এবার বোরো ধানের বেশি আবাদ, বেশি ফলন

দেবাশীষ চক্রবর্তী, সিভয়েস২৪

প্রকাশিত: ১০:৩৫, ৯ মে ২০২৪
এবার বোরো ধানের বেশি আবাদ, বেশি ফলন

চট্টগ্রামে এবার বোরো ধানের আবাদ বেড়েছে। নানা প্রতিকূলতার মধ্যেও পর্যাপ্ত সেচ ব্যবস্থার কারণে লক্ষ্যমাত্রাকেও ছাড়িয়ে গেছে ফলন। ইতোমধ্যে ফলন ঘরে তুলতে শুরু করেছেন চাষীরা। কৃষি অধিদপ্তরের তথ্যমতে চট্টগ্রাম অঞ্চলে এবার বোরোর আবাদ হয়েছে ২ লাখ ৯১ হাজার ৫৩ হেক্টর জমিতে। এর মধ্যে এ পর্যন্ত ৬ লাখ ৬২ হাজার ১শ ১৮ মেট্রিক টন ফসল কৃষকের ঘরে উঠেছে। 

আগামী মে মাসের মাঝামাঝি সময়ে যার পরিমাণ ১৪ লাখ মেট্রিক টন অতিক্রম করার সম্ভাবনা আছে বলে মনে করছে কৃষি বিভাগ। তবে হঠাৎ কালবৈশাখীর ঝড়ে কিছু জমির ফলন ক্ষতিগ্রস্ত হতে পারে, আগামী দুয়েকদিনের মধ্যে তা নিরুপণ করা হবে বলে জানিয়েছেন কর্মকর্তারা।

বোরো মৌসুমে আবাদের পরিমাণ দেখে খুশি চন্দ্রঘোনা পাটানপাড়া গ্রামের কৃষক আবুল কালাম। সিভয়েস২৪-কে তিনি বলেন, গত মৌসুমে বন্যা, পোকার আক্রমণসহ বিভিন্ন সমস্যার কারণে আমনের ফলন ভালো হয়নি। তাই নতুন ভাবে বোরো ধানের চাষ করে করেছি। আল্লাহর রহমতে এবারের ফলন ভালো হয়েছে।

মরিয়মনগর ইউনিয়নের মরমপাড়া গ্রামের আবদুল লতিফ বলেন, ফসলের আবাদ ভালো হয়েছে। ইতিমধ্যে মাঠে থাকা ধান কাটা শেষ। ভালো দামে ধান বিক্রি করতে পারলে লাভের অংক ভালো হবে।

সাতকানিয়া উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা মো. মনিরুজ্জামান সিভয়েস২৪-কে বলেন, সাতকানিয়ায় লক্ষ্যমাত্রার চেয়ে ৫০ হেক্টর বেশি জমিতে বোরো ধানের আবাদ হয়েছে। ইতিমধ্যে ৫০ শতাংশ জমি থেকে ধান কাটা শেষ।   

সাতকানিয়ার তুলনায় লক্ষ্যমাত্রার চেয়ে ৩০ শতাংশ বেশি আবাদ হয়েছে রাঙ্গুনিয়া উপজেলায়। রাঙ্গুনিয়া উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা ইমরুল কায়েস বলেন, গত বছরের তুলনায় ১ হাজার ১শ ৯৫ হেক্টরে আবাদ হয়েছে বোরো ধান। অন্যান্য বছর থেকে এ বছর আমাদের ফলন বেশি। ইতিমধ্যে ২০ শতাংশ জমির ধান কাটা শেষ হয়েছে।  

বোরো ধানের কাটার সময়ে বৃষ্টিপাতের কারণে ১০০ হেক্টর জমির ধান নষ্ট হয়েছে বলে জানিয়েছেন এই কৃষি কর্মকর্তা। তিনি বলেন, গত শুক্রবার শিলা বৃষ্টির কারণে রাঙ্গুনিয়া ইউনিয়নে ১০০ হেক্টর জমির ফসল নষ্ট হয়েছে। যতদ্রুত সম্ভব ধান কেটে ফেলার নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে।  

কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তর (চট্টগ্রাম অঞ্চল) উপ-পরিচালক মোহাম্মদ আবদুচ ছোবহান সিভয়েস২৪-কে বলেন, এই বছর বোরো আবাদের লক্ষ্যমাত্রা অর্জনের পাশাপাশি ২ লাখ ৯১ হাজার হেক্টর জমিতে আবাদ করা হয়েছে। ফলে এইবারের লক্ষ্যামাত্রা থেকে ২ শতাংশ বেশি ফলন পাওয়ার সম্ভাবনা আছে।     

লক্ষ্যমাত্রা পূরণে কৃষকদের সহায়তার কথা জানিয়ে তিনি বলেন, অব্যবহৃত জমিতে ফসল চাষের জন্য কৃষকদের উদ্বুদ্ধ করতে চট্টগ্রাম অঞ্চলে (চট্টগ্রাম, কক্সবাজার, নোয়াখালী, ফেনী) ১ লাখ ১৫ হাজার কৃষকদের উচ্চ ফলনশীল ধানের বীজ ও সার প্রণোদনা হিসেবে দেওয়া হয়েছিল।

নানা প্রতিকূলতায়ও সেচ কার্যক্রম অব্যাহত

বোরো চাষের শুরু মূলত শীতকালে এবং শুষ্ক মৌসুমে। ডিসেম্বর থেকে এপ্রিল-মে পর্যন্ত চলে ধানের আবাদ ও কর্তন। ফলে পুরো মৌসুমে জুড়ে কম থাকে বৃষ্টিপাতের পরিমাণ। তাছাড়া শুকিয়ে যায় শুষ্ক সময়ে নদী-নালা, খাল-বিল ইত্যাদি মুক্ত জলাশয়। সে জন্য পুরো বোরো মৌসুমের সেচের জন্য ভূগর্ভস্থ পানির ওপর নির্ভর করতে হয় চাষীদের। যার কারণে নানা প্রতিকূলতার মধ্যেও সেচ কার্যক্রম রাখতে হয়েছে কৃষি বিভাগকে।

চট্টগ্রাম কৃষি উন্নয়ন কর্পোরেশন তত্ত্বাবধায়ক প্রকৌশলী নুরুল ইসলাম সিভয়েস২৪-কে বলেন, চট্টগ্রাম অঞ্চলে বোরো মৌসুম বিভিন্ন ধাপে সেচ ব্যবস্থাপনা বাড়ানো হয়েছে। এরমধ্যে চলতি বছরে আর্টিসিয়ান ওয়েলে অর্থাৎ পাম্প ব্যবহার না করে কৃষকদের ভূগর্ভস্থ পানি ব্যবস্থা করা হয়েছে। এর মধ্যে সাতকানিয়া, ফটিকছড়ি, আনোয়ার, রাঙ্গুনিয়া এলাকায় বসানো হয়েছে আর্টিসিয়ান ওয়েলে তথা আর্টিসিয়ান কূপ।

শঙ্কা দাম নিয়ে

ভালো ফলনের পরও ধান বিক্রি নিয়ে শঙ্কায় কৃষকরা। সরকারি ভাবে বিভিন্ন ধাপ অতিক্রম করে বিক্রির ঝড়ঝাপ্টা না পোহাতে অনেকেই বাধ্য হয়ে অসাধু সিন্ডিকেটের কাছে কম দামে ধান বিক্রি করে দেয়।
 
রাউজান উপজেলার জয়নগর এলাকার স্থানীয় কৃষক মো. আলী সিভয়েস২৪-কে বলেন, সরকারি ভাবে ভালো দাম পেলেও বিভিন্ন ধাপে ধান বিক্রি করতে হয়। এর মধ্যে তুলনামূলক ভাবে ধানের মান খারাপ হলে অবিক্রিত অবস্থায় থেকে যায়। এছাড়াও ধান বিক্রির পর টাকা পেতে সময় লাগে। 

চট্টগ্রাম জেলা খাদ্য নিয়ন্ত্রক সুমাইয়া নাজনীন সিভয়েস২৪-কে বলেন, সরকারিভাবে ধান সংগ্রহে কিছু ধাপ আছে। ধানের মান ঠিক রাখতে হয়। তাছাড়া এই সরকার থেকে ধানের দাম কেজি প্রতি ৩২ টাকা দরে কেনার নির্দেশনা থাকায় অসাধু সিণ্ডিকেটে দাম কমাতে পারবে না। কৃষক বেসরকারি পর্যায়ে ধান বিক্রি করলেও ভালো দাম পাবে।

সর্বশেষ

পাঠকপ্রিয়