চট্টগ্রাম সিটি করপোরেশন
প্রকৌশল বিভাগের ওপর ক্ষোভ ঝাড়লেন মেয়র

নাগরিকরা হোয়াটসঅ্যাপে জানায় রাস্তাঘাটে গর্ত, ফুটপাতের স্ল্যাব ভাঙা— তাই প্রকৌশল বিভাগের ওপর ক্ষেপেছেন চট্টগ্রাম সিটি করপোরেশনের (চসিক) মেয়র বীর মুক্তিযোদ্ধা মো. রেজাউল করিম চৌধুরী। নির্বাহী প্রকৌশলীদের অধীনে সুপারভাইজার, উপ-সহকারী প্রকৌশলী থাকার পরও কেন এসব বিষয়ে নাগরিকদের হোয়াটসঅ্যাপে জানাতে হয়—  এ নিয়েই মেয়রের ক্ষোভ। কেন এসব বিষয়ে প্রতিবেদন দেওয়া হয় না, মাসের পর মাস কেন সড়কবাতি বন্ধ থাকে— প্রকৌশলীদের কাছে ক্ষোভ মেশানো প্রশ্ন ছুঁড়েন মেয়র। 

রবিবার (২৪ ডিসেম্বর) করপোরেশনের ৩৫তম সাধারণ সভা অনুষ্ঠিত হয়। সেখানে এসব বিষয় উঠে আসে।

• প্রধান প্রকৌশলীর চেয়ার, তুমি কার?

এ সময় চসিক মেয়র বলেন, ‘নির্বাহী প্রকৌশলীদের অধীনে সুপারভাইজাররা আছেন, সাব-এসিস্ট্যান্ট ইঞ্জিনিয়াররা আছেন। অথচ রাস্তায় গর্ত হয়ে থাকে, ফুটপাথের স্লাব ভেঙে গেছে এগুলো আমাকে জানতে হয় হোয়াটসঅ্যাপে নাগরিকদের মেসেজ দেখে। এসব বিষয়ে প্রতিবেদন দেয়া হয়না কেন? চসিকের বিদ্যুৎ বিভাগের সুপারভাইজাররা কে কোন এলাকায় দায়িত্বে আছেন তা কাউন্সিলরদের জানিয়ে দিবেন। মাসকে মাস লাইট কেন বন্ধ থাকবে? দায়িত্ব পালনে কারো কোনো গাফিলতি সহ্য করা হবে না। কোন প্রকল্পের কাজ যাতে নিম্নমানের না হয় সে বিষয়ে কাউন্সিলরদের নজর রাখতে হবে।’

যত্রতত্র পথচারী পারাপার বন্ধ করতে উঁচু করা হচ্ছে আইল্যান্ড, জেব্রা ক্রসিং নির্মাণের নির্দেশ

যত্রতত্র পথচারীদের রাস্তাপার বন্ধ করতে সড়কে মিড আইল্যান্ডগুলো উঁচু করে নির্মাণ করা হচ্ছে। আগামী ফেব্রুয়ারির মধ্যে নগরের গুরুত্বপূর্ণ সড়কগুলোতে জেব্রা ক্রসিং নির্মাণের নির্দেশ দিয়েছেন চসিক মেয়র।

চসিকের প্রকৌশল বিভাগের উদ্দেশ্যে মেয়র বলেন, ‘শহরের সৌন্দর্য ও নিরাপত্তার স্বার্থে মিড আইল্যান্ডগুলো উচুঁ করে নির্মাণ করা হচ্ছে। যাতে মানুষ যত্রতত্র রাস্তা পারাপার করতে গিয়ে দুর্ঘটনায় না পড়ে। প্রকৌশল বিভাগকে নির্দেশ দিচ্ছি ফেব্রুয়ারির মধ্যে নগরের গুরুত্বপূর্ণ সড়কগুলোতে জেব্রা ক্রসিং নির্মাণ করুন। আমাদের রাস্তাগুলো ১০ থেকে ১২ টনের উপযোগী করে বানানো। কিন্তু অনেকে অবৈধভাবে ৩০ থেকে ৪০ টন মাল লোড করে গাড়ি চালিনোয় অনেকগুলো রাস্তা ভেঙে গেছে। এ ধরনের সড়কগুলো দ্রুত সংস্কার করুন।’

• চসিকে প্রধান প্রকৌশলী কাণ্ড : এবার সুপ্রিম কোর্টে যাচ্ছে মন্ত্রণালয়

নিম্নমানের কাজের ক্ষমা নেই, শোনা হবে না তদবিরও

ঠিকাদারদের জবাবদিহির মধ্যে আনার ঘোষণা দিয়ে চসিক মেয়র বীর মুক্তিযোদ্ধা রেজাউল করিম চৌধুরী বলেছেন, ‘কোনো ঠিকাদার কাজ নিয়ে কাজ ফেলে রাখতে পারবেনা এবং নিম্নমানের কাজও করতে পারবেনা। কেউ এধরনের করলে ফাইনাল বিল দিবনা। কাজ করলে কাজের মালামাল এবং কাজ শেষে কাজের গুণগত মান পরীক্ষায় আমরা ল্যাব করে দিয়েছি। সেখান থেকে পরীক্ষা করে তারপর বিল দেয়া হবে। এ বিষয়ে কোনো ক্ষমা নেই, কারো কোন তদবিরও শুনব না ‘

তারের জঞ্জাল সরাতেই হবে ক্যাবল অপারেটরদের

তারের জঞ্জাল সরিয়ে হয় নিজস্ব খুঁটিতে নিতে হবে নয়তো চসিকের নালা-নর্দমার নিচে নিতে হবে। ক্যাবল অপারেটরদের এই দুই প্রস্তাব দেওয়া হয়েছে চট্টগ্রাম সিটি করপোরেশনের পক্ষ থেকে।

চসিকের ৩৫তম সাধারণ সভায় মেয়র এসব বলেন। তিনি বলেন, ‘চট্টগ্রামকে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বিশ্ব বাণিজ্যের কেন্দ্রে রূপান্তরে অনেকগুলো মেগা প্রকল্প নিয়েছেন। চট্টগ্রামের অবকাঠামোগত উন্নয়ন হলেও তারের জঞ্জাল উন্নয়নের সৌন্দর্য বিনষ্ট করছে। অনেক সময় বিদ্যুতের খুঁটিতে এ তারের জন্য বৈদ্যুতিক দুর্ঘটনা ঘটছে।’ 

মেয়র আরও বলেন, ‘আমি ডিশ-ইন্টারনেট ব্যবসায়ীদের সাথে মতবিনিময় করেছি। দুটি প্রস্তাব দিয়েছি। হয় আপনারা পৃথক খুটি তৈরি করে ট্রে ব্যবহার করে গুছিয়ে তারগুলি নিন অথবা আমাদের ভূ-গর্ভস্থ নালা ব্যবহার করে তার নিন।  ইতোমধ্যে লালখানবাজার ওয়ার্ডে একটি পাইলট প্রকল্প চলমান আছে। ভবিষ্যতে সবার মতামতের ভিত্তিতে নগরীকে তারের জঞ্জাল থেকে মুক্তি দিতে চাই।’

হকারের ‘উৎপাতে’ বিরক্ত ট্রাফিক বিভাগ

চসিকের সাধারণ সভায় হকার উচ্ছেদে চট্টগ্রামের সব সংস্থাকে নিয়ে সম্মিলিত অভিযানের তাগিদ দিয়েছেন ট্রাফিক বিভাগের এডিসি মো. কাজী হুমায়ুন রশীদ। তিনি বলেন, ‘হকারদের উঠিয়ে দিলেও তারা আবারও বসে যায়। এজন্য মেয়র মহোদয়ের নেতৃত্বে চট্টগ্রামের সবগুলো সংশ্লিষ্ট প্রতিষ্ঠানকে নিয়ে সম্মিলিতভাবে অভিযান পরিচালনা প্রয়োজন।’

সেন্ট্রাল প্লাজার সামনে গোলচত্বর নির্মাণের প্রস্তাব দিয়ে ট্রাফিক বিভাগের এই কর্মকর্তা বলেন, ‘নগরের জিইসি মোড়ে সেন্ট্রাল প্লাজার সামনে ত্রিমুখী সড়কে নিয়মিত দুর্ঘটনা হচ্ছে যা মোকাবিলায় একটি গোলচত্বর নির্মাণ করা জরুরি। পাশাপাশি নগরীতে পর্যাপ্ত  জেব্রা ক্রসিং নেই। এজন্য পর্যাপ্ত জেব্রা ক্রসিং নির্মাণ করা জরুরি।’ 

চট্টগ্রাম উন্নয়ন কর্তৃপক্ষের নির্বাহী প্রকৌশলী রাজিব দাশ জানান, সিডিএর একটি প্রতিনিধি এক্সপ্রেসওয়ের র‌্যাম্পগুলো নগরীর কোন কোন পয়েন্টে নামবে তা চসিকের কাছে উপস্থাপন করবে।

সিভয়েস/এসআর/এএস