ঈদের দিনের বিশেষ কিছু সুন্নত, যা আমরা ভুলে যাই 

সিভয়েস ডেস্ক

প্রকাশিত: ০৬:০১, ১৪ মে ২০২১
ঈদের দিনের বিশেষ কিছু সুন্নত, যা আমরা ভুলে যাই 

ফাইল ছবি

মুসলিম ঐতিহ্যের দুটি ঈদ উৎসব— ঈদুল ফিতর ও ঈদুল আজহা। ‘ঈদ’ শব্দটি আরবি, যার অর্থ আনন্দ। ‘ফিতর’ শব্দটিও আরবি, যার অর্থ রোজা ভাঙা। ঈদুল ফিতরের অর্থ রোজা শেষ হওয়ার আনন্দ, আল্লাহর নেয়ামত লাভ করার আনন্দ। হিজরি সনের দশম মাস তথা শাওয়াল মাসের ১ তারিখ ঈদুল ফিতর উদযাপিত হয়। 

ইসলামে ঈদের প্রবর্তন হয়েছে দ্বিতীয় হিজরির মাঝামাঝি সময়ে। হজরত আনাস (রা.) থেকে বর্ণিত— হজরত রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম যখন মদিনায় আসেন, তখন দেখেন যে সেখানকার লোকেরা বছরে দুদিন (নাইরোজ ও মিহরজান) আনন্দ করে, খেলাধুলা করে। তিনি বললেন, আল্লাহতায়ালা তোমাদের এ দুদিনের পরিবর্তে আরও বেশি উত্তম ও কল্যাণকর দুটি দিন দিয়েছেন— ১. ঈদুল আজহা ও ২. ঈদুল ফিতর। (আবু দাউদ : ১/১৬১)

ঈদের দিনে রয়েছে বিশেষ কিছু আমল। এগুলোর বেশির ভাগই সুন্নত ও মোস্তাহাব। সেগুলো হলো— ১. ঈদের নামাজের পূর্বে গোসল করে পবিত্রতা অর্জন করা সুন্নাত, আবদুল্লাহ ইবনে উমার (রা.) হতে বর্ণিত আছে— রাসূল (সা.) ঈদের নামাযে যাওয়ার পূর্বে গোসল করতেন। (মুয়াতা ইমাম মালিক)। তার আগে মেসওয়াক করাও সুন্নত। 

২. পরিষ্কার-পরিচ্ছন্ন সুন্দর পোশাক পরিধান করা। জাবির (রা.) হতে বর্ণিত— রাসূল (সা.)-এর একটি সুন্দর জুব্বা ছিল, যা তিনি দুই ঈদে ও জুময়ার দিনে পরিধান করতেন। (মুসনাদ বায়হাকী)।

৩. আতর বা সুগন্ধি ব্যবহার করা সুন্নাত। ইমাম মালিক (রহ.) বলেন— মুসলিম পণ্ডিতগণ প্রত্যেক ঈদে সুগন্ধি ব্যবহার করা ও সুসজ্জিত হওয়াকে মুস্তাহাব বলেছেন। (আল-মুগনী)।

৪. ঈদুল ফিতরে নামাজে যাওয়ার পূর্বে কিছু খাওয়া সুন্নাত। হাদিসে খেজুর বা মিষ্টি জাতীয় কিছু খাওয়ার কথা উল্লেখ করা হয়েছে। আনাস (রা.) হতে বর্ণিত— রাসূল (সা.) খেজুর না খেয়ে ঈদগাহে যেতেন না। (সহি আল-বুখারী)। আর সেই খেজুর বিজোড় সংখ্যায় খাওয়া উত্তম। আর খেজুর না থাকলে মিষ্টি জাতীয় খাবার খাওয়া যেতে পারে।  

৫. ঈদের দিনের প্রধান আমল হলো সদকায়ে ফিতরা আদায় করা তারপর নামাজ পড়া। আব্দুল্লাহ ইবনে আব্বাস (রা.) বলেন— আল্লাহ সাদাকাতুল ফিতর প্রদান করাকে বাধ্যতামূলক করেছেন। যা একদিকে অশ্লীল, বেহুদা কথা ও কাজ দ্বারা কলুষিত রোজাকে পবিত্র করে। অন্যদিকে অসহায়-নিঃস্ব গরীবকে খাদ্যদানে সহায়তা করার সুযোগ সৃষ্টি হয়। যে ব্যক্তি সাদাকাতুল ফিতর ঈদের নামাজের পূর্বে আদায় করবে, তা কবুল করা হবে। আর যে ব্যক্তি ঈদের নামাজের পরে আদায় করবে, তা সাধারণ সাদাকাহ হিসেবে গণ্য হবে। (আবু দাউদ; ইবনে মাজাহ)।

৬. ঈদের নামাজ আদায়ের জন্য তাড়াতাড়ি ঈদগাহে যাওয়া উচিত। পায়ে হেঁটে ঈদগাহে যাওয়া সুন্নাত।

৭. ঈদের আরেকটি সুন্নাত হলো এক রাস্তা দিয়ে ঈদগাহে যাওয়া এবং অন্য রাস্তা দিয়ে ফিরে আসা। এতে দীর্ঘ হাঁটা এবং বেশি মানুষের সঙ্গে দেখা হওয়ার উপকারিতা রয়েছে। ইবনু সুবাইর (রা.) হতে বর্ণিত— রাসূল (সা.) এক রাস্তা দিয়ে ঈদের নামাজে যেতেন এবং অন্য রাস্তা দিয়ে ফিরে আসতেন। (সহী আল বুখারী)। এটা এ জন্য যে, যাতে উভয় পথের লোকদেরকে সালাম দেওয়া ও ঈদের শুভেচ্ছা বিনিময় করা যায়। (যাদুল-মায়াদ)।

৮. তাকবির বলতে বলতে ঈদগাহে যাওয়া সুন্নাত। কুরআনে এসেছে— তোমরা (রমজানের) রোজা পূর্ণ করো এবং আল্লাহর বড়ত্ব ও শ্রেষ্ঠত্ব বর্ণনা কর। [সূরা আল-বাকারা: ১৮৫] ইবনে উমার (রা.) হতে বর্ণিত, রাসূল (সা.) ঘর থেকে বের হয়ে ঈদগাহে পৌঁছার পূর্ব মুহূর্ত পর্যন্ত তাকবির বলতেন। ইবনে উমার (রা.) ঈদুল ফিতর ও ঈদুল আজহার দিনে ঈদগাহে আসা পর্যন্ত উচ্চস্বরে তাকবির পাঠ করতেন। 

তাকবির বলতে হবে এভাবে— ‘আল্লাহু আকবার, আল্লাহু আকবার, আল্লাহু আকবার। লা ইলাহা ইল্লাল্লাহু, ওয়া আল্লাহু আকবার, আল্লাহু আকবার, ওয়া লিল্লাল্লাহিল হামদ’। এ শব্দাবলী ইবনে মাসউদ (রা.) ও অন্যান্য সাহাবী থেকে সাব্যস্ত হয়েছে। প্রথমাংশে ‘আল্লাহু আকবার’ তিনবারও বলা যেতে পারে কিংবা দুবার। [ইবনে আবি শায়বা এর ‘আল-মুসান্নাফ’ (২/১৬৫-১৬৮), ইরওয়াউল গালিল (৩/১২৫)]

ইমাম শাফেয়ী (রহ.) বলেন, কেউ যদি একটু বাড়িয়ে বলেন— ‘আল্লাহু আকবার কাবিরা, ওয়াল হামদুলিল্লাহি কাছিরা। ওয়া সুবহানাল্লাহি বুকরাতান ওয়া আসিলা। আল্লাহু আকবার। ওয়ালা না’বুদু ইল্লাল্লাহ মুখলিসিনা লাহুদ দ্বীন; ওয়া লাউ কারিহাল কাফিরুন। লা ইলাহা ইল্লাল্লাহু ওয়াহদাহ। সাদাকা ওয়া’দাহ, ওয়া নাছারা আবদাহ, ওয়া হাযামাল আহযাবা ওয়াহদাহ। লা ইলাহা ইল্লাল্লাহু ওয়া আল্লাহু আকবার।’ তবে সেটা ভাল। [আল-উম্ম (১/২৪১)] আবু ইসহাক আল-সিরাজি তার ‘আল-মুহায্‌যাব’ নামক গ্রন্থে (১/১২১) বলেন, ‘কেননা নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম সাফা পাহাড়ের উপর এ কথাগুলো বলেছিলেন।’

৯. ঈদের দিন চেহারায় খুশির ভাব প্রকাশ করা ও কারও সঙ্গে দেখা হলে হাসিমুখে কথা বলা মোস্তাহাব। 

১০. ঈদের দিনে পারস্পরিক ঈদ শুভেচ্ছা ও আনন্দ-অভিবাদন বিনিময় করা মোস্তাহাব। (ফাতাওয়া শামি : ১/৫৫৬,৫৫৭,৫৫৮)। শুভেচ্ছা ও অভিনন্দন বিনিময়ের মাধ্যমে সবার মাঝে সুসম্পর্ক ও ভালোবাসা গড়ে উঠে। বিভিন্ন বাক্য দ্বারা এ শুভেচ্ছা বিনিময় করা যায়। যেমন- রাসূলে করীম (সা.)-এর সাহাবায়ে কিরাম ঈদের দিন যখন পরস্পর দেখা হতো তখন একে অপরকে বলতেন— ‘তাকাব্বাল্লাহু মিন্না ওয়ামিনকা’ অর্থাৎ আল্লাহতায়ালা আমাদের ও আপনার ভালো কাজগুলো কবুল করুন। (ফতহুল বারী)।

‘ঈদ মুবারক’ বলেও ঈদের শুভেচ্ছা বিনিময় করা যায়। তবে প্রথমে উল্লেখিত বাক্য দিয়ে শুভেচ্ছা বিনিময় করাই উত্তম। কারণ সাহাবীগণ এ বাক্য ব্যবহার করতেন ও এতে পরস্পরের জন্য কল্যাণ কামনা ও আল্লাহ রাব্বুল আলামিনের কাছে দোয়া রয়েছে।

সর্বশেষ

পাঠকপ্রিয়