Cvoice24.com

চার উপজেলাতেই বইছে সংঘাতের হাওয়া

সিভয়েস২৪ প্রতিবেদক

প্রকাশিত: ১৯:৩১, ২৮ মে ২০২৪
চার উপজেলাতেই বইছে সংঘাতের হাওয়া

দক্ষিণ চট্টগ্রামের আনোয়ারা, পটিয়া, চন্দনাইশ ও বোয়ালখালীতে বুধবার ভোটগ্রহণ। সহিংসতা-সংঘাতের আশঙ্কা করা হচ্ছে চার উপজেলাতেই। ভোটকেন্দ্র দখলের শঙ্কা প্রকাশ করেছেন খোদ প্রার্থীরাই। আনোয়ারা উপজেলায় সাবেক বর্তমান দুই মন্ত্রী-প্রতিমন্ত্রীর ‘প্রার্থী’, চন্দনাইশ, পটিয়া, আনোয়ারায় প্রতিদ্বন্দ্বি প্রার্থীদের পাল্টাপাল্টি অভিযোগের লড়াই সংঘাতের শঙ্কা আরো জোরালো করেছে। এরমধ্যে ভোটের একদিন আগে চন্দনাইশের দুই চেয়ারম্যান প্রার্থীর সমর্থকরা নিজেদের মধ্যে রক্ষক্ষয়ী সংঘর্ষে জড়িয়েও গেছে। 

তবে নির্বাচন সংশ্লিষ্টরা বলছেন, সংঘাত-সহিংসতার সুযোগ কোন প্রার্থীকে দেওয়া হবে না। শান্তিপূর্ণ ভোটগ্রহণের জন্য সব ধরনের প্রস্তুতি নেওয়া হয়েছে।

আনোয়ারা : আনোয়ারায় ‘কাগজে-কলমে’ তিন প্রার্থী। তবে ভোটের মাঠে দুজন। এরমধ্যে সাবেক ভূমিমন্ত্রীর ‘আর্শীবাদপুষ্ট’ দুজন এক হয়েছেন অর্থ প্রতিমন্ত্রী ওয়াসিকা আয়েশার ‘প্রার্থীর’ বিরুদ্ধে। সাবেক ভূমিমন্ত্রী সাইফুজ্জামান চৌধুরী দুবারের চেয়ারম্যান তৌহিদুল হক চৌধুরীকে (দোয়াত কলম) সমর্থন দিচ্ছেন। সাঙ্গ করেছেন আরেক প্রার্থী এম এ মান্নান চৌধুরীকেও। এর আগে তাঁকেই সমর্থন জানিয়েছিলেন বাবুপুত্র জাবেদ।  আর অর্থ প্রতিমন্ত্রী ওয়াসিকা আয়শা খান ‘আস্থা’ রেখেছেন কাজী মোজাম্মেল হকের (আনারস) ওপর। এরমধ্যে ভোটকেন্দ্রে প্রভাব বিস্তারের শঙ্কা করছেন কাজী মোজাম্মেল হক। তাঁর ‘দাবি’ অনুযায়ী ওসি সোহেল আহমেদকে সরিয়ে থানার পরিদর্শককে ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তার দায়িত্ব দিয়েছে নির্বাচন কমিশন। ওসিকে সরাতে ইসি সচিব ও ডিআইজির কাছে ‘দরখাস্ত’ করেছিলেন চেয়ারম্যান পদপ্রার্থী কাজী মোজাম্মেল হক।

পটিয়া : পটিয়ায় চট্টগ্রাম নগর যুবলীগের যুগ্ম সম্পাদক দিদারুল আলমকে ঠেকাতে ‘একাট্টা’ ভোটের মাঠে নামা তিন প্রার্থী। নিজেদের মনোনয়ন প্রত্যাহার করে নিয়ে দুবারের সাবেক মেয়র হারুনুর রশিদের ‘পাশে’ দাঁড়িয়েছেন যুবলীগ নেতা বদিউল আলম, দক্ষিণ জেলা আওয়ামী লীগ নেতা প্রদীপ দাশ ও উপজেলা কৃষক লীগের সভাপতি নুরুল আবছার। স্থানীয় আওয়ামী লীগ যুবলীগ ছাত্রলীগও দুই প্রার্থীর পক্ষে-বিপক্ষে দ্বিধাবিভক্ত। উস্কানিমূলক বক্তব্য , পোস্টার-ব্যানার ছেঁড়া এবং হাইব্রিড ও বহিরাগত আনার পাল্টাপাল্টি অভিযোগও এনেছেন দুই প্রার্থী। এরই মধ্যে ভোটকেন্দ্র দখলের আশঙ্কা করে যুবলীগ নেতা দিদারুল আলমের বিরুদ্ধে ডিআইজির কাছে অভিযোগ করেছেন ভোটের মাঠ থেকে সরে যাওয়া তিন প্রার্থীর ‘প্রার্থী’ হারুনুর রশিদ। ভোটের দিন কয়েকটি কেন্দ্র ঘিরে দুই প্রার্থীর সমর্থকদের মধ্য সংঘাতের শঙ্কা রয়েছে বলে জানা গেছে। দুজনই ‘হেভিওয়েট’ প্রার্থী হওয়ায় ভোটাররাও চাপা আতঙ্কে।

চন্দনাইশ : ভোটের একদিন আগেই রক্ষক্ষয়ী সংঘর্ষে জড়িয়ে গেছে ঋণখেলাপি করে দণ্ড পাওয়া আলোচিত ব্যবসায়ী জসিম উদ্দিন ও উপজেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক আবু আহমেদ জুনু। এ উপজেলায় ‘অনড়’ অবস্থানে এই দুই প্রার্থী। খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, ব্যবসায়ী জসিম উদ্দিন আহমেদকে নিজের ছেড়ে যাওয়া চেয়ারে বসাতে ‘আগ্রহী’ উপজেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক আব্দুল জব্বার চৌধুরী। কর্নেল অলির একসময়ের ‘ফাঁড়িতে’ এলডিপির নেতাকর্মীরাও সমর্থন দিচ্ছেন বলে সূত্র বলছে। অন্যদিকে আবু আহমেদের জুনুর ওপর স্থানীয় এমপি শ্রম প্রতিমন্ত্রী বীরমুক্তিযোদ্ধা মো. নজরুল ইসলামের ‘অদৃশ্য’ আর্শীবাদের কথা জানাচ্ছেন কেউ কেউ। আহম্মদ হোসেন নামে আরেক প্রার্থী রয়েছেন এ উপজেলায়। তবে খুব একটা নড়চড় নেই তাঁর।  বৃহস্পতিবার নির্বাচন থেকে সরে দাঁড়ানোর ঘোষণায় উপজেলা আওয়ামী লীগের সাংগঠনিক সম্পাদক মোহাম্মদ আরিফুল ইসলাম চৌধুরী এখন শুধু ব্যালটের পাতায়। ভোটের একদিন আগে সরিয়ে নেওয়া হয়েছে থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা ওবায়দুল ইসলামকেও।

বোয়ালখালী : বোয়ালখালী উপজেলায় শ্রীপুর-খরনদ্বীপ, চরণদ্বীপ ও শাকপুরা ইউনিয়নের বেশ কয়েকটি কেন্দ্রে গণ্ডগোল বাধার আশঙ্কার কথা জানিয়েছেন স্থানীয়রা। কর্ণফুলীর পূর্ব প্রান্তের এ উপজেলায় চেয়ারম্যান পদে উপজেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি-সম্পাদকসহ ৭ প্রার্থী। এর মধ্যে বর্তমান বোয়ালখালী উপজেলা পরিষদ চেয়ারম্যান রেজাউল করিম রাজার সঙ্গে ব্যবসায়ী জাহেদুল হকের প্রচারণার পর থেকে ভোটের বিবাদ চলছে। ভোটের দিনও তাদের মধ্যে সংঘাতের ঘটনা ঘটতে পারে বলে ধারণা করা হচ্ছে। তাঁরা ছাড়াও প্রার্থী আছেন উপজেলা আওয়ামী লীগ সভাপতি নুরুল আমিন চৌধুরী, বর্তমান উপজেলা ভাইস চেয়ারম্যান বীর মুক্তিযোদ্ধা এসএম সেলিম, বীর মুক্তিযোদ্ধা এসএম নুরুল ইসলাম, বোয়ালখালী পৌরসভা আওয়ামী লীগ সভাপতি মোহাম্মদ শফিউল আলম শফি ও মুহাম্মদ শফিক।

জেলা পুলিশের মুখপাত্র অতিরিক্ত পুলিশ সুপার (ডিএসবি) আবু তৈয়ব মো. আরিফ হোসেন সিভয়েস২৪-কে বলেন, ‘আগের দুটি নির্বাচনের মতো তৃতীয় ধাপের নির্বাচনও সুষ্ঠু ও সুন্দরভাবে শেষ করার চেষ্টা করবো। ভোটকেন্দ্রে যাতে কোন ধরনের বিশৃঙ্খলা সৃষ্টি না হয় সেভাবেই পুলিশ প্রস্তুত রয়েছে। সুষ্ঠু ও অবাধ নির্বাচনের লক্ষ্যে আমাদের পক্ষ থেকে সব ধরনের প্রস্তুতি নেওয়া আছে।’

চট্টগ্রামের অতিরিক্ত জেলা নির্বাচন অফিসার ও রির্টানিং অফিসার মো. শহিদুল ইসলাম প্রামানিক সিভয়েস২৪কে বলেন, ‘চট্টগ্রামের চার উপজেলাকেই প্রাধান্য দেওয়া হচ্ছে। কোনোটি বেশি কোনোটি কম এমন নয়। এই চার উপজেলার ১৩৩টি কেন্দ্রকে ‘অতি গুরুত্বপূর্ণ’ হিসেবে চিহ্নিত করা হয়েছে। এরমধ্যে বোয়ালখালীতে ১৬টি, চন্দনাইশে ২৯টি, পটিয়ায় ৩৩টি এবং আনোয়ারায় ৩৫টি।’

সংঘাতের প্রশ্নে তিনি বলেন, ‘সব ধরনের প্রস্তুতি আমাদের আছে। মাঠে র‌্যাব, বিজিবি, পুলিশ-আনসারসহ নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেটরা আছেন। কোনো ধরনের সংঘাত-সহিংসতার সুযোগ নেই।’

আরও পড়ুন—

সর্বশেষ

পাঠকপ্রিয়