রুহেলকে এমপি বানাতে অনেক অপকর্ম!

সিভয়েস২৪ প্রতিবেদক

প্রকাশিত: ১৪:৫৬, ৩০ এপ্রিল ২০২৪
রুহেলকে এমপি বানাতে অনেক অপকর্ম!

গত ৭ জানুয়ারি অনুষ্ঠিত জাতীয় সংসদ নির্বাচনে চট্টগ্রাম-১ (মিরসরাই) আসনে আওয়ামী লীগ মনোনীত নৌকা প্রতীকের প্রার্থী ছিলেন মাহবুব উর রহমান রুহেল। তিনি ওই আসনের বারবার নির্বাচিত এমপি ও সাবেক মন্ত্রী ইঞ্জিনিয়ার মোশাররফ হোসেনের ছেলে। সেই রুহেলকে এমপি বানাতে নির্বাচনে ‘অনেক অপকর্ম’ করার কথা প্রকাশ্যে স্বীকার করেছেন মিরসরাই উপজেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক একেএম জাহাঙ্গীর ভূঁইয়া। তাও আবার ঘরোয়া কোনো বৈঠকে নয়। হাজার হাজার মানুষের উপস্থিতিতে এক নির্বাচনী সভায়। তার এমন বক্তব্যের একটি ভিডিও এসেছে সিভয়েস২৪ এর বার্তা বিভাগে।

এ প্রসঙ্গে জানতে চাইলে সুশাসনের জন্য নাগরিক (সুজন) চট্টগ্রাম জেলার সাধারণ সম্পাদক অ্যাডভোকেট আখতার কবির চৌধুরী সিভয়েস২৪-কে বলেন, 'ভোট সুষ্ঠু হয়নি এটি দিবালোকের মতো সত্য। আমিতো বরং যিনি বক্তৃতায় এটি বলেছেন, অকপটে স্বীকার করার জন্য তাকে ধন্যবাদ জানাই। তার কথাকে নিন্দা নয়, বরং বলার জন্য আমি সাধুবাদ জানাচ্ছি। এর আগে, বোয়ালখালীর উপনির্বাচনে বক্তব্য দিতে গিয়ে সাতকানিয়া-লোহাগাড়া আসনের সাবেক এমপি আবু রেজা মোহাম্মদ নেজামুদ্দিন নদভী সাহেব নির্জলা সত্য স্বীকার করে ফেলেছিলেন যে, তিনি একাই ৭টি কেন্দ্র দখল করেছেন। অর্থাৎ, সত্য কখনো গোপন থাকে না।' 

নির্বাচনে ভোটাররা আগ্রহ হারিয়েছেন উল্লেখ করে অ্যাডভোকেট আখতার কবির  বলেন, 'নির্বাচনে যখন সরকারদলীয় প্রার্থী ঘোষণা করা হয়: সেই প্রার্থী মনে করেন তিনি জিতে গিয়েছেন। শুধু ফল ঘোষণার অপেক্ষামাত্র। অনেক কেন্দ্রে দেখা গেছে, দলীয় নেতাকর্মীর যে সংখ্যা থাকে; ভোটের পরিমাণ তার চার ভাগের একভাগ। মানুষের কাছে এখন ভোট মানে অনীহা, অবিশ্বাস, অনাস্থা আর আতঙ্ক। নির্বাচনের নামে এখন তামাশা হচ্ছে। নির্বাচন হতে হবে অবাধ, সুষ্ঠু এবং নিরপেক্ষ। আর প্রার্থীকে অবশ্যই সৎ ও যোগ্য হতে হবে।'

এদিকে বিএনপির জাতীয় নির্বাহী কমিটি ও দলের মিডিয়া সেলের সদস্য ব্যারিস্টার মীর হেলাল উদ্দিন সিভয়েস২৪-কে বলেন, 'শুধু মিরসরাই নয়, দেশের ৯৫ ভাগ মানুষ নির্বাচনে ভোট দেয়নি। গত ৭ জানুয়ারি যা হয়েছে বরাবরের মতো কারচুপির নির্বাচনই হয়েছে। সেজন্য বিএনপি দলগতভাবে সকল নির্বাচন বর্জন করছে। কারচুপি শুধু মিরসরাইয়ে নয়, পুরো বাংলাদেশের প্রত্যেকটা আসনেই হয়েছে।'

মিরসরাই উপজেলা পরিষদ নির্বাচনে শেখ মোহাম্মদ আতাউর রহমানের ঘোড়া মার্কার সমর্থনে বড়তাকিয়া ইভা কমিউনিটি সেন্টারে নির্বাচনী সভায় বক্তব্য দেন উপজেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক একেএম জাহাঙ্গীর ভূঁইয়া

মীর হেলাল আরও বলেন, 'কারচুপির কারণেই পশ্চিমা যত গণতান্ত্রিক দেশ আছে; তারা এখনো এই নির্বাচনকে স্বীকৃতি দেয়নি। মিরসরাই আওয়ামী লীগ নেতার বক্তব্যে নির্বাচন সুষ্ঠু হয়নি এটা আবারো প্রমাণিত হলো।'

সোমবার (২৯ এপ্রিল) বিকেলে মিরসরাই উপজেলার বড়তাকিয়া এলাকার ইভা কমিউনিটি সেন্টারে উপজেলা পরিষদে চেয়ারম্যান পদপ্রার্থী শেখ আতাউর রহমানের ঘোড়া প্রতীকের নির্বাচনী সভায় এমন সরল স্বীকারোক্তি দেন জাহাঙ্গীর ভূঁইয়া।

সভার সভাপতির বক্তব্যে একেএম জাহাঙ্গীর ভূঁইয়া বলেন, ‘গত ৭ জানুয়ারি জাতীয় সংসদ নির্বাচনে জননেত্রী শেখ হাসিনার প্রার্থী, বাংলাদেশ আওয়ামী লীগের প্রার্থী, নূহ (আ.) এর কিস্তির প্রার্থী আমাদের প্রিয় নেতা ইঞ্জিনিয়ার মোশাররফ হোসেনের সুযোগ্য সন্তান মাহবুব উর রহমান রুহেলকে জেতানোর জন্য আমরা অনেক অপকর্ম করেছি। আমরা আগামী ৮ তারিখ উপজেলা নির্বাচনে কোনো অপকর্ম ছাড়া ভোটকেন্দ্র খোলা রাখবো, আমাদের অনেক প্রার্থী রয়েছেন।'

ভোটারদের উদ্দেশ্যে তিনি বলেন, ‘আপনি ভোটকেন্দ্রে আসবেন, যাকে খুশি তাকে ভোট দিবেন। আমাদের কোনো আপত্তি নাই। তবে কেউ যদি ভোটকেন্দ্র বন্ধ করার পাঁয়তারা করে কিংবা কবরস্থানের লোকজনের ভোট দিতে চায়; আমরা সাথে যাথে ভোটকেন্দ্র বন্ধ করে দিবো। আমরা কোনো অবস্থাতে আর কোনো অপকর্ম করতে চাই না।'

উপজেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক একেএম জাহাঙ্গীর ভুঁইয়ার এমন ‘বোমা ফাটানো’ বক্তব্যে তোলপাড় চলছে। দলীয় নেতাকর্মীসহ বিভিন্ন মহলে তার এ বক্তব্য নিয়ে নানা আলোচনা-সমালোচনা হচ্ছে। 
সাধারণ ভোটাররা বলছেন, ৭ জানুয়ারি দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে ষড়যন্ত্র করে হারিয়ে দেওয়া হয়েছে সাবেক উপজেলা চেয়ারম্যান ও স্বতন্ত্র এমপি প্রার্থী, ত্যাগী আওয়ামী লীগ নেতা গিয়াস উদ্দিনকে। দেরিতে হলেও আওয়ামী লীগ নেতা জাহাঙ্গীর ভূঁইয়ার 'সত্য' বক্তব্যে সেটি আবারও প্রমাণিত হলো। 

ভোটকেন্দ্রে যাওয়ার আহ্বান জানিয়ে জাহাঙ্গীর ভূঁইয়া বলেন, ‘এখন বিএনপি ভোটকেন্দ্রে যায় না, আওয়ামী লীগের লোকেরাও ভোটকেন্দ্রে যেতে চায় না। সেজন্য জননেত্রী শেখ হাসিনা মানুষকে ভোটকেন্দ্রে ফেরাতে এবার কোনো দলীয় প্রতীক রাখেননি। দলীয় প্রার্থী ঘোষণা দিতে উনি বারণ করেছেন। মিরসরাই উপজেলা আওয়ামী লীগের একজন দায়িত্বপ্রাপ্ত সাধারণ সম্পাদক হিসেবে বলতে চাই, মিরসরাই উপজেলায় ইউনিয়নে ওয়ার্ডে কাউকে দলীয় প্রার্থী বলার কোনো সুযোগ নেই। যেহেতু বিএনপির প্রার্থী নেই, আমরা পছন্দের প্রার্থীকেই ভোট দেব।’

উপজেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক একেএম জাহাঙ্গীর ভুঁইয়ার এমন ‘বোমা ফাটানো’ বক্তব্যে তোলপাড় চলছে। দলীয় নেতাকর্মীসহ বিভিন্ন মহলে তার এ বক্তব্য নিয়ে নানা আলোচনা-সমালোচনা হচ্ছে। 
সাধারণ ভোটাররা বলছেন, ৭ জানুয়ারি দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে ষড়যন্ত্র করে হারিয়ে দেওয়া হয়েছে সাবেক উপজেলা চেয়ারম্যান ও স্বতন্ত্র এমপি প্রার্থী, ত্যাগী আওয়ামী লীগ নেতা গিয়াস উদ্দিনকে। দেরিতে হলেও আওয়ামী লীগ নেতা জাহাঙ্গীর ভূঁইয়ার 'সত্য' বক্তব্যে সেটি আবারও প্রমাণিত হলো। 

খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, আসন্ন উপজেলা পরিষদ নির্বাচনে মিরসরাইয়ে চেয়ারম্যান পদে আওয়ামী লীগের প্রেসিডিয়াম সদস্য ও সাবেক এমপি ইঞ্জিনিয়ার মোশাররফ হোসেন এবং তার ছেলে মাহবুব উর রহমান রুহেল সমর্থন দিয়েছেন এনায়েত হোসেন নয়নকে (কাপ- পিরিচ প্রতীক)। তবে, উপজেলা আওয়ামী লীগের বড় একটি অংশ একাট্টা হয়েছেন এই প্রার্থীর বিরুদ্ধে।

অন্যদিকে চট্টগ্রাম উত্তর জেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক শেখ আতাউর রহমান (ঘোড়া প্রতীক) এবং উত্তর জেলা আওয়ামী লীগের সদস্য ও সাবেক উপজেলা পরিষদের ভাইস চেয়ারম্যান ফেরদৌস হোসেন আরিফ (আনারস প্রতীক) লড়ছেন মাহবুব উর রহমান রুহেল মনোনীত প্রার্থী নয়নের বিরুদ্ধে।

নাম প্রকাশে অনিচ্ছা জানিয়ে মিরসরাই উপজেলা আওয়ামী লীগের একজন জ্যেষ্ঠ সদস্য সিভয়েস২৪-কে বলেন, ‘এটাতো ওপেন সিক্রেট যে মিরসরাইয়ে কোনো সংসদ নির্বাচন হয়নি। মাঠ পর্যায়ের দলীয় নেতাকর্মী ও সাধারণ মানুষ ভোট দিতে পারেননি। অবশেষে উপজেলা আওয়ামী লীগের সেক্রেটারি সাহেব নিজেই স্বীকার করলেন সেই অপকর্ম করার কথা। তবে এখন এসব বলে কী লাভ? কবরে গিয়ে এভাবে স্বীকার করলে কি ক্ষমা মিলবে? তবে জনগণের সাথে অন্যায়ের প্রত্যেকটা হিসাব একদিন দিতে হবেই।’

গেল সংসদ নির্বাচনে দলীয় প্রার্থীকে জেতাতে অপকর্ম করার প্রকাশ্যে স্বীকারোক্তির বিষয়ে কথা বলতে মিরসরাই উপজেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক একেএম জাহাঙ্গীর ভূঁইয়াকে মঙ্গলবার সকালে একাধিকবার ফোন করা হয়।  কিন্তু তার সাড়া মেলেনি।

জানা গেছে, উপজেলা আওয়ামী লীগের যুগ্ম সম্পাদক এস এম আবুল হোসেনের পরিচালনায় ঘোড়া প্রতীকের ওই নির্বাচনী সভায় আরো বক্তব্য দেন উত্তর জেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ও মিরসরাই উপজেলা নির্বাচনে ঘোড়া প্রতীকের চেয়ারম্যান পদপ্রার্থী শেখ মোহাম্মদ আতাউর রহমান, চট্টগ্রাম জেলা পরিষদের সদস্য প্রদীপ রঞ্জন চক্রবর্তী, বারইয়ারহাট পৌরসভার সাবেক মেয়র ও উপজেলা আওয়ামী লীগের সিনিয়র সহসভাপতি ভিপি নিজাম উদ্দিন, উপজেলা আওয়ামী লীগের সহসভাপতি শাহাদাত হোসেন মনসুর, দুর্গাপুর ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান আবু সুফিয়ান বিপ্লব, খৈয়াছড়া ইউনিয়নের সাবেক চেয়ারম্যান জাহিদ ইকবাল চৌধুরী, মিরসরাই অ্যাসোসিয়েশন, চট্টগ্রামের সভাপতি কালু কুমার দে, সাবেক উপজেলা আওয়ামী লীগ নেতা নুরুল আলম, মায়ানি ইউনিয়ন আওয়ামী লীগের সাবেক সাধারণ সম্পাদক এস এম গোলাম সরোয়ার, যুবলীগ নেতা মোশারফ হোসেন মান্না,  মিরসরাই উপজেলা ছাত্রলীগের সাবেক যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক এমরান হোসেন সোহেল, উপজেলা ছাত্রলীগ যুগ্ম আহ্বায়ক আরিফুল ইসলাম প্রমুখ।

-সিভয়েস/আরআর/পিবি

সর্বশেষ

পাঠকপ্রিয়