‘রাস্তায় পড়ে মরে গেলেই বাঁচি’

দেবাশীষ চক্রবর্তী, সিভয়েস২৪

প্রকাশিত: ১৯:৫৪, ২৩ এপ্রিল ২০২৪
‘রাস্তায় পড়ে মরে গেলেই বাঁচি’

অসুস্থ স্বামীকে নিয়ে মোস্তফা বেগমের ছোটাছুটি। সাতকানিয়া উপজেলা থেকে মঙ্গলবার ভোরে এসেছেন বৃদ্ধ স্বামীর কিডনি রোগের পরীক্ষা করাতে। সকালে পরীক্ষা করাতে বেসরকারি কয়েকটি ডায়াগনস্টিক সেন্টারে গিয়েই পড়েছেন বিপাকে। দুই চিকিৎসকের ওপর হামলার প্রতিবাদে সকাল থেকে ২৪ ঘণ্টার জন্য প্রাইভেট প্র্যাক্টিস বন্ধ থাকায় কোনো কার্যক্রমই চলছে না। অসুস্থ শামসুল আলম এসবের কিছুই বুঝে উঠতে পারছেন না। প্রখর রোদ আর অসহনীয় গরমে কোনমতে পরীক্ষা নিরীক্ষা করে ডাক্তার দেখিয়ে বাড়ি ফিরতে পারলেই আপাতত হাফ ছেড়ে বাঁচেন। 

মঙ্গলবার (২৩ এপ্রিল) সকাল থেকে দুপুর পর্যন্ত তাঁকে নিয়ে চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজ হাসপাতাল এলাকার অন্তত পাঁচটি ডায়াগনস্টিক সেন্টারে ঘুরে শেষমেশ টের পেয়েছেন চিকিৎসকদের ‘ধর্মঘট’ চলছে। চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের মূল ফটকের সামনে এপিক হেলথ কেয়ারে নিচে কথা হয় তাঁর স্ত্রী মোস্তফা বেগমের সঙ্গে। তিনি বলেন, ‘ডাক্তার তিনটা পরীক্ষা দিয়েছে। পরীক্ষা করাতে ভোরে ভোরেই শহরে এসেছি। যাতে একসঙ্গে ডাক্তার দেখিয়ে বাড়ি ফিরতে পারি। কিন্তু কোথাও পরীক্ষা করায় নি। পরে শুনলাম ডাক্তারদের স্ট্রাইক চলছে। জানা না থাকায় বিপদে পড়লাম।’

অসুস্থ শামসুল আলম বলেন, ‘সকাল থেকে খালি পেটে ছোটাছুটি করছি। এখন আর শরীরে শক্তি নেই। রাস্তায় পড়ে মরে গেলেই বেঁচে যাই।’

চট্টগ্রামে দুই চিকিৎসকের ওপর হামলার প্রতিবাদে এবং অভিযুক্তদের গ্রেপ্তারের দাবিতে প্রাইভেট প্র্যাকটিস বন্ধ রেখেছেন চিকিৎসকরা। এছাড়া ক্লিনিকে নতুন রোগী ভর্তি এবং রোগনির্ণয় কেন্দ্রগুলোতে বন্ধ রয়েছে সেবা। ফলে দুর্ভোগে পড়েন উপজেলা পর্যায় থেকে আসা রোগী ও রোগীর স্বজনরা।

বিভিন্ন বেসরকারি স্বাস্থ্যসেবা ও রোগ নির্ণয়কারী প্রতিষ্ঠানের সামনে দাঁড়িয়ে ছিলেন রোগীরা। একপর্যায়ে রোগীরা চমেক হাসপাতালের দিকে ছুটেন। রোগীর চাপ বৃদ্ধিতে সেখানে গিয়েও সেবা পেতে চরম দুর্ভোগ পোহাতে হয় রোগী ও স্বজনদের। বেশিরভাগ রোগী ও স্বজনরা সেবা না নিয়েই ফিরে গেছেন।

গত ১১ এপ্রিল পটিয়া জেনারেল হাসপাতালে দুর্ঘটনায় আহত এক রোগীকে চিকিৎসা সেবা দিতে দেরি হওয়ার অভিযোগ এনে কর্তব্যরত চিকিৎসক ডা. রক্তিম দাশকে বেধড়ক মারধর করে রোগীর স্বজনরা। এর পরপর ঘটনার রেশ না কাটতেই গত ১৪ এপ্রিল চট্টগ্রাম মেডিকেল সেন্টার হাসপাতালে এনআইসিইউতে নিউমোনিয়ায় আক্রান্ত হয়ে এক শিশুর মৃত্যুকে কেন্দ্র করে কর্তব্যরত চিকিৎসক ডা. রিয়াজ উদ্দিন শিবলুর ওপর হামলার ঘটনা ঘটে।

এ দুই ঘটনার জের ধরে গত ১৮ এপ্রিল চমেক হাসপাতালের সামনে জড়ো হয়ে মানববন্ধন করেছেন চিকিৎসকদের বিভিন্ন সংগঠন। চট্টগ্রাম মেডিকেল অ্যাসোসিয়েশনের (বিএমএ) উদ্যোগে অনুষ্ঠিত মানববন্ধনে যোগ দেন স্বাধীনতা চিকিৎসক পরিষদ (স্বাচিপ) ও পেডিয়াট্রিক্স ডক্টরস অ্যাসোসিয়েশন, ইন্টার্ন ডক্টরস অ্যাসোসিয়েশেন এবং বেসরকারি হাসপাতাল সমিতির নেতারা। মানববন্ধন থেকে সরকারি-বেসরকারি হাসপাতালে দুই ঘণ্টা কর্মবিরতি ও ২৩ এপ্রিল দিনব্যাপী সর্বাত্মক প্রাইভেট প্র্যাকটিস বন্ধের কর্মসূচি ঘোষণা দেওয়া হয়। এর অংশ হিসেবে মঙ্গলবার (২৩ এপ্রিল) দিনব্যাপী সর্বাত্মক প্রাইভেট প্র্যাকটিস বন্ধের কর্মসূচি দেওয়া হয়।

সর্বশেষ

পাঠকপ্রিয়