আলীনগরের সড়ক কাটায় সন্ত্রাসীদের বিরুদ্ধে মামলা

সীতাকুণ্ড প্রতিনিধি

প্রকাশিত: ১৫:৩১, ১৭ আগস্ট ২০২২
আলীনগরের সড়ক কাটায় সন্ত্রাসীদের বিরুদ্ধে মামলা

চট্টগ্রামের সীতাকুণ্ডের জঙ্গল সলিমপুরের ‘স্বঘোষিত রাজ্য’ আলীনগরে প্রশাসনের প্রবেশ ঠেকাতে সড়ক কেটে ফেলা ও প্রশাসনের স্থাপিত সাইনবোর্ড উপড়ে ফেলার ঘটনায় মামলা দায়ের করা হয়েছে। 

বুধবার (১৭ আগস্ট) সীতাকুণ্ড থানায় বাদী হয়ে আলাদা করে দুটি মামলা দায়ের করেন স্থানীয় ইউপি মেম্বার মো. আরিফ। 

এর আগে গত ২ আগস্ট উচ্ছেদ অভিযান চালায় জেলা প্রশাসন। এরপরই সড়ক কেটে যোগাযোগ বিচ্ছিন্ন করে ফেলে ইয়াসিনের সহযোগীরা। এছাড়া প্রশাসন কতৃক স্থাপিত উন্নয়ন কর্মকাণ্ডের সাইনবোর্ড উপড়ে ফেলে তারা। 

মামলা সূত্রে জানা যায়, সরকারের বৃহৎ পরিকল্পনার অংশ হিসেবে জেলা প্রশাসন কর্তৃক কয়েক দফায় অবৈধ বসবাসকারীদের উচ্ছেদ অভিযান পরিচালনা করা হয়। একই সময় কেন্দ্রীয় কারাগার, পাহাড় ব্যবস্থাপনা ও হার্ট ফাউন্ডেশনের সাইনবোর্ড স্থাপন করা হয়। 

পরবর্তীতে প্রশাসনের কর্মকর্তারা ঘটনাস্থল ত্যাগ করার পর ইয়াসিন বাহিনীর লোকজন প্রশাসন কর্তৃক স্থাপিত সাইনবোর্ড উপড়ে ফেলার পাশাপাশি আলীনগরে প্রবেশের সড়কের কয়েকটি স্থানে ৬ ফুট প্রশস্ত ও ৩ ফুট গভীর করে কেটে ফেলে। এসব ঘটনায় আলাদা আলাদা দুটি মামলা দায়ের করা হয়েছে। সড়ক কেটে ফেলার ঘটনায় ২১ জন ও সাইন বোর্ড উপড়ে ফেলার ঘটনায় ৮ জনের নাম উল্লেখ করে অজ্ঞাতনামা আরও  ৫০ জনকে আসামি করা হয়েছে।

তবে আগেও ‘আলীনগর’ বাংলাদেশ থেকে অনেকটা বিচ্ছিন্ন ছিল। দেশের কোন আইনই সেখানে কার্যকর ছিল না। সেখানকার অধিবাসীরা চলত তাদের ‘রাজা’ ইয়াসিন ও ফারুকের নিজস্ব আইনে। আলীনগরের প্রবেশের যেসব পথ ছিল সব পথেই সার্বক্ষণিক দায়িত্ব পালন করতেন তার নিজস্ব সিকিউরিটির সদস্যরা। বাইরের কোন লোক ভেতরে প্রবেশ করতে পারতেন না। ভেতর থেকেও কেউ বাইরে যেতে পারতেন না। 

বসবাসকারীদের কোন অতিথি আসলে তাদের ভোটার আইডি কার্ড অথবা জন্ম নিবন্ধন কার্ড নিয়ন্ত্রণ কক্ষে জমা দেওয়া বাধ্যতামূলক ছিল। জমা দিতে হত সাথে আনা এন্ড্রয়েড ফোনও। এখানে বসবাসকারীদেরও কেউ এন্ড্রয়েড মোবাইল ফোন ব্যবহার করতে পারতেন না। আর যারা এখানকার স্থায়ী বাসিন্দা অর্থাৎ যারা জায়গা কিনে বসবাস করছেন তাদের ইয়াসিনের স্বাক্ষর করা বিশেষ পাস দেওয়া হত। পাস দেখিয়ে তারা ভেতর থেকে বাইরে ও  বাইরে থেকে ভেতরে আসতেন। এখানের কেউ কখনো থানা বা অন্য কোথাও কোন অভিযোগ নিয়ে যেতে পারতেন না। সেটা যত বড় অপরাধ হোকনা কেন বিচার হত ইয়াসিন ও ফারুকের ‘আদালতে’।

আলীনগরের সাবেক এক বাসিন্দা জানান, ইয়াসিন নোয়াখালী, ব্রাহ্মণবাড়িয়া, সন্দীপ, বাশঁখালীসহ দেশের বিভিন্ন স্থান থেকে শীর্ষ সন্ত্রাসীদের এনে এখানে আশ্রয় দেন। তাদের নিয়ে গড়ে তোলেন নিজস্ব বাহিনী। তাদের কয়েকটা দলে ভাগ করা হয়। তবে প্রত্যেক দলের কমান্ডারের দায়িত্বে ছিলেন ইয়াসিনের ঘনিষ্ঠ আত্মীয়রা। ইয়াসিনের ভাই ফারুক, ছেলে কাউসার, বোনের স্বামী মোখলেস, চার ভাগিনা আনোয়ার, হাসান, সোহেল ও আল আমিন ছিলেন এক একটা দলের কমান্ডার। এছাড়া দুই বছর আগে এখানে আনা হয় বেশ কিছু রোহিঙ্গাকেও। প্রায় ৩০ জনের মতো রোহিঙ্গাকে রাখা হয়েছে আলীনগরের নিরাপত্তায়।

সম্প্রতি সরকার জঙ্গল সলিমপুরের খাস জমিতে বৃহৎ পরিকল্পনা করে। সেই অনুযায়ী তথ্যমন্ত্রী, প্রধানমন্ত্রীর মূখ্যসচিবসহ কয়েকজন এমপি, সিটি মেয়র ও বিভিন্ন পর্যায়ের সরকারি কর্মকর্তারা একাধিকবার এই এলাকা পরিদর্শন করেন। তাতে ক্ষেপে গিয়ে গত ১৫ জুলাই সরকারি কর্মকর্তাদের সামনে স্থানীয় এক ইউপি সদস্যকে বুকে আগ্নেয়াস্ত্র ঠেকিয়ে মারধর করে ইয়াসিন বাহিনী। এরপর আলোচনায় আসে ইয়াসিন ও তার ছোট ভাই ফারুক। এই ঘটনায় মামলা দায়ের হলে ১৮ জুলাই ইয়াসিনকে গ্রেপ্তার করে পুলিশ। 
এরপর দুই দফায় আলীনগরে অভিযান চালায় জেলা প্রশাসন। প্রথম দিনের অভিযানে তিনটি মাটি কাটার স্ক্যাভেটর, ৬টি ড্রাম ট্রাক ও ১টি বড় ট্রাক জব্দ করে প্রশাসন। পরবর্তী অভিযানে ১৭৫টি অবৈধ স্থাপনা উচ্ছেদ করা হয়। ইতিমধ্যে প্রস্তাবিত নাইট সাফারি পার্কের জন্য ৫৭ একর জায়গায় সীমানা প্রাচীর নির্মাণের কাজ শুরু করা হয়েছে। 

সর্বশেষ

পাঠকপ্রিয়