গরমে গণগাড়ি সংকটে গণভোগান্তি

মিনহাজ মুহী, সিভয়েস২৪

প্রকাশিত: ১৩:৪৯, ২৮ এপ্রিল ২০২৪
গরমে গণগাড়ি সংকটে গণভোগান্তি

শাহ আমানত সেতু এলাকায় যাত্রীদের ভোগান্তি।

রবিবার (২৮ এপ্রিল) দুপুর ১২টা। চট্টগ্রাম নগরের শাহ আমানত সেতু এলাকায় ভিড় জমেছে হাজারও যাত্রীর। তপ্ত রোদে দাঁড়িয়ে অপেক্ষা করছেন বাসের জন্য। তবে বাসের দেখা নেই। এদিকে, বাস না থাকার সুযোগে বাড়তি ভাড়া আদায় করতে ব্যস্ত অন্যান্য যানবাহনগুলো। আর সেই গাড়িগুলোতেও উপচেপড়া ভিড়। গাড়ি না পেয়ে অনেকে হেঁটে গন্তব্যের দিকে রওনা হচ্ছেন; আবার কেউ অতিরিক্ত ভাড়ায় অন্য কোনো বাহনে চেপেছেন।

সরেজমিনে দেখা গেছে, তপ্ত রোদের মধ্যে দাঁড়িয়ে আছেন যাত্রীরা। অনেকের শরীর বেয়ে ঘাম ঝড়ছে। দুর্ভোগ বেড়েছে সাধারণ যাত্রীদের। দীর্ঘসময় অপেক্ষা করেও কর্মব্যস্ত মানুষ গন্তব্যে পৌঁছার জন্য উঠতে পারেননি কাঙ্ক্ষিত বাসে। রবিবার সকাল থেকে দেখা গেছে গণপরিবহনের এমন সংকট।

এদিকে, ব্রিজের ওপার মইজ্জারটেক এলাকায়ও বাসের জন্য অপেক্ষা করছেন শত শত যাত্রী। যাদের মধ্যে বেশিরভাগ যাত্রীর গন্তব্য শহরে। তবে গাড়ির সংকট ও বাড়তি ভাড়ার কারণে অনেকে পায়ে হেঁটে ব্রিজ পার হচ্ছেন; আবার অনেকে তাদের গন্তব্যে যাচ্ছেন।

ব্রিজ এলাকায় বাসের জন্য অপেক্ষায় থাকা শরীফ উদ্দিন নামের এক যাত্রীর সাথে কথা হয় সিভয়েস২৪ প্রতিবেদকের। ভোগান্তির প্রশ্ন করতেই তিনি বলেন, ‘নিউ মার্কেট যাওয়ার জন্য বাসা থেকে বের হয়েছিলাম তিন ঘণ্টা আগে। রাস্তায় নেমে একটি বাসও পাইনি। গ্রাম (কোলাগাঁও) থেকে কোনো রকমে সিএনজি করে মইজ্জারটেক এসেছিলাম। সেখানেও গাড়ি পাইনি। আর যা পেয়েছিলাম তা বাড়তি ভাড়া দাবি করেছে। পরে পায়ে হেঁটে ব্রিজ পার হয়েছি।’

তিনি আরও বলেন, ‘ব্রিজ পার হয়েও শান্তি নেই। মার্কেটে যাওয়ার জন্য যে গাড়িগুলো এখানে থাকতো; সেগুলোও আজ যাচ্ছে না। তারা না যাওয়াতে অন্যান্য গাড়ির চালকরা বাড়তি ভাড়া দাবি করছেন।’

ক্ষোভ প্রকাশ করে হাসান কুতুব নামে আরেক যাত্রী বলেন, ‘এ দেশে কিছু একটা হলেই যাত্রীদের জিম্মি করে পরিবহন চালকরা। সেই সঙ্গে স্কুল-কলেজ খোলার প্রথম দিন হওয়াতে শিক্ষার্থীরাও দুর্ভোগে পড়েছেন। সাধারণ মানুষের কথাও কেউ চিন্তা করে না; গাড়ি বন্ধ থাকলেও তারা (পরিবহন শ্রমিক) ঠিকই চালিয়ে নিতে পারে। কিন্তু আমরা তো কষ্টে পড়ে যায়। দিনশেষে সাধারণ মানুষরাই কষ্টের মুখে পড়ে।’

তিনি আরও বলেন, ‘মুরাদপুর যাওয়ার জন্য সেই দেড় ঘণ্টা ধরে দাঁড়িয়ে আছি। কোনো গাড়ি পাচ্ছি না। কয়েকজন মিলে সিএনজিচালিত অটোরিকশা খুঁজেছিলাম। তারা নিয়মিত ভাড়ার বেশি দাবি করছে। তাই আর যাওয়া হয়নি। তবে অনেকে ছোটো পিকআপে করে চলে গেছেন।’

ভোগান্তিতে শিক্ষার্থীরা

আজ রবিবার (২৮ এপ্রিল) থেকে খুলেছে দেশের প্রাথমিক, মাধ্যমিক স্কুল-কলেজ, মাদ্রাসা ও কারিগরি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানগুলো। তবে সড়কে গণপরিবহন সংকটের কারণে ভোগান্তিতে পড়েছেন চট্টগ্রামের শিক্ষার্থীরা।

সিটি কলেজের শিক্ষার্থী তাসপিয়া তাজনিম বলেন, ‘আজ থেকে কলেজ শুরু হয়েছে। ঠিক সময়ে বের হয়েও কলেজ যেতে পারিনি। রিকশা চালকরা বাড়তি ভাড়া চাচ্ছেন। এছাড়া, ছোট কোনো গাড়ি এলেও মানুষের ভিড়ে ধাক্কাধাক্কি করে উঠা সম্ভব হচ্ছে না। একটি গাড়ি এলেই যাত্রীরা ঝাঁপিয়ে পড়ছে। তাই ঠিক সময়ে পৌঁছাতে শেষ পর্যন্ত ওপার থেকে (মইজ্জারটেক) হেঁটে ব্রিজ পার হয়েছি। তবে এপারে এসে আরো বেশি ভোগান্তিতে পড়েছি। শেষ পর্যন্ত আর কলেজ যাওয়া হলো না।’

রিকশা-সিএনজি-মোটরসাইকেল চালকরা হাঁকছেন বাড়তি ভাড়া

সড়কে নিয়মিত চলা গণপরিবহনগুলো বন্ধ হওয়ার সুযোগে বাড়তি ভাড়া হাতিয়ে নিচ্ছে রিকশা, সিএনজিচালিত অটোরিকশা ও মোটরসাইকেল রাইডররাও। 

রফিকুল ইসলাম নামে এক যাত্রী অভিযোগ করে বলেন, ‘ব্রিজ থেকে কোতোয়ালী যেতে রিকশা চালকরা ৮০ টাকা দাবি করছেন।  অথচ গতকালও (শনিবার) ৫০ টাকা দিয়ে গিয়েছি।’

মনির উদ্দিন নামে আরেক যাত্রী বলেন, ‘ব্রিজ থেকে জিইসি যেতে সিএনজি চালকরা ১৭০ টাকা থেকে ২০০ টাকা পর্যন্ত চাচ্ছেন। আর মোটরসাইকেল রাইডাররাও চাচ্ছেন বাড়তি ভাড়া। তারা যেখানে অন্য সময় ৮০ টাকা দিয়ে যেতেন, সেখানে আজ ১২০ টাকা থেকে ১৫০ টাকা দাবি করছেন।’

প্রসঙ্গত, শনিবার (২৭ এপ্রিল) দুপুরে জরুরি সভা শেষে চট্টগ্রাম-কাপ্তাই সড়কে বাসের ধাক্কায় চট্টগ্রাম প্রকৌশল ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের (চুয়েট) দুই শিক্ষার্থী নিহতের জেরে গাড়ি পোড়ানোর প্রতিবাদে চার দফা দাবিতে রবিবার (২৮ এপ্রিল) সকাল ৬টা থেকে পরবর্তী ৪৮ ঘণ্টা ধর্মঘটের ডাক দেয় বৃহত্তর গণপরিবহন মালিক শ্রমিক ঐক্য পরিষদ।

এদিকে, আজ (রবিবার) দুপুরে পরিবহন ধর্মঘট নিরসনের জন্য পরিবহন মালিক সমিতির সদস্যদের সঙ্গে বসবেন চট্টগ্রাম জেলা প্রশাসক ও অন্যান্য আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী দপ্তরের প্রতিনিধিরা।

এর আগে, ২২ এপ্রিল ওই ২ শিক্ষার্থীর মৃত্যু হয়। এতে আহত হন আরও এক শিক্ষার্থী। এই ঘটনার প্রতিবাদে টানা চারদিন সড়ক অবরোধ করে চুয়েট শিক্ষার্থীরা। এতে ৩টি বাস পুড়িয়ে দেয় শিক্ষার্থীরা। এই ঘটনার প্রতিবাদে ৪৮ ঘণ্টার ধর্মঘট ডেকেছে পরিবহন শ্রমিকেরা।

এদিকে, শিক্ষার্থীদের আন্দোলনের মুখে আগামী ১১মে পর্যন্ত চুয়েট বন্ধ রাখার সিদ্ধান্ত নিয়েছে বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ। শুক্রবার (২৬ এপ্রিল) বিকেলে চুয়েট সিন্ডিকেটের জরুরি সভায় এমন সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে। তবে শিক্ষার্থীদের হল ত্যাগের সিদ্ধান্ত থেকে সরে এসেছে বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন। নতুন সিদ্ধান্ত অনুযায়ী, এই সময়ে একাডেমিক কার্যক্রম বন্ধ থাকলেও শিক্ষার্থীরা হলে অবস্থান করতে পারবেন।

আরও পড়ুন—

সর্বশেষ

পাঠকপ্রিয়