Cvoice24.com

চসিক নির্বাচন
ভোটের আগেই বহিষ্কার আ.লীগের বিদ্রোহীরা

প্রকাশিত: ১১:৫৬, ২০ জানুয়ারি ২০২১
 ভোটের আগেই বহিষ্কার আ.লীগের বিদ্রোহীরা

চট্টগ্রাম সিটি করপোরেশন (চসিক) নির্বাচনে বিদ্রোহী কাউন্সিলর প্রার্থীদের দমাতে কেন্দ্রীয় ও স্থানীয় নেতাদের দফায় দফায় বহিষ্কারের হুংকারও কাজে আসেনি। ভোটের মাঠে অনড় থাকা এসব বিদ্রোহীদের বিরুদ্ধে অবশেষে আনুষ্ঠানিকভাবে সাংগঠনিক ব্যবস্থা নিতে যাচ্ছে আওয়ামী লীগ। নগর আওয়ামী লীগের লিখিত সুপারিশের ভিত্তিতে ভোটের আগে দুই একদিনের মধ্যেই সাংগঠনিক শাস্তির ঘোষণা আসছে। 

বুধবার দুপুরে দলীয় কার্যালয়ে নগর আওয়ামী লীগের বিশেষ বর্ধিত সভায় অংশগ্রহণ শেষে আওয়ামী লীগের যুগ্ম সম্পাদক (চট্টগ্রাম বিভাগের দায়িত্বপ্রাপ্ত) মাহবুবুল আলম হানিফ এসব কথা জানান। 

বিদ্রোহী প্রার্থী প্রসঙ্গে হানিফ বলেন, ‘আপনারা জানেন, মেয়র পদে মনোনয় দলীয় মনোনয়ন বোর্ডের সিদ্ধান্তে দেওয়া হয়। আর কাউন্সিলরদেরকেও দলীয় কাউন্সিলর প্রার্থীদের মনোনয়ন বোর্ড থেকে সমর্থন দেওয়া হয়। বোর্ড যাচাই বাছাই করে সব কিছু বিবেচনায় নিয়ে তাদের সমর্থন দিয়েছে। এখানে যারা দলীয় সিদ্ধান্তের বাইরে গিয়ে প্রার্থী হয়েছে তাদেরকে আমরা বারবার অনুরোধ করেছি প্রার্থীতা প্রত্যাহার করে নেওয়ার জন্য। যারা এখনো তা করেনি তাদের বিরুদ্ধে কঠোর সাংগঠনিক ব্যবস্থা নেওয়ার জন্য চট্টগ্রাম মহানগর আওয়ামী লীগের পক্ষ থেকে লিখিত সুপারিশ কেন্দ্রীয় আওয়ামী লীগের কাছে পাঠােনো হয়েছে। আমাদের ওয়ার্কিং কমিটির বৈঠকে এ বিষয়ে সিদ্ধান্ত হবার কথা থাকলেও পেন্ডামিক সিটিউশনের কারণে তা সম্ভব হচ্ছে না। এক্ষেত্রে একমাত্র সাংগঠনিক ক্ষমতা আছে মাননীয় প্রধানমন্ত্রী আমাদের সভানেত্রীর হাতে। আমরা আশা করছি আগামী দুই একদিনের মধ্যেই বিদ্রোহীদের বিরুদ্ধে চূড়ান্তভাবে কঠোর সাংগঠনিক ব্যবস্থার ঘোষণা আসবে।’

তিনি আরও বলেন, ‘যারা বিদ্রোহী প্রার্থীদের মদদ দিচ্ছেন তাদের বিরুদ্ধে তদন্ত করে সাংগঠনিক ব্যবস্থা নেওয়া হবে। দলীয় সিদ্ধান্ত অনমান্যকারীদের বিরুদ্ধে কোনও ছাড় নেই।’

এরআগে বুধবার (২০ জানুয়ারি) দুপুরে রাজধানীর ধানমণ্ডিতে দলীয় সভানেত্রীর রাজনৈতিক কার্যালয়ে আওয়ামী লীগের শ্রম ও জনশক্তি বিষয়ক উপকমিটি আয়োজিত আলোচনা সভায় প্রধান অতিথির বক্তব্যে ওবায়দুল কাদের বলেছেন, ‘অনেকের বিরেুদ্ধে এমন অভিযোগ রয়েছে। তাদেরকে বিদ্রোহীদের সমর্থন ও মদদ দেওয়া থেকে বিরত থাকার নির্দেশ দেওয়া হলো।’ নৌকার বিপক্ষে দলের যে কোনো পর্যায়ের নেতা এবং জনপ্রতিনিধিরা জড়িত থাকলে তাদের বিরুদ্ধে কঠোর সাংগঠনিক ব্যবস্থা নেওয়া হবে বলেও স্পষ্ট জানিয়ে দেন আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক এবং সড়ক পরিবহন ও সেতুমন্ত্রী ওবায়দুল কাদের।

দলীয় মনোনয়ন প্রসঙ্গে তিনি বলেন, ‘আওয়ামী লীগ একটি বৃহৎ রাজনৈতিক দল। যে কোনও নির্বাচনে দলীয় মনোনয়ন পাওয়ার মতো একাধিক যোগ্য প্রার্থী থাকা স্বাভাবিক। তবে মনোনয়ন বঞ্চিতদের যোগ্যতা অনুযায়ী সাংগঠনিকভাবে মূল্যায়নের সুযোগ রয়েছে। কিন্তু দলের শৃঙ্খলা ও স্বার্থ পরিপন্থী কর্মকাণ্ড করা যাবে না। কেউ বিদ্রোহী হয়ে নির্বাচন করবেন না, আর দায়িত্বশীল নেতা এবং জনপ্রতিনিধিরাও তাদের সমর্থন বা মদদ দেবেন না। কেননা স্থানীয় সরকার নির্বাচনে দলের মনোনীত প্রার্থীদের বিরুদ্ধে যারা স্বতন্ত্র প্রার্থী হিসেবে নির্বাচন করছেন তাদের আগামীতে আর মনোনয়ন দেওয়া হবে না বলে দল থেকে সিদ্ধান্ত হয়েছে।’

আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদের বলেন, ‘প্রতিটি নির্বাচনে আওয়ামী লীগের প্রার্থী চূড়ান্ত করার জন্য শেখ হাসিনার নেতৃত্বে দলের সিনিয়র নেতাদের সমন্বয়ে পৃথক পৃথক মনোনয়ন বোর্ড রয়েছে। একটি স্থানীয় সরকার, অপরটি সংসদীয়। সংগঠনের গঠনতন্ত্র অনুযায়ী তৃণমূল নেতাদের মতামত, সংশ্লিষ্ট জেলা উপজেলা পর্যায়ের নেতাদের সুপারিশ, সরকারি-বেসরকারি এবং দলীয় সার্ভে রিপোর্টের পাশাপাশি প্রার্থীদের যোগ্যতা, ত্যাগ ও জনপ্রিয়তা বিবেচনা করে দলীয় মনোনয়ন চূড়ান্ত করা হয়।’

অন্যদিকে বুধবার (২০ জানুয়ারি) দুপুরে তথ্য মন্ত্রণালয় সভাকক্ষে বাংলাদেশ সংবাদপত্র পরিষদ নেতৃবৃন্দের সঙ্গে বৈঠকের আগে ব্রিফিংকালে তথ্যমন্ত্রী ড. হাছান মাহমুদ বলেছেন, ‘বিভিন্ন জায়গায় দেখা গেছে আমাদের প্রার্থীর বিরুদ্ধে অনেকে স্বতন্ত্র প্রার্থী হিসেবে নির্বাচন করেছেন। এটি যে খুব ব্যাপক তা নয়। তবে যারা দলে থেকেও স্বতন্ত্র প্রার্থী হয়েছেন তাদের বিরুদ্ধে দলের গঠনতন্ত্র অনুযায়ী অতীতেও ব্যবস্থা নেয়া হয়েছে, এখনো নেয়া হবে। আর যারা দলীয় গুরুত্বপূর্ণ পদে থেকে স্বতন্ত্র প্রার্থীর পক্ষে কাজ করেছেন তাদের বিরুদ্ধে অতীতে ব্যবস্থা নেয়া হয়েছিল, তাদের দলীয় পদবি কেড়ে নেয়া হয়েছিল। এখনো দলীয় গঠনতন্ত্র অনুযায়ী আলাপ আলোচনা করে তাদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেয়া হবে।’

প্রসঙ্গত, বিএনপি প্রার্থীর জন্য নয় দলের বিদ্রোহীদের কারণে এখন বেকাদায় চট্টগ্রাম সিটি করপোরেশন (চসিক) নির্বাচনে প্রতি ওয়ার্ডে কাউন্সিলর প্রার্থীরা। বিদ্রোহীদের দমাতে কেন্দ্রীয় ও স্থানীয় নেতাদের দফায় দফায় বহিষ্কারের হুংকারও কাজে আসেনি। চসিক নির্বাচনে এবার বিএনপি ও আওয়ামী লীগের সমর্থন পাওয়া ১১০ জন প্রাথীসহ মোট প্রার্থী হয়েছেন ২১৭ জন। এরমধ্যে আওয়ামী লীগের বিদ্রোহী প্রার্থী রয়েছেন সাধারণ ওয়ার্ডে ৪০ জন আর সংরক্ষিত ওয়ার্ডে ৫ জন। তাদের মধ্যে সদ্য সাবেক ১১ সাধারণ ওয়ার্ড কাউন্সিলর প্রার্থী ও ৫ জন সংরক্ষিত কাউন্সিলর প্রার্থী রয়েছেন। 

সিভয়েস প্রতিবেদক

সর্বশেষ

পাঠকপ্রিয়