Cvoice24.com

রাশিয়ার তেল দেশে পরিশোধন সম্ভব নয় : ইস্টার্ন রিফাইনারি

সিভয়েস প্রতিবেদক

প্রকাশিত: ২১:২৭, ২০ সেপ্টেম্বর ২০২২
রাশিয়ার তেল দেশে পরিশোধন সম্ভব নয় : ইস্টার্ন রিফাইনারি

রাশিয়া থেকে আনা ৫০ লিটার অপরিশোধিত জ্বালানি তেলের নমুনা পরীক্ষা করে দেশের একমাত্র রাষ্ট্রীয় তেল পরিশোধনাগার ইস্টার্ন রিফাইনারি লিমিটেড বলছে— তাদের প্রতিষ্ঠানে রাশিয়ার ক্রুড অয়েল পরিশোধন করা সম্ভব না। 

মঙ্গলবার (২০ সেপ্টেম্বর) বাংলাদেশ পেট্রোলিয়াম করপোরেশনের কাছে প্রতিবেদন জমা দেয় ইস্টার্ন রিফাইনারি লিমিটেডের কারিগরি কমিটি।

গত ১ সেপ্টেম্বর নমুনা তেলগুলো ইস্টার্ন রিফাইনারির ব্যবস্থাপনা পরিচালক মোহাম্মদ লোকমানের কাছে পাঁচটি জারে করে ৫০ লিটার ক্রুড ওয়েল হস্তান্তর করে রাশিয়ান প্রতিষ্ঠানের বাংলাদেশি এজেন্ট ন্যাশনাল ইলেকট্রিক বিডি লিমিটেডের প্রতিনিধিরা। পরে নমুনা পরীক্ষার জন্য রাষ্ট্রীয় তেল পরিশোধনাগারটির মহাব্যবস্থাপক (অপারেশান এন্ড প্ল্যানিং) রায়হান আহম্মদকে প্রধান করে ৫ সদস্যের কমিটি গঠন করা হয়। নমুনা পরীক্ষা শেষে ২০ পৃষ্টার প্রতিবেদন বিপিসি ’র চেয়ারম্যানের দপ্তরে জমা দেয় ইস্টার্ন রিফাইনারি কর্তৃপক্ষ। 

ইস্টার্ন রিফাইনারির ব্যবস্থাপনা পরিচালক মোহাম্মদ লোকমান নমুনা প্রতিবেদন জমা দেওয়ার বিষয়টি সিভয়েসকে নিশ্চিত করেছেন। 

তিনি সিভয়েসকে বলেন, ‘আমরা ১৫ থেকে ১৬ ধাপে রাশিয়ার ক্রুড অয়েলের নমুনা পরীক্ষা শেষে আজ বাংলাদেশ পেট্রোলিয়াম করপোরেশনের (বিপিসিি) কাছে প্রতিবেদন জমা দিয়েছি। প্রতিবেদন তৈরির জন্য আমাদের পাঁচ সদস্যের একটা কমিটিও গঠন করা হয়েছিল। বিপিসিি কর্তৃপক্ষ বাকি সিদ্ধান্ত নেবে।’

নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক বাংলাদেশ পেট্রোলিয়াম করপোরেশনের এক উর্ধ্বতন কর্মকর্তা সিভয়েসকে বলেন, ‘রাশিয়ার জ্বালানি তেল পরীক্ষা করে যে প্রতিবেদন ইস্টার্ন রিফাইনারি থেকে জমা দেয়া হয়েছে সেখানে উল্লেখ করা হয়েছে— তাদের প্রতিষ্ঠানে রাশিয়ার ক্রুড অয়েল পরিশোধন করা সম্ভব নয়। এ তেলটা অনেক ভারি তেল। আমরা যে ধরনের তেল চাই অর্থাৎ আমাদের দেশে ডিজেলটা বেশি ব্যবহার করা হয়। এ তেল পরিশোধন করলে ডিজেলের পরিমাণটা কম হবে। অর্থাৎ আমরা ৩৩ শতাংশের মত ডিজেল পাবো। কিন্তু আমরা বর্তমানে এরাবিয়ান লাইট ক্রুড ওয়েল বা মারবান ক্রুড অয়েল প্রসেস করি। সেখান থেকে আমরা ৪২ শতাংশের মত ডিজেল পাই। পাশাপাশি এরাবিয়ান লাইট ক্রুড ওয়েল বা মারবান ক্রুড অয়েল থেকে আমরা পেট্রোলও বেশি পাই। রাশিয়ার এ ভারি তেল প্রসেস করার মতো সক্ষমতা আমাদের কাছে নেই। এ তেল পরিশোধন করতে গেলে আমাদের কারিগরি ও আর্থিকভাবে আমাদের ক্ষতি হবে। তাই রাশিয়ান তেল পরিশোধন করা সম্ভব নয়।’ 

গত ১৬ আগস্ট একনেক সভায় রাশিয়া থেকে কীভাবে তেল আমদানি করা যায়, সেদিকটা পর্যালোচনা করে দেখার নির্দেশ দিয়েছিলেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। পার্শ্ববর্তী দেশ ভারত যদি পারে, বাংলাদেশ কেন পারবে না প্রধানমন্ত্রী এমনটিও বলেছেন বলে সভা পরবর্তী গণমাধ্যমকে জানান পরিকল্পনামন্ত্রী এম এ মান্নান।

জানা গেছে, রাশিয়ার ওপর আমেরিকাসহ ইউরোপের নানা রকম নিষেধাজ্ঞা বহাল থাকায় যেকোনোভাবেই তেল কেনার গ্রাহক খুঁজছে দেশটি। এ মাসের মাঝামাঝিতে বাংলাদেশের কাছে আবারও পরিশোধিত তেল বিক্রির প্রস্তাব পাঠায় রাশিয়ার তেল উৎপাদন ও বিপণন কোম্পানি রোজনেট। আগে তেল কেনায় আগ্রহী না হলেও এখন বাংলাদেশ ভেবে দেখছে বিষয়টি। রাশিয়া থেকে তেল আমদানির বিষয়ে আলোচনা করতে কমিটি গঠন করে বিপিসিি। এর প্রেক্ষিতে গত ২৪ আগস্ট রাশিয়ার রাষ্ট্রায়ত্ত জ্বালানি তেল সরবরাহকারী প্রতিষ্ঠান ‘জারুবেঝজনেফ জেএসসি’ তাদের অপরিশোধিত জ্বালানি তেলের নমুনা হিসেবে ৫০ লিটার তেল ঢাকায় পাঠায়। পরে তা চট্টগ্রামে অবস্থতি রাষ্ট্রীয় তেল পরিশোধনাগার ইস্টার্ন রিফাইনারি লিমিটেডে পাঠানো হয় পরীক্ষার জন্য।  যে স্যাম্পলটি রাশিয়া পাঠিয়েছে, সেটি পরীক্ষা-নিরীক্ষার পর দেশের একমাত্র রাষ্ট্রীয় তেল পরিশোধনাগার ইস্টার্ন রিফাইনারি লিমিটেড বলছে— তাদের প্রতিষ্ঠানে রাশিয়ার ক্রুড অয়েল পরিশোধন করা সম্ভব না। ২০ পৃষ্টার ওই প্রতিবেদন তার নানা ব্যাখ্যাও তুলে ধরেছে কারিগরি কমিটি। 

সর্বশেষ

পাঠকপ্রিয়