ঘূর্ণিঝড় সিত্রাংয়ে চাক্তাই-খাতুনগঞ্জে ৫শ কোটি টাকার ক্ষতি— দাবি ব্যবসায়ীদের

সিভয়েস প্রতিবেদক

প্রকাশিত: ১৯:৫১, ৩ নভেম্বর ২০২২
ঘূর্ণিঝড় সিত্রাংয়ে চাক্তাই-খাতুনগঞ্জে ৫শ কোটি টাকার ক্ষতি— দাবি ব্যবসায়ীদের

সংবাদ সম্মেলনে ব্যবসায়ী সমিতির সাধারণ সম্পাদক মোহাম্মদ মহিউদ্দিন।

চাক্তাই-খাতুনগঞ্জের ব্যবসায়ীরা দাবি করেছেন, ঘূর্ণিঝড় সিত্রাং ও জোয়ারের পানির প্রভাবে তাদের ৪শ থেকে ৫শ কোটি টাকার মালামাল ভিজে নষ্ট হয়েছে। কারণ ঘূর্ণিঝড়ের সময় চাক্তাইয়ের ৯০ শতাংশ এবং খাতুনগঞ্জের ৫০ শতাংশ দোকান ও গুদামে পানি ঢুকেছিল। যার ফলে দোকান ও গুদামে থাকা পেঁয়াজ, রসুন, আদা, মসলা, চাল, ডাল, গমের মত নিত্যপণ্য  ডুবে যায়। 

বৃহস্পতিবার (৩ নভেম্বর) চাক্তাই খাতুনগঞ্জ আড়তদার সাধারণ ব্যবসায়ী সমিতির সংবাদ সম্মেলনে সমিতির সাধারণ সম্পাদক মোহাম্মদ মহিউদ্দিন এ কথা বলেন। 

তিনি বলেন, ‘আমরা প্রাথমিকভাবে হিসাবে করে দেখেছি চাক্তাই-খাতুনগঞ্জে ৪শ থেকে ৫শ কোটি টাকার মালামাল ভিজে নষ্ট হয়েছে।’

নির্মাণাধীন চাক্তাই খাল স্লুইস গেইটটি চালু না হওয়ায় ঘূর্ণিঝড় সিত্রাংয়ের সময় দেশের অন্যতম বৃহৎ পাইকারি বাজার চাক্তাই, খাতুনগঞ্জ ও আসাদগঞ্জের বড় অংশ তলিয়ে গিয়েছিল উল্লেখ করে মোহাম্মদ মহিউদ্দিন বলেন, ‘কর্ণফুলী নদীতে পানি ধারণক্ষমতা কমে গেছে। ফলে বৃষ্টি ছাড়াই নিচু এলাকার দোকান ও গুদামে জোয়ারের পানি ঢুকছে। এতে করে বিপুল অঙ্কের আর্থিক ক্ষতির মুখে পড়ছেন ব্যবসায়ীরা। চার বছরেও সিডিএ স্লুইসগেটের নির্মাণকাজ শেষ করতে পারেনি। আমাদের দাবি, দ্রুত কাজটি শেষ করা হোক।’

খালের মুখে স্লুইসগেটের কারণে বড় নৌযান ভেতরে ঢুকতে না পারায় খরচ বেড়েছে উল্লেখ করে এ ব্যবসায়ী নেতা বলেন, ‘এক সময় আমাদের চাক্তাই-খাতুনগঞ্জের ব্যবসা-বাণিজ্য কিন্তু ৯০ শতাংশ নৌপথে করতাম। কালের পরিক্রমায় এখন ১০ শতাংশ নৌপথে এবং সড়ক পথে ৯০ শতাংশ করছি। যে ১০ শতাংশ নৌপথে হবার কথা বিশেষ করে কুতুবদিয়া, মহেশখালী, সন্দ্বীপসহ প্রত্যন্ত অঞ্চলে সেটাও এই স্লুইস গেটের কারণে সমস্যা হচ্ছে। ছোট নৌকায় নদীর মুখে নিয়ে বড় নৌকায় লোড করতে হচ্ছে। এতে খরচ বাড়ছে। কোনো একটা বড় নৌকা ঢুকতে-বের হতে পারছে না। ডিঙি নৌকা একটা ঢুকলে বাকিগুলো অপেক্ষা করতে হয়।’

ওজন স্কেলে বৈষম্যের শিকার চট্টগ্রামের ব্যবসায়ীরা—এমন মন্তব্য করে মোহাম্মদ মহিউদ্দিন বলেন, ‘ঢাকা-চট্টগ্রাম মহাসড়কের কুমিল্লার দাউদকান্দি ও সীতাকুণ্ডের দারোগাহাটের ওজন স্কেলের কারণে ৬ চাকার ট্রাক-কাভার্ডভ্যানে ১৩ টনের বেশি পণ্য আনা যাচ্ছে না। দেশের আর কোথাও ওজন স্কেল না থাকায় চট্টগ্রামের ব্যবসায়ীরা বৈষম্যের শিকার হচ্ছেন। এই চট্টগ্রামেই ইস্পাত, সিমেন্ট, রড, জাহাজ নির্মাণ, জাহাজ ভাঙাসহ বড় বড় শিল্প কারখানা গড়ে উঠেছে। চাক্তাই খাতুনগঞ্জ ও কোরবানিগঞ্জে ভোগ্যপণ্যের বড় পাইকারি বাজারের পাশাপাশি পাহাড়তলীতে চালের পাইকারি বাজার গড়ে উঠেছে। চট্টগ্রাম বন্দর দিয়ে আমদানি করা শিল্পের কাঁচামাল ও পণ্য দেশের বিভিন্ন অঞ্চলে পরিবহন করা হচ্ছে। তাই প্রতিবন্ধক এই ওজন স্কেল প্রত্যাহার করা জরুরি।’

চট্টগ্রামের বৃহত্তর ভোগ্যপণ্যের বাজার খাতুনগঞ্জে প্রায়ই উঠছে জোয়ারের পানি। সম্প্রতি ঘূর্ণিঝড় সিত্রাং এর প্রভাবে বাজারের প্রতিটি দোকান ও গুদামে পানি ঢুকে শত কোটি টাকার পণ্য নষ্ট হয়ে গেছে— এমনটাই দাবি ব্যবসায়ীদের। তাই খাতুনগঞ্জে প্রকৃত ক্ষয়ক্ষতির পরিমাণ নির্ণয় করতে গত ৩১ অক্টোবর পাঁচ সদস্যের একটি তদন্ত কমিটি গঠন করেছিল চাক্তাই-খাতুনগঞ্জ আড়তদার সাধারণ ব্যবসায়ী কল্যাণ সমিতি। কমিটিকে দুইদিনের মধ্যে তদন্ত প্রতিবেদন জমা দেওয়ার নির্দেশ দেওয়া হয়েছিল।

প্রসঙ্গত, গত ২৪ অক্টোবর ঘূর্ণিঝড় সিত্রাংয়ের রাতে স্বাভাবিক জোয়ারের চেয়ে কয়েক ফুট বেশি উচ্চতার পানি চাক্তাই খাল ধরে প্রবেশ করতে শুরু করে। সেদিন রাত ৯টার দিকে খাতুনগঞ্জ, আসাদগঞ্জ ও চাক্তাই এলাকায় জোয়ারের পানি প্রবেশ শুরু হয়। ঘণ্টাখানেকের মধ্যেই পুরো এলাকা তলিয়ে যায়।

সম্পর্কিত বিষয়:

সর্বশেষ

পাঠকপ্রিয়