টেকনাফে চেকপোস্টে পুলিশের গুলিতে সাবেক সেনা কর্মকর্তা নিহত
গাড়ি তল্লাসী নিয়ে বিতর্কের জেরে টেকনাফে পুলিশের গুলিতে সেনা বাহিনীর অবসরপ্রাপ্ত এক মেজর নিহত হয়েছেন। শুক্রবার (৩১ জুলাই) দিবাগত রাত সাড়ে ১০টার দিকে বাহারছড়া মেরিন ড্রাইভ সড়কের চেকপোস্টে এই ঘটনা ঘটে। নিহত সেনা কর্মকর্তার নাম সিনহা মো. রাশেদ।
পুলিশ জানিয়েছে, ওই সেনা কর্মকর্তা তার ব্যক্তিগত গাড়িতে করে অপর একজন সঙ্গীসহ টেকনাফ থেকে কক্সবাজার আসছিলেন। মেরিন ড্রাইভ সড়কের বাহারছড়া চেকপোস্টে পুলিশ গাড়িটি থামিয়ে তল্লাশি করতে চাইলে তিনি বাধা দেন। এই নিয়ে তর্কবিতর্কের এক পর্যায়ে সেনা কর্মকর্তা তার কাছে থাকা পিস্তল বের করলে পুলিশ গুলি চালায়। এতে ওই সেনা কর্মকর্তা গুরুতর আহত হয়। পরে কক্সবাজার সদর হাসপাতালে নিয়ে গেলে কর্তব্যরত চিকিৎসক মৃত ঘোষণা করেন। শনিবার সকালে নিহতের ময়নাতদন্ত সম্পন্ন হয়েছে।
নিহত সিনহা মোহাম্মদ রাসেদের বাড়ি যশোর জেলায়। তিনি বিএমএ লং কোর্সের ৫১ তম ব্যাচের কর্মকর্তা ছিলেন।তিনি সেনাবাহিনী ছাড়াও এসএসএফে কাজ করেছেন।
কক্সবাজারের পুলিশ সুপার এবিএম মাসুদ হোসেন জানিয়েছেন, ‘শামলাপুুরের লোকজন ওই গাড়ির আরোহীদের ডাকাত সন্দেহ করে পুলিশকে খবর দেয়। পুলিশ চেকপোস্টে গাড়িটি থামানোর চেষ্টা করে। কিন্তু গাড়ির আরোহী একজন তার পিস্তল বের করে পুলিশকে গুলি করার চেষ্টা করে। আত্মরক্ষার্থে পুলিশ গুলি চালায়। এতে ওই ব্যক্তি মারা যায় ।
এসপি জানান, ‘এই ঘটনায় দুটি মামলা হয়েছে। ২ জনকে আটক করা হয়েছে। পুলিশ পিস্তলটি জব্দ করেছে। এছাড়া গাড়িতে তল্লাশি করে ৫০টি ইয়াবা, কিছু গাজা এবং দুটি বিদেশি মদের বোতল উদ্ধার করা হয়েছে। নিহত অব. মেজর রাশেদ একটি তথ্য চিত্র ধারনের কাজে এক নারী ও অপর ৩ পুরুষ সঙ্গিসহ গত এক মাস ধরে হিমছড়ির একটি রেস্টহাউজে অবস্থান করছিলেন।’
এদিকে, অবসরপ্রাপ্ত মেজর সিনহা নিহত হওয়া প্রসঙ্গে এক কর্মকর্তা বলেন, গত ৩ জুলাই অবসরপ্রাপ্ত মেজর সিনহা এবং সাথে আরও তিনজন নিয়ে ইউটিউব এর ট্রাভেল ভিডিও (জাস্ট গো) তৈরি করার জন্য ঢাকা থেকে কক্সবাজারে আগমন করেন। সাথে ছিলেন ডাইরেক্টর শিপ্রা, ক্যামেরাম্যান সিফাত ও আরো একজন নিয়ে নীলিমা রিসোর্টে অবস্থান গ্রহণ করেন। নীলিমা রিসোর্ট থেকে ভিডিও ধারণের জন্য বাহারছড়া ইউনিয়নের ৭ নং ওয়ার্ডের রাতের ভিডিও ধারণ করার জন্য রাত ১০ টার সময় মেজর সিনহা ও সিফাত পাহাড় দেখতে আসেন। লাইটের আলো দিয়ে পাহাড়ে অবস্থান গ্রহণ করলে স্থানীয় বাসিন্দারা ডাকাত দল ভেবে পুলিশকে খবর দেন। এই পরিস্থিতিতে মেজর সিনহা ও সিফাত পাহাড় থেকে নেমে এসে মেরিন ড্রাইভ রোডে প্রাইভেট কারে উঠে নীলিমা রিসোর্ট এর উদ্দেশ্যে গমন করার সময় বিজিবির চেকপোষ্টে মেজর সিনহা পরিচয় দিয়ে চলে আসে।
পরবর্তীতে লামাবাজার পুলিশ চেকপোস্টে এলে পুলিশের সাথে অবসরপ্রাপ্ত মেজর সিনহা বলে পরিচয় দেন। পুলিশ তাকে ডাকাত ভেবে চেক করতে গেলে পুলিশের সাথে তর্কাতর্কি হয়। মেজর সিনহা বলেন, 'তোমরা আমার গাড়ি চেক করতে পারো না। গাড়ি চেক করতে হলে তোমার ওসি সাহেবকে আসতে বল।' কথা কাটাকাটির এক পর্যায়ে ইন্সপেক্টর লিয়াকতকে ব্যাপারটি জানালে তাকে গাড়ি থেকে নামিয়ে বেঁধে রাখার নির্দেশ দেন। কর্তব্যরত পুলিশ সদস্যরা মেজর সিনহাকে বলেন, 'আপনারা যেই হোন না কেন আপনাদের গাড়ি আমাদের চেক করতে হবে। আপনারা গাড়ি থেকে নামুন।'
মেজর সিনহা গাড়ি থেকে নামার সাথে সাথে হাত-পা বেঁধে রোডের উপরে শুয়ে রাখে। এই অবস্থায় ইন্সপেক্টর লিয়াকত পৌঁছেন। তাকে জিজ্ঞাসাবাদ করতে গেলে তর্ক বিতর্ক হয়। এ কারণে মেজর সিনহাকে গত ৩১ জুলাই রাত সাড়ে ১১টার দিকে বুকে এবং গলার নিচে তিন রাউন্ড ফায়ার করে। সিফাতকে হাত-পা বেঁধে পুলিশ ফাঁড়িতে নিয়ে আসা হয়। অবসরপ্রাপ্ত মেজর সিনহাকে গুলিবিদ্ধ অবস্থায় সিভিল মিনি ট্রাকে করে কক্সবাজার সদর হসপিটালে নিয়ে যায়।
এদিকে এঘটনা খতিয়ে দেখতে সরকার একজন উপ সচিবের নেতৃত্বে একটি তদন্ত কমিটি গঠন করেছে বলে জানা গেছে। বিষয়টি নিয়ে সামরিক ও বেসামারিক প্রশাসনের কর্মকর্তারা দিন ব্যাপী বৈঠক করেছেন।
কক্সবাজার প্রতিনিধি