রোগী-স্বজনরা মহাকষ্টে, চমেক হাসপাতালে ভিড়

দেবাশীষ চক্রবর্তী, সিভয়েস২৪

প্রকাশিত: ১৪:০৯, ২৩ এপ্রিল ২০২৪
রোগী-স্বজনরা মহাকষ্টে, চমেক হাসপাতালে ভিড়

চট্টগ্রামে দুই চিকিৎসকের ওপর হামলার প্রতিবাদে এবং অভিযুক্তদের গ্রেপ্তারের দাবিতে প্রাইভেট প্র্যাকটিস বন্ধ রেখেছেন চিকিৎসকরা। এছাড়া ক্লিনিকে নতুন রোগী ভর্তি এবং রোগনির্ণয় কেন্দ্রগুলোতে বন্ধ রয়েছে সেবা। ফলে মহাদুর্ভোগে পড়েছেন রোগী ও তাদের স্বজনরা।

এদিকে, চিকিৎসকদের এই আন্দোলনের কারণে বেসরকারি হাসপাতালে ভর্তি করাতে না পেরে বাধ্য হয়ে রোগীরা ছুটছেন চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজ (চমেক) হাসপাতালে। এতে মঙ্গলবার (২৩ এপ্রিল) সকাল থেকে চমেক হাসপাতালে রোগীর উপচেপড়া ভিড়।

সরেজমিনে দেখা গেছে, চট্টগ্রামের বিভিন্ন বেসরকারি স্বাস্থ্যসেবা ও রোগ নির্ণয়কারী প্রতিষ্ঠানের সামনে দাঁড়িয়ে আছেন রোগীরা। বেসরকারি চিকিৎসা কেন্দ্রে সেবা না পাওয়ায় একপর্যায়ে  রোগীরা ছুটছেন চমেক হাসপাতালের দিকে। রোগীর চাপ বৃদ্ধিতে সেখানে গিয়েও সেবা পেতে চরম দুর্ভোগ পোহাতে হচ্ছে রোগী ও স্বজনদের।

অন্য দিনের তুলনায় আজ রোগীর চাপ বেশি চমেক হাপসাতালে—

অন্যান্য দিনের তুলনায় আজ (মঙ্গলবার) রোগীর চাপ বেশি হওয়ার কথা স্বীকার করেছেন চমেক হাসপাতালের ৭ নম্বর ওয়ার্ডের চিকিৎসক সাইফুল ইসলাম। তিনি সিভয়েস২৪-কে বলেন, ‘বেসরকারি হাসপাতাল বন্ধ থাকার কারণে সব রোগীরা চট্টগ্রাম মেডিকেল হাসপাতালের দিকে আসছেন। এতে রোগীর চাপ বাড়ছে।’

অতিরিক্ত চাপের কারণে রোগীরা চমেক হাসপাতালে পর্যাপ্ত চিকিৎসা ও সেবা পাচ্ছে না বলে অভিযোগ জানিয়েছেন অনেকে রোগীর স্বজন। নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক এক রোগীর স্বজন বলেছেন, ‘বোয়ালখালীর কধুরখীল থেকে রোগী নিয়ে এসেছেন সকাল ১১টার দিকে। এর আগে থেকেই হাসপাতালের জরুরি বিভাগে রোগী ও স্বজনদের ভিড় ছিল। যার কারণে অনেকে রোগী পর্যাপ্ত চিকিৎসা ও সেবা পাচ্ছেন না।’

বেসরকারি হাসপাতাল বন্ধ, তবু দাঁড়িয়ে রোগীরা—

৫২ বছরের বৃদ্ধা হাফিজা বেগমকে নিয়ে পপুলার ডায়াগনস্টিক সেন্টারে এসেছেন নাতি নাসিরুল হক। মূলফটকে তালাবদ্ধ থাকায় ভেতরে প্রবেশ করতে পারছিলেন না তারা। শুধু তারা নয়, তাদের মতো আরো অনেক রোগী সেবা নিতে এসেও ব্যর্থ হয়েছেন। তারা সবাই গেটের সামনে দাঁড়িয়ে রয়েছেন আবার অনেকে ছুটে গেছেন চমেক হাসপাতালে। 

শমসেরপাড়া এলাকা থেকে আসা নাসিরুল হক বলেন, ‘আমার নানীর অসুস্থতার কারণে উনাকে ডাক্তার দেখানো হয়েছিল। ডাক্তার ইসিজি আর কিছু পরীক্ষা করাতে বলেছিলেন। তাই উনার পরামর্শে পপুলার ডায়াগনস্টিক সেন্টারে এসেছি। তবে এত দূর থেকে এসেও কোনো কাজ হয়নি। ভেতরে যেতে পারছি না, দুই ঘণ্টা যাবৎ বাইরে দাঁড়িয়ে আছি। তাদের নাকি আজ সেবা কার্যক্রম বন্ধ।’

এদিকে, সেনসিভ হাসপাতাল চালু হওয়ার পর থেকে এ প্রথম মূলফটকে তালা দেখছেন স্থানীয় বাসিন্দা শহিদুল হক। তিনি সিভয়েস২৪-কে বলেন, ‘নগরের জামাল খান এলাকার সেনসিভ ডায়াগনস্টিক সেন্টারে গত ত্রিশ বছর যাবৎ কখনো তালা দেখিনি। আজই প্রথম গেটে তালা ঝুলানো দেখলাম।'

জড়িতদের আইনের আওতায় আনতে ব্যর্থ হলে আগামীতে আরও কঠোর কর্মসূচি—

ঘটনা সঙ্গে জড়িতদের আইনের আওতায় আনতে ব্যর্থ হলে আগামীতে আমরা আরও কঠোর কর্মসূচি দেওয়া হবে বলে হুঁশিয়ারি দিয়েছেন বাংলাদেশ মেডিকেল অ্যাসোসিয়েশন (বিএমএ) চট্টগ্রামের সাধারণ সম্পাদক ফয়সাল ইকবাল চৌধুরী। তিনি সিভয়েস২৪-কে বলেন, ‘ঘটনায় জড়িতদের আইনের আওতায় আনতে হবে। আসামিদের দ্রুত গ্রেপ্তার করতে হবে। এছাড়া ঘটনায় জড়িতদের আইনের আওতায় আনতে ব্যর্থ হলে; আগামীতে আমরা আরও কঠোর কর্মসূচি ঘোষণা করবো।’

এর আগে, চট্টগ্রামে দুই চিকিৎসকের ওপর হামলার প্রতিবাদে এবং অভিযুক্তদের গ্রেপ্তারের দাবিতে মঙ্গলবার (২৩ এপ্রিল) সকাল ৬টা থেকে বুধবার সকাল ৬টা পর্যন্ত ব্যক্তিগত চেম্বার, হাসপাতালে নতুন রোগী ভর্তি, ডায়াগনস্টিক সেন্টারে নতুন রোগীর সেবা কার্যক্রম বন্ধ রাখার ঘোষণা দেয় চিকিৎসকদের সংগঠন বাংলাদেশ মেডিকেল অ্যাসোসিয়েশনের (বিএমএ) চট্টগ্রাম শাখা।

জানা গেছে, গত ১১ এপ্রিল চট্টগ্রামের পটিয়ায় ‘পটিয়া জেনারেল হাসপাতালে’ দুর্ঘটনায় আহত এক রোগীকে চিকিৎসা দিতে দেরি হওয়ার অভিযোগ এনে কর্তব্যরত চিকিৎসক ডা. রক্তিম দাশকে বেধড়ক মারধর করা হয়। ডা. রক্তিম দাশ বর্তমানে চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজ (চমেক) হাসপাতালে চিকিৎসাধীন রয়েছেন। এই ঘটনার রেশ না কাটতেই গত ১৪ এপ্রিল চট্টগ্রাম মেডিকেল সেন্টার হাসপাতালে এনআইসিইউতে নিউমোনিয়ায় আক্রান্ত হয়ে এক শিশুর মৃত্যুকে কেন্দ্র করে কর্তব্যরত চিকিৎসক ডা. রিয়াজ উদ্দিন শিবলুর উপর হামলার ঘটনা ঘটে। ডা. রিয়াজ বর্তমানে চমেক হাসপাতালের আইসিইউতে চিকিৎসাধীন রয়েছেন। তার অবস্থা স্থিতিশীল হলেও এখনো তিনি শঙ্কা মুক্ত নয়। তাছাড়া এ ঘটনায় হাসপাতালের কয়েকজন কর্মকর্তা ও কর্মচারীদের মারাত্মকভাবে জখম হয়েছেন।

এ দুই ঘটনার জের ধরে গত ১৮ এপ্রিল চমেক হাসপাতালের সামনে জড়ো হয়ে মানববন্ধন করেছেন চিকিৎসকদের বিভিন্ন সংগঠন। চট্টগ্রাম মেডিকেল অ্যাসোসিয়েশনের (বিএমএ) উদ্যোগে অনুষ্ঠিত মানববন্ধনে যোগ দেন স্বাধীনতা চিকিৎসক পরিষদ (স্বাচিপ) ও পেডিয়াট্রিক্স ডক্টরস অ্যাসোসিয়েশন, ইন্টার্ন ডক্টরস অ্যাসোসিয়েশেন এবং বেসরকারি হাসপাতাল সমিতির নেতারা। মানববন্ধন থেকে সরকারি-বেসরকারি হাসপাতালে দুই ঘণ্টা কর্মবিরতি ও ২৩ এপ্রিল দিনব্যাপী সর্বাত্মক প্রাইভেট প্র্যাকটিস বন্ধের কর্মসূচি ঘোষণা দেওয়া হয়।

এর অংশ হিসেবে মঙ্গলবার (২৩ এপ্রিল) দিনব্যাপী সর্বাত্মক প্রাইভেট প্র্যাকটিস বন্ধের কর্মসূচি দেওয়া হয়। তবে বেসরকারি হাসপাতাল বা ক্লিনিকে আগের দিনের ভর্তি রোগীর চিকিৎসা সেবা চলবে। একইভাবে ডায়াগনস্টিক সেন্টারে পূর্বের রোগীর রিপোর্ট ডেলিভারি দেয়া যাবে। তবে কোন প্রকার নতুন রোগী ভর্তি বা সেবা দেয়া হবে না।

সর্বশেষ

পাঠকপ্রিয়