ওষুধের দোকানে ক্রেতার খরা

শারমিন রিমা, সিভয়েস২৪

প্রকাশিত: ২১:৩১, ২৩ এপ্রিল ২০২৪
ওষুধের দোকানে ক্রেতার খরা

ঘড়ির কাঁটায় দুপুর আড়াইটা। অন্যদিন ঠিক এ সময়ে রোগীর স্বজনদের ভিড় লেগে থাকে পাঁচলাইশ এলাকার পার্কভিউ হাসপাতালের পাশের মের্সাস জাওয়াদ মেডিসিন কর্নারে। অথচ মঙ্গলবার (২৩ এপ্রিল) সকাল থেকে হাতেগোনা কয়েকজন ক্রেতা এসেছেন এই ফার্মেসীতে। বেলা গড়িয়ে বিকেল হলেও অন্যদিনের তুলনায় ১০ শতাংশ ক্রেতাও ছিলনা। চট্টগ্রামে দুই চিকিৎসকের ওপর হামলার ঘটনায় বাংলাদেশ মেডিকেল অ্যাসোসিয়েশনের ডাকে সকাল থেকে বেসরকারি হাসপাতালগুলোতে নতুন রোগী ভর্তি, পরীক্ষা নিরীক্ষা বন্ধ থাকায় দিনভর এমন ক্রেতা সংকটে ভুগেছে ফার্মেসীগুলো। 

সরেজমিন ঘুরে দেখা গেছে, নগরের বেসরকারি হাসপাতালের আশেপাশে থাকা ফার্মেসীগুলোতে তেমন একটা ক্রেতার ভিড় ছিলনা। দুয়েকজন যারা আসছিলেন তারা টুকটাক ওষুধের জন্য। পুরনো রোগীর কিছু ওষুধ বেচাবিক্রি হচ্ছিল তবে তা খুবই যৎসামান্য।

সরেজমিন ক্রেতা খরার একইচিত্র দেখা গেছে নগরের পাঁচলাইশ এলাকার শেভরণ হাসপাতালের পাশের লাইফ ফার্মেসী এন্ড অপটেটিকস, মনীষা মেডিকো। প্রবর্তক মোড় এলাকার আরএন মেডিকেল কর্নার, মেসার্স মদিনা ফোর্মেসী, এটিএম ফার্মেসী, প্রিয় ফার্মাতে এবং জিইসি মোড় এলাকার মের্সাস সেন্ট্রাল র্ফামেসী, মের্সাস নিজামপুর ড্রাগ হাউজ, মেডিসিন শপ নামের ওষুধের দোকানগুলোতে। 

বিক্রেতারা বলছেন, দৈনিক যা বেচাকেনা হয় তার ৮০ শতাংশ প্রেসক্রিপশনের রোগী। চিকিৎসকরা প্রাইভেট চেম্বারে রোগী দেখেননি, যার কারণে বেচাকেনা একদমই হয়নি।

মের্সাস জাওয়াদ মেডিসিন কর্নারের বিক্রয়কর্মী জামাল হোসেন হায়দার বলেন, ‘হাসপাতালে চিকিৎসাসেবা বন্ধ, রোগী এসে এসে ফেরত যাচ্ছে। তার প্রভাব পড়েছে আমাদের কেনাবেচায়। ডাক্তারের প্রেশক্রিপসন নিয়েই ওষুধ কিনতে আসেন রোগীরা। এখন রোগী দেখা বন্ধ তাই ক্রেতাও নেই। অন্যদিনের চেয়ে আজকের বিক্রি আকাশ পাতাল পার্থক্য।’

বেচাবিক্রিতে কেমন প্রভাব পড়েছে জানতে চাইলে এ বিক্রয়কর্মী বলেন, একেবারে হাতেগোনা ক্রেতা পেয়েছি সকাল থেকে। দিনশেষে হিসাব মেলালেই বোঝা যাবে দৈনিক টার্গেট থেকে কতটা পিছিয়েছি আজকে।’

মেডিসিন শপের বিক্রয়কর্মী আতিক বলেন, ‘রোগী নাই তাই আমাদের বিক্রিও নাই। ডাক্তার রোগী দেখলেই তো তারা প্রেসক্রিপশন নিয়ে ওষুধ কিনবেন। সকাল থেকে রোগীরা চিকিৎসাসেবা পাচ্ছে না তাই আমাদেরও ক্রেতা আসছে না।’

নিজামপুর ফার্মেসীর বিক্রয়কর্মী আলমগীরের বলেন, ‘দুপুরের দিকে এমনিতেই ক্রেতা কম থাকে। তবে আজকে অন্য দিনের চেয়ে কম ক্রেতা আসছে দোকানে। পুরাতন রোগী যারা আছেন তারা আস্তে ধীরে ওষুধ কিনবেন।’

চাপ পড়েছে সরকারি হাসপাতালে

বেসরকারি পর্যায়ে চিকিৎসা সেবা বন্ধ থাকায়, রোগীর চাপ বেড়েছে সরকারি হাসপাতালগুলোতেও। স্বাভাবিক সময়ের চেয়ে ২০ শতাংশ বেশি রোগী বেড়েছে চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের বর্হিবিভাগ, প্যাথলজি ও ভর্তি রোগীর হারে। 

এ বিষয়ে চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের পরিচালক ব্রিগ্রেডিয়ার জেনারেল ডা. শামীম আহসান বলেন, ‘বেসরকারি প্রতিষ্ঠান বন্ধ থাকার কারণে আমাদের রোগীর চাপ বেড়েছে। ভর্তি রোগী থেকে শুরু করে বর্হিবিভাগ এমনকি পরীক্ষা নিরীক্ষার হারও বেড়েছে আজ। তবে আমাদের সেবা থেকে কেউ বঞ্চিত হচ্ছেন না। কেউ সেবা না নিয়ে যাচ্ছেন না।’

সেবা না পেয়ে ফিরে গেছেন গড়ে অন্তত ১৫শ রোগী

কেউ এসেছেন ডাক্তার দেখাতে আবার কেউবা রোগ নির্ণয়ের পরীক্ষা নিরীক্ষা করাতে। কিন্তু দরজায় সাঁটানো কার্যক্রম বন্ধের নোটিশ সেবা ফিরে গেছেন রোগীরা। বেসরকারি হাসপাতালের একাধিক তথ্য ডেস্ক, নিরাপত্তা কর্মীর সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে গড়ে অন্তত ১৫শ’ রোগী ফেরত গেছে। সবচেয়ে বেশি বিপাকে পড়েছেন দূর দূরান্ত থেকে আসা রোগী ও তাদের স্বজনরা।

একটি বেসরকারি ডায়াগনস্টিক সেন্টারের নিরাপত্তা প্রহরী কামরুল ইসলাম সিভয়েস২৪কে বলেন, সকাল থেকে যারা আসছিলেন তাদের সবাই নোটিশ দেখে ফিরে গেছেন। অনেকে নানা ভাবে চেষ্টা করেছেন ডাক্তার দেখাতে। তবে পুরাতন যারা ভর্তি ছিলেন তাদের ছাড়া আর কাউকে ডাক্তাররা দেখেননি। জরুরি যেসব রোগী এসেছে তাদের সরকারি হাসপাতালে যাওয়ার পরামর্শ দিয়েছে কর্তৃপক্ষ।’

আরেকটি বেসরকারি হাসপাতালের অ্যাডমিশন ডেস্কের ইনচার্জ আরিফুল ইসলাম বলেন, প্রতিদিন হাসপাতালে ৫০ জনের বেশি নতুন রোগী ভর্তি হয়। কিন্তু আজ (মঙ্গলবার) এরচেয়ে বেশি রোগী এসেছে। সবাইকে ফেরত পাঠাতে হয়েছে।’

প্রসঙ্গত, গত ১০ এপ্রিল রাতে পটিয়া পৌরসভায় বেসরকারি ‘পটিয়া জেনারেল হাসপাতাল লিমিটেডে’ কর্তব্যরত চিকিৎসক রক্তিম দাশের ওপর হামলার ঘটনা এবং গত ১৪ এপ্রিল সকালে নগরের ও আর নিজাম রোডের বেসরকারি মেডিকেল সেন্টার হাসপাতালে চিকিৎসক রিয়াজ উদ্দিন শিবলুর উপর হামলার প্রতিবাদে মঙ্গলবার (২৩ এপ্রিল) ভোর ৬টা থেকে বেসরকারি পর্যায়ে সব ধরনের চিকিৎসাসেবা বন্ধ রাখে বাংলাদেশ মেডিকেল অ্যাসোসিয়েশন (বিএমএ) চট্টগ্রাম জেলার নেতারা। এ কর্মসূচি ২৪ ঘন্টা অর্থাৎ আগামীকাল ভোর ৬টা পর্যন্ত চলবে। তবে ঘটনায় জড়িতদের আইনের আওতায় আনতে ব্যর্থ হলে আগামীতে আরও কঠোর কর্মসূচির হুঁশিয়ারি দিয়েছেন বাংলাদেশ মেডিকেল অ্যাসোসিয়েশনের (বিএমএ) নেতারা।

সর্বশেষ

পাঠকপ্রিয়