Cvoice24.com

জোহরের সঙ্গে জুমার নামাজের পার্থক্য

ফিচার ডেস্ক

প্রকাশিত: ২১:৩৬, ১৭ নভেম্বর ২০২২
জোহরের সঙ্গে জুমার নামাজের পার্থক্য

ইয়ামুল জুমা। মুসলমানদের সাপ্তাহিক ইবাদতের শ্রেষ্ঠ দিন। এ দিন সুনির্দিষ্ট হুকুম ও শর্ত মেনেই জুমার নামাজ পড়তে হয়। নামাজসহ বিশেষ কিছু ইবাদত-বন্দেগিও রয়েছে এ দিন। জুমার নামাজ জোহরের সময় পড়লেও জোহরের সঙ্গে জুমার নামাজের নিয়মগত কিছু পার্থক্য রয়েছে। 

জোহরের সঙ্গে জুমার নামাজের পার্থক্য—

১. জুমার নামাজ ২ রাকাত ফরজ আর জোহরের নামাজ ৪ রাকাত ফরজ রয়েছে।

২. জুমার ফরজ নামাজের আগে ২/৪ রাকাত দুখুলিল মসজিদ/কাবলাল জুমা এবং পরে ৪ রাকাত বাদাল জুমা (সুন্নাত নামাজ) আদায় করতে হয়। আর জোহরের নামাজের আগে ৪ রাকাত সুন্নাতে মোয়াক্কাদা পড়তে হয়।

৩. জুমার নামাজের আগে ইমামের খুতবা শুনতে হয়। খুতবা শোনা আবশ্যক। জোহর নামাজের জন্য কোনো খুতবা শুনতে হয় না।

৪. এ ছাড়াও জুমার দিন অনেক নফল নামাজ, কোরআন তেলাওয়াত, তাওবা-ইসতেগফার ও দরূদ পড়ার বিশেষ ফজিলত নির্ধারিত আছে। যা অন্যান্য দিন জোহরের সময় নেই। তবে এসব নফল নামাজ জুমার অংশ হিসেবে পড়া হয় না এবং তা আবশ্যকীয়ও নয় বরং ব্যক্তি তা স্বেচ্ছায় এসব আমল-ইবাদত করতে পারে এবং না করলে তার দোষ হয় না।

জুমা নামাজ পড়ার নিয়ম—

দুই রাকাত জুমার নামাজ পড়া ফরজ। এছাড়া ফরজ নামাজের আগে চার রাকাত কাবলাল জুমা এবং পরে চার রাকাত বাদাল জুমা (সুন্নাত নামাজ) আদায় করতে হয়। এ ছাড়াও মসজিদে প্রবেশ করেই দুই রাকাত দুখুলিল মসজিদ নামাজ আদায় করা সুন্নাত। জুমার নামাজের আগের পরের এসব নামাজ জুমার নামাজের অংশ নয়।

জুমার নামাজের জন্য জামাত শর্ত। জামাতের সঙ্গে জুমার নামাজ আদায় করতে হয়। তা একাকি আদায় করা যায় না। জুমার নামাজের আজান হলে সব কাজ-কর্ম বন্ধ করে দেওয়ার নির্দেশ এসেছে কোরআনে।

যুক্তিসঙ্গত কারণ ছাড়া (যেমন খুব অসুস্থ ব্যক্তি) জুমার নামাজ ত্যাগ করার সুযোগ নেই।  জুমা আদায় করতে না পারে তবে তার ক্ষেত্রে জোহরের নামাজ আদায় করা নিয়ম। তাছাড়া কিছু ক্ষেত্রে সুস্থ ব্যক্তির উপর, যেমন ভ্রমণকারী (মুসাফির) অবস্থায় জুমার আবশ্যকতা থাকে না এবং সেক্ষেত্রে জোহরের নামাজ আদায় করলে তা গ্রহণীয় হয়। তবে ভ্রমণকারী চাইলে জুমা আদায় করতে পারে।

সুতরাং মুমিন মুসলমানের উচিত, জুমার দিন আগে আগে মসজিদে গিয়ে ২ রাকাত জুমার ফরজ নামাজ ইমামের সঙ্গে আদায় করা। জুমার ফজিলত ও বরকত গ্রহণের আগ্রহী হওয়া।

জুমার নামাজের সময় যা যা করা নিষিদ্ধ—

জুমার নামাজ পড়া ফরজ। এ সময় যে কোনো কাজ নিষিদ্ধ। জুমার নামাজের আজান দেওয়ার সঙ্গে সঙ্গে নামাজের প্রস্তুতি নিয়ে প্রাপ্ত বয়স্ক সুস্থ ও স্থায়ী মুসলমানের মসজিদের দিকে দ্রুত যাওয়া আবশ্যক। জুমার আজানের পর অন্য যে কোনো কাজ করাই কি হারাম বা নিষিদ্ধ?

কোরআনের নির্দেশনায় আজান হওয়ার সঙ্গে সঙ্গে সব কাজ রেখে মসজিদে ধাবিত হওয়ার বিষয়টি প্রমাণিত। মহান আল্লাহ বলেন-

یٰۤاَیُّهَا الَّذِیۡنَ اٰمَنُوۡۤا اِذَا نُوۡدِیَ لِلصَّلٰوۃِ مِنۡ یَّوۡمِ الۡجُمُعَۃِ فَاسۡعَوۡا اِلٰی ذِکۡرِ اللّٰهِ وَ ذَرُوا الۡبَیۡعَ ؕ ذٰلِکُمۡ خَیۡرٌ لَّکُمۡ اِنۡ کُنۡتُمۡ تَعۡلَمُوۡنَ

‘হে ঈমানদারগণ! জুমার দিন যখন নামাজের জন্য আজান দেওয়া হয়; তখন তোমরা আল্লাহর স্মরণে দ্রুত বেরিয়ে পড় আর সব লেনদেন (বেচাকেনা) তখন বন্ধ করে দাও।’ (সুরা জুমা : আয়াত ৯)

ইসলামিক স্কলাররা এ ব্যাপারে একমত যে, জুমার দিন দ্বিতীয় আজানের পর যে কোনো কাজ তথা লেন-দেন (কেনাবেচা) সম্পূর্ণরূপে হারাম বা নিষিদ্ধ। এ সময় যারা লেনদেন বা বেচাকেনা করে তা অবৈধ ও বাতিল বলে গণ্য হবে।

তাছাড়া অলসতা বশতঃ জুমার নামাজে অনুপস্থিত থাকার বিষয়ে কঠোরভাবে সতর্ক করেছেন বিশ্বনবি সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম। হাদিসে এসেছে-

‘লোকদের জুমার নামাজ ত্যাগ করা থেকে অবশ্যই বিরত থাকতে হবে। নতুবা আল্লাহ তাআলা তাদের হৃদয়ে মোহর মেরে দেবেন। এরপর তারা অনন্তকাল ধরে অলসতায় আচ্ছন্ন থাকবে।’ (মুসলিম)

এ হাদিস থেকেও প্রমাণিত যে, জুমা আদায় করা আবশ্যক। আর এ সময় অন্য যে কোনো কাজে ব্যস্ত থাকা বিষয়টিও নিষিদ্ধের প্রমাণ বহন করে।

মনে রাখতে হবে—

জুমার নামাজ চারশ্রেণির মানুষ ছাড়া প্রত্যেক মুসলমানের উপর ফরজ। সুতরাং চার শ্রেণির লোক- ক্রীতদাস, নারী, অপ্রাপ্তবয়স্ক বালক ও অসুস্থ ব্যক্তি ছাড়া সব মুসলমানকেই নির্ধারিত সময়ে জুমায় উপস্থিত হওয়া আবশ্যক। কেননা যথা সময়ে নামাজ পড়ার ব্যাপারে কঠোর নির্দেশনা দিয়েছেন স্বয়ং আল্লাহ-

اِنَّ الصَّلٰوۃَ کَانَتۡ عَلَی الۡمُؤۡمِنِیۡنَ کِتٰبًا مَّوۡقُوۡتًا

‘নিশ্চয়ই নামাজ মুমিনের উপর নির্দিষ্ট সময়ে আদায় করাকে ফরজ করা হয়েছে।’ (সুরা নিসা : আয়াত ১০৩)

এছাড়া জুমার দিন শুধু জুমার নামাজ পড়াই আবশ্যক নয়, বরং এ দিন ইমামের খুতবা শোনাও আবশ্যক। কেননা কুরআনুল কারিমের নির্দেশনায় নামাজের পাশাপাশি ‘আল্লাহর স্মরণ’ বলতে খুতবাহ শোনার কথাই বোঝানো হয়েছে বলে ব্যাখ্যা করেছেন ইসলামিক স্কলার ও মুফাসসিরগণ।

সুতরাং মুমিন মুসলমানের উচিত, যাদের জন্য জুমা আদায় করা আবশ্যক; তাদের সবাইকে প্রথম আজানের সঙ্গে সঙ্গে দেরি না করে মসজিদে চলে আসা। জুমার খুতবা শোনা এবং সময় হওয়ার সঙ্গে সঙ্গে ইমামের সঙ্গে জুমার নামাজ আদায় করা জরুরি।

আল্লাহ তাআলা মুসলিম উম্মাহকে আবশ্যক কাজ খুতবা শোনা এবং জুমা আদায়ের জন্য যথা সময়ে মসজিদে উপস্থিত হওয়ার তাওফিক দান করুন। কুরআনের নির্দেশনা ও হাদিসের সতর্কতা মেনে চলার ও মুসলিম উম্মাহক জুমার ২ রাকাত ফরজ নামাজ যথাযথভাবে আদায় করার তাওফিক দান করুন। আমিন

সর্বশেষ