বন্দরের গোলায় পঁচছে নিলামের পণ্য

তারেক মাহমুদ

প্রকাশিত: ০৯:১২, ৩০ মে ২০২২
বন্দরের গোলায় পঁচছে নিলামের পণ্য

বন্দরের ‘গোলায়’ পড়ে পড়ে নষ্ট হচ্ছে নিলামের পণ্য। বিক্রি না হওয়ায় পণ্যের গায়ে পড়ছে ধুলা-বালি ও মরিচার আস্তরণ। অনেক পণ্যের গায়ে ছত্রাকও পড়ে গেছে। পুরাতন, ভেজা ও ব্যবহার অনুপযোগী হয়ে পড়ায় পণ্যের গুণগতমান কমে যাওয়ায় আশানুরূপ দাম উঠছে না পণ্যগুলোর। ফলে বারবার নিলামে তুলেও পণ্যগুলো বিক্রি করতে পারছে না কাস্টমস। এতে করে রাজস্ব হারাচ্ছে সরকার।

চট্টগ্রাম বন্দরের জি, কে, ও, এম, জে, এবং ওয়াই গোলাতে প্রায় ছয় বছর ধরে ওয়াটার ফিল্টার, চেয়ার, ফেব্রিক্স, লক ও মার্বেল পণ্য, মোটর সাইকেল পার্টস, ফুয়েল ট্যাংক, রিং, ডিস্ক, ডিটারজেন্ট, মোবাইল ক্যাচিং ও আপেলসহ বিভিন্ন নিলামযোগ্য পণ্য পড়ে আছে। এসব গোলাতে পণ্যগুলো এভাবে বছরের পর বছর পড়ে থেকে গুণগত মান হারাচ্ছে। 

কাস্টমস কর্তৃপক্ষ বলছে, বার বার নিলামে তুলেও পণ্যগুলো বিক্রি করা সম্ভব হয়নি। বিভিন্ন রাসায়নিক পণ্য, ফল, ফেব্রিক্স পণ্য বিক্রির জন্য নিলামে তোলা হচ্ছে। আগামী ৮ জুন পণ্যগুলো বিক্রি সংশ্লিষ্ট দরপত্র খোলার কথা রয়েছে। এছাড়া আগামী ১৪ জুন বন্দরের ওয়াই শেডে থাকা ডিটারজেন্ট পণ্যের মেয়াদ শেষ হচ্ছে। অন্যদিকে একই শেডে রয়েছে সাড়ে ৪৭ হাজার কেজি আমদানি করা আপেল। দ্রুত নষ্ট বা পচনশীল হওয়ায় পণ্যগুলো দ্রুত বিক্রি করতে চায় তারা।

চট্টগ্রাম কাস্টমস সূত্রে জানা গেছে, বন্দরের ‘জি‘ গোলায় ৬ পিস ওয়াটার ফিল্টার রয়েছে। ধুলা-বালি জমে জরাজীর্ণ অবস্থায় পড়ে থাকা পণ্যগুলোর দাম হাঁকা হয়েছে ছয় হাজার ১শ ৪৬ টাকা। বন্দরের ‘কে‘ গোলায় ৬ পিস চেয়ার রয়েছে। পুরাতন ও ভাঙাচোরা হওয়ায় পণ্যগুলোর দাম ধরা হয়েছে সাড়ে ১৪ হাজার টাকা। ‘এম’ গোলায় ১৯ লাখ ৮৯ হাজার টাকার ১৯৬ রোল ফেব্রিক্স পণ্য রয়েছে। পণ্যগুলো ভেজা অবস্থায় রয়েছে। এবারের নিলামে বিক্রি না হলে পণ্যগুলো ধ্বংস তালিকায় অন্তর্ভুক্ত করার চিন্তা-ভাবনা করছে কাস্টমস কর্মকর্তারা।

এদিকে বন্দরের ‘জে’ গোলায় ৫০ লাখ ৫৫ হাজার টাকার ১৬শ’ ৯২ ব্যাগ লক ও ৯১ ব্যাগ মার্বেল পণ্য রয়েছে। গোলার ভেতরে প্রতিকূল পরিবেশে পড়ে থাকায় মরিচা ধরা এ পণ্যগুলো স্ক্র্যাপ হিসেবে বিক্রি করবে কাস্টমস। ‘কে’ গোলায় ১১ পিস মোটর ও বেবি সাইকেল পার্টস রয়েছে। পণ্যগুলোর উপযোগিতা ও বাণিজ্যিকমূল্য না থাকায়  স্ক্র্যাপ পণ্য হিসেবে ৮৩ লাখ ৬০৯ টাকায় বিক্রির সিদ্ধান্ত নেয়া হয়েছে। ‘ও’ গোলাতে থাকা ৯ পিস ফুয়েল ট্যাঙ্কে মরিচা পড়ে নষ্ট হয়ে যাওয়ায় স্ক্র্যাপ পণ্য হিসেবে ১৩ লাখ ২৫২ টাকায় বিক্রি করবে কাস্টমস। পাশাপাশি একই গোলাতে থাকা ২৩০ পিস রিং, ১৪৮ পিস ডিস্ক ও ৬ পিস হ্যান্ড ট্রলি ব্যবহার অনুপযোগী হয়ে পড়েছে। ফলে পণ্যগুলো বিক্রির জন্য ৩ লাখ ৭৬ হাজার ৯৫২ টাকা নির্ধারণ করা হয়েছে। 

অপরদিকে চট্টগ্রাম বন্দরের ‘ওয়াই’ গোলাতে ১৩ হাজার ২শ কেজে ডিটারজেন্ট পণ্য রয়েছে। আগামী ১৪ জুন এ পণ্যের মেয়াদ শেষ হবে। ফলে পণ্যগুলো দ্রুত নিলামে তুলে বিক্রির ব্যবস্থা করছে কাস্টমস। পণ্যগুলোর দাম নির্ধারণ করা হয়েছে ৪৩ লাখ ৩৬ হাজার ৭৯১ টাকা। একই গোলায় ৪৭ হাজার কেজি ব্রাজিল থেকে আমদানি করা আপেল রয়েছে। পচনশীল হওয়ায় ৩৯ লাখ ৬৬ হাজার টাকা দাম নির্ধারণ করে দ্রুত বিক্রি করার চিন্তা রয়েছে কাস্টমসের। অপরদিকে ‘কে’ গোলাতে ৫৫ কার্টন মোবাইল ক্যাচিং রয়েছে। পুরাতন এবং ভিজে পণ্যের গায়ে ছত্রাক পড়ে যাওয়ায় ৭০ হাজার ৮৫১ টাকায় পণ্যগুলো বিক্রি করে দিতে চায় কাস্টমস। পাশাপাশি একই গোলাতে পড়ে থাকতে থাকতে পণ্যের গুণগত মান নষ্ট হওয়ায় ১৪শ ৩৪ কার্টন মোবাইলে ব্যাক কাভার পাঁচ লাখ ৬৩ হাজার টাকায় বিক্রির সিদ্ধান্ত নিয়েছে চট্টগ্রাম কাস্টমস কর্তৃপক্ষ।

চট্টগ্রাম কাস্টমস হাউসের ডেপুটি কমিশনার (নিলাম শাখা) আলী রেজা হায়দার সিভয়েসকে বলেন, বন্দরের বিভিন্ন শেডে নিলামযোগ্য পণ্য রয়েছে। এরমধ্যে আপেল, ফেব্রিক্স, বিভিন্ন যন্ত্রাংশ, ক্যামিকেল, গাড়ি রয়েছে। নিলামযোগ্য পণ্যগুলো দীর্ঘদিন বিভিন্ন শেডে পড়ে থাকায় অনেক পণ্যে গায়ে ধুলা-বালি, মরিচা ও ছত্রাক জমে পণ্যের গুণগত মান নষ্ট হয়ে গেছে। আবার কিছু পণ্য এবার বিক্রি না হলে তা আমরা ধ্বংস করে ফেলার চিন্তা-ভাবনা করছি। ডিটারজেন্ট, আপেল জাতীয় পণ্যগুলো দ্রুত বিক্রি করে ফেলতে হবে। তাই আমরা আমরা ১০২ লটে বিভিন্ন পণ্য নিলামে তুলে বিক্রির ব্যবস্থা করছি। এবারের নিলামে অনেক বেশি রাসায়নিক পণ্য রয়েছে। আগামী ৮ জুন আমরা পণ্যগুলো বিক্রি করতে দরপত্র খোলার কথা রয়েছে।


-সিভয়েস/টিএম

সর্বশেষ

পাঠকপ্রিয়