জব্বারের বলীখেলা ও বৈশাখী মেলা
নারীর আগ্রহ মেলায়, পুরুষের খেলায়

মিনহাজ মুহী ও রবিউল রবি, সিভয়েস২৪

প্রকাশিত: ১৪:০৭, ২৫ এপ্রিল ২০২৪
নারীর আগ্রহ মেলায়, পুরুষের খেলায়

ঐতিহাসিক জব্বারের বলীখেলাকে ঘিরে আয়োজিত বৈশাখী মেলায় যেন তিল ধারণের ঠাঁই নেই। কাঠফাটা রোদ আর অসহ্য গরম উপেক্ষা করেই ভিড় করছেন শিশু-নারীরা। এসব নারীর মূল আগ্রহ মেলা হলেও পুরুষদের আগ্রহের কেন্দ্রবিন্দু বরাবরের মতোই বলীখেলায়। 

চট্টগ্রাম সরকারি সিটি কলেজের শিক্ষার্থী রেহনুমা খানম তিন বান্ধবীকে নিয়ে এসেছেন মেলায়। বৃহস্পতিবার (২৫ এপ্রিল) দুপুর সাড়ে ১২টার দিকে তার সাথে কথা হয়।

রেহনুমা বলেন, ‘কলেজ বন্ধ থাকায় বান্ধবীদের নিয়ে ঐতিহাসিক এই মেলায় এসেছি। কেনাকাটা এখনো করিনি কিছু। আমার বন্ধবীরা কিনেছে। রোদ অনেক বেশি। তাই বিকেল আবার আসব। আজ বলীখেলা হওয়ায় মেলায় প্রচুর ভিড়।'

পাঁচ বছরের শিশুকন্যা তাসনিয়া আক্তারকে নিয়ে মেলায় এসেছেন চকবাজারের কালাম কলোনির শামীমা আক্তার। তিনি বলেন, ‘বাচ্চার জন্য চুড়ি, এক জোড়া ফুলের ঝাড়ু আর ঘরের কিছু তৈজষপত্র কিনতে আসলাম। মেয়ের জন্য আগে চুড়ি কিনেছি। এখন সে খেলনা কিনতে বায়না ধরেছে। আর বাকিগুলো একটু পর কিনবো।’

দাম বেশি অভিযোগ করে তিনি বলেন, ‘অন্যান্যবারের তুলনায় এবার মেলায় জিনিসপত্রের দাম অনেক বেশি চাচ্ছে। তবুও যেহেতু এই আয়োজন চট্টগ্রামের ঐতিহ্য তাই দামের দিকে তাকাচ্ছি না।’

এদিকে, নারীদের আগ্রহ মেলায় কেনাকাটা আর ঘোরাঘুরির দিকে হলেও বরাবরের মতো পুরুষের আগ্রহ বলীখেলাকে ঘিরেই। খেলা শুরু হতে এখনো বাকি, তবু তীব্র রোদ উপেক্ষা করে মঞ্চের সামনে ভিড় জমিয়েছেন কিশোর থেকে শুরু করে বয়বৃদ্ধরাও। অনেকে অপেক্ষা করছেন সকাল থেকেই।

তেমনই একজন বহদ্দারহাট ফরিদাপাড়া এলাকার বাসিন্দা লুৎফর রহমান (৫৭)। তিনি সিভয়েস২৪-কে বলেন, ‘বলীখেলা এটা আমাদের ঐতিহ্য। প্রতিবছরই নাতিকে নিয়ে এ খেলা দেখতে আসি৷ এবার আমার সঙ্গী (নাতি) নেই। সে পড়ালেখার জন্য সিলেট থাকে। তাই এবার একা এসেছি বলীখেলা দেখতে।'

এবার বেশি গরম বলে জানিয়ে মোহরা এলাকার শহীদুল আলম (৫৩) জানান, রোদের তীব্রতা বেশি। তবে জব্বারের বলীখেলা বাংলাদেশের সংস্কৃতির অংশ হয়ে গেছে। এটি শুধু চট্টগ্রামের জন্য নয়, পুরো দেশের জন্য ঐতিহ্যের-গর্বের। তাই চট্টগ্রামের হয়ে এ খেলা দেখা থেকে বিরত থাকি কি করে।'

এদিকে, এ রিপোর্ট লেখা পর্যন্ত এখনো বলীখেলার জন্য বালু দিয়ে তৈরি মঞ্চের চারপাশে লাল সবুজ পর্দায় দেওয়া ঘেরা রয়ে গেছে। তবে জানা গেছে, খেলা শুরুর আগ মুহূর্তে মঞ্চ থেকে পর্দা তোলা হবে। 

আয়োজক সূত্রে জানা যায়, এনএইচটি স্পোর্টস কমপ্লেক্সের পৃষ্ঠপোষকতায় প্রতিযোগিতায় অংশ নিতে ইতোমধ্যে সারা দেশ থেকে আসা দেড় শতাধিক বলী রেজিস্ট্রেশন করেছেন। রেজিস্ট্রেশন কার্য চলমান ছিল দুপুর পর্যন্ত। 

ঐতিহ্যবাহী আবদুল জব্বার স্মৃতি বলীখেলা ও বৈশাখী মেলা আয়োজক কমিটির সহসভাপতি চৌধুরী ফরিদ জানান, এবার ৩টার পরিবর্তে বিকাল ৪টায় খেলা শুরু হবে। প্রতিযোগিতায় অংশ নিতে যারা দূর-দূরান্ত থেকে এসেছেন তাদের থাকার ব্যবস্থা করা হয়েছে। এছাড়া বলীখেলা শেষ হওয়ার পর আনুষ্ঠানিকভাবে ট্রেনিং কোর্স চালু করা হবে।

এবারের জব্বারের বলীখেলায় প্রধান অতিথি থাকবেন রেলপথ মন্ত্রণালয় সংক্রান্ত সংসদীয় স্থায়ী কমিটির চেয়ারম্যান রাউজানের এমপি এবিএম ফজলে করিম চৌধুরী। উদ্বোধক থাকবেন চট্টগ্রাম জেলা ক্রীড়া সংস্থার সাধারণ সম্পাদক আ জ ম নাছির উদ্দিন। বিশেষ অতিথি থাকবেন এবারের বলীখেলার স্পন্সর প্রতিষ্ঠান এনএইচটি স্পোর্টস কমপ্লেক্সের ব্যবস্থাপনা পরিচালক সৈয়দ মোহাম্মদ তানসীর।

উল্লেখ্য, ব্রিটিশবিরোধী আন্দোলনে দেশের যুবকদের সংগঠিত করতে, ১৯০৯ সালে চট্টগ্রামের বকশীর হাটের ব্যবসায়ী আবদুল জব্বার সওদাগর চালু করেছিলেন বলীখেলা। এরপর, ২০১৯ সাল পর্যন্ত প্রতি ১২ বৈশাখ চট্টগ্রাম শহরের লালদীঘি ময়দানে অনুষ্ঠিত হয়েছে জব্বারের বলীখেলা।

করোনা মহামারীর কারণে ২০২০-২০২১ সালে বলীখেলার আয়োজন করা সম্ভব হয়নি। পরের বছর ২০২২ সাল থেকে আবার নিয়মিত অনুষ্ঠিত হচ্ছে জব্বারের বলীখেলা। এ বছর জব্বারের বলীখেলার ১১৫তম আসর বসছে।

সর্বশেষ

পাঠকপ্রিয়