‘বদলি ঠেকাতে’ হাসপাতালে চসিকের প্রধান প্রকৌশলী!

নিজস্ব প্রতিবেদক

প্রকাশিত: ১১:২৩, ২২ নভেম্বর ২০২৩
‘বদলি ঠেকাতে’ হাসপাতালে চসিকের প্রধান প্রকৌশলী!

মাস চারেক পরেই অবসরে যাচ্ছেন , অবসরের আগের মুহূর্তে কোন অবস্থায় পুরনো কর্মস্থল ছাড়তে চাননা তিনি। ৪ মাস চট্টগ্রামে কাটানোর উপলক্ষ তার ‘অসুস্থতা’! বদলির পর চসিক থেকে অবমুক্ত হওয়ার আগের দিনে হঠাৎই হাসপাতালে ভর্তি হলেন। এদিকে নতুন প্রধান প্রকৌশলী যোগদানপত্র দিয়েও অপেক্ষায় রয়েছেন।

বদলিকৃত স্থানে যোগদানের মাত্র দুদিন আগে হাসপাতালে ভর্তি হয়েছেন চট্টগ্রাম সিটি করপোরেশেনের (চসিক) প্রধান প্রকৌশলী রফিকুল ইসলাম। হঠাৎ ‘বুকে ব্যথা’ নিয়ে মঙ্গলবার  নগরের একটি বেসরকারি হাসপাতালে ভর্তি হয়েছেন বলে জানা গেছে। আজ বুধবার নতুন কর্মস্থলে যোগদানের কথা ছিল তার। নইলে আগামীকাল বৃহস্পতিবার থেকে অবমুক্ত বলে গণ্য হবেন তিনি।

প্রসঙ্গত, গত ১৪ নভেম্বর প্রধান প্রকৌশলী রফিকুল ইসলামকে বরিশাল সিটি করপোরেশনে বদলি করে স্থানীয় সরকার মন্ত্রণালয়। ২২ নভেম্বরের মধ্যে তাকে সেখানে যোগদান করতে বলা হয়েছে। নইলে ২৩ নভেম্বর থেকে তিনি অবমুক্ত বলে গণ্য হবেন বলে উল্লেখ করা হয়েছে বদলির আদেশে।

সচিব খালেদ মাহমুদ বদলির পর ‘এক চেয়ারে দুই সচিব’ এর যে কাণ্ড ঘটেছিল অনেকটা একইরকম ঘটনা ঘটতে যাচ্ছে চসিকে। সচিব খালেদ মাহমুদের মতোই মন্ত্রণালয় থেকে বদলি ঠেকাবেন প্রধান প্রকৌশলী—এমনই গুঞ্জন চলছে সংশ্লিষ্ট মহলে।

 

এদিকে, অন্য একটি প্রজ্ঞাপনে চসিকের নতুন প্রধান প্রকৌশলী হিসেবে প্রেষণে নিয়োগ পাওয়া এলজিইডি পাবনা বিভাগের তত্ত্বাবধায়ক প্রকৌশলী নবীউল ইসলাম চসিক মেয়রের হাতে যোগদানপত্র জমা দিয়েছেন। মঙ্গলবার (২১ নভেম্বর) চসিক মেয়রের কাছে নিজহাতে যোগদান পত্র জমা দিয়েছেন তিনি। তবে প্রত্যুত্তরে মেয়র তাকে পরে জানাবেন বলে জানা গেছে।


চসিক সূত্রে জানা গেছে, প্রধান প্রকৌশলী রফিকুল ইসলাম মানিক আগামী বছরের (২০২৪) মার্চের ২০ তারিখে অবসরোত্তর ছুটিতে যাবেন। এ কর্মকতা অবসরে গেলে প্রধান প্রকৌশলী হিসেবে সেনাবাহিনী থেকে যাতে নিয়োগ দেওয়া হয় তার জন্য মন্ত্রণালয়ে ডিও লেটার (আধা সরকারি পত্র) লিখেছেন চসিক মেয়র রেজাউল করিম চৌধুরী। অথচ মন্ত্রণালয় মেয়রের চিঠিকে গুরুত্ব না দিয়ে অবসরে যাওয়ার মাসখানেক আগে বদলি করে দিয়েছেন প্রধান প্রকৌশলী রফিকুল ইসলামকে।


তবে এসব নিয়ে সরাসরি কথা বলতে রাজি নয় সংস্থাটির কেউ। এ বিষয়ে চসিকের এক কর্মকর্তা বলেন, ‘চট্টগ্রাম সিটি করপোরেশনের চেয়ার ছাড়তে নারাজ প্রধান প্রকৌশলী। আর এ কারণে বদলি ঠেকাতে ‘অসুস্থতা’র কৌশল অবলম্বন করেছেন তিনি। উনি চলে যাওয়ার পর সেনাবাহিনী থেকে একজনকে নিয়োগ দিতে ডিও লেটার দিয়েছেন মেয়র। এরমধ্যেই তিনি বদলি হয়ে গেলেন। এজন্য মন্ত্রণালয়ের উপর আমাদের মেয়রও বেশ ক্ষুব্ধ। উনাকে (মেয়র) না জানিয়ে তাকে বদলি করা হয়েছে।’


চসিকের আরেক কর্মকর্তা বলেন, ‘রফিকুল ইসলামের অসুস্থতার কৌশলের কারণে শেষ পর্যন্ত যোগদান করা নতুন প্রধান প্রকৌশলীর বিষয়টি অনিশ্চিত হয়ে পড়েছে। মন্ত্রণালয়ের আদেশ অনুযায়ী কাল উনার রিলিজ ডেট। যাওয়ার আগে দায়িত্ব হস্তান্তর করতে হয়। অথচ তার আগেই তিনি ‘অসুস্থতার ভান’ ধরেছেন। এখন নতুন কর্মকর্তাও চলে এসেছেন। সচিব খালেদ মাহমুদ যেমন বদলির আদেশ ক্যান্সেল করিয়েছেন তিনিও মনে হয় তাই করার ফন্দি আঁটছেন। করপোরেশনের বদনাম করে দিল এই মানুষগুলো। শেষ পর্যন্ত মন্ত্রণালয় কী সিদ্ধান্ত নিবে তা বুঝতে পারছি না।’


এ বিষয়ে সদ্য বদলিকৃত চসিকের প্রধান প্রকৌশলী রফিকুল ইসলামের মন্তব্য জানতে মুঠোফোনে যোগাযোগ করেও তাকে পাওয়া যায়নি। একই প্রসঙ্গে জানতে চসিকের প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা শেখ মুহম্মদ তৌহিদুল ইসলামের সঙ্গে যোগাযোগ করা হলে ব্যস্ততার অজুহাতে কোনো মন্তব্য করতে রাজি হননি।


তবে কী ধরনের অসুস্থতায় হাসপাতালে ভর্তি হয়েছেন প্রকৌশলী রফিকুল ইসলাম তা উল্লেখ না করেই হাসপাতালের শয্যায় প্রধান প্রকৌশলীর ছবি পোস্ট করে দোয়া কামনা করেছেন রিয়াদ নামের তার এক আত্মীয়। রিয়াদ তারেক নামের একটি আইডি থেকে লেখা হয়, ‘চট্টগ্রাম সিটি কর্পোরেশনের প্রধান প্রকৌশলী জনাব রফিকুল ইসলাম হঠাৎ শারীরিকভাবে অসুস্থ হয়ে হাসপাতালে চিকিৎসাধীন অবস্থায় রয়েছেন সবাই আমার মামার জন্য দোয়া করবেন।’ বারবার যোগাযোগের চেষ্টার পরও এমন ‘উপকারী অসুস্থতা’ সম্পর্কে তাদের পক্ষ থেকে কিছুই জানানো হয়নি।


প্রসঙ্গত ২০২১ সালের ৬ মে চট্টগ্রাম সিটি করপোরেশনের (চসিক) প্রধান প্রকৌশলী পদে লেফটেনেন্ট কর্নেল সোহেল আহমেদের স্থলাভিষিক্ত করা হয় রফিকুল ইসলামকে। তার আগে দীর্ঘদিন ধরে চসিকের অতিরিক্ত প্রধান প্রকৌশলীর দায়িত্ব পালন করেছিলেন তিনি। ২০১৬ সালের ডিসেম্বর থেকে নিজ ছেলের নামে ঠিকাদারির লাইসেন্স নিয়ে সিটি করপোরেশনের কাজ করার অভিযোগ রয়েছে প্রধান প্রকৌশলী রফিকুল ইসলামের বিরুদ্ধে। এই বিষয়ে স্থানীয় সরকার মন্ত্রণালয় থেকে একটি তদন্ত কমিটি করা হলেও, সেই কমিটির তদন্ত প্রতিবেদন আলোর মুখ দেখেনি।

সিভয়েস/এসআর/এএস

 

সর্বশেষ

পাঠকপ্রিয়