ঘূর্ণিঝড় সিত্রাং বাংলাদেশের উপকূলে

সিভয়েস প্রতিবেদক

প্রকাশিত: ২০:০৫, ২৪ অক্টোবর ২০২২
ঘূর্ণিঝড় সিত্রাং বাংলাদেশের উপকূলে

ঘণ্টায় ৮০ থেকে ৯০ কিলোমিটার গতির বাতাসের শক্তি নিয়ে সোমবার সন্ধ্যা ৭টার পর থেকে চট্টগ্রাম বিভাগের মাঝামাঝি এলাকায় উপকূল অতিক্রম করতে শুরু করেছে ঘূর্ণিঝড় সিত্রাং। মোংলা ও পায়রার পাশাপাশি চট্টগ্রাম সমুদ্রবন্দরকেও ৭ নম্বর বিপদ সংকেত দেখাতে বলেছে আবহাওয়া অফিস। তবে কক্সবাজারের জন্য আগের মতই ৬ নম্বর বিপদ সংকেত বহাল রয়েছে।

আবহাওয়া অধিদপ্তরের পরিচালক আজিজুর রহমান জানিয়েছেন, ‘সন্ধ্যায় উপকূল স্পর্শ করে সিত্রাং অতিক্রম শুরু করছে। এখন জলোচ্ছ্বাস ও ভারি বর্ষণ হবে। এটা মাঝারি ঘূর্ণিঝড় ধরনের; বাতাসের গতিবেগ রয়েছে ৬২-৮৮ কিলোমিটার। সময় যত যাচ্ছে ঘূর্ণিঝড়টি তত শক্তি অর্জন করছে। ঘূর্ণিঝড়ের প্রভাবে সাগর উত্তাল রয়েছে। ঘূর্ণিঝড় সিত্রাংয়ের মূল ভাগ আজ রাত ১২টায় বাংলাদেশে আঘাত হানবে। আগামীকাল মঙ্গলবার দুপুর ১২টা নাগাদ এটি বাংলাদেশ অতিক্রম করবে।’

আবহাওয়ার বিশেষ বুলেটিনে বলা হয়েছে, সোমবার সন্ধ্যা ৬টায় চট্টগ্রাম ঘূর্ণিঝড় সমুদ্রবন্দর থেকে ২৭৫ কিলোমিটার দক্ষিণপশ্চিমে, কক্সবাজার সমুদ্রবন্দর থেকে ২৪০ কিলোমিটার দক্ষিণ পশ্চিমে, মোংলা সমুদ্রবন্দর থেকে ২২০ কিলোমিটার দক্ষিণ-দক্ষিণপশ্চিমে এবং পায়রা সমুদ্রবন্দর থেকে ১৭০ কিলোমিটার দক্ষিণ-দক্ষিণপশ্চিমে অবস্থান করছিল।

এ ঝড়ের ব্যাস ৪০০ থেকে ৫০০ কিলোমিটার। ফলে এর বর্ধিতাংশ ইতোমধ্যে স্থলভাগে তাণ্ডব চালাতে শুরু করেছে। চট্টগ্রামের উপকলীয় এলাকাগুলোতে প্রবল ঝড়ো হাওয়ার সঙ্গে বৃষ্টি হচ্ছে। 

ঘূর্ণিঝড় সিত্রাং উপকূল পার হওয়ার সময় চট্টগ্রাম, বরগুনা, পটুয়াখালী, ভোলা, ঝালকাঠি, নোয়াখালী, ফেনীর অদূরবর্তী দ্বীপ ও চরগুলোতে  স্বাভাবিক জোয়ার থেকে ৫ থেকে ৮ ফুট উঁচু জলোচ্ছ্বাসের আশঙ্কা করছে আবহাওয়া অধিদপ্তর। ঘূর্ণিঝড়টি সোমবার গভীররাতে আঘাত হানলেও আজ সন্ধ্যার পর থেকে এ জলোচ্ছ্বাস হচ্ছে।  

জয়েন্ট টাইফুন ওয়ার্নিং সেন্টারের পূর্বাভাস বলছে, বাংলাদেশ সময় সোমবার মধ্যরাতে ঘূর্ণিঝড় সিত্রাংয়ের চোখ বা কেন্দ্রভাগ পটুয়াখালীর রাঙাবালি বা চর মন্তাজ এলাকায় উপকূল স্পর্শ করবে। তখন বাতাসের গতিবেগ থাকবে সর্বোচ্চ ৫০ নট বা ঘণ্টায় ৯৩ কিলোমিটারের মত। সোমবার মধ্যরাত থেকে মঙ্গলবার ভোরের মধ্যে ভোলার পাশ দিয়ে এ ঝড় পুরোপুরি উপকূলে উঠে আসবে বলে ধারণা করছে আবহাওয়া অফিস।

এরআগে সোমবার দুপুরে দুর্যোগ ও ত্রাণ প্রতিমন্ত্রী এনামুর রহমান জানিয়েছিলেন, সিত্রাংয়ের কারণে সবচেয়ে বেশি ঝুঁকির মুখে আছে বরগুনা ও পটুয়াখালী। তবে সেটি উপকূল অতিক্রম করার সময় চট্টগ্রাম-কক্সাবাজার উপকূলেও আঘাত হানবে। তখন সবচেয়ে বেশি ঝুঁকিতে থাকবে চট্টগ্রামের সন্দ্বীপ ও কক্সবাজারের মহেশখালী উপজেলা। 

আবহাওয়া অফিসের বরাত দিয়ে দুর্যোগ ও ত্রাণ প্রতিমন্ত্রী এনামুর রহমান বলেন, ‘সিত্রাং সিভিয়ার সাইক্লোন হিসেবে রুপ নিয়েছে। সন্ধ্যার মধ্যে উপকূলে আঘাত হানবে। কেন্দ্র আঘাত করবে ভোরে। এটা পুরোপুরি বাংলাদেশ ভূখণ্ডে আঘাত হানবে। ভারতে আঘাত করার কোনো সম্ভাবনা নাই। উপকূলীয় ১৩ জেলায় মারাত্মক ও ২ জেলায় হালকা আঘাত হানবে। তবে বরগুনার পাথড়ঘাটা ও পটুয়াখালীর কলাপাড়া সবচেয়ে বেশি ক্ষতিগ্রস্থ হবে।’

এনামুর রহমান আরও বলেছেন, ‘উপকূলে ৭ হাজার ৩০ সেল্টার প্রস্তুত করা হয়েছে। সকাল থেকেই মানুষকে আশ্রয়কেন্দ্রে আনা হচ্ছে। আমরা আম্ফানে ২৪ লাখ সরিয়েছিলাম। এবার ২৫ লাখ সরানোর লক্ষ্য রাখা হয়েছে। চট্টগ্রাম, খুলনা ও বরিশাল বিভাগে বেশি আঘাত হানবে। চট্টগ্রাম বিভাগের মহেশখালী, সন্দ্বীপ বেশি ঝুঁকিপূর্ণ। সেখান থেকে মানুষ সরাতে কাজ চলছে। সিডর ছিলো সুপার সাইক্লোন। এটা সিভিয়ার সাইক্লোন।’

এদিকে, ঘূর্ণিঝড় সিত্রাং এর প্রভাবে চট্টগ্রামে প্রবাহিত হচ্ছে ঘন্টায় ১০ থেকে ২০ কিলোমিটার বেগে এবং অস্থায়ীভাবে দমকা আকারে ৬০ থেকে ৮০ কিলোমিটার বেগে। গত ২৪ ঘন্টায় ৩৯ মিলিমিটার বৃষ্টিপাত রেকর্ড করেছে আবহাওয়া অফিস।

সম্পর্কিত বিষয়:

সর্বশেষ

পাঠকপ্রিয়