একই পদে দুজন!
চসিকে প্রধান প্রকৌশলী কাণ্ড : এবার সুপ্রিম কোর্টে যাচ্ছে মন্ত্রণালয়

সিভয়েস প্রতিবেদক

প্রকাশিত: ০৯:৪৮, ২০ ডিসেম্বর ২০২৩
চসিকে প্রধান প্রকৌশলী কাণ্ড : এবার সুপ্রিম কোর্টে যাচ্ছে মন্ত্রণালয়

গত তিন সপ্তাহ ধরে চট্টগ্রাম সিটি করপোরেশনে (চসিক) প্রধান প্রকৌশলীর পদ নিয়ে সৃষ্ট জটিলতা কাটছেই না। ওই পদে বদলি হওয়া ও পদায়ন পাওয়া দুই প্রকৌশলীর হাতেই রয়েছে উচ্চ আদালতের নির্দেশনা। কেউ এনেছেন বদলি ঠেকাতে আবার কেউ এনেছেন দায়িত্বভার বুঝে পেতে। তবে কার নির্দেশনা ‘বৈধ’ তা নিয়েই দ্বিধাবিভক্তিতে সংশ্লিষ্ট মন্ত্রণালয় ও চসিক। কী সিদ্ধান্ত নেওয়া উচিত তাও বুঝতে পারছেন না সংশ্লিষ্টরা। উল্টো চসিক তাকিয়ে আছে মন্ত্রণালয়ের নির্দেশনার দিকে আর সিদ্ধান্ত নিতে মন্ত্রণালয় দারস্থ হচ্ছে সুপ্রিম কোর্টের। 

এদিকে, চট্টগ্রাম সিটি করপোরেশনে রফিকুল ইসলাম নাকি নবীউল ইসলাম—আসল প্রধান প্রকৌশলী তাই নিয়েই চলছে জোর আলোচনা-সমালোচনা। যে কারণে ধীরগতি এসেছে প্রকৌশল বিভাগের কাজেও। বিষয়টির সমাধান না হওয়ায় আটকে আছে প্রকৌশল বিভাগের গুরুত্বপূর্ণ সভা-বৈঠকও। 

স্থানীয় সরকার মন্ত্রণালয় সূত্রে জানা যায়, প্রধান প্রকৌশলীর চেয়ার টানাটানির জটিলতার সমাধান না করেই গত সপ্তাহে চট্টগ্রাম সিটি করপোরেশনের মেয়র  রেজাউল করিম চৌধুরী আরেকটি ডিও লেটার (আধা সরকারি পত্র) পাঠান মন্ত্রণালয়ে। এ সময় সেই ডিও লেটার প্রত্যাখ্যান করেন সচিব।

এ প্রসঙ্গে নাম প্রকাশে অনিচ্ছা জানিয়ে মন্ত্রণালয়ের একজন কর্মকর্তা সিভয়েসকে বলেন, ‘যেহেতু বাদিপক্ষের আইনজীবী একটি মতামত দিয়েছেন আবার অ্যার্টনি জেনারেলও একটি মতামত দিয়েছেন। তারা (মন্ত্রণালয়) এখন কী করবে? বলা যায় তারাও সিদ্ধান্তহীনতায় ভুগছে। এখন সুপ্রিম কোর্টের মতামত নিয়ে এ সমস্যার সমাধান করতে হবে।’

ওই কর্মকর্তা আরও বলেন, ‘বাদিপক্ষের আইনজীবীর মতামতের ভিত্তিতে একজন নিয়মিত অফিস করছেন। সেটা কতটা বৈধ তা নিয়ে প্রশ্ন রয়েছে। একজনকে পদায়ন করার পরেও তাকে গ্রহণ না করে উল্টো সেনাবাহিনী থেকে ইঞ্জিনিয়ার চাওয়া ঠিক হয়নি চসিকের। আবার মেয়রও মন্ত্রণালয়ের আদেশ মান্য করেননি। এই বিষয়টাও একটু দৃষ্টিকটু।’ 

প্রসঙ্গত, অবসরে যাওয়ার চার মাস আগে গত ১৪ নভেম্বর চসিকের প্রধান প্রকৌশলী রফিকুল ইসলামকে বদলি করা হয় বরিশাল সিটি কর্পোরেশনে। তার জায়গায় পদায়ন করা হয় পাবনা স্থানীয় সরকার প্রকৌশল অধিদপ্তরের (এলজিইডি) তত্ত্বাবধায়ক প্রকৌশলী মো. নবীউল ইসলামকে। এরপরই বেঁকে বসেন রফিকুল ইসলাম। মন্ত্রণালয়ের আদেশ চ্যালেঞ্জ করে হাইকোর্টে রিট করেছেন। আদালতের ‘স্টে অর্ডার’ (স্থগিতাদেশ) নিয়ে নিয়মিত অফিসও করছেন তিনি। অন্যদিকে নতুন পদায়ন হওয়া প্রধান প্রকৌশলী নবীউল ইসলামও হয়েছেন হাইকোর্টের দ্বারস্থ।

এদিকে, নবীউল ইসলামের ‘স্ট্যাটাস কো’র (স্থিতিবস্থা) ব্যাখ্যায় সরকারপক্ষের আইনজীবীর চিঠি চসিকে পাঠানো হলে প্রথমে গ্রহণ করতে অস্বীকৃতি জানান দায়িত্বপ্রাপ্ত কর্মচারীরা। পরে রেজিস্টার্ড ডাকযোগে পাঠানো হলে তা গ্রহণ করা হয়েছে।

এ প্রসঙ্গে জ্যেষ্ঠ  আইনজীবী টি আর খান তাহিম (তৌহিদুর রহমান খান) বলেন, ‘এটা সরকারের দাপ্তরিক ব্যাপার। সরকার কাকে কোথায় রাখবে আর কাকে রাখবে না এটা একান্তই মন্ত্রণালয়ের নিজস্ব ব্যাপার। এখন রফিকুল ইসলামকে বদলি করা হয়েছে তিনি চলে যাবেন। নবীউল ইসলামকে পদায়ন করা হয়েছে তিনি যোগ দিবেন—এটাই স্বাভাবিক বিষয়। মন্ত্রণালয় থেকে যে আদেশ দেওয়া হয়েছে তা মেয়রও পালন করতে বাধ্য। মেয়র নবীউল ইসলামের যোগদানপত্র গ্রহণ না করে আসলে আইনের প্রতি অশ্রদ্ধা এবং অবজ্ঞা প্রদর্শন করেছেন।’

তিনি আরও বলেন, ‘রফিকুল সাহেব যেটা করেছেন তিনি তার ব্যক্তিগত স্বার্থে বা অন্য কোনো স্বার্থে এখান থেকে সরতে চান না। এখন সিটি কর্পোরেশন সিদ্ধান্ত নিতে পারছে না বললে ভুল হবে। আসলে সিটি কর্পোরেশন সিদ্ধান্ত নিচ্ছে না। আবার মন্ত্রণালয় সিদ্ধান্ত নিতে পারছে না সেই বিষয়টাও আমি মানতে পারছি না। কারণ অ্যাটর্নি জেনারেল যখন একটা মতামত দিবেন সেই চিঠি মান্য করা সরকারি যেকোনো দপ্তর বাধ্য। কেননা আ্যাটর্নি জেনারেল রাষ্ট্রের সবোর্চ্চ আইন কর্মকর্তা। তাঁর নির্দেশনা যখন কেউ না মানে বা সেই চিঠি বা মতামত যদি গ্রহণ না করে সেটা অবশ্যই আদালত অবমাননা হবে।’

একই প্রসঙ্গে জানতে চাইলে চসিকের প্রধান নিবার্হী কর্মকর্তা শেখ মুহম্মদ তৌহিদুল ইসলাম বলেন, ‘এটা আইনগত বিষয়। একটা স্টে অর্ডার আরেকটা স্ট্যাটাস কো। এখন স্টে অর্ডার কি বাতিল হয়ে গেছে নাকি স্ট্যাটাস কো বলতে কি ২৩ তারিখ হিসাব করবো নাকি ৭ তারিখ হিসাব করবো তা নিয়ে আমরা আসলে বিভ্রান্তিতে আছি।’

কাজে ধীরগতির বিষয়টি স্বীকার করে তিনি বলেন, ‘আসলে অস্বীকার করবো না। এটার জন্য আমাদের একটু হলেও তো ভোগান্তি হচ্ছে। অফিসের কাজের মধ্যে কিছুটা হলেও প্রভাব পড়েছে, ধীরগতি এসেছে। মেয়র মহোদয়ের সঙ্গে একান্তে বিষয়টা নিয়ে কথা বলতে পারিনি। তারপর হয়তো একটা সিদ্ধান্ত নিতে পারবো। তবে এখনো পর্যন্ত মন্ত্রণালয়ের কোনো নির্দেশনা আমরা পাইনি।’

এভাবে আর কতদিন চলবে এ প্রশ্নের জবাবে তিনি কোনো সদুত্তর দিতে পারেননি। 

এ প্রসঙ্গে জানতে মন্ত্রণালয়ের স্থানীয় সরকার বিভাগের সচিব মুহম্মদ ইব্রাহিমের সঙ্গে ফোনে যোগাযোগ করা হলেও তিনি সাড়া দেননি।

সর্বশেষ

পাঠকপ্রিয়