কারবার নিয়ে কাড়াকাড়ি, আলকরণে মারামারি

সিভয়েস২৪ প্রতিবেদক

প্রকাশিত: ০১:৫৮, ৩ মে ২০২৪
কারবার নিয়ে কাড়াকাড়ি, আলকরণে মারামারি

নগরের কোতোয়ালী থানার আলকরণ এলাকায় দুই কিশোর গ্যাং গ্রুপের মধ্যে দুই দফা সংঘর্ষের ঘটনা ঘটেছে। এ সময় আহত হয়েছেন কাউন্সিলরের সহকারী। এছাড়া, ভাঙচুর করা হয়েছে একাধিক দোকানপাট। 

তবে, দুইদিনে দুই দফায় এতসব ঘটনা ঘটলেও পুলিশ বলছে— সংঘর্ষ নয়, ঘটেছে ‘ধাওয়া-পাল্টাধাওয়ার’ ঘটনা। এমনকি তাদের কাছে তথ্য নেই হতাহতেরও। 

সবশেষ, বৃহস্পতিবার (২ মে) রাত সাড়ে ৯টার দিকে আলকরণ দুই নম্বর গলিতে ঘটে সংঘর্ষের ঘটনা। ঘটনার পরপরই কোতোয়ালী এবং সদরঘাট থানা পুলিশের টিম ঘটনাস্থলে গিয়ে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনে। 

জানা গেছে, আহত ওই ব্যক্তির নাম মো. সালাউদ্দিন। তিনি চট্টগ্রাম সিটি করপোরেশনের ৩৩ নম্বর ওয়ার্ড কাউন্সিলর হাসান মুরাদ বিপ্লবের সহকারী হিসেবে কাজ করেন। বর্তমানে তিনি চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের ২৮ নম্বর নিউরোসার্জারি ওয়ার্ডে ভর্তি আছেন। 

অনুসন্ধানে জানা গেছে, অভয়মিত্র ঘাট ও ব্রিজঘাটে বিভিন্ন জাহাজ থেকে স্ক্র‍্যাপ আনলোডের সময় অনেক স্ক্র‍্যাপ পানিতে পড়ে যায়। সেই স্ক্র‍্যাপ পানি থেকে তুলে বিক্রি করা হয় বিভিন্ন ভাঙারিদের কাছে। আর এই স্ক্র‍্যাপ তুলতে সেখানে সক্রিয় রয়েছে কমপক্ষে তিন থেকে পাঁচটি সিন্ডিকেট। স্থানীয় থানা পুলিশও ‘কমিশন’ নেয় সেখান থেকে। 

একটি সূত্র বলছে, মূলত জাহাজের স্ক্র‍্যাপ বিক্রি নিয়ে আলকরণ ওয়ার্ডের ৩ নম্বর গলির অভির সাথে ২ নম্বর গলির আকাশের দীর্ঘদিন ধরে চলে আসছিলো দ্বন্দ্ব।  সবশেষ, গত বুধবার (১ মে) বিকেলে অভির সাথে আকাশের কথা-কাটাকাটি হয়৷ অভির বন্ধু ফিরিঙ্গিবাজারের চেয়ারম্যান ঘাট এলাকার কিশোর গ্যাং নেতা ডোম আসিফ। অভির পক্ষ হয়েই একইদিন ডোম আসিফ তার গ্যাং সদস্যদের নিয়ে তাণ্ডব চালিয়েছেন আলকরণে। 

স্থানীয়রা জানান, কিশোর গ্যাং লিডার ডোম আসিফ বুধবার রাতে গ্রুপের প্রায় ১০০ জন কিশোর ফিরিঙ্গিবাজার থেকে আলকরণ গিয়ে সশস্ত্র মহড়া দেয়। এ সময় তারা আলকরণ মসজিদ হয়ে চক্রবর্তী কলোনির ১১ তলায় গিয়ে বিভিন্ন দোকানপাট ভাঙচুর করে। এছাড়া, কমিউনিটি সেন্টারের সামনে একটি সিএনজিতেও ভাঙচুর চালায়।  

জানা গেছে, বৃহস্পতিবার (২ মে) রাত সাড়ে ৯টার দিকে আবারও ডোম আসিফ গ্যাং আলকরণ এলাকায় অস্ত্রশস্ত্র নিয়ে তাণ্ডব চালায়। তারা আনসার গলির সামনের কয়েকটি দোকানেও ভাঙচুর চালায়৷ খবর পেয়ে ৩৩ নম্বর ফিরিঙ্গিবাজার ওয়ার্ড কাউন্সিলর এবং ৩১ নম্বর ওয়ার্ড কাউন্সিলর আবদুস সালাম মাসুম উপস্থিত হন ঘটনাস্থলে। তাদেরকে নিবৃত্ত করার চেষ্টা চালালে গ্যাং সদস্যরা হামলা চালায় কাউন্সিলর হাসান মুরাদের সহকারী সালাউদ্দিনের ওপর। এতে তিনি মাথায় গুরুতর আঘাতপ্রাপ্ত হন।

চট্টগ্রাম সিটি করপোরেশনের (চসিক) ৩১ নম্বর আলকরণ ওয়ার্ডের কাউন্সিলর আবদুস সালাম মাসুম সিভয়েস২৪-কে বলেন, ‘আজ দুই-তিন ধরে এই ঘটনা নিয়ে আমরা খুব বিরক্ত। যতটুকু জেনেছি, আলকরণ ৩ নম্বর গলির একটি ছেলের সাথে ২ নম্বর গলির একটি ছেলের অনেকদিন ধরে রেশারেশি হচ্ছে। ঘটনার সূত্রপাত অভয়মিত্র ঘাট এবং চেয়ারম্যান ঘাটে জাহাজের মালামাল চুরি বা বেচাবিক্রি সংক্রান্ত ঘটনা। এগুলো নিয়ে ডোম আসিফ নামে একটা ছেলে তার গ্যাং নিয়ে ফিরিঙ্গিবাজার এলাকা থেকে আমার এলাকায় (আলকরণ) চলে আসছে। এই ঘটনার সাথে আমার এলাকারও আকাশ নামে একটি ছেলে জড়িত আছে।’

এদের রাজনৈতিক পরিচয় জানতে চাইলে তিনি বলেন, ‘এদের কোনো রাজনৈতিক পরিচয় নেই৷ এদের স্থানীয় নেতারাও পছন্দ করে না। ফিরিঙ্গিবাজার ওয়ার্ড কাউন্সিলর বিপ্লব ভাইয়ের সহকারী মারাত্মক আহত হয়েছেন। তিনি চট্টগ্রাম মেডিকেলে ভর্তি।’

জানতে চাইলে ৩৩ নম্বর ফিরিঙ্গিবাজার ওয়ার্ডের কাউন্সিলর হাসান মুরাদ বিপ্লব সিভয়েস২৪-কে বলেন, ‘‘এই ঘটনার সূত্রপাত গত পরশু থেকে। ব্রিজঘাট এলাকায় মূল ঘটনার সূত্রপাত। গতকালও (বুধবার) বহিরাগত সন্ত্রাসীরা এসে কিরিচসহ ধারালো অস্ত্রশস্ত্র নিয়ে দৌঁড়ঝাপ করছে। আজকেও একই ঘটনা।’

‘আমরা একটি মেজবানের দাওয়াতে ছিলাম। সেখান থেকে এই ঘটনা শুনে ছুটে আসছি আলকরণে। আমার সাথে সবসময় সালাউদ্দিন নামে একজন থাকে। তাকে মারধর করে গুরুতর আহত করেছে। মাথায় আঘাত পেয়ে সে এখন চট্টগ্রাম মেডিকেলে ভর্তি আছে।’ যোগ করেন তিনি।

বৃহস্পতিবারের ঘটনার বিবরণ দিয়ে এই কাউন্সিলর আরও বলেন, ‘মেজবান থেকে খবর পেয়েই আমি সালাউদ্দিনসহ ছুটে যাই। ওরা দা, ছুরি, কিরিচ নিয়ে এসেছিলো। আমার সামনেই ওরা সালাউদ্দিনের ওপর হামলা করেছে।’

ঘটনাস্থলে যাওয়া সদরঘাট থানার সহকারী উপপরিদর্শক (এএসআই) মাহিন উদ্দিন বলেন, ‘এখানে দুই গ্রুপ পাল্টাপাল্টি অবস্থান নিয়েছিলো। ঘটনার বিষয়ে বিস্তারিত কিছুই জানি না। তবে এখন আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি স্বাভাবিক।’

সদরঘাট থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মোহাম্মদ ফেরদৌস জাহান সিভয়েস২৪-কে বলেন, ‘ঘটনাটি মূলত কোতোয়ালী থানার অংশে ঘটেছে। যেহেতু রাস্তার একপাশ যেহেতু সদরঘাট থানার অধীনে তাই সেখানে ফোর্স পাঠানো হয়েছে। যাতে ওই ঘটনার কোনো প্রভাব আমার থানা এলাকায় না পড়ে।’ 

এক প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, ‘ধাওয়া পাল্টা-ধাওয়া যা ঘটেছে সব কোতোয়ালী থানা এলাকায়। এ বিষয়ে কোতোয়ালী থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা ভালো বলতে পারবেন। আমাদের কাছে বিস্তারিত তথ্য নেই।’

জানতে চাইলে কোতোয়ালী থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) এস.এম. ওবায়েদুল হক সিভয়েস২৪-কে বলেন, ‘ওখানে দুই গ্রুপের মধ্যে ধাওয়া-পাল্টা ধাওয়ার ঘটনা ঘটেছে।’

কী সংক্রান্ত বিষয়ে এমন ঘটনা— জানতে চাইলে তিনি বলেন, ‘আমি যতটুকু গতকাল (বুধবার) জানতে পেরেছি একটা মেয়ে সংক্রান্ত বিষয় নিয়ে। যদিও এটা শোনা কথা। এখন পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে চলে এসেছে। আমরা আইনশৃঙ্খলা নিয়ন্ত্রণে পর্যাপ্ত ব্যবস্থাও নিয়েছি সেখানে। আমরা কঠিন অ্যাকশনে যাচ্ছি। দ্বিতীয়বার এমন ঘটনা ঘটবে না।’

তবে, এ ঘটনায় কোনো হতাহতের ঘটনা ঘটেনি এবং কেউ এখন পর্যন্ত অভিযোগ করেনি বলেও জানিয়েছেন ওসি ওবায়েদুল হক।

সর্বশেষ

পাঠকপ্রিয়