বন্ধের সমালোচনায় পিছু হটলো রেলওয়ে

লোকবল ও ইঞ্জিন সংকটের অজুহাতে ৩০ মে বন্ধ হয়ে যায় চট্টগ্রাম–কক্সবাজার রুটে চলাচল করা প্রথম ‘কক্সবাজার স্পেশাল’ ট্রেন। এতে দক্ষিণ চট্টগ্রামের যাত্রীদের মাঝে ক্ষোভ দেখা দেয়। শুরু হয় নানান আলোচনা-সমালোচনা। ফলে স্পেশাল সার্ভিসটি আবারও চালুর কথা ভাবছে রেলওয়ে কর্তৃপক্ষ। কোরবানির ঈদকে সামনে রেখে আগামী ১২ জুন থেকে পুনরায় ট্রেনটি চালু হচ্ছে। চলবে ঈদের পরের দিন পর্যন্ত।

বিষয়টি নিশ্চিত করে রেলওয়ের মহাপরিচালক (ডিজি) সরদার সাহাদাত আলী সিভয়েস২৪-কে বলেন, ‘আসন্ন কোরবানির ঈদে চলাচলের জন্যই মূলত বন্ধ করা হয়েছিল কক্সবাজার স্পেশাল। ঈদযাত্রায় সাধারণ মানুষ যাতে নির্বিঘ্নে বাড়ি ফিরতে পারে সেজন্য স্পেশাল রেক ও ইঞ্জিন রক্ষণাবেক্ষণের জন্য কারখানায় পাঠানো হয়েছিল।'

রেলের এই ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তা গণমাধ্যমের প্রতি ক্ষোভ প্রকাশ করে বলেন, 'কক্সবাজার স্পেশাল ট্রেনটি বন্ধের কারণ হিসেবে বিভিন্ন মহলের কথায় বাসমালিকদের দ্বারা ম্যানেজ হয়ে ট্রেনটি বন্ধ করা হয়েছে-এমন দাবি করা হয়েছে। বিষয়টি আসলে ঠিক নয়। রেলওয়ে অতি গুরুত্বপূর্ণ সেবা মাধ্যম। কোনো কিছুর বিনিময়ে রেলসার্ভিস বন্ধ করে আরেকপক্ষকে আয়ের সুযোগ কখনো দেব না।'

এর আগে মঙ্গলবার (২৮ মে) রেলওয়ে পূর্বাঞ্চলের সহকারী প্রধান পরিচালন কর্মকর্তা (এসিওপিএস) কামাল আখতার হোসেনের সই করা এক বিজ্ঞপ্তির মাধ্যমে বন্ধ হয়ে যায় কক্সবাজার স্পেশাল ট্রেন। বিজ্ঞপ্তি অনুসারে, রেলওয়ের মহাপরিচালকের কার্যালয় থেকে কক্সবাজার স্পেশাল-৩ ও ৪ ট্রেনটি ১০ জুন পর্যন্ত চলাচলের নির্দেশনা দেওয়া হয়েছিল। কিন্তু যান্ত্রিক বিভাগ থেকে ইঞ্জিন ও লোকোমাস্টারের সংকট থাকার কথা জানানো হয়। এজন্য কক্সবাজার বিশেষ ট্রেন ৩০ মে থেকে ১০ জুন পর্যন্ত চলাচল বাতিল করা হয়।

এদিকে ট্রেনটি বন্ধ ঘোষণা করার পরপরই ব্যাপক ক্ষোভের সৃষ্টি হয় সাধারণ যাত্রীদের মাঝে। কারণ হিসেবে বলা হয়, চট্টগ্রাম-কক্সবাজার রুটে ‘কক্সবাজার স্পেশাল’ ট্রেন নিয়মিত চলাচলের পর থেকে একই রুটে বাসসার্ভিসে যাত্রী সংকট দেখা দেয়। ফলে চট্টগ্রাম-কক্সবাজার রুটের বাসমালিকরা যাত্রীপ্রতি ১০০ টাকা পর্যন্ত ভাড়া কমাতে বাধ্য হয়। তারপরও যাত্রী না পাওয়ায় মালিকরা রেলের ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষকে ‘ম্যানেজ’ করে ফেলেছে-এমন দাবি বাংলাদেশ যাত্রী কল্যাণ সমিতির।

উল্লেখ্য, প্রায় ১৮ হাজার কোটি টাকা ব্যয়ে চট্টগ্রামের দোহাজারী থেকে কক্সবাজার পর্যন্ত প্রায় ১০১ কিলোমিটার রেলপথ নতুন করে তৈরির পর ২০২৩ সালের ১১ নভেম্বর উদ্বোধন করা হয়। উদ্বোধন করেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। এরপর ডিসেম্বর থেকে দুই ধাপে ঢাকা থেকে কক্সবাজার রুটে দুটি বিরতিহীন আন্তঃনগর ট্রেন চালু করে রেলওয়ে। কিন্তু চট্টগ্রাম-কক্সবাজার রুটের জন্য কোনো আলাদা ট্রেন যুক্ত করেনি কর্তৃপক্ষ। কারণ হিসেবে অজুহাত দেখানো হয় ইঞ্জিন ও লোকবল সংকটের। 

পরে ঈদযাত্রা স্বস্তি ও আরামদায়ক করতে গত ৮ এপ্রিল চট্টগ্রাম-পটিয়া-কক্সবাজার রুটে প্রথমবারের মতো ঈদ স্পেশাল ট্রেন চালানোর সিদ্ধান্ত নেয় রেলওয়ে কর্তৃপক্ষ। প্রথম পর্যায়ে ঈদের দিন বাদ দিয়ে ১৪ এপ্রিল পর্যন্ত সময় বাড়ানো হয়। তবে সাধারণ যাত্রীর চাহিদার কথা বিবেচনা করে দফায় দফায় সময় বর্ধিত করে আগামী ১০ জুন পর্যন্ত ট্রেনটি চলাচলের কথা ছিল। ঈদ পরবর্তী ১৭ এপ্রিল থেকে ২৮ এপ্রিল পর্যন্ত এ ট্রেন ফের চলাচলের অনুমতি দেয়া হলেও সময় বাড়িয়ে ২০ মে পর্যন্ত চলতে থাকে কক্সবাজার স্পেশাল ট্রেন। পরে দ্বিতীয় দফায় সময় বাড়িয়ে ১০ জুন পর্যন্ত করে পরিবহন বিভাগ। কিন্তু এর আগেই গত বৃহস্পতিবার থেকে ট্রেনটি বন্ধ হয়ে যায়।