তীব্র গরমে জ্বর ডায়রিয়া, আক্রান্ত বেশি শিশুরা

শারমিন রিমা, সিভয়েস২৪

প্রকাশিত: ১৭:০২, ১৭ এপ্রিল ২০২৪
তীব্র গরমে জ্বর ডায়রিয়া, আক্রান্ত বেশি শিশুরা

চট্টগ্রাম নগরের আগ্রাবাদের বাসিন্দা জোবায়ের আহমদ। সাত মাস বয়সী সন্তান ইয়াজকে নিয়ে চিকিৎসকের কাছে ছোটাছুটি বেশ কয়েকদিন ধরে। সবশেষ চট্টগ্রাম মা ও শিশু হাসপাতালে ভর্তি করাতে হয়েছে ছেলেকে। গত কয়েকদিন ধরে জ্বর কমছে না ইয়াজের। এর মধ্যে আক্রান্ত হয়েছেন ইয়াজের মাও। 

জোবায়ের বলেন, ‘ছেলেটা কিছু খেতে পারছে না। আমার ছেলের এমন জ্বর আগে হয়নি। জ্বরও কমছে না দেখে ডাক্তার দেখালাম। এখন ছেলের সঙ্গে সঙ্গে ছেলের মাও অসুস্থ হয়ে গেছে।’

তীব্র গরমে সর্দি-জ্বর, কাশির পাশাপাশি ডায়রিয়া আক্রান্ত রোগীর সংখ্যা বাড়ছে চট্টগ্রামে। আক্রান্তদের মধ্যে শিশুর সংখ্যা বেশি। 

চিকিৎসকরা বলছেন, গরমের কারণে সর্দি, জ্বর, কাশি শ্বাসকষ্ট আর খিঁচুনি নিয়ে শিশুরা হাসপাতালে আসছেন। এ সময়ে টাইফয়েড, হেপাটাইটিস বা জন্ডিসের প্রবণতাও বাড়ছে। অতিরিক্ত গরমে শিশুদের বাইরে বের না করা, খাবার দাবার সবকিছুতে সতর্ক থাকার পরামর্শ তাঁদের।

চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের তথ্যমতে, ২২’শ শয্যার এ হাসপাতালে বর্তমানে ভর্তি রোগীর সংখ্যা ২ হাজার ৭২৬ জন। এর মধ্যে ডায়রিয়া আক্রান্ত রোগী আছেন ২০ জন। তবে শিশুর সংখ্যাই বেশি। হাসপাতালের শিশু বিভাগে ১৬ জন ডায়রিয়া রোগী ভর্তি আছে। এছাড়া হাসপাতালে ৩ জন ডেঙ্গু রোগী ভর্তি আছেন। তার মধ্যে ২ জন শিশু এবং একজন বয়স্ক রোগী। এর বাইরে হাসপাতালের বর্হিবিভাগে আসা রোগীদের মধ্যে জ্বর, সর্দি, কাশিতে আক্রান্তের সংখ্যাই বেশি।

শিশু মিনহাজের মা নাসিমা সুলতানা বলেন, ‘গত সোমবার বিকাল থেকে পাতলা পায়খানা। রাতে একটু কমছিল, সকালে আবার বেড়ে যায়। পরে অবস্থা ভালো না দেখে হাসপাতালে নিয়ে আসছি। ঈদের সময়টাতে কারেন্ট নিয়ে ঝামেলা হয়নি। এখন আবার কারেন্ট ঝামেলা শুরু করছে। অতিরিক্ত গরমে বাচ্চার এই অবস্থা বলে মনে হচ্ছে। এখন কিছুটা উন্নতির দিকে।’

চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের পরিচালক ব্রিগেডিয়ার জেনারেল ডা. শামীম আহসান সিভয়েস২৪-কে বলেন, ‘ঈদের ছুটির কারণে রোগীর ভর্তির হার কম। অন্যান্য সময়ে হাসপাতালে শয্যার চেয়েও দুই-তিনগুণ বেশি রোগী ভর্তি থাকে। বর্তমানে স্বাভাবিকের চেয়ে ডায়রিয়া আক্রান্ত রোগী একটু বেশি। এখন পর্যন্ত হিট স্ট্রোকের কোনো রোগী পাওয়া যায়নি।’ 

সর্তক থাকার পরামর্শ দিয়ে এ চিকিৎসক বলেন, ‘অতিরিক্ত গরমের সময়টাতে সবাইকে সাবধানে থাকা উচিত। স্যালাইন খাওয়া উচিত। যদি মাথাব্যথা বা অন্য কোনো উপসর্গ দেখা দেয়, ঘাম বেশি হয়, শরীরের তাপমাত্রা হঠাৎ করে বেড়ে যায় তাহলে অবশ্যই ডাক্তারের কাছে বা হাসপাতালে যেতে হবে।’

‘অতিরিক্ত গরমে শিশুরা প্রচুর ঘামছে, তাতে তৈরি হচ্ছে পানিশূন্যতা। এ সময় শিশুদের বাইরে বের না করলেই ভালো। শিশুদের খাবারের বিষয়েও সতর্ক থাকতে হবে। তাদের প্রচুর পানি খাওয়াতে হবে। জ্বর, বমি বা ডায়রিয়া দেখা দিলে সাথে সাথে হাসপাতালে আসতে হবে। দেরি করা যাবে না।’ — যোগ করেন চমেক হাসপাতাল পরিচালক বিগ্রেডিয়ার জেনারেল শামীম আহসান।

অন্যদিকে বিআইটিআইডি হাসপাতালের তথ্যমতে, হাসপাতালের বহির্বিভাগে ঈদের আগে ৭০ থেকে ১০০ জন রোগী আসতো, সেখানে এখন চারশো থেকে সাড়ে চারশো রোগী আসছে। আগের চেয়ে চারগুণ বেশি রোগী বেড়েছে এই হাসপাতালে। বর্তমানে ডায়রিয়া আক্রান্ত ভর্তি রোগী আছেন ৭৫ জন।

এ বিষয়ে বাংলাদেশ ইনস্টিটিউট অব ট্রপিক্যাল অ্যান্ড ইনফেকশাস ডিজিজেস (বিআইটিআইডি) হাসপাতালের মেডিসিন বিভাগের অধ্যাপক ডা. মো. মামুনুর রশীদ সিভয়েস২৪-কে বলেন, ‘এ সময়টাতে সাধারণ সর্দি, জ্বর, কাশি, নিউমোনিয়া ও ব্রঙ্কিউলাইটিসে আক্রান্ত হওয়ার প্রবণতা থাকে। আমাদের এখানে ক’দিন ধরে এ ধরনের রোগীর চাপ বেড়েছে। এর পাশাপাশি ডায়রিয়ার রোগীও বেড়েছে। তাছাড়া আমাদের দেশে এই সময়টাতে কোভিডও বাড়ে। তাই যাদের উপসর্গ দেখছি তাদের কোভিড টেস্ট করাচ্ছি। তবে আমার ফোকাস (নজর) হচ্ছে ডেঙ্গুর দিকে। দুই একজন করে ডেঙ্গু রোগীও পাচ্ছি আমরা।’

এদিকে টানা তাপপ্রবাহের মধ্যে চট্টগ্রামে থার্মোমিটারের পারদ উঠানামা করছে ৩৬ ডিগ্রি থেকে প্রায় ৩৮ ডিগ্রি সেলসিয়াসে। এ মৌসুমের সর্বোচ্চ তাপমাত্রা রেকর্ড হয়েছে গত ১১ এপ্রিল, সেদিন ৩৯ দশমিক ১ ডিগ্রি সেলসিয়াস তাপমাত্রা রেকর্ড করা হয়েছে। যা স্বাভাবিকের চেয়ে ৭ দশমিক ৩ ডিগ্রি সেলসিয়াস বেশি ছিল। এরই মধ্যে আবহাওয়া অফিস— এক দফা ঝড়ো হাওয়া আর বৃষ্টির সম্ভাবনার কথা জানালেও এখনো পর্যন্ত দেখা নেই স্বস্তির বৃষ্টির।

সর্বশেষ

পাঠকপ্রিয়