ভূমিদস্যুদের পেটে সরকারি জমি

সাইফুল ইসলাম, সীতাকুণ্ড

প্রকাশিত: ১১:২৪, ১২ ফেব্রুয়ারি ২০২৪
ভূমিদস্যুদের পেটে সরকারি জমি

চট্টগ্রামের সীতাকুণ্ডে কুমিরা রেলস্টেশন সংলগ্ন জমিতে বাস করত প্রায় ৩০০ পরিবার, ছিল রেলওয়ের কিছু ভবনও। ভবন ভেঙ্গে বন্দুক উচিয়ে বাসিন্দাদের উচ্ছেদের পর ভূমিতে ঝুলছে ‘মহসিন রেজা’ নামের সাইনবোর্ড! দিনদুপুরে রেলের পুরো ৫ একর জমি গিলে নিল ভূমিদস্যুরা।

স্থানীয়দের সাথে কথা বলে জানা যায়, কুমিরা ইউনিয়নের একটি প্রভাবশালী ভূমিদস্যু চক্র গত কিছুদিন ধরে অত্যন্ত সন্তর্পনে রেলওয়ের অন্তত ৫ একর জায়গা কৌশলে চারিদিকে ঘিরে ফেলে। এরপর তারা এখানে বসবাসকারী ৩০০ পরিবারকে  অন্যত্র চলে যেতে বাধ্য করে। বসবাসকারীদের কেউ কেউ উচ্ছেদে বাধা দিলে তাদের মাথায় বন্দুক ঠেকিয়ে চলে যেতে বাধ্য করা হয়। দখলকৃত জায়গা রাতারাতি ভরাট করে ফেলা হচ্ছে।

স্থানীয়রা বলেছেন, এখানে প্রাকৃতিক ছড়া রয়েছে। এটা ভরাট হয়ে গেলে বর্ষায় চারদিকে জলাবদ্ধতার সৃষ্টি হবে।

শনিবার সরেজমিন গেলে দেখা যায়, কুমিরা রেলওয়ে স্টেশনের সাথে লাগোয়া উত্তর পশ্চিম পাশে বিশাল ভূমি দখল করা হয়েছে। দখলকৃত ভূমিতে মহসিন রেজা নামে ব্যক্তি নিজের নামে সাইনবোর্ড টাঙ্গিয়ে রেখেছেন। সাইন বোর্ডে লেখা রয়েছে ‘এমএস এগ্রিকালচার প্রোঃ মহসিন রেজা।’

ভিতরে প্রবেশ করে দেখা যায়, রেলওয়ের অনেক সরকারি ঘর ভাঙ্গা ও আধভাঙ্গা অবস্থায় রয়েছে। যেসব ঘর উচ্ছেদ করা হয়েছে সেখানে চলছে মাটি ভরাটের কাজ। পুরো জায়গার কয়েকটি স্থানে চৌকি বসিয়ে পাহারা দিতে দেখা যায় কয়েকজন উঠতি বয়সী যুবককে।

এখানে উপস্থিত থাকা কয়েকজন ভুক্তভোগীর সাথে কথা বলার চেষ্টা করলে দখলদারদের ভয়ে সামনা সামনি কেউ কথা বলার সাহস করেনি। পরবর্তীতে আড়ালে গিয়ে নাম প্রকাশ না করা শর্তে কয়েকজন তাদের করুণ দুর্দশার কথা তুলে ধরেন।

তারা বলেন, ‘এখানে মহসিন রেজা, মতিন মেম্বার ও মোহাম্মদ আলী গংরা তাদের অন্যত্র সরে যেতে এক সপ্তাহের সময় বেঁধে দেন। এক সপ্তাহের মধ্যে না গেলে তাদের চরম পরিণতির হুমকি দেন। উচ্ছেদে বাধা দিলে বেশ কয়েকজনকে মাথায় বন্দুক ঠেকানো হয়।’

অন্যদিকে অভিযোগের বিষয়ে জানতে চাইলে মোহাম্মদ আলী বলেন, ‘আমি হলাম দিনমজুর। আমাকে যেভাবে আদেশ দিয়েছে আমি শুধু কাজ করেছি। আমার কাছে কোন বন্দুক নাই, বন্দুক কিভাবে ধরতে হয় আমি জানিনা। বন্দুক আছে মহসিন রেজার ভাই মতিন মেম্বারের কাছে। তার কাছে সরকারি লাইসেন্স প্রাপ্ত বন্দুক রয়েছে।’

তবে অভিযোগ অস্বীকার করে মতিন মেম্বার বলেন, আমার কাছে কোন বন্দুক নাই। সরকারি লাইসেন্স করা বন্দুক আছে আমার বড় ভাই মহসিন রেজার কাছে। তবে এই ঘটনাকে কেন্দ্র করে আমি কখনো কুমিরা রেলওয়ে স্টেশনের আশেপাশেও যাইনি।

তবে এই বিষয়ে জানতে মহসিন রেজাকে ফোন দিলে পরিচয় জানার পর তিনি অপরপ্রান্তে অন্য কাউকে উদ্দেশ করে এই প্রতিবেদকের বিষয়ে ‘খোঁজখবর’ নিতে বলে ফোন কেটে দেন।

স্থানীয় ইউপি চেয়ারম্যান মোর্শেদ চৌধুরী বলেন, সরকার যেখানে ভূমিহীন ও গৃহীনদের ভূমি এবং গৃহ দিচ্ছে সেখানে সরকারি ভবন থেকে গৃহহীনদের উচ্ছেদ করা অত্যন্ত নিন্দনীয়। উচ্ছেদ হওয়া অনেক ভুক্তভোগী আমার কাছে এসেছেন। মহাসিন রেজারা জোর খাটিয়ে অন্তত ২৫ কোটি টাকার সম্পত্তি জবর দখল করার পায়তারা করছে। এই জবর দখল ঠেকাতে রেলওয়ের ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষ, এমনকি প্রয়োজনে প্রধানমন্ত্রীর দপ্তর পর্যন্ত যোগাযোগ করা হবে।’

এ ব্যাপারে রেলওয়ে পূর্বাঞ্চলের প্রধান সম্পত্তি কর্মকর্তা সুজন চৌধুরী বলেন, ‘রেলের সম্পত্তি জবর দখলের কোন সুযোগ নাই। জবর দখলকারী যথা প্রভাবশালী হোক আমরা তাদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নিব। বিষয়টি আমরা অবগত হয়েছি, ইতিমধ্যে আমাদের লোকজনকে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নিতে নির্দেশ দেওয়া হয়েছে। সরকার ও রেলওয়ের স্বার্থে যা করার দরকার সব করা হবে।’

সর্বশেষ

পাঠকপ্রিয়