কাঠপোড়া রোদে কচি খোকার এ কেমন শাস্তি!

সিভয়েস২৪ প্রতিবেদক

প্রকাশিত: ০০:২৪, ২৯ এপ্রিল ২০২৪
কাঠপোড়া রোদে কচি খোকার এ কেমন শাস্তি!

‘মা! এখানে চাপ দিয়ে ধরে রাখো। আমি শ্বাস নিতে পারছি না। আমার কেমন যেন বমি বমি লাগতেছে।’

— গলা কাটা মুরগির মতো এভাবে ধড়ফড়িয়ে বুক চেপে ধরে মায়ের কাছে কথাগুলো বলছিল এক শিশু। সেই শিশুটির নাম আল হাছিন। বয়স সবে মাত্র ১০। পড়ে পঞ্চম শ্রেণিতে। গরমের কারণে স্কুলে জুতা মোজা না পরা কাল হয়ে দাঁড়ালো হাছিনের জীবনে। কাঠফাটা রোদের মধ্যে পরপর দুদিন দাঁড় করিয়ে রেখে হাছিনকে শাস্তি দেন স্কুলের শ্রেণিশিক্ষক। পরে জুতা পরতে বাসায় ফেরত পাঠান ওই শিক্ষক। স্কুল থেকে বাসায় ফেরার পথেই জ্ঞান হারায় শিশুটি।

ঘটনাটি গত ২৫ এপ্রিল বৃহস্পতিবার নগরের খুলশীর ওয়ারলেস এলাকার গার্ডেন ভিউ ন্যাশনাল একাডেমী নামের একটি স্কুলের। বর্তমানে শিশুটি বিশেষজ্ঞ ডাক্তারের অধীনে বাসায় চিকিৎসা নিচ্ছে।   

তীব্র গরমের কারণে শিক্ষার্থীদের সুস্থতার কথা বিবেচনায় রেখে ঈদের ছুটি শেষে আরও সাতদিন ছুটি বাড়ায় সরকার। অথচ সরকারের সেই নির্দেশনাকে বৃদ্ধাঙ্গুলি দেখিয়ে গত ২০ এপ্রিল থেকেই স্কুল খোলা রেখেছে গার্ডেন ভিউ ন্যাশনাল একাডেমী কর্তৃপক্ষ। এমনকি নিয়মিত হয়েছে অ্যাসেম্বলিও (প্রাত-সমাবেশ)। এ ঘটনায় ভুক্তভোগী শিক্ষার্থীর অভিভাবক অসুস্থ হওয়ার বিষয়টি স্কুল কর্তৃপক্ষকে জানালে উল্টো হুমকি-ধমকি দেওয়া হয় অভিভাবককে। ঘটনার পর থেকে শিশু হাছিনের শারীরিক অবস্থার উন্নতি না হওয়ায় থানায় সাধারণ ডায়েরি (জিডি) করেছেন শিশুর অভিভাবক। রবিবার (২৮ এপ্রিল) স্কুল কর্তৃপক্ষ এবং শাস্তি দেওয়া ওই শিক্ষকের নামে অভিযোগ দায়ের করেন শিশুটির মা।   

ঘটনা প্রসঙ্গে শিশু হাছিনের মা হানান আক্তার বলেন, ‘বন্ধের নির্দেশনা অমান্য করে তারা স্কুল খোলা রাখে। এই হিট ওয়েভে স্কুল খোলা না রাখার জন্য স্কুলের গ্রুপে হাজারবার রিকোয়েস্ট করার পরও স্কুল খোলা রেখেছে। স্কুলে এই গরমে মোজা ছাড়া নরমাল জুতা পরিয়ে স্কুলে পাঠানোর কারণে ২৪ ও ২৫ এপ্রিল আমার ছেলেসহ আরও কিছু বাচ্চাকে রোদের মধ্যে দাঁড় করিয়ে রেখে শাস্তি দেন ক্লাসটিচার। শেষদিন (২৫ এপ্রিল) তো শ্রেণিশিক্ষক স্কুল থেকেই বাচ্চাকে বের করে দেন। বাচ্চা বাসায় ফেরার পথে জ্ঞান হারায়। পরে জ্ঞান ফিরলে বিস্তারিত জানতে পারি। জ্ঞান ফেরার পর টানা ৯ বার বমি করে মারাত্মক অসুস্থ হয়ে যায়।’  

এ অভিভাবক আরও বলেন, ‘বিষয়টি স্কুল কর্তৃপক্ষকে জানালে তারা উল্টো আমাকে হুমকি-ধমকি দিতে শুরু করে। তারা কোনো ধরনের সরকারি নির্দেশনা মানেন না। পুরো রোজা তারা স্কুল খোলা রেখে পরীক্ষাও নিয়েছে। আমরা তখনও বলেছিলাম যে, সব স্কুল বন্ধ দিয়েছে আপনারও স্কুল বন্ধ দেন। পুরো বাংলাদেশের সব স্কুল বন্ধ কিন্তু তারা স্কুল খোলা রেখেছে। বারবার অনুরোধ করার পরেও তারা শুনেননি।’  

শিশু আল হাছিন (১০)।

ক্ষোভ প্রকাশ করে হানান আক্তার বলেন, ‘স্কুলে কোনো গাছ নেই। পানির কোনো ব্যবস্থা নেই। পানি খেতেও বাচ্চাকে বাসায় আসতে হয়। কোনো বাচ্চার যদি শরীর অসুস্থ হয় তাহলে ঝামেলা হয়ে যাবে। তাদেরকে বারবার বলেছি। এ কারণে স্কুল খোলার পরেও আমি ৩ দিন বাচ্চাকে পাঠাইনি। আমার বাচ্চা গত বছর ডেঙ্গু আক্রান্ত হয়ে মরণাপন্ন হয়ে যায়। তারা (স্কুল কর্তৃপক্ষ) জানে। আমি বারবার করে বলছি যে— স্কুলে জুতা না পরে বাচ্চা নরমাল জুতা পরে যাবে। ব্যাপারটা যাতে কনসিডার করেন। লেখাপড়ার জন্য বাচ্চাকে শাসন করার অধিকার অবশ্যই শিক্ষকদের আছে। কিন্তু সামান্য মোজা আর জুতা পরা নিয়ে শিক্ষিকার এ কেমন আচরণ বাচ্চার প্রতি! একটা বাচ্চাকে অসুস্থ বানিয়ে এই অবস্থা করা কোনোভাবেই মাফযোগ্য না।’   

এদিকে, স্কুলটির অনুমোদন ও প্রিন্সিপাল নেই জানিয়ে ব্যবস্থা নেওয়াটা কঠিন- এমন অজুহাত দিয়েছেন মাধ্যমিক ও উচ্চ শিক্ষা অধিদপ্তর চট্টগ্রাম বিভাগের আঞ্চলিক উপ-পরিচালক (ভারপ্রাপ্ত) উত্তম খীসা। তিনি বলেন, 'স্কুলটা এখনো এমপিওভুক্ত না। বোর্ডের কোনো অনুমোদন নেই। যদি বোর্ডের অনুমোদন থাকতো সেই ক্ষেত্রে আমরা ব্যবস্থা নিতে পারতাম বা এমপিও তালিকা থেকে বাতিল করতে পারতাম। এছাড়া সরকারি যে সহায়তা আছে তা বন্ধ করতে পারতাম। এখন যেহেতু তাদের কিছুই নেই। তাহলে আমরা শুধু নজরেই রাখতে পারবো। আমরা ঘটনাটি জানার পর অভিভাবকদের সঙ্গে যোগাযোগ করেছি, তাদের (স্কুল কর্তৃপক্ষ) সঙ্গেও যোগাযোগ করেছি। আমরা সময় চেয়েছি। আসলে বিষয়টি হঠাৎ করে ঘটে গেছে।’  

অভিভাবকদের ধৈর্য ধরার পরামর্শ দিয়ে তিনি বলেন, ‘অভিভাবকদের ধৈর্য ধরতে বলেছি। মাউশির তরফ থেকে  বলতে পারি যে— যখন তারা অনুমোদনের জন্য আসবে, তা (অনুমোদন) তারা পাবে না।’  

এ বিষয়ে বক্তব্য জানতে গার্ডেন ভিউ ন্যাশনাল একাডেমীর ব্যবস্থাপনা পরিচালক মুকিম বিল্লাহর ফোনে রবিবার একাধিকবার কল করা হলেও তিনি সাড়া দেননি।

-সিভয়েস/এসআর/এমএম

সর্বশেষ

পাঠকপ্রিয়