দিনভর কষ্ট দিয়ে পরিবহন ধর্মঘট প্রত্যাহার

সিভয়েস২৪ প্রতিবেদক

প্রকাশিত: ১৭:৫২, ২৮ এপ্রিল ২০২৪
দিনভর কষ্ট দিয়ে পরিবহন ধর্মঘট প্রত্যাহার

কাপ্তাইয়ে বাসের ধাক্কায় চট্টগ্রাম প্রকৌশল ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের (চুয়েট) দুই শিক্ষার্থী নিহতের জেরে গাড়ি পোড়ানোর প্রতিবাদে ৪৮ ঘণ্টার ধর্মঘট ডাকে বৃহত্তর গণপরিবহন মালিক শ্রমিক ঐক্য পরিষদ। তীব্র গরমে দিনভর সাধারণ মানুষের গণভোগান্তি শেষে ১২ ঘণ্টার মাথায় ধর্মঘট প্রত্যাহার করে নিলেন পরিবহন নেতারা। মূলত জেলা প্রশাসনের সঙ্গে বৈঠকের পরই ধর্মঘট প্রত্যাহারের সিদ্ধান্তের কথা জানায় সংগঠনটি। এ সময় সংগঠনের পক্ষ থেকে উত্থাপন করা চার দফা দাবিও বাস্তবায়নের আশ্বাস দিয়েছেন জেলা প্রশাসক।

রবিবার (২৮ এপ্রিল) বিকেলে চট্টগ্রাম জেলা প্রশাসন কার্যালয়ের সম্মেলন কক্ষে এক সভা শেষে এই সিদ্ধান্তের কথা জানান সংগঠনের নেতৃবৃন্দ।

বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন চট্টগ্রাম গণপরিবহন মালিক শ্রমিক ঐক্য পরিষদের আহ্বায়ক মঞ্জুরুল আলম চৌধুরী। তিনি সিভয়েস২৪-কে বলেন, ‘জেলা প্রশাসকের অনুরোধে এবং জনস্বার্থে আমাদের ৪৮ ঘণ্টার পরিবহন ধর্মঘট প্রত্যাহার করে নিচ্ছি। জেলা প্রশাসক মহোদয় আমাদের দাবি মেনে নিয়েছেন। এজন্য তাকেও ধন্যবাদ।’

কাপ্তাই সড়কে গাড়ি চলবে পুলিশ পাহারায়—

চট্টগ্রাম-কাপ্তাই সড়কে পুলিশ পাহারায় গাড়ি চলার কথা জানিয়ে গণপরিবহন মালিক শ্রমিক ঐক্য পরিষদের সদস্য সচিব মোহাম্মদ মুছা সিভয়েস২৪-কে বলেন, ‘আপাতত আমরা ধর্মঘট প্রত্যাহার করেছি। কিন্তু আমরা চট্টগ্রাম-কাপ্তাই সড়কে নিরাপত্তা চাই। বৈঠকে এখন থেকে কাপ্তাই সড়কে পুলিশ পাহারা দেওয়া হবে বলে আশ্বস্ত করা হয়েছে।’

তবে হুঁশিয়ার জানিয়ে তিনি বলেন, ‘যদি সড়কে আমাদের আর কোনো গাড়িতে হামলা চালানো হয়; তাহলে পুনরায় আবার ধর্মঘট ডাকা হবে।’

রবিবার বিকেল তিনটার দিকে ধর্মঘট প্রত্যাহারের বিষয়ে পরিবহন শ্রমিক নেতাদের সঙ্গে জেলা প্রশাসন ও আইনশৃঙ্খলাবাহিনীর বৈঠক শুরু হয়। এ সময় সংগঠনের পক্ষ থেকে কাপ্তাই-চট্টগ্রাম সড়কে গাড়ি চলাচলে নিরাপত্তা প্রদান, গাড়ি পোড়ানোর বিষয়ে তদন্ত সাপেক্ষে ক্ষতিপূরণ, অবৈধ গাড়ির বিষয়ে ব্যবস্থা, শ্রমিকের ওপর অকারণে মামলা না করা— এই চারটি দাবি তোলা হয়।

বৈঠক শেষে দাবিগুলো মেনে নেওয়ার আশ্বাস দেন চট্টগ্রাম জেলা প্রশাসক ও জেলা ম্যাজিস্ট্রেট আবুল বাসার মোহাম্মদ ফখরুজ্জামান। তিনি বলেন, ‘শিক্ষার্থীদের দাবির মধ্যে যে তিনটি প্রশাসনের সঙ্গে সম্পৃক্ত সেগুলোর বিষয়ে ইতোমধ্যে ব্যবস্থা নেওয়া হয়েছে। সড়ক সংস্কার, নিহত-আহত শিক্ষার্থীদের ক্ষতিপূরণসহ সড়কের শৃঙ্খলার বিষয়ে ব্যবস্থা নেওয়া হয়েছে। তবে, মামলা প্রত্যাহারের সুযোগ নেই। তদন্ত সাপেক্ষে ব্যবস্থা নেওয়া হবে।’

‘গাড়ি পোড়ানোর বিষয়ে যদি মামলা হয়ে থাকে সেটিও আইনি প্রক্রিয়ায় ব্যবস্থা হবে। এছাড়া সড়কে কোনো চাঁদাবাজি করা যাবে না। নিরাপত্তার জন্য আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর পাশাপাশি জেলা প্রশাসনের সহায়তাও থাকবে’ —যোগ করেন জেলা প্রশাসক।

জেলা প্রশাসক আবুল বাসার মোহাম্মদ ফখরুজ্জামানের সভাপতিত্বে বৈঠকে আরও উপস্থিত ছিলেন জেলা প্রশাসনের অতিরিক্ত জেলা ম্যাজিস্ট্রেট এ কে এম গোলাম মোর্শেদ খান, চট্টগ্রাম মেট্রোপলিটন পুলিশের প্রতিনিধি অতিরিক্ত উপ-পুলিশ কমিশনার নোবেল চাকমা, উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা রাউজান, উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) রাঙ্গুনিয়া, চট্টগ্রাম জেলা পুলিশের প্রতিনিধি, বিআরটিএর সহকারী পরিচালক রায়হানা আক্তার উর্থি প্রমুখ।

প্রসঙ্গত, গত ২২ এপ্রিল চট্টগ্রাম-কাপ্তাই সড়কে বাসের ধাক্কায় চট্টগ্রাম প্রকৌশল ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের (চুয়েট) দুই শিক্ষার্থী নিহত হন। এতে আহত হন আরও এক শিক্ষার্থী। ওই ঘটনার প্রতিবাদে টানা চারদিন সড়ক অবরোধ করেন চুয়েট শিক্ষার্থীরা। এ সময় ৩টি বাস পুড়িয়ে দেওয়া হয়। এ ঘটনার প্রতিবাদে শনিবার রাতে জরুরি বৈঠক করে রবিবার সকাল ৬টা থেকে ৪৮ ঘণ্টার ধর্মঘট পালনের ডাক দেয় বৃহত্তর গণপরিবহন মালিক শ্রমিক ঐক্য পরিষদ। যদিও ওই রাতেই তিনটি পৃথক সংগঠন ধর্মঘট প্রত্যাখ্যান করে।

অপরদিকে, শিক্ষার্থীদের আন্দোলনের মুখে আগামী ১১মে পর্যন্ত চুয়েট বন্ধ রাখার সিদ্ধান্ত নিয়েছে বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ। শুক্রবার (২৬ এপ্রিল) বিকেলে চুয়েট সিন্ডিকেটের জরুরি সভায় এমন সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়। তবে শিক্ষার্থীদের হল ত্যাগের সিদ্ধান্ত থেকে সরে আসে বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন। নতুন সিদ্ধান্ত অনুযায়ী, এই সময়ে একাডেমিক কার্যক্রম বন্ধ থাকলেও শিক্ষার্থীরা হলে অবস্থান করতে পারবেন।

আরও পড়ুন—

সর্বশেষ

পাঠকপ্রিয়