জনবল সংকটে সিডিএ, আইনি জটিলতায় বন্ধ নিয়োগ

প্রকাশিত: ১৩:৫৭, ২১ সেপ্টেম্বর ২০১৮
জনবল সংকটে সিডিএ, আইনি জটিলতায় বন্ধ নিয়োগ

ফাইল ছবি

প্রয়োজনের তুলনায় এক তৃতীয়াংশ কম জনবল দিয়ে চলছে চট্টগ্রাম উন্নয়ন কর্তৃপক্ষের কার্যক্রম। অর্গানোগ্রাম অনুযায়ী চট্টগ্রাম উন্নয়ন কর্তৃপক্ষের (সিডিএ) জনবল কাঠোমোয় ৫১৯ জন কর্মকর্তা কর্মচারী থাকার কথা থাকলেও সেখানে বর্তমানে এই প্রতিষ্ঠান চলছে ৩৩৪জন কর্মকর্তা কর্মচারী দিয়ে। এতে ভারপ্রাপ্তদের ভারে ব্যাহত হচ্ছে স্বাভাবিক কার্যক্রম। 

খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, গত নয় বছর ধরেই এই প্রতিষ্ঠানে কোন জনবল নিয়োগ হয়নি। সর্বশেষ ২০১০ সালে চতুর্থ শ্রেণির পদে ৯জন এবং ২০১১ সালে ২৮ জন করে মোট ৩৭জনকে নিয়োগ দেয়া হয়। এরপর এখন পর্যন্ত আর কাউকে নিয়োগ দেয়া হয়নি।

সংকট থাকার পরও আইনি জটিলতার কারণে জনবল নিয়োগ দেয়া যাচ্ছে না বলে জানিয়েছে সিডিএ কর্তৃপক্ষ। 

এ বিষয়ে চট্টগ্রাম উন্নয়ন কর্তৃপক্ষের সচিব তাহেরা ফেরদৌস বেগম বলেন, মামলার কারণে নতুন লোকবল নিয়োগ বন্ধ রয়েছে। ফলে সংকট দিনদিন বেড়েই চলছে। মামলার নিষ্পত্তি হলেই দ্রুততম সময়ের মধ্যে শূন্যপদে লোকবল নিয়োগের সিদ্ধান্ত নেয়া হবে।

সিডিএ সূত্রে জানা যায়, ২০০৯, ২০১০, ২০১১ তে তিন ধাপে ৫৪ জন কর্মকর্তা কর্মচারী নিয়োগের ছাড়পত্র পায় সিডিএ। সে অনুযায়ী পোষ্য কোটা দিয়ে নিয়োগ বিজ্ঞপ্তি প্রদান করে। কিন্তু চউক কর্মচারী লীগের শ্রম আইনের বিধান অনুযায়ী কর্তৃপক্ষকে পোষ্য কোটা নির্ধারণের জন্য চার্টার্ড অব ডিমান্ড প্রদান করা হয়। তবে বর্তমান চেয়ারম্যান তখন শ্রমিক নেতৃবৃন্দকে পোষ্য কোটা নিয়ে কোন সিদ্ধান্ত প্রদান না করায় লিগ্যাল নোটিশ প্রদান করেন শ্রমিক নেতৃবৃন্দ। সে সাথে শ্রম আইনে মামলা দায়ের করেন তারা। শ্রম আদালতের মামলাটি ঢাকাস্থ ট্রাইব্যুনাল হয়ে মহামান্য হাইকোর্টে রিট হয়। রিটের বিরুদ্ধে চেম্বার জজ আদালত হতে মহামান্য বিচারপতির কোর্টে চূড়ান্ত শুনানি হয়। তবে ইতোমধ্যে নিষেধাজ্ঞা অমান্য করে কিছু সংখ্যক চতুর্থ শ্রেণির কর্মচারি নিয়োগ দেয়ায় মহামান্য হাইকোর্টে মামলা দায়ের করা হয়। মহামান্য হাইকোর্ট রিট মামলাটি নিষেধাজ্ঞা বহাল রেখে রায় প্রদান করেন এবং শ্রম আপিল ট্রাইব্যুনালে বিচার নিষ্পত্তির আদেশ দেন। মূল মামলাটি শ্রম আপিল ট্রাইব্যুনালে বিচারাধীন রয়েছে। ফলে গত ৭ বছরে চট্টগ্রাম উন্নয়ন কর্তৃপক্ষ (সিডিএ) কোন নিয়োগ প্রদান করতে পারেনি।

এনাম কমিটির রিপোর্ট অনুযায়ী সিডিএ’র জনবলের সাংগঠনিক কাঠামোয় মোট পদের সংখ্যা ছিল ৫২০টি। পরবর্তীতে সাংগঠনিক কাঠামোর ৫২টি পদ বিলুপ্ত করা হয়। আবার সৃজন করা হয় ৫১টি পদ। সেই হিসেবে সিডিএ’র অনুমোদিত মোট পদের সংখ্যা ৫১৯টি। কিন্তু এরমধ্যে বর্তমানে ৩৫৪ পদে লোক নিয়োজিত আছে। বর্তমানে শূন্য পদের সংখ্যা ১৮৫টি। 

শূন্য পদের মধ্যে রয়েছে প্রধান প্রকৌশলী থেকে শুরু করে পরিচ্ছন্নতা কর্মী পর্যন্ত। বর্তমানে প্রধান প্রকৌশলী পদে ১টি, তত্ত্বাবধায়ক প্রকৌশলী পদে দুইটি, প্রধান নগর পরিকল্পনাবিদ পদে একটি, উপ-প্রধান নগর পরিকল্পনাবিদ পদে একটি, অথরাইজেশন অফিসার পদে দুইটি, উর্ধ্বতন স্থপতি পদে একটি, নগর পরিকল্পনাবিদ পদে একটি, সহকারী প্রকৌশলী পদে চারটি, বাজেট অফিসার পদে একটি, স্টাফ অফিসার পদে একটি, জনসংযোগ কর্মকর্তা পদে একটি, অডিট অফিসার পদে একটি, সেকশন অফিসার পদে তিনটি, উপ-সহকারী প্রকৌশলী পদে ৯টি, মার্কেট সুপার পদে দুইটি, জুনিয়র হিসাবরক্ষক পদে একটি, উচ্চমান সহকারী পদে ৫টি, সিনিয়র অডিট সহকারী পদে একটি, অফিস সহকারী কাম কম্পিউটার মুদ্রাক্ষরিক পদে ১৭টি, ইমারত পরিদর্শক পদে ১৫টি, সার্ভেয়ার পদে তিনটি, গাড়ি চালক পদে ২টি, অফিস সহায়ক পদে ১২টি, হেড নিরাপত্তা প্রহরী পদে ১৩টি, ইলেকট্রিশিয়ান পদে ২টি, ইলেকট্রিক হেলপার পদে একটি, বার্তাবাহক পদে একটি, পাম্প চালক পদে ২টি, নিরাপত্তা প্রহরী পদে ১৩টি, পরিচ্ছন্নতাকর্মীর ২০টি পদ খালি। এছাড়া অন্যান্য অনুমোদিত পদের বিপরীতে আরও অনেক শূন্যপদ রয়েছে সিডিএতে।

সিডিএ’র জনবল সংকট বাড়ার সাথে সাথে কাজের চাপ বেড়েছে প্রচুর। এতে দাপ্তরিক কাজ চরমভাবে ব্যাহত হচ্ছে। কোনো কোনো বিভাগকে অন্য বিভাগের জনবল দিয়ে কাজ সামাল দিতে হচ্ছে। দীর্ঘদিন থেকে জনবল নিয়োগ প্রক্রিয়া বন্ধ থাকার কারণে এমন সংকটের সৃষ্টি হয়েছে। অথচ এরই মধ্যে সিডিএ’র কাজের পরিধি বেড়েছে। কাজ স্বাভাবিক রাখতে অনেক কর্মকর্তা-কর্মচারীকে ভারপ্রাপ্ত ও চলতি দায়িত্ব দেওয়া হয়েছে। সিডিএ বর্তমান চেয়ারম্যান আবদুচ ছালাম দায়িত্ব নেওয়ার পর জনবল সংকট দুর করার জন্য উদ্যোগ নেন। জনবল নিয়োগের জন্য পত্রিকায় বিজ্ঞপ্তি প্রকাশ করা হয়। তখন নিয়োগ পরীক্ষাও নেয়া হয়। কিন্তু মামলার কারণে সে নিয়োগ বন্ধ হয়ে যায়। এখনো পর্যন্ত মামলা চলমান থাকায় শূন্যপদের বিপরীতে লোকবল নিয়োগ দেওয়া সম্ভব হচ্ছে না।

সিভয়েস/এমআইএম/এসএ/এমইউ

মনিরুল ইসলাম মুন্না

সর্বশেষ

পাঠকপ্রিয়