প্রাণহীন কোহেলিয়া নদী, অস্তিত্ব সংকটে জেলেদের জীবন

মহেশখালী প্রতিনিধি

প্রকাশিত: ১৮:৫৪, ১০ নভেম্বর ২০২২
প্রাণহীন কোহেলিয়া নদী, অস্তিত্ব সংকটে জেলেদের জীবন

দরগা পাড়া গ্রামের নুরুল কাদের পেশায় জেলে।

কক্সবাজার জেলার মহেশখালী উপজেলার মাতারবাড়ি ইউনিয়নের উত্তর রাজঘাট দরগা পাড়া গ্রাম। কোহেলিয়া নদীর তীর ঘেষে গড়ে উঠা এই গ্রামের মানুষের জীবিকার একমাত্র উৎস মাছ ধরা। তবে ২০১৬ সালের পর কোহেলিয়া নদীটি অস্বাভাবিক হারে ভরাট হয়ে এখন মৃত প্রায়। ভাটার সময় নদীর পানি প্রায় শুকিয়ে যায় বললেই চলে। যার ফলে এই নদীতে আর জাল বসানো সম্ভব হয়না। বাধ্য হয়েই জেলে পেশা থেকে মুখ ফিরিয়ে নিতে হয়েছে এই গ্রামবাসীকে। এখন সংসার চালাতেই হিমশিম খাচ্ছে এখানকার জেলেরা।

নুরুল কাদের পেশায় জেলে ছিলেন। তিনটা নৌকার মালিক নুরুল কাদেরের অধীনে কাজ করতেন আরোও কয়েকজন জেলে। কোহেলিয়া নদীতে মাছ শিকার করেই চার সন্তান ও স্ত্রী নিয়ে সুখে সংসার চলতো তার। কিন্তু হঠাৎ কোহেলিয়া নদী প্রাণহীন হয়ে পড়ায় বিপত্তি বাধে। বন্ধ হয়ে যায় আয়ের একমাত্র উৎস। বর্তমানে নৌকা গুলো কেটে চুলোয় লাকড়ি হিসেবে ব্যবহার করতে বাধ্য হয়েছেন নুরুল কাদের। আর জাল গুলো কিছু ব্যবহার করেছেন বাড়ির ঘেরাবেড়ার কাজে। আর কিছু অবহেলায় পড়ে রয়েছে বাড়ির আঙ্গিনায়।

নুরুল কাদের জানান, এক সময় কোহেলিয়া নদীটির প্রাণ ছিল। নদীতে উৎসবমুখর পরিবেশে দলবদ্ধ মাঝ শিকারে নামতো তারা। কিন্তু এই নদী ঘেষে কয়লা বিদ্যুৎ প্রকল্পের রাস্তা ও স্থাপনা তৈরি করায় কোহেলিয়া নদী ছোট হয়ে যায়। সাথে মাতারবাড়ি কয়লা বিদ্যুৎ প্রকল্পের বর্জ্যের সাথে মাটিও এসে পড়ে নদীতে। ভাটার সময় নদীর পানি শুকিয়ে যায়। যার ফলে এই নদীতে আর জাল বসানো সম্ভব হয়না। ২০১৬ সালের পর ভরাট হয়ে নদীটি এখন মৃত প্রায়। 

নুরুল কাদেরের স্ত্রী নুর আয়েশা বলেন, ‘চার সন্তান নিয়ে অসহায় জীবনযাপন করছি। জলাবদ্ধতার কারণে বর্ষা মৌসুমে বাড়িতে পানি ঢুকে। এইজন্য বাড়ির আঙ্গিনায় শাকসবজির চাষও করা যায়না। স্বামী কর্মহীন হয়ে পড়ায় ধারদেনা করেই কষ্টে সংসার চালাচ্ছি। সন্তানদের পড়াশোনা চালানো দায় হয়ে পড়েছে। বিকল্প আয়ের ব্যবস্থা না হলে চরম সংকটে পড়বো আমি সহ জেলে পরিবার গুলো।’

মাতারবাড়ি ৩ নম্বর ওয়ার্ডের ইউপি সদস্য মো. আলাউদ্দিন জানান, কোহেলিয়া নদীর পাশঘেষে গড়ে উঠেছে দক্ষিণ ও উত্তর রাজঘাট নামের দুটি গ্রাম। গ্রামে প্রায় ১৭ হাজার মানুষের বসবাস এবং ভোটার সংখ্যা ৬ হাজারের অধিক। গ্রাম দুটির বেশিরভাগ মানুষ জেলে পেশার সাথে সম্পৃক্ত। 

রফিক উদ্দিন মানিক ও সাকিব নামের দুই গ্রামবাসী জানান, কোহেলিয়া নদীর উপর নির্ভর করে চলে ৫ শতাধিক জেলের পরিবার। যাদের মধ্যে ২৮৪ জনের মতো নিবন্ধিত জেলে রয়েছে এবং বাকিরা অনিবন্ধিত। কোহেলিয়া নদী ভরাটের কারণে বর্তমানে এসব জেলেদের পরিবারে অর্থনৈতিক মন্দা চলছে। 

মাতারবাড়ি ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান আবু হায়দার বলেন, ‘কোহেলিয়া নদী নির্ভরশীল জেলেদের পূর্নবাসন ও বিকল্প পেশা সৃষ্টি কিংবা দক্ষতা অর্জনের জন্য প্রকল্প হাতে নিতে উর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের বরাবর প্রস্তাব করেছি।’

সর্বশেষ

পাঠকপ্রিয়