Cvoice24.com

আলোয় ঝলমল শপিংমল, বেচাবিক্রি জমেনি

রবিউল রবি, সিভয়েস২৪

প্রকাশিত: ১২:৫৫, ২৩ মার্চ ২০২৪
আলোয় ঝলমল শপিংমল, বেচাবিক্রি জমেনি

রোজার মাস ফুরাতেই ঈদ। ঈদ উপলক্ষে নতুন পোশাক কেনার আনন্দই যেন অন্যরকম। নিম্নবিত্ত থেকে উচ্চবিত্ত, ঈদে সবাই কেনেন নতুন পোশাক। তাই ঈদকে ঘিরে সর্বোচ্চ প্রস্তুতি নেন ব্যবসায়ীরা। লাল নীল আলোয় সেজেছে নগরের শপিংমলগুলো। সন্ধ্যা নামতেই শপিংমলের আলোয় ঝলমল করে উঠছে চারপাশ। ছুটির দিনে পরিবার নিয়ে ঢুঁ মারছেন ক্রেতারা। তবে ব্যবসায়ীরা বলছেন—বেচাবিক্রি খুব একটা জমেনি এখনও।

প্রায় প্রতিটি দোকান ক্রেতায় ঠাঁসা, কিন্তু তারা কিনছেন কম, দেখছেন বেশি। বিক্রেতারা আশা করছেন, ১৫ রমজানের পর থেকে ঈদের বেচাবিক্রি শুরু হবে। ঈদকে ঘিরে বাহারি ডিজাইনের পোশাক পণ্য মজুদ রেখেছেন তারা। এবার ভারত, চীন ও থাইল্যান্ড থেকে আমদানিকৃত পণ্য কিনতে পারবে ক্রেতারা।

এদিকে, ঈদকে ঘিরে ক্রেতাদের কেনাকাটায় স্বস্তি এবং নিরাপত্তা দিতে মার্কেট ব্যবসায়ী সমিতির নেতারাও নানা উদ্যোগ নিয়েছেন। মার্কেটের নিজস্ব নিরাপত্তা ব্যবস্থা বাড়ানোর পাশাপাশি ক্রেতাদের নিরাপত্তায় মোতায়েন করা হয়েছে পুলিশের মনিটরিং টিম।

শুক্রবার (২২ মার্চ) সন্ধ্যা থেকে রাত পর্যন্ত নগরের আখতারুজ্জামান সেন্টার, বে-শপিং সেন্টার, লাকি প্লাজা ও সিঙ্গাপুর ব্যাংকক মার্কেটে ঘুরে ব্যবসায়ী ও ক্রেতাদের সাথে কথা বলে জানা গেছে এসব তথ্য।

ক্রেতায় ঠাঁসা, বিক্রি কম

নগরের ইপিজেড এলাকার ফ্রিপোর্ট মোড়ে অবস্থিত বে-শপিং সেন্টারের দ্বিতীয় তলার ‘মেহেদী ফেব্রিকস’ নামক দোকানে গিয়ে দেখা যায়, নারীরা বেশি ভিড় করেছেন। মূলত দেশি-বিদেশি ব্র‍্যান্ডের শাড়ি দিয়েই সাজানো দোকানটি।

তামান্না আক্তার নামে এক ক্রেতা বলেন, ‘শাড়ি দেখেছি বেশ কয়েকটি।  আপাতত পছন্দ করে রাখছি। এখন মাসের শেষ। বেতন পেলে কিনতে আসবো। এখনই কিনছি না।’

পাশেই থাকা ‘চায়না কালেকশন’ নামে জুতার দোকানে দেখা যায় নারী এবং পুরুষ ক্রেতাদের উপচে পড়া ভিড়। শামস নামে এক ক্রেতা বলেন, ‘বাচ্চার জন্য জুতা নিতে এসেছি। এখানে চায়না জুতার কালেকশন ভালো। তাই দেখি বাচ্চাকে কিনে দিতে পারি কিনা।’

২৯ বছর ধরে ব্যবসা করছেন চায়না কালেকশনের স্বত্ত্বাধিকারী আলী এরশাদ। তিনি বলেন, ‘এখনো বেচাবিক্রি অন্য যে কোন সাধারণ দিনের মত। ঈদের বিক্রি শুরু হয়নি। ঈদকে ঘিরে আমরা নানা ধরনের চায়না জুতার কালেকশন নিয়ে এসেছি। এখনও বিক্রি না জমলেও কয়েকদিনের মধ্যেই বেচাবিক্রি জমজমাট হবে। এখানে আমার তিনটি দোকান রয়েছে। আশা করছি  ১ কোটি টাকার বিক্রি হবে আমার, ইনশাআল্লাহ্।’

প্রতিবছর এই শপিংমলটিতে ঈদ বিক্রি উৎসবে বাড়তি আয়োজন হিসেবে র‍্যাফেল ড্র-এর আয়োজন থাকলেও বিক্রেতাদের আপত্তিতে এবার তা বন্ধ রয়েছে বলে জানিয়েছেন বে-শপিং সেন্টার ব্যবসায়ী কল্যাণ সমিতির সাধারণ সম্পাদক কাজী মো. আজিজুল হক।

তিনি সিভয়েস২৪-কে বলেন, ‘অন্যান্য বছরের তুলনায় আমাদের মার্কেটে এবার বেচাবিক্রি বেশি হবে আশা করছি। আমাদের মার্কেটে মোট ১২০টির মতো দোকান রয়েছে। যেহেতু এ এলাকায় শ্রমিকদের সংখ্যা বেশি তাই দাম হাতের নাগালের মধ্যেই আছে। প্রতিবছর ক্রেতা আকর্ষণে র‍্যাফেল ড্র থাকলেও এবার ব্যবসায়ীদের আপত্তির কারণে তা রাখা হয়নি।’

মূল আকর্ষণ ‘মুম্বাই সিকুয়েন্স’পাঞ্জাবি

নগরের আগ্রাবাদে আখতারুজ্জামান সেন্টারের তৃতীয় তলায় পুরুষদের বাহারি ধরনের পাঞ্জাবি, শার্ট, গেঞ্জি ও প্যান্ট রয়েছে ‘রুকুজ ট্রেন্ড’ দোকানে। এবারের ঈদে ক্রেতাদের জন্য থাইল্যান্ড, ভারত এবং চায়না থেকে আমদানি করা হয়েছে পাঞ্জাবি এবং কাবুলি পাঞ্জাবি।

দোকানের মালিক রোহবান আলম রুকু বলেন, ‘যদিও ঈদের মূল বেচাকেনা এখনও শুরু হয়নি তবুও বেশ ভালোই সাড়া পাচ্ছি ক্রেতাদের। এবারের ঈদে মূল আকর্ষণ মুম্বাই সিকুয়েন্স পাঞ্জাবি। পর্যাপ্ত পরিমাণ পাঞ্জাবির আমদানি এবার করা হয়েছে। মানভেদে ২৫০০-৫০০০ টাকার মধ্যে মিলবে এসব পাঞ্জাবি।’

চাহিদা বিদেশি শাড়ির, দামও বেশি

লিমা শাড়ীজ নামে একটি দোকানের পরিচালক মোহাম্মদ ইউনূস বলেন, ‘আমাদের এখানে ইন্ডিয়ান ও পাকিস্তানি শাড়ি রয়েছে প্রচুর। দেশির মধ্যে টাঙাইল, জামদানি এবং পাবনার শাড়ির ভালো কালেকশন রয়েছে। এছাড়াও বেঙ্গলোর, বেনারস, সুরাত, কাঞ্চিভরম এবং হাড্ডি শাড়ি রয়েছে আমাদের দোকানে। এরমধ্যে সর্বোচ্চ ২৫ হাজার টাকা দামের শাড়ি রয়েছে যা হ্যান্ডওয়ার্কের।’

তিনি বলেন, ‘দেশি শাড়ির চেয়েও বিদেশি শাড়ির প্রতি ক্রেতাদের আকর্ষণ বেশি। তাই আমাদের আমদানি করা পণ্যই বেশিরভাগ বিক্রি হচ্ছে।’

ফারিয়া হোসেন নামে এক ক্রেতা বলেন, ‘পাকিস্তানি পোশাক কেনার ইচ্ছে এবার। এই দোকানটিতে তাই এসেছি। কিন্তু আমার কাছে দাম একটু বেশিই মনে হয়েছে। দেশিয় শাড়ি কিনেছি ৫টি। পাকিস্তানি এবং ইন্ডিয়ান দুটি করে পোশাক নেব আরও।’

আখতারুজ্জামান সেন্টারের দ্বিতীয় তলার ‘এসএম বোটিক’ নামে একটি দোকানে গিয়ে দেখা গেছে, দোকানটিতে অগ্রাধিকার পেয়েছে পাকিস্তানি পোশাক। সেখানে রয়েছে আগারওয়াল, আগানুর, বিন সাঈদ, সাদাবাহারসহ নানা ধরনের পোশাক।  তবে ক্রেতাদের অভিযোগ, অন্যান্যবারের তুলনায় পোশাকের দাম এবার বেশি।

এসএম বোটিকের বিক্রেতা মোহাম্মদ রোমান বলেন, ‘আমাদের দোকানে শাড়ির পাশাপাশি পাকিস্তানি থ্রি-পিসও রয়েছে। ৫ হাজার থেকে শুরু করে ১২ হাজার টাকা দাম পর্যন্ত থ্রি পিস আমরা বিক্রি করি। বর্তমানে দ্রব্যমূল্যের ঊর্ধ্বগতির কারণে ক্রেতারা বেশি দাম দিয়ে কিনতে চাইছেন না। কিন্তু আমরাও অপারগ। খরচ অনেক বেড়েছে আগের তুলনায়।’

জুয়েলারির দোকান খাঁ খাঁ

শপিংমলগুলো ঘুরে দেখা গেছে, কাপড়, জুতা ও প্রসাধনীর দোকানে ক্রেতা সমাগম হলেও ক্রেতা শূন্য জুয়েলারির দোকানগুলো। ঈদকে ঘিরে স্বর্ণ ব্যবসায়ীরা ভালো অর্ডারের আশা করলেও তাদের সেই আশাই যেন গুড়েবালি।

আখতারুজ্জামান সেন্টারের মডার্ন কুসুম জুয়েলার্সের প্রোপ্রাইটর অনুকুল চৌধুরী সিভয়েস২৪-কে বলেন, ‘বর্তমানে স্বর্ণের ভরি ১ লাখ ১৪ হাজার টাকা। ঈদকে ঘিরে আমাদেরও ভালো অর্ডার পাবো, এমন আশা থাকে। এদিকে ক্রেতারাও চায়। কিন্তু এত দাম দিয়ে স্বর্ণ এখন কেউ কিনছে না।’

প্রসাধনীর দোকানে তিল ধারণের ঠাঁই নেই

প্রত্যেকটি শপিংমলের প্রসাধনীর দোকানগুলোতে দেখা গেছে উপচে পড়া ভিড়। অন্যান্য দোকানের তুলনায় এসব দোকানে বেচাবিক্রি অনেকাংশেই বেশি। সব বয়েসি নারী ক্রেতাদের ভিড়ে সেখানে তিল ধারণের ঠাঁই নেই। তারা মূলত ঈদের পোশাকের সাথে মিলিয়ে চুড়ি, কানের দুল, নেইল পলিশ, হেয়ার ব্যান্ড, আংটিসহ নানা ধরনের একসেসরিজ কিনতে এসেছেন।

বে-শপিং সেন্টারের ‘কসমেটিকস গ্যালারি’ নামক দোকানে কথা হয় সাদিয়া জামানের সাথে। তিনি বলেন, ‘আমার মেয়ের জম্য ঈদের জামা কেনা শেষ। এখন এসেছি সেই পোশাকের সাথে মিলিয়ে পছন্দমতো কসমেটিকস কিনতে। দাম একটু বেশি চাচ্ছে। কি আর করার, ঈদের বাজার বলে কথা।’

আখতারুজ্জামান সেন্টারের ‘নেভার সীন কসমেটিকস’ নামক দোকানে প্রসাধনী কিনতে আসা লিপি আক্তার বলেন, ‘এই দোকানটি আমাদের বিশ্বস্ত। শুধু ঈদ নয়, বছরের সবদিনই এখান থেকে শপিং করি। আমার পুরো পরিবার নিয়ে এসেছি। যেহেতু কসমেটিকস ঈদে অন্যতম একটি প্রয়োজনীয় জিনিস মেয়েদের তাই আগেভাগেই কিনে ফেলছি।’

বেচাবিক্রি কম লাকি প্লাজায়

আগ্রাবাদ এলাকার ৪টি শপিং মল ঘুরে সবচেয়ে কম বিক্রি হতে দেখা গেছে লাকি প্লাজায়। মার্কেটটিতে থান কাপড়, শাড়ি, থ্রী-পিছ, বেবি গার্মেন্টস, ওড়না, জুতা, জুয়েলারি, জেন্টস টেইলার্স, কসমেটিকস, লেডিস ও জেন্টস রেডি গার্মেন্টস, পাঞ্জাবি, বোরকা ও রেডি থি-পিসের দোকানসহ মোট ৩৬৫টি দোকান রয়েছে।

মার্কেটটি ঘুরে দেখা যায়, ক্রেতা সমাগম তেমন একটা নেই বললেই চলে। ক্রেতাদের অভিযোগের জন্য এবার ঈদ বিক্রয় উৎসবে নেই র‍্যাফেল ড্র আয়োজনও।

তবে, মার্কেট মালিক সমিতির নেতৃবৃন্দ বলছেন, আজ (শনিবার) থেকে পুরোদমে শুরু হবে বেচাকেনা। এবারের ঈদে ১৫ থেকে ২০ কোটি টাকার বেচাবিক্রি হওয়ার আশা করছেন তারা।

লাকি প্লাজা মার্কেট ব্যবসায়ী সমিতির সাধারণ সম্পাদক শফিক গতকাল (শুক্রবার) সিভয়েস২৪-কে বলেন, ‘প্রতিবারই আমাদের বেচাকেনা ভালো হয়। এ বছর এখনও ঈদের বেচাকেনা শুরু হয়নি। আগামীকাল (শনিবার) থেকে ইনশাআল্লাহ পুরোদমে বেচাকেনা শুরু হবে। আমাদের মোট ৩৬৫টি দোকানে এবার আনুমানিক ১৫ থেকে ২০ কোটি টাকার বিক্রি হবে।’

ঈদকে ঘিরে মার্কেটের নিরাপত্তা ব্যবস্থাও জোরদার করা হয়েছে জানিয়ে তিনি বলেন, ‘২৪ ঘণ্টা পুলিশ প্রশাসনের পাশাপাশি আমাদের ১৪ জন করে সিকিউরিটি রাখা হয়েছে দুই শিফটে। আশা করছি ক্রেতারা স্বস্তিতে এবার আমাদের মার্কেটে ঈদ কেনাকাটা করতে পারবেন। আর র‍্যাফেল ড্র এবার রাখা হয়নি। আমরা অন্যান্যবার এ আয়োজন করেছি। তবে অনেক ক্রেতাদের কাছে বিশ্বাসযোগ্য না হওয়ায় আমরা এবার এটি রাখিনি।’

সর্বশেষ

পাঠকপ্রিয়