বাসচালক-শিক্ষার্থীকে বেদম মার, পুলিশ-শ্রমিক হাতাহাতি

সিভয়েস২৪ প্রতিবেদক

প্রকাশিত: ১৩:১৬, ২৮ এপ্রিল ২০২৪
বাসচালক-শিক্ষার্থীকে বেদম মার, পুলিশ-শ্রমিক হাতাহাতি

চট্টগ্রাম নগরে পরিবহন ধর্মঘটের মধ্যে বাস চালানোর ‘অপরাধে’ আন্তর্জাতিক ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্র-ছাত্রী পরিবহনে ব্যবহৃত একটি বিআরটিসি বাস ভাঙচুর করেছে পরিবহন শ্রমিকরা। এসময় ওই বাসটির চালক এবং বাসে থাকা এক ছাত্রকেও মারধর করা হয়। এছাড়া, ঘটেছে পুলিশের সাথে হাতাহাতির ঘটনাও। পুলিশ জানিয়েছে, ঘটনাস্থল থেকে ৩ জনকে আটক করা হয়েছে। 

রবিবার (২৮ এপ্রিল) সকাল সাড়ে ১০টার দিকে অক্সিজেন মোড় এলাকার অক্সিজেন ট্রাফিক পুলিশ বক্সের অদূরেই ঘটে এসব ঘটনা।

সরেজমিনে সকাল ১০টার দিকে অক্সিজেন মোড় এলাকায় গিয়ে দেখা যায়, আনুমানিক ৩০ থেকে ৪০ জন যুবক নিজেদের পরিবহন শ্রমিক পরিচয় দিয়ে নগরীতে প্রবেশ করা বিভিন্ন বাস থামাচ্ছেন। এসময় তারা বাস চালকদের কাছে ধর্মঘটের মধ্যেও কেন বাস চলছে—তার নানা কৈফিয়ত চাচ্ছেন। শুধু তাই নয়, বাস চালানোয় যাত্রীদের নামিয়ে হামলা চালানো হচ্ছে চালকদের ওপরেও। পুলিশ চালকদের মারধরের হাত থেকে বাঁচাতে গেলে এসব শ্রমিক পরিচয়দানকারী কতিপয় পিকেটার হাতাহাতিতে জড়িয়েছে তাদের সঙ্গেও।

সকাল সাড়ে ১০টার দিকে দেখা যায়, অক্সিজেন ট্রাফিক পুলিশ বক্সের অদূরেই আন্তর্জাতিক ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয়ের (আইআইইউসি) ছাত্র-ছাত্রীদের পরিবহনে ব্যবহৃত একটি বিআরটিসি বাস থামায় পিকেটাররা। এসময় চালকের আসনে বসে থাকা অবস্থায় ওই চালককে বাসের বাইরে থেকে ২০ থেকে ২৫ জন যুবক এসে মারধর শুরু করে। এসময় ওই বাসে ছাত্র-ছাত্রীরাও ছিলো। সাথে সাথেই পুলিশ এসে পিকেটারদের ছত্রভঙ্গ করে দেয়। 

মারধরের শিকার বাসচালক মো. অলিউল্লাহ সিভয়েস২৪-কে, ‘নতুন পাড়া বাস ডিপো থেকে বিশ্ববিদ্যালয়ের দিকে যাওয়ার সময় অক্সিজেন মোড়ে আসলে প্রায় ৫০ জন পরিবহন শ্রমিক আমার বাসটি ঘিরে ধরে। এরপর বাস থেকে শিক্ষার্থী ও আমাকে বাস থেকে নেমে যাওয়ার হুমকি দেয় তারা। পরে আমি প্রতিবাদ করলে তারা বাসের সিটে বসে থাকা অবস্থায় আমার ওপর হামলা চালায়‌।’ 

তিনি বলেন, ‘তারা বাসের সামনের গ্লাস ভেঙে দেয়। পরে আমাকে বাস থেকে নামিয়েও মারধর শুরু করে। এসময় আমার শার্ট ছিড়ে যায় এবং আমি সহ্য করতে না পেরে রাস্তায় বসে পড়ি। ধর্মঘটের নামে এই অমানবিকতা কেন তা আমি জানিনা। তারা আমার কাছ থেকে নগদ ৪ হাজার টাকা ও একটি মোবাইলও ছিনিয়ে নিয়ে যায়।’

স্থানীয়দের সাথে কথা বলে জানা গেছে, বাসে ভাঙচুরে সময় বাস থেকে শিক্ষার্থীদের নেমে যাওয়ার হুমকি দিলে সাজ্জাদ নামে এক ছাত্র প্রতিবাদ করে। তখন সেই শিক্ষার্থীর ওপরও হামলা চালায় পরিবহন শ্রমিকরা। এরপর স্থানীয় এবং সহপাঠীরা তাকে উদ্ধার করে প্রাথমিক চিকিৎসার জন্য স্থানীয় একটি ক্লিনিকে নিয়ে যায়। দায়িত্বরত পুলিশ তাদের বাঁচাতে গেলে তাদের সাথেও হাতাহাতিতে জড়ায় শ্রমিকরা।

আন্তর্জাতিক ইসলামিক বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী রাইসুল হক বলেন, অক্সিজেন মোড় আসলে প্রায় ৫০ জন পরিবহন শ্রমিক আমাদের হামলা চালায়। তখন অতর্কিত হামলায় আমরা বাস থেকে নেমে যাই। আজকে হয়তো ঠিক সময় বাস থেকে না নামলে সাজ্জাদের মতো আমরাও দুর্ঘটনা শিকার হতাম। 

স্থানীয় প্রত্যক্ষদর্শী আব্দুল রহিম বলেন, হামলাকারীদের মধ্যে দুইজনকে চিনতে পেরেছি। এদের মধ্যে একজন বরকত আলি খাগড়াছড়ি রোডে বাস চালায়। আরেকজন ৮ নং বাসচালক আক্তার ওরফে ভাইসাব। 

এদিকে, বাসে ভাঙচুরের ঘটনায় তিনজনকে আটক করা হয়েছে জানিয়ে বায়েজিদ বোস্তামী থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) সঞ্জয় কুমার সিনহা সিভয়েস২৪-কে বলেন, ‘ঘটনাস্থলে পুলিশ আসার পর আশপাশে অভিযান চালানো হয়। সিসিটিভি ফুটেজ দেখে তিনজন আটক করা হয়েছে। তদন্তের স্বার্থে এখনো নাম প্রকাশ করা যাচ্ছে না। বিআরটিসি কর্তৃপক্ষ থেকে এখনো লিখিত অভিযোগ আসেনি। অভিযোগ পেলে পরবর্তী আইনানুগ ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।'

চট্টগ্রাম জেলা পরিবহন মালিক গ্রুপের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক মো. শাহজাহান সিভয়েস-২৪কে জানিয়েছেন, আজ (রবিবার) দুপুর আড়াইটার দিকে চট্টগ্রাম জেলা প্রশাসন এবং আইনশৃঙ্খলাবাহিনীর সাথে বৈঠকে বসবে গণপরিবহন মালিক শ্রমিক ঐক্য পরিষদের নেতারা। ফলপ্রসূ বৈঠক হলেই ধর্মঘটের সিদ্ধান্ত প্রত্যাহার করবেন তারা। অন্যথায়, আন্দোলন ঘোষণা অনুযায়ী চলবে।

প্রসঙ্গত, শনিবার (২৭ এপ্রিল) দুপুরে জরুরি সভা শেষে চট্টগ্রাম-কাপ্তাই সড়কে বাসের ধাক্কায় চট্টগ্রাম প্রকৌশল ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের (চুয়েট) দুই শিক্ষার্থী নিহতের জেরে গাড়ি পোড়ানোর প্রতিবাদে চার দফা দাবিতে রবিবার (২৮ এপ্রিল) সকাল ৬টা থেকে পরবর্তী ৪৮ ঘণ্টা ধর্মঘটের ডাক দেয় বৃহত্তর গণপরিবহন মালিক শ্রমিক ঐক্য পরিষদ।

এর আগে, ২২ এপ্রিল ওই ২ শিক্ষার্থীর মৃত্যু হয়। এতে আহত হন আরও এক শিক্ষার্থী। এই ঘটনার প্রতিবাদে টানা চারদিন সড়ক অবরোধ করে চুয়েট শিক্ষার্থীরা। এতে ৩টি বাস পুড়িয়ে দেয় শিক্ষার্থীরা। এই ঘটনার প্রতিবাদে ৪৮ ঘণ্টার ধর্মঘট ডেকেছে পরিবহন শ্রমিকেরা।

এদিকে, শিক্ষার্থীদের আন্দোলনের মুখে আগামী ১১মে পর্যন্ত চুয়েট বন্ধ রাখার সিদ্ধান্ত নিয়েছে বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ। শুক্রবার (২৬ এপ্রিল) বিকেলে চুয়েট সিন্ডিকেটের জরুরি সভায় এমন সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে। তবে শিক্ষার্থীদের হল ত্যাগের সিদ্ধান্ত থেকে সরে এসেছে বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন। নতুন সিদ্ধান্ত অনুযায়ী, এই সময়ে একাডেমিক কার্যক্রম বন্ধ থাকলেও শিক্ষার্থীরা হলে অবস্থান করতে পারবেন।

সর্বশেষ

পাঠকপ্রিয়