স্যুয়ারেজ প্রকল্পের ‘আসল’ তথ্য তুলে ধরে আদালতের নিষেধাজ্ঞা কাটালো ওয়াসা 

সিভয়েস প্রতিবেদক

প্রকাশিত: ০২:৪৫, ১৪ এপ্রিল ২০২২
স্যুয়ারেজ প্রকল্পের ‘আসল’ তথ্য তুলে ধরে আদালতের নিষেধাজ্ঞা কাটালো ওয়াসা 

একের পর এক বাধার পাহাড় ডিঙিয়ে চট্টগ্রাম শহরের প্রথম স্যুয়ারেজ প্রকল্প যখন আলোর মুখ দেখছিল তখনই মামলার ফাঁদে পড়ে বন্ধ হয়ে যায় প্রকল্পের কাজ। গত ৪ এপ্রিল এক ব্যক্তির আবেদনের প্রেক্ষিতে পরবর্তী শুনানি পর্যন্ত (১৩ জুলাই) ওয়াসার স্যুয়ারেজ প্রকল্প কাজে নিষেধাজ্ঞ দেয় চট্টগ্রামের একটি আদালত। তখন ওয়াসার প্রধান প্রকৌশলী মাকসুদ আলম সিভয়েসকে জানিয়েছিলেন, ‘বাদীপক্ষ অনেক কিছুই গোপন করেছে। আমরা আসল তথ্যটা আদালতে তুলে ধরব। আশা করছি আদালত আমাদের পক্ষেই রায় দেবেন।’

মঙ্গলবার চট্টগ্রামের তৃতীয় দায়রা জজমোহাম্মদ রহমত আলীর আদালতে দুই দফা শুনানি শেষে ওয়াসার আইনজীবীরা ‘আসল’ তথ্য তুলে নিষেধাজ্ঞা প্রত্যাহারে সক্ষম হয়েছেন। ফলে এখন থেকে ওয়াসার  স্যুয়ারেজ প্রকল্পের ভূমি অধিগ্রহণসহ সীমানা প্রাচীর দিতে আর বাধা থাকলো না।  

ওয়াসার প্যানেল আইনজীবী জিয়া আহসান হাবীব বলেন, ‘চট্টগ্রাম শহরের প্রথম স্যুয়ারেজ প্রকল্পটি সরকারের গুরুত্বপূর্ণ প্রকল্প। যে বিষয়টি নিয়ে আদালত ১৩ এপ্রিল পর্যন্ত নিষেধাজ্ঞা দিয়েছিলেন তা সুপ্রীম কোর্ট ঘুরে ডিসির মাধ্যমে সমাধান হয়ে গেছিল। ফলে আদালতের কাছে আমরা সব তথ্য উপাত্ত তুলে ধরায় আদালত আগের দেওয়া সেই নিষেধাজ্ঞা বাড়ায়নি। ফলে প্রকল্পের কাজ করতে আর বাধা থাকলো না।’ 

ওয়াসা সূত্র জানায়, ১৯৬২ সালে পয়োনিষ্কাশন প্রকল্প গড়তে হালিশহরের চৌচালা এলাকায় ১৬৩ একর জায়গা অধিগ্রহণ করে সংস্থাটি। তবে বহুদিন ধরে সেই জায়গাটি অরক্ষিত অবস্থায় পড়ে ছিল। এতে তৈরি হয় জটিলতা। প্রকল্প বাস্তবায়ন না হওয়ায় অধিগ্রহণ করা জায়গা ফেরত পেতে এলাকাবাসী ২০০১ সালে হাইকোর্টে রিট করেন। ২০১৭ সালে এই প্রকল্পের ভূমি জটিলতা সুপ্রিমকোর্ট পর্যন্ত গড়ালে চট্টগ্রামের জেলা প্রশাসকের মাধ্যমে তা সমাধান হয়। কিন্তু সমস্যা রয়েই যায়। ২০২০ সালে সীমানাপ্রাচীরের কাজ করতে গেলে বাধা দেয় সিডিএ। অবশ্য এরপর সমাধান হলে সীমানাপ্রাচীর তৈরি করে। আর এই মাসের শুরুতে কাজও শুরু করে দেয়। তখন প্রকল্পের জায়গায় স্থানীয়দের জায়গা আছে বলে দাবি করেছিলেন মামলার বাদি ছৈয়দ মুহাম্মদ এনামুল হক মুনিরী। তখন আদালত ১৩ এপ্রিল পর্যন্ত নিষেধাজ্ঞা দিয়েছিলেন। 

বাংলাদেশ সরকার এবং ওয়াসার যৌথ অর্থায়নে হচ্ছে এ প্রকল্প। যার নির্মাণ ব্যয় ধরা হয়েছে  ৩ হাজার ৮০৮ কোটি ৫৮ লাখ ৭৭ হাজার টাকা। পুরো নগরীকে ৬টি জোনে ভাগ করে প্রকল্পটি প্রকল্প বাস্তবায়ন করা হবে। ৪১টি ওয়ার্ডের মধ্যে প্রথম ধাপে ১১টি ওয়ার্ডের ২০ লাখ নগরবাসীকে পয়ঃবর্জ্য স্যুয়ারেজ ব্যবস্থার আওতায় আনা হবে। প্রকল্পের অধীনে মোট ২০০ কিলোমিটার পাইপলাইন স্থাপন ও ২৮ হাজার সার্ভিস কালেকশন দেওয়া হবে। যার মাধ্যমে বাসাবাড়ির পয়ঃবর্জ্য সংগ্রহ করে পরিশোধনের পর সেই পানি সাগরে ফেলে দেওয়া হবে। অবশিষ্ট কঠিন বর্জ্য দিয়ে কম্পোস্ট সার তৈরি হবে। এর জন্য তৈরি হবে দিনে এক লাখ ঘনমিটার ধারণ ক্ষমতার একটি পয়ঃশোধনাগার এবং দৈনিক ৩০০ ঘনমিটার ধারণ ক্ষমতার একটি ফিকেল স্লাজ শোধনাগার। বর্তমানে চট্টগ্রাম নগরীতে কোনো স্যুয়ারেজ লাইন নেই। খালনালার মাধ্যমে পয়ঃবর্জ্য কর্ণফুলী ও হালদা নদীতে পড়ছে। সেখান থেকে চলে যাচ্ছে সাগরে। নতুন প্রকল্প বাস্তবায়িত হলে বর্জ্য সরাসরি নদীতে পড়বে না। ট্রিটমেন্ট প্লান্টের মাধ্যমে বর্জ্য শোধন করা হবে। 

সর্বশেষ

পাঠকপ্রিয়