ঘূর্ণিঝড় সিত্রাং/
মিরসরাইয়ে ঋণের জালে জর্জরিত জেলেদের স্বপ্ন ভেঙ্গে চুরমার  

মিরসরাই প্রতিনিধি

প্রকাশিত: ১৫:৪২, ৮ নভেম্বর ২০২২
মিরসরাইয়ে ঋণের জালে জর্জরিত জেলেদের স্বপ্ন ভেঙ্গে চুরমার  

ঘূর্ণিঝড় সিত্রাংয়ের তাণ্ডবে জেলেদের নৌকা ভেঙ্গে চুরমান হয়ে যায় মিরসরাইয়ে

জীবিকা বলতে দুই লাখ টাকা ঋণে একটি ইঞ্জিনচালিত নৌকা ছিল। সেটা দিয়ে সাগরে মাছ ধরে কোনরকমে সংসার চালাতেন সুরেশ চন্দ্র দাস। ২৪ অক্টোবর রাতে সেটি ঘাটে বাঁধা ছিল অন্য নৌকার সাথে। ঘূর্ণিঝড় সিত্রাং সেটি ভেঙে চুরমার করে দিয়েছে। তছনছ হয়ে গেছে তার স্বপ্ন। 

মানিক জলদাসের অবস্থাও একই। ঋণ নিয়ে নৌকা কিনেছেন, উদ্দ্যেশ্য একটাই। নৌকা দিয়ে মাছ ধরে বউ-বাচ্ছা মুখে হাসি ফোটাবেন। কিন্তু তাদের সেই স্বপ্ন ধুলোয় মিশে গেছে সিত্রাংয়ের তাণ্ডবে। 

মিরসরাইয়ের মঘাদিয়া ইউনিয়ন পরিষদের জেলেদের এরকম আরও কমপক্ষে ২৩টি মাছধরার ইঞ্জিনচালিত নৌকা সিত্রাং তাণ্ডব চালিয়ে চুরমার করে দিয়েছে। জীবিকা নির্বাহের একমাত্র অবলম্বনটি হারিয়ে মানবেতর জীবন কাটছে ওই এলাকার শতাধিক জেলের। 

ক্ষতিগ্রস্ত জেলে ও স্থানীয়রা জানান, ২৪ অক্টোবর রাতে ঘূর্ণিঝড় সিত্রাংয়ের তাণ্ডবে বামনসুন্দর সুইস গেট (বসুন্ধরা ৩ নম্বর গেইট) ও সাহেরখালী ঘাট এলাকার নিমাই জলদাস, রায়মোহন জলদাস, সুমন জলদাস, ভীম জলদাস, আলতাফ হোসেন, শওকত হোসেন, সুরেশ চন্দ্র দাস, নিমাই চন্দ্র দাস, ইসমাইল হোসেন, ছোটন চন্দ্র দাস, দয়াল হরি, সুসিন্দ জলদাস, মানিক জলদাস, নেপাল জলদাস, সুরেশ জলদাস, মোশারফ হোসেন, মান্নান, শুমঙ্গল জলদাস ও যদু দাস, মানিক জলদাস, শচীন্দ্র জলদাস, জগন্নাথ জলদাসের নৌকা ভেঙে যায়। এসব বোটে প্রায় শতাধিক জেলে জীবিকা নির্বাহ করে থাকেন।

ক্ষতিগ্রস্ত সুরেশ চন্দ্র দাশ জানান, যতক্ষণ নৌকা আছে ততক্ষণ আমাদের প্রাণ থাকে। নৌকা দিয়ে সাগর থেকে মাছ ধরে সেগুলো বিক্রি করে সংসার চালাই। ঘূণিঝড়ে নৌকাটি ভেঙে যাওয়ায় ছেলে-মেয়েগুলো কান্না করছে। এখন কী করবো কিছু বুঝতেছি না। এগুলো মেরামতের জন্য অনুদান চাই।

মানিক জলদাশ বলেন, ঋণ নিয়ে আমরা এ ব্যবসা করতেছি। সরকারের কাছে আমাদের একটা চাওয়া তিনি যেন আমাদের একটু সহযোগিতা করেন তাহলে আমরা একটু সচল ভাবে চলতে পারতাম। কারণ আমরা যেটা নিয়ে খাবো সেটা তো ভেঙে গেছে। তাই আমরা সাহায্য চাই সরকারের কাছে।

উপজেলার মঘাদিয়া ইউনিয়ন পরিষদের (ইউপি) চেয়ারম্যান জাহাঙ্গীর হোসাইন মাস্টার বলেন, ঘূর্ণিঝড়ে ক্ষতিগ্রস্ত সব জেলে আমার ইউনিয়নের বাসিন্দা। তাদের জীবিকা নির্বাহের একমাত্র অবলম্বন হারিয়ে জেলে পরিবারগুলো এখন নিঃস্ব। এতে প্রায় অর্ধকোটি টাকা ক্ষতি হয়েছে বলে দাবি তাদের।

এবিষয়ে উপজেলা সিনিয়র মৎস্য কর্মকর্তা নাসিম আল মাহমুদ বলেন, উপকূলীয় বামনসুন্দর ঘাট ও সাহেরখালী ঘাটে জেলেদের মাছ ধরার ২৩ ইঞ্জিনচালিত নৌকা ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। তারা ক্ষতিপূরণ চেয়ে আমার কাছে লিখিতভাবে আবেদন করেছেন। তাদের আবেদনের প্রেক্ষিতে আমি ৩০ অক্টোবর জেলা মৎস্য অফিসে একটি চিঠি দিয়েছি। ক্ষতিপূরণের ব্যাপারে কোনো সিদ্ধান্ত আসেনি।

সম্পর্কিত বিষয়:

সর্বশেষ

পাঠকপ্রিয়