ঘূর্ণিঝড় সিত্রাং/
আঘাত হানবে মঙ্গলবার, ঝুঁকিতে চট্টগ্রাম-কক্সবাজারও

সিভয়েস প্রতিবেদক

প্রকাশিত: ১৭:০৬, ২৩ অক্টোবর ২০২২
আঘাত হানবে মঙ্গলবার, ঝুঁকিতে চট্টগ্রাম-কক্সবাজারও

বাংলাদেশের দক্ষিণ-পূর্ব বঙ্গোপসাগর এলাকায় সৃষ্ট নিম্নচাপ ও অমাবস্যার প্রভাবে ভোর থেকে বাড়ছে সাগরে দমকা ও ঝড়ো হাওয়ার গতিবেগ। সাথে উপকূলীয় জেলাগুলোতে হচ্ছে থেমে থেমে গুঁড়িগুঁড়ি বৃষ্টি।

রোববার সন্ধ্যায় ঘূর্ণিঝড়ে রূপ নিতে পারে বলে জানিয়েছেন দুর্যোগ ও ত্রাণ প্রতিমন্ত্রী ডা. এনামুর রহমান। ঘূর্ণিঝড়ে রূপ নিলে সোমবার (২৪ অক্টোবর) দিবাগত রাত থেকে মঙ্গলবার (২৫ অক্টোবর) সন্ধ্যার মধ্যে এটি চট্টগ্রাম-কক্সবাজারসহ অন্তত ১৯টি জেলায় আঘাত হানার সম্ভাবনা রয়েছে। 

প্রতিমন্ত্রী বলেন, ‘নিম্নচাপটি ঘূর্ণিঝড়ে পরিণত হলে এটির নাম হবে সিত্রাং। এখন এটির যে গতিপথ রয়েছে, তা যদি পরিবর্তন না হয় তাহলে এটি ভারতের ভুবনেশ্বর ও পশ্চিম বাংলায় আঘাত হানবে। আর এটি যদি পরিবর্তন হয়, সে ক্ষেত্রে এটি দেশের উপকূলের ১৯ জেলার ৭৩০ কিলোমিটার এলাকায় আঘাত করবে। এটির গতিবেগ হতে পারে ঘণ্টায় ৯০ থেকে ১১০ কিলোমিটার। গত তিন বছরে যে ঘূর্ণিঝড় হয়েছে, তার মধ্যে এই সিত্রাং বেশি এলাকায় বিস্তৃত হবে। এটি মোকাবিলায় আমাদের সব প্রস্তুতি নেওয়া হয়েছে। যে সমস্ত উপকূলীয় এলাকায় ঘূর্ণিঝড় আঘাত হানতে পারে, সেসব এলাকায় শুকনো খাবার ও জরুরি ত্রাণসহায়তা পাঠানো হচ্ছে।’

নিম্নচাপের প্রভাবে উপকূলীয় এলাকায় ভারী থেকে অতি ভারী বৃষ্টি এবং নিম্নাঞ্চলে জোয়ারের চেয়ে ৩ থেকে ৫ ফুট বেশি জলোচ্ছ্বাসের আশঙ্কা রয়েছে। এছাড়া সোমবার (২৪ অক্টোবর) সকাল থেকে অনির্দিষ্টকালের জন্য সেন্ট মার্টিনে পর্যটকদের ভ্রমণ নিষিদ্ধ করা হয়েছে।

আবহাওয়া অধিদপ্তর জানায়, আন্দামান সাগর এবং দক্ষিণপূর্ব বঙ্গোপসাগর এলাকায় অবস্থানরত সুস্পষ্ট লঘুচাপটি ঘণীভূত হয়ে প্রথমে নিম্নচাপ এবং পরে গভীর নিম্নচাপ আকারে পূর্ব মধ্য বঙ্গোপসাগর ও আশেপাশের এলাকায় অবস্থান করছে। এটি আরও ঘনীভূত হয়ে উত্তর-পশ্চিম দিকে অগ্রসর হতে পারে।

আগামী ২৪ ঘণ্টার পূর্বাভাসে বলা হয়েছে— খুলনা, বরিশাল ও চট্টগ্রাম বিভাগের অধিকাংশ জায়গায়, ঢাকা, ময়মনসিংহ ও সিলেট বিভাগের অনেক জায়গায় এবং রাজশাহী ও রংপুর বিভাগের দু’-এক জায়গায় অস্থায়ীভাবে দমকা বা ঝড়ো হাওয়াসহ হালকা থেকে মাঝারি ধরনের বৃষ্টি বা বজ্রসহ বৃষ্টি হতে পারে। সেই সঙ্গে দেশের দক্ষিণাঞ্চলের কোথাও কোথাও ভারী থেকে অতি ভারী বর্ষণ হতে পারে। সারা দেশের দিন এবং রাতের তাপমাত্রা ১ থেকে ৪ ডিগ্রি পর্যন্ত কমতে পারে।

যেসব জেলায় ঘূণিঝড়টি আঘাত হানতে পারে তা হলো—  খুলনা, সাতক্ষীরা, বাগেরহাট, পটুয়াখালী, বরগুনা, ভোলা, পিরোজপুর, বরিশাল, ঝালকাঠি, নোয়াখালী, লক্ষ্মীপুর, ফেনী, চাঁদপুর, চট্টগ্রাম, কক্সবাজার, ফরিদপুর, মাদারীপুর, গোপালগঞ্জ, শরীয়তপুর।

এদিকে রোববার রাত থেকে বেশি বৃষ্টিপাত ও দমকা বাতাস বয়ে যেতে পারে বলে আবহাওয়া পর্যবেক্ষণ কেন্দ্র জানিয়েছে। সেই সাথে মোংলা, চট্টগ্রাম, কক্সবাজার ও পায়রা সমুদ্র বন্দর সমূহকে তিন নম্বর সতর্ক সংকেত দেখিয়ে যেতে বলেছে।  

নিম্নচাপের প্রভাবে রোববার ভোর থেকে চট্টগ্রামে গুড়িগুড়ি বৃষ্টিপাত শুরু হয়েছে। শনিবার রাত থেকে মেঘলা আকাশ ও ভ্যাপসা গরমে জনজীবন অতিষ্ঠ হয়ে ওঠে। দিনেও ছিলো তাপদাহ ও গরম। তাই ভোরের বৃষ্টিতে মানুষের মনে কিছুটা স্বস্তি নিয়ে আসলেও সমুদ্রে সৃষ্ট নিম্নচাপের কারণে ঝড় আতংকে মানুষ। 

এ বিষয়ে পতেঙ্গা আবহাওয়া অফিসের সহকারী আবহাওয়াবিদ সজীব হোসাইন সিভয়েসকে বলেন, ‘চট্টগ্রামে এখনো পর্যন্ত সেরকম প্রভাব না হলেও নিম্নচাপের প্রভাবে সকাল থেকে গুড়িগুড়ি বৃষ্টির দেখা মিলছে। সেইসঙ্গে আকাশ মেঘলা থেকে সাময়িক মেঘাচ্ছন্ন থাকতে পারে। সে'সাথে কিছু কিছু জায়গায় অস্থায়ী দমকা বাতাসের সাথে হালকা থেকে মাঝারি ধরনের বৃষ্টি অথবা বজ্রসহ বৃষ্টি হতে পারে।'

প্রসঙ্গত, বিশ্ব আবহাওয়া সংস্থার (ডব্লিউএমও) অধীন জাতিসংঘের এশিয়া-প্রশান্ত মহাসাগরীয় অঞ্চলের সাগর তীরের ১৩টি দেশের আবহাওয়াবিদদের সংস্থা এস্কেপ ঘূর্ণিঝড়ের নাম দিয়ে থাকে। নামের ক্রম অনুযায়ী এবার ঘূর্ণিঝড় সৃষ্টি হলে তার নাম হবে ‘সিত্রাং’। ‘সিত্রাং’ নামটি থাইল্যান্ডের দেওয়া।

সম্পর্কিত বিষয়:

সর্বশেষ

পাঠকপ্রিয়