Cvoice24.com

লকডাউনের অজুহাতে খুচরা বাজারে চালের দাম বেড়েছে  

সিভয়েস প্রতিবেদক

প্রকাশিত: ১৮:২২, ৬ এপ্রিল ২০২১
লকডাউনের অজুহাতে খুচরা বাজারে চালের দাম বেড়েছে  

খাদ্য সংকটের আশঙ্কায় লকডাউনের আগেই বাড়তি পণ্য কিনে মজুদ করেছেন অনেকে। এটিকে পুঁজি করে খুচরা বাজারে বেড়েছে চালের দাম। লকডাউনের দ্বিতীয় দিনেই খুচরা বাজারে চালের কেজিতে বেড়েছে অন্তত ২ থেকে ৩ টাকা। সে হিসাবে, খুচরা বাজারে বস্তা প্রতি (৫০ কেজি) চালের দাম বেড়েছে ১০০ থেকে ১৫০ টাকা।

মঙ্গলবার (৬ এপ্রিল) নগরের খুচরা দোকানগুলো ঘুরে দেখা যায়, লকডাউনের প্রভাবে আগের মত ক্রেতাদের আনাগোনা খুব একটা নেই বললেই চলে। তবে কেজি প্রতি ২ থেকে ৩ টাকা বাড়তি দরে বিক্রি হচ্ছে বিভিন্ন জাতের চাল। খুচরা বাজারে পাইজাম প্রতি কেজি ৪৭ থেকে ৪৮ টাকা, সিদ্ধ চাল ৫০ থেকে ৫২ টাকা, মিনিকেট ৬৩ থেকে ৬৫ টাকা, নাজিরশাইল ৬৭ থেকে ৬৮ টাকা ও বিআর-২৮ বিক্রি হচ্ছে ৫২ থেকে ৫৬ টাকায়। তাছাড়া মাঝারি মানের অন্যান্য জাতের চিকন চাল বিক্রি হচ্ছে ৬০ টাকায়।

অপরদিকে পাহাড়তলী পাইকারী চালের বাজারে সরেজমিনে গিয়ে দেখা যায়, বাজারে চালের সরবরাহে ঘাটতি নেই। পাইকারি চালের দোকানগুলোতে বিভিন্ন জাতের চালের পসরা সাজিয়ে বসে আছেন বিক্রেতারা। লকডাউনের প্রভাবে চালের দোকানে আগের মতো ক্রেতাদের আনাগোনা নেই।

পাইকারি ব্যবসায়ীরা বলছেন, গত দু'তিন মাস ধরে বস্তাপ্রতি ২০০ থেকে ৩০০ টাকা বাড়তি দরে চাল বিক্রি হচ্ছে। নতুন করে চালের দাম বাড়ে নি। আগের বাড়তি দামটাই এখন স্বাভাবিক দামে পরিণত হয়েছে।

অপরদিকে খুচরা পর্যায়ে চালের দাম বাড়ার জন্য ক্রেতাদের দোষারোপ করছেন ব্যবসায়ীরা। তারা জানিয়েছেন, লকডাউনের কথা শুনে সামর্থ্যবান মানুষরা বেশি করে পণ্য কিনে মজুদ করে রেখেছেন। পাইকাররা দাম বাড়াননি। কিন্তু আগের সরবরাহ চাল বিক্রি হয়ে গেছে। লকডাউনে চাল আনার ক্ষেত্রে পরিবহণ খরচ বেড়ে গেছে। এই কারণে চালের দামটা খুচরা বাজারে একটু বাড়তি।

পাহাড়তলী বাজারে চালের দাম বাড়েনি। পাইকারি ব্যবসায়ীরা এখনও বস্তাপ্রতি (৫০ কেজি) ২০০ থেকে ৩০০ টাকা বাড়তি দরে চাল বিক্রি করছেন। বর্তমানে ২০০ টাকা বাড়তি দরে জিরাশাইল চাল বস্তাপ্রতি ৩ হাজার ৪০ টাকা, পাইজাম সিদ্ধ ২২০ টাকা বাড়তি দরে ২ হাজার ৩৭০ টাকায়, মিনিকেট আতপ ২০০ টাকা বাড়তি দরে ৩ হাজার টাকায়, ৫০ টাকা বাড়তি দরে কাটারি আতপ ৩ হাজার ৪০০ টাকা, নাজিরশাইল চাল ৩০০ টাকা বাড়তি দরে ৩ হাজার ২০০ টাকায় বিক্রি করছেন পাইকাররা। তাছাড়া ২০০ টাকা বাড়তি দরে চিনি আতপ ৩ হাজার ৫০০ টাকায়, মোটা সিদ্ধ চাল ১০০ টাকা বাড়তি দরে ২ হাজার টাকায়, ২০০ টাকা বাড়তি দরে বেতী আতপ চাল ২ হাজার ৬০০ টাকায় এবং পাইজাম আতপ ২০০ টাকা বাড়তি দরে ২ হাজার ৬০০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে। 

নগরের নয়াবাজার এলাকায় খুচরা দোকানে চাল কিনতে এসেছেন ভ্যানচালক মবিন উদ্দীন। তিনি সিভয়েসকে বলেন, ‘গত তিন মাসেরও বেশি সময় ধরে চালসহ অন্যান্য নিত্যপ্রয়োজনীয় পণ্যের বাজার অস্থির। আমরা দিনমজুর। দিন এনে দিন খাই। কোন পণ্যে এক টাকা বাড়লে আমাদের জন্য সেটা বহন করা কষ্টসাধ্য হয়ে যায়। সামনে রোজা আসছে। আমরা গরীব মানুষ, ভাত দিয়েই ইফতার করি। সে চালের দামই যদি বেড়ে যায়, আমরা যাবো কোথায়। সরকারের কাছে অনুরোধ চালের দামটা যেন কমে, আমরা যেন অন্তত ডালে-ভাতে বেঁচে থাকতে পারি।’

নয়াবাজার এলাকার খুচরা ব্যবসায়ী তোরাব খান সিভয়েসকে বলেন, ‘লকডাউনের কারণে চালের দাম বেড়েছে। তবে খুব বেশি দাম বেড়েছে এমনটা বলা যাবে না। আমরা চেষ্টা করি সীমিত লাভে পণ্য বিক্রি করতে। তবে পণ্যের চালান আনতে গিয়ে আমাদের খরচ এখন আগের চেয়ে বেশি পড়ে। তাই পরিবহণ খরচ যোগ দিলে চালের দাম বেড়ে যায়। আমাদের কিছুই করার নাই। লোকসান তো আর দিতে পারব না।’

পাহাড়তলি বণিক সমিতির সাধারণ সম্পাদক নিজাম উদ্দীন সিভয়েসকে বলেন, ‘পাইকারি পর্যায়ে চালের দাম বাড়েনি। আর বাড়ার সম্ভাবনাও নেই। গত কয়েকমাস আগে থেকে পাইকারি বাজারে বস্তাপ্রতি চাল ২০০ থেকে ৩০০ টাকা দরে বিক্রি হচ্ছে। এই বাড়তি দামটাই এখন স্বাভাবিক দামে পরিণত হয়েছে। আমাদের পাইকারি বাজারে ভোক্তাদের চাহিদার তুলনায় এখনও পর্যাপ্ত সরবরাহ রয়েছে। এখন লকডাউন চলছে। এই সুযোগে পরিবহণগুলো বাড়তি ভাড়া চাচ্ছে। এই কারণেই খুচরা ব্যবসায়ীরা বাড়তি দামে চাল বিক্রি করতে বাধ্য হচ্ছেন।’

বাজার নিয়ন্ত্রণে রাখতে শুল্ক হ্রাস ও আমদানিসহ নানা রকম উদ্যোগ নেয়ার পরেও বেড়েই চলেছে চালের দাম। তাই বাজার বিশ্লেষকরা বলছেন, লকডাউনের অজুহাত দেখিয়ে অসাধু ব্যবসায়ীরা পণ্যের দাম বাড়ানোর পায়তারা করছেন। এ সুযোগটা পুরো রমজান মাস জুড়ে কাজে লাগাতে চাইবে তারা। তাই সরকারের উচিত এখনই কার্যকরী পদক্ষেপ গ্রহণ করা।

পরিসংখ্যান ব্যুরোর তথ্য মতে, গত এক দশকে প্রতি কেজি মাঝারি মানের চালের গড় দাম ছিল ৪১ টাকা, যা এখন ৬০ টাকা। গত অর্থবছরও (২০১৯-২০) প্রতিকেজির গড় দাম ছিল ৫৬ টাকা। গত এক দশকের মধ্যে ২০১৩-১৪ অর্থবছরের আগ পর্যন্ত দাম ছিল সর্বোচ্চ ৪৬ টাকা। হঠাৎ করেই পরের বছর ৫৩ টাকায় ওঠে। পরে ২০১৫-১৬ অর্থবছরে দাম এক টাকা কমলেও আবার লাগামছাড়া হয় দাম।

কৃষি অধিদফতরের তথ্যমতে, এক দশক আগেও দেশে চালের উৎপাদন ছিল তিন কোটি ৩৫ লাখ টন, যা এখন (২০১৯-২০ অর্থবছর) তিন কোটি ৮৭ লাখ টনে দাঁড়িয়েছে। ২০১৬-১৭ অর্থবছরের পরে প্রতিবছর চালের উৎপাদন প্রায় ১০ থেকে ১২ লাখ টন করে বেড়েছে।

কনজ্যুমারস অ্যাসোসিয়েশন অব বাংলাদেশ (ক্যাব) কেন্দ্রীয় কমিটির ভাইস প্রেসিডেন্ট এস এম নাজের হোসাইন সিভয়েসকে বলেন, ‘অসাধু ব্যবসায়ীরা সব সময় পণ্যের দাম বাড়ানোর জন্য নানা অজুহাত খোঁজেন। কিছুদিন আগে আন্তর্জাতিক বাজারে পণ্যের দাম বাড়তি এই অজুহাত দেখিয়ে পণ্যের বাজার লাগামছাড়া হয়ে গিয়েছিল। সেটা এখনও বিরাজমান। পাশাপাশি লকডাউনের অজুহাতকে কাজে লাগিয়ে অসাধু ব্যবসায়ীরা পণ্যের দাম বাড়াতে চাইবেন। সামনে রমজান আসছে। তাই প্রশাসনের উচিত বাজার মনিটরিং ব্যবস্থা জোরদার করা, আরো বেশি কঠোর হওয়া। অসাধু ব্যবসায়ীদের শাস্তির আওতায় নিয়ে আসা।’

-সিভয়েস/টিএম

সর্বশেষ

পাঠকপ্রিয়