সন্ধ্যায় বাংলাদেশে আঘাত হানবে সিত্রাং, ঝুঁকিতে সন্দ্বীপ-মহেশখালী
সিভয়েস প্রতিবেদক
সোমবার সন্ধ্যার দিকে ঘূর্ণিঝড় সিত্রাং বাংলাদেশের উপকূলে আঘাত হানবে বলে জানিয়েছেন দুর্যোগ ও ত্রাণ প্রতিমন্ত্রী এনামুর রহমান। এতে সবচেয়ে বেশি ঝুঁকির মুখে আছে বরগুনা ও পটুয়াখালী। তবে সেটি উপকূল অতিক্রম করার সময় চট্টগ্রাম-কক্সাবাজার উপকূলেও আঘাত হানবে। তখন সবচেয়ে বেশি ঝুঁকিতে থাকবে চট্টগ্রামের সন্দ্বীপ ও কক্সবাজারের মহেশখালী উপজেলা।
সোমবার দুপুরে সচিবালয়ে এক ব্রিফিংয়ে দুপুরে প্রতিমন্ত্রী এ তথ্য জানিয়েছেন।
আবহাওয়া অফিসের বরাত দিয়ে দুর্যোগ ও ত্রাণ প্রতিমন্ত্রী এনামুর রহমান বলেন, ‘সিত্রাং সিভিয়ার সাইক্লোন হিসেবে রুপ নিয়েছে। সন্ধ্যার মধ্যে উপকূলে আঘাত হানবে। কেন্দ্র আঘাত করবে ভোরে। এটা পুরোপুরি বাংলাদেশ ভূখণ্ডে আঘাত হানবে। ভারতে আঘাত করার কোনো সম্ভাবনা নাই। উপকূলীয় ১৩ জেলায় মারাত্মক ও ২ জেলায় হালকা আঘাত হানবে। তবে বরগুনার পাথড়ঘাটা ও পটুয়াখালীর কলাপাড়া সবচেয়ে বেশি ক্ষতিগ্রস্থ হবে।’
এনামুর রহমান আরও বলেন, ‘উপকূলে ৭ হাজার ৩০ সেল্টার প্রস্তুত করা হয়েছে। সকাল থেকেই মানুষকে আশ্রয়কেন্দ্রে আনা হচ্ছে। আমরা আম্ফানে ২৪ লাখ সরিয়েছিলাম। এবার ২৫ লাখ সরানোর লক্ষ্য রাখা হয়েছে। চট্টগ্রাম, খুলনা ও বরিশাল বিভাগে বেশি আঘাত হানবে। চট্টগ্রাম বিভাগের মহেশখালী, সন্দ্বীপ বেশি ঝুঁকিপূর্ণ। সেখান থেকে মানুষ সরাতে কাজ চলছে। সিডর ছিলো সুপার সাইক্লোন। এটা সিভিয়ার সাইক্লোন।’
তিনি বলেন, ‘প্রধানমন্ত্রী বলেছেন, একজন মানুষও যদি মারা না যান সেটি হলো সবচেয়ে বড় সফলতা। পাশাপাশি, তাদের গবাদি পশুগুলোকেও সেন্টারে আনতে বলা হয়েছে। প্রতি জেলায় ৫ লাখ টাকা বরাদ্দ দেয়া হয়েছে। পাশাপাশি ড্রাই কেক ও বিস্কুট পাঠানো হয়েছে শুকনা খাবার হিসেবে। দুর্যোগে বিদ্যুৎ ও টেলি যোগাযোগ ব্যবস্থা ঠিক রাখতে বলা হয়েছে।’
ঘূর্ণিঝড় সিত্রাং সোমবার গভীর রাতে সাতক্ষীরা ও বরিশাল উপকূলে আঘাত করতে পারে ধারণা করছে আবহাওয়া অধিদপ্তর। ঘূর্ণিঝড়টি উপকূল পার হওয়ার সময় চট্টগ্রাম, বরগুনা, পটুয়াখালী, ভোলা, ঝালকাঠি, নোয়াখালী, ফেনীর অদূরবর্তী দ্বীপ ও চরগুলোতে স্বাভাবিক জোয়ার থেকে ৫ থেকে ৮ ফুট উঁচু জলোচ্ছ্বাসের আশঙ্কা করছে আবহাওয়া অধিদপ্তর। ঘূর্ণিঝড়টি সোমবার গভীররাতে আঘাত হানলেও আজ সন্ধ্যার পর থেকে এ জলোচ্ছ্বাসের আশঙ্কা রয়েছে।
ঘূর্ণিঝড় অতিক্রমকালে চট্টগ্রামসহ সমুদ্র উপকূলে ঘণ্টায় ৮০ থেকে ১০০ কিলোমিটার বেগে দমকা থেকে ঝোড়ো হাওয়া বয়ে যেতে পারে।
ঘুর্ণিঝড়ের প্রভাবে সাগর প্রচণ্ড উত্তাল রয়েছে। আবহাওয়া অধিদপ্তর দেশের মোংলা ও পায়রা সমুদ্রবন্দরকে ৭ নম্বর বিপদ সংকেত ও চট্টগ্রাম, কক্সবাজারে ৬ নম্বর বিপদ সংকেত দেখাতে বলেছে।
আবহাওয়া অধিদপ্তর আরও বলছে, পূর্ব-মধ্যবঙ্গোপসাগর ও তৎসংলগ্ন পশ্চিম-মধ্যবঙ্গোপসাগর এবং উত্তর বঙ্গোপসাগর এলাকায় অবস্থানরত ঘূর্ণিঝড় ‘সিত্রাং' উত্তরপূর্ব দিকে অগ্রসর হয়ে উত্তর-পশ্চিম বঙ্গোপসাগর ও তৎসংলগ্ন উত্তর-পূর্ব বঙ্গোপসাগর এলাকায় অবস্থান করছে। এটি (২৪ অক্টোবর) দুপুর ১২টায় চট্টগ্রাম সমুদ্রবন্দর থেকে ৪৪০ কিলোমিটার দক্ষিণ পশ্চিমে অবস্থান করছে। এটি আরো ঘণীভূত ও উত্তর-উত্তরপূর্ব দিকে অগ্রসর হয়ে আজ মধ্যরাত অথবা আগামিকাল ভোর নাগাদ খেপুপাড়ার নিকট দিয়ে বরিশাল-চট্টগ্রাম উপকূল অতিক্রম করতে পারে।
ঘূর্ণিঝড় কেন্দ্রের ৫৪ কিলোমিটার এর মধ্যে বাতাসের একটানা সৰ্বোচ্চ গতিবেগ ঘণ্টায় ৬২ কি.মি., যা দমকা অথবা ঝড়ো হাওয়ার আকারে ৮৮ কিলোমিটার পর্যন্ত বৃদ্ধি পাচ্ছে। ঘূর্ণিঝড় কেন্দ্রের নিকটবর্তী এলাকায় সাগর বিক্ষুব্ধ রয়েছে।
ঘূর্ণিঝড়ের প্রভাবে চট্টগ্রাম ও এর পার্শ্ববর্তী এলাকায় ভারী থেকে অতি ভারী বৃষ্টি হতে পারে। সেকারণে চট্টগ্রামসহ পার্বত্য চট্টগ্রাম এলাকায় পাহাড় ধসের আশঙ্কা রয়েছে।
এদিকে ঘূর্ণিঝড় সিত্রাং এর সম্ভাব্য ক্ষয়ক্ষতি এড়াতে চট্টগ্রাম সমুদ্রবন্দরে নিজস্ব সংকেত ‘অ্যালার্ট-৩’ জারি করা হয়েছে। এই সতর্কতার পদক্ষেপ হিসেবে বন্দরে জাহাজ থেকে পণ্য উঠানো-নামানোর কার্যক্রম বন্ধ করা হয়েছে। এছাড়া সিত্রাং’র কারণে সাগর উত্তাল থাকায় বহিনোঙরেও পণ্য খালাস বন্ধ রয়েছে। লাইটার জাহাজগুলোকে কর্ণফুলী নদীর শাহ আমানত সেতুর আশপাশে আনা হয়েছে৷ অপরদিকে বড় জাহাজগুলোকে গভীর সাগরে পাঠিয়ে দেয়া হয়েছে। এছাড়া বন্দরের পক্ষ থেকে কন্ট্রোল রুম খোলা হয়েছে।
ঘূর্ণিঝড় সিত্রাং মোকাবিলায় মেডিকেল টিম প্রস্তুত করেছে চট্টগ্রাম সিভিল সার্জন কার্যালয়। চট্টগ্রামে সর্বমোট ২৯০টি মেডিকেল টিম প্রস্তুত করা হয়েছে। ঘূর্ণিঝড় পূর্ববর্তী, ঘূর্ণিঝড়কালীন এবং পরবর্তীতে যেকোনো ধরনের সেবা গ্রহণের উদ্দেশ্যে বিশেষ কন্ট্রোল রুম চালু করা হয়েছে।
সিভিল সার্জন কার্যালয়ের তথ্যমতে, ১৫টি উপজেলার ২০০টি ইউনিয়নের ২০০টি মেডিকেল টিম, উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে ৫টি করে ৭৫টি টিম, ৯টি আরবান ডিসপেনসারিতে ৯টি মেডিকেল টিম, স্কুল হেলথ ক্লিনিকে ১টি মেডিকেল টিম, চট্টগ্রাম জেনারেল হাসপাতালে ৫টি মেডিকেল টিমসহ ২৯০টি মেডিকেল টিম প্রস্তুত করা হয়েছে।