Cvoice24.com


ভারতীয় পেঁয়াজ খাতুনগঞ্জে; বিপাকে কৃষক-ব্যবসায়ী

প্রকাশিত: ১৬:৩৭, ৩ জানুয়ারি ২০২১
ভারতীয় পেঁয়াজ খাতুনগঞ্জে; বিপাকে কৃষক-ব্যবসায়ী

খাতুনগঞ্জে ঢুকেছে ৬৫ টন ভারতীয় পেঁয়াজ

দীর্ঘ সাড়ে তিন মাস বন্ধ থাকার পর শনিবার থেকে বাংলাদেশে পেঁয়াজ রপ্তানি শুরু করেছে ভারত। রবিবার (৩ জানুয়ারি) সকালে পাঁচ ট্রাকে প্রায় ৬৫ টন ভারতীয় পেঁয়াজ ঢুকেছে খাতুনগঞ্জে। বন্ধের দিনে স্থল বন্দর দিয়ে দেশীয় বাজারে এ পেঁয়াজ আসার কারণে বিপাকে পড়েছে ব্যবসায়ীরা। ফলে বন্দরে পড়ে থাকা ২৩ থেকে ২৪ হাজার টন পেঁয়াজ নষ্ট হওয়ার সম্ভাবনা ও কৃষকরা ক্ষতির সম্মুখীন হবে বলে মনে করছেন সংশ্লিষ্টরা।

চট্টগ্রাম সমুদ্র বন্দরের উদ্ভিদ সঙ্গনিরোধ কেন্দ্রের উপ-পরিচালক ড. মোহাম্মদ আসাদুজ্জামান বুলবুল বলেন, গত ছয় মাসে মিয়ানমার, পাকিস্তান, চীন, মিশর, তুরস্ক, নেদারল্যান্ড, মালয়েশিয়া, দক্ষিণ আফ্রিকা, সংযুক্ত আরব আমিরাত, আলজেরিয়া, ইরান ও রাশিয়াসহ আরো কয়েকটি দেশ থেকে ২ লাখ ৯ হাজার ৩৪ হাজার মেট্রিক টন পেঁয়াজ আমদানির জন্য আরপি নিয়েছে ব্যবসায়ীরা। তার বিপরীতে এ পর্যন্ত ১লাখ ৩০ হাজার মেট্রিক টন পেঁয়াজ বন্দর থেকে ছাড়পত্র দেওয়া হয়েছে। 

অভ্যন্তরীণ বাজারে মূল্য বৃদ্ধি ও মজুদে ঘাটতির কারণে গত ১৪ সেপ্টেম্বর ভারত অন্যান্য দেশে পেঁয়াজ রপ্তানির ওপর নিষেধাজ্ঞা আরোপ করে। ফলে বাংলাদেশের বাজারে লাগামহীন পেঁয়াজের দাম বাড়তে থাকে। এমনকি প্রতি কেজি পেঁয়াজ ১৩০ টাকাতেও বিক্রি হয়েছে। পরে সরকার পেঁয়াজের ওপর আমদানি শুল্ক হ্রাস করার পর ব্যবসায়ীরা অন্যান্য দেশ থেকে পেঁয়াজ আমদানি শুরু করে। এ পরিস্থিতির সামাল দিতে সরকার গত বছরের মতো মিয়ানমার, পাকিস্তান, চীন, মিশর, তুরস্কসহ বিভিন্ন দেশ থেকে নানা রঙের ও স্বাদের পেঁয়াজ আমদানি করে।

খাতুনগঞ্জে পেঁয়াজের বড় বিপণিকেন্দ্র হামিদুল্লাহ মার্কেট ব্যবসায়ী সমিতির সাধারণ সম্পাদক মোহাম্মদ ইদ্রিস বলেন, ‘দিনাজপুরের হিলি, সাতক্ষীরার ভোমরাসহ বিভিন্ন স্থলবন্দর দিয়ে ভারতীয় পেঁয়াজ আসতে শুরু করেছে। শনিবার বন্ধের দিনে পেঁয়াজ আমদানি শুরু হলেও খুব দ্রুত বাজারে চলে এসেছে পেঁয়াজ। আজ রবিবার সকালে খাতুনগঞ্জে পাঁচ ট্রাক ভারতীয় পেঁয়াজ ঢুকেছে। এসব পেঁয়াজ প্রতি কেজি ৪৫ টাকা করে বিক্রি হচ্ছে। এতে করে বিভিন্ন পেঁয়াজের দাম গড়ে ১০ থেকে ১২ টাকা কমে গেছে।’

বাজারে ভারতীয় পেঁয়াজের প্রভাব প্রসঙ্গে জানতে চাইলে তিনি বলেন, ‘বর্তমান বাজারে পেঁয়াজের সরবরাহ আছে। এছাড়া বন্দরেও পড়ে আছে প্রায় ২৩ থেকে ২৪ হাজার টন পেঁয়াজ। এরমধ্যে ভারতীয় পেঁয়াজ বাংলাদেশে কিভাবে আসে- সেটাই হলো বড় প্রশ্ন। এখন বলতে কোনো দ্বিধা নেই যে, বাংলাদেশের পেঁয়াজের বাজার নিয়ন্ত্রণ করছে ভারতীয় ব্যবসায়ীরা। আমরা দীর্ঘদিন ধরে পেঁয়াজের ব্যবসা করার সত্ত্বেও বর্তমান বাজারে কারা, কিভাবে পেঁয়াজ আনছে তা আমরা জানি না। খোঁজ নিয়ে দেখলে আপনারাই দেখবেন- এসব পেঁয়াজের রপ্তনিকারকই আমদানিকারক।’

কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের তথ্য অনুযায়ী, দেশে পেঁয়াজের উৎপাদন ও চাহিদার মধ্যে পার্থক্য মাত্র ২ লাখ টনের। বছরে দেশে পেঁয়াজ উৎপাদন হয় ২৩ লাখ টনের বেশি। আর চাহিদা রয়েছে ২৪ থেকে ২৫ লাখ টন। তারপরও শুধু নষ্ট হওয়ার কারণে বছরে ৮ থেকে ১০ লাখ টন পেঁয়াজ বিদেশ থেকে আমদানি করতে হয়। কারণ দেশে উৎপাদিত ৩০ থেকে ৩৫ শতাংশ পেঁয়াজ সংরক্ষণের অভাবে নষ্ট হয়। পেঁয়াজ সংরক্ষণের জন্য যে আধুনিক তাপ নিয়ন্ত্রণ ব্যবস্থা থাকা দরকার, তা সরকারি-বেসরকারি কোনো পর্যায়ে নেই।

এ প্রসঙ্গে কথা হয় চট্টগ্রাম জেলা বাজার কর্মকর্তা মো. সেলিমের সাথে। তিনি বলেন, ‘ভারত পেঁয়াজ রপ্তানি বন্ধ করে দেয়ার কারণে আমরা কৃষকদের পেঁয়াজ উৎপাদনে উদ্বুদ্ধ করেছি। বর্তমানে আমাদের দেশীয় উৎপাদন চাহিদার ৮০ থেকে ৮৫ শতাংশ। এখন কৃষকদের ফসলি পেঁয়াজ বাজারে আসছে। এছাড়া বাজারে অন্যান্য দেশের পেঁয়াজও আছে। এরমধ্যে যদি সরকার ভারতীয় পেঁয়াজ আমদানির সিদ্ধান্ত নেন, তাহলে কৃষকরা ক্ষতির সম্মুখীন হবেন। পরবর্তীতে হয়তো ভারত আবার পেঁয়াজ রপ্তানি বন্ধ করে দিলে তখন কৃষকরা আর পেঁয়াজ চাষে আগ্রহী হবেন না।’

উল্লেখ্য, পাইকারিতে সর্বনিম্ন ১৫-১৬ টাকায় তুরস্কের ছোট সাদা পেঁয়াজ বিক্রি হচ্ছে। তুরস্কের সাদা বড় পেঁয়াজ ২০-২২ টাকা এবং ছোট লাল পেঁয়াজ ৪৫-৪৬ টাকা। এছাড়া মিয়ানমারের পেঁয়াজ ৪৫-৪৭ টাকা, দেশি মুড়িকাটা নতুন পেঁয়াজ ৩২-৩৫ টাকা, মিশরের পেঁয়াজ ২৯-৩০ টাকা, নিউজিল্যান্ডের পেঁয়াজ ১৮ টাকায় বিক্রি হচ্ছে।  

-সিভয়েস/এসবি

সিভয়েস প্রতিবেদক

সর্বশেষ

পাঠকপ্রিয়