রতি এক গবেষণায় এসব তথ্য উঠে এসেছে, আক্রান্ত হওয়ার আগে কখনোই মশারি টাঙায়নি এসব রোগী। 

শুধু তাই নয়, ডেঙ্গুর মূল কারণ মশা এটিও জানেন না আক্রান্ত ২০ ভাগ মানুষ।  জমাটবাধা পানি থাকলে সেখানে ডেঙ্গু মশার বিস্তার বাড়ে এই তথ্যও জানা নেই ১৫ ভাগ মানুষের।

গবেষণা প্রতিষ্ঠান এসপেরিয়া হেলথ রিসার্চ অ্যান্ড ডেভেলপমেন্ট ফাউন্ডেশন বলছে, চট্টগ্রামের ৬০ ভাগ ডেঙ্গু রোগীর আবাসস্থল নগরের পাঁচটি এলাকায়। যা গবেষকেরা হটস্পট হিসেবে চিহ্নিত করেছেন। এলাকাগুলো হলো— বাকলিয়া, চকবাজার, কোতোয়ালি, ডবলমুরিং এবং বায়েজিদ বোস্তামী এলাকা। এছাড়া গ্রামাঞ্চলের মধ্যে সীতাকুণ্ড, হাটহাজারী, পটিয়া এবং কর্ণফুলী এলাকা থেকে সবচেয়ে বেশি রোগী পাওয়া গেছে। রোগীদের মাঝে দেখা গেছে সচেতনতার অভাব এবং আক্রান্তদের ৫ ভাগের আগেও ডেঙ্গু হয়েছিল।

এবছর চট্টগ্রামে ডেঙ্গুতে আক্রান্তদের মধ্যে প্রতি পাঁচজনের একজন ছিল শিশু। আক্রান্তদের ৬৫ ভাগ পুরুষ হলেও নারী ও শিশুমৃত্যু বেশি হয়েছে। ডেঙ্গুতে ভোগা ৭৫ ভাগ রোগীই ডেন–২ সেরোটাইপ ধরনের মাধ্যমে আক্রান্ত হয়েছেন। আর ১১ শতাংশ মানুষ ডেন-১ সেরোটাইপ এবং ১৪ শতাংশ মানুষ ডেন-৩ সেরোটাইপে আক্রান্ত। 

গবেষকরা জানান, চট্টগ্রামের ৯৯ শতাংশ রোগীর মধ্যে ডেঙ্গু সংক্রমণের পর জ্বরের প্রাধান্য দেখা গেছে। তবে শিশুদের ক্ষেত্রে শতভাগ রোগীর মাঝেই জ্বরের লক্ষণ ছিল। এ ছাড়া স্বল্পশিক্ষিত মানুষের মধ্যে ডেঙ্গুর প্রকোপ বেশি দেখা যায়। পঞ্চম শ্রেণির বেশি পড়াশোনা করেননি—এমন ডেঙ্গু রোগী ছিল চট্টগ্রামে ৪৫ শতাংশ। তাছাড়া চট্টগ্রামের যাদের মধ্যে সেরোটাইপ ১ পাওয়া গেছে তাদের মধ্যে ৭০ ভাগ ছিল শিশু। চট্টগ্রামের ডেঙ্গু আক্রান্ত শিশু শহর এলাকায় বেশী, শিশুদের মধ্যে ৭০ ভাগ এসেছে শহরের বিভিন্ন প্রান্ত থেকে। শহর ও গ্রাম উভয় জায়গাতেই প্রাপ্তবয়স্ক মানুষদের মধ্যে ডেঙ্গু সেরোটাইপ ২ বেশী দেখা গিয়েছে যা প্রায় ৭৫ ভাগ।

এসপেরিয়া হেলথ রিসার্চ অ্যান্ড ডেভেলপমেন্ট ফাউন্ডেশনের তত্ত্বাবধানে সম্প্রতি চট্টগ্রামের ছয়টি প্রতিষ্ঠানের গবেষকেরা যৌথভাবে এই গবেষণা করেন। চলতি বছরের জুলাই থেকে নভেম্বর পর্যন্ত চার মাস ধরে ডেঙ্গুতে আক্রান্ত চট্টগ্রামের ১ হাজার ৫৫০ জন রোগীকে নিয়ে গবেষণাটি করা হয়। রোগীদের রোগতত্ত্ব, জিনগত প্রভাব, ভাইরাসের ধরন, জিনোমের প্রকরণ উঠে এসেছে এই গবেষণায়। 

এ গবেষক দলের প্রধান ছিলেন চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজের মেডিসিন বিভাগের প্রধান অধ্যাপক এম এ সাত্তার। গবেষণার পরিচালক হিসেবে ছিলেন এসপেরিয়ার পরিচালক এবং চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজের মেডিসিন বিভাগের সহযোগী অধ্যাপক আবদুর রব। আরও ছিলেন চমেকের সহকারী অধ্যাপক নূর উদ্দিন মোহাম্মদ ফয়সাল এবং চট্টগ্রাম জেনারেল হসপিটালের কনসালট্যান্ট এইচ এম হামিদুল্লাহ মেহেদী। সহ–প্রধান গবেষক হিসেবে ছিলেন চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের জেনেটিক ইঞ্জিনিয়ারিং এবং বায়োটেকনোলজি বিভাগের অধ্যাপক আদনান মান্নান এবং আইসিডিডিআরবি‘র বিজ্ঞানী ড. মুস্তাফিজুর রহমান।

এছাড়াও সহগবেষক হিসেবে ছিলেন চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজের ডা. মারুফুল কাদের, ডা. নূর মোহাম্মদ ও ডা. হামিদ হোসেন সাগর, বিআইটিআইডির ল্যাব ইনচার্জ ডা. জাকির হোসেন, ফটিকছড়ি হেলথ কমপ্লেক্সের ডাঃ ইমরুল কায়সার, চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের জেনেটিক ইঞ্জিনিয়ারিং এবং বায়োটেকনোলজী বিভাগের শিক্ষক মহব্বত হোসেন ও আফরোজা আক্তার তন্বী, চট্টগ্রাম জেনারেল হাসপাতালের ডা.তারেকুল মজিদ এবং গবেষণাগারে কাজটি পরিচালনা করেন ইশতিয়াক উদ্দিন আহমেদ ও  কল্যাণ চাকমা, তানজিনা আক্তার, ইসমাইল আল রশিদ। 

এ বিষয়ে সহ–প্রধান গবেষক আদনান মান্নান বলেন, পুরো গবেষণার সমন্বয় ও তত্ত্বাবধানে ছিল স্বাস্থ্যবিষয়ক গবেষণা প্রতিষ্ঠান এসপেরিয়া হেলথ রিসার্চ অ্যান্ড ডেভেলপমেন্ট ফাউন্ডেশন। গবেষণার সময়কাল ছিল জুলাই থেকে নভেম্বরের দ্বিতীয় সপ্তাহ পর্যন্ত। গবেষকেরা মনে করেন হটস্পট চিহ্নিত জায়গায় পানি জমাট হয়ে থাকা এবং জলাবদ্ধতা নিরসনে দ্রুত পদক্ষেপ নেওয়া উচিত।  

প্রসঙ্গত, এবছর চট্টগ্রামে ডেঙ্গুতে ৯৬ জন মারা গেছেন, এর মধ্যে পুরুষ রয়েছেন ৩০ জন। ৩১ জন নারী ও ৩৫ জন শিশু। মোট আক্রান্ত হয়েছেন ১৩ হাজার ২১৮ জন। তার মধ্যে পুরুষ ৬ হাজার ২১০ জন।

সিভয়েস/এসআর/এএস

সর্বশেষ

পাঠকপ্রিয়

আরো পড়ুন