বৃষ্টিপাত কমেছে ১২০ মিলিমিটার
৩০ বছরে তাপমাত্রা বেড়েছে তিন ডিগ্রি
শারমিন রিমা
১৮ ডিসেম্বর। রাতে হালকা কুয়াশা আর সন্ধ্যায় হিমেল হাওয়া। প্রকৃতিতে এখন হেমন্তের বিদায়ের সুর। শীতকাল আগমনের এমন ক্ষণে আবহাওয়া পরিস্থিতিতে স্বাভাবিকের চেয়ে তাপমাত্রা বেশি দেখালেও ঠিকই কিন্তু শীত অনুভূত হচ্ছে। অথচ এ সময়ে চট্টগ্রামের সর্বোচ্চ তাপমাত্রা হলো ২৮ দশমিক ৪ ডিগ্রি সেলসিয়াস আর সর্বনিম্ন ১৫ দশমিক ৭ ডিগ্রি সেলসিয়াস। আবহাওয়াবিদদের তথ্য অনুযায়ী— তাপমাত্রা ২৪ ডিগ্রি সেলসিয়াসের নিচে নামলে শীত অনুভূত হয়। যদিও চলতি মাসের শুরু থেকে এখন পর্যন্ত সর্বোচ্চ তাপমাত্রা গড়ে ২৮ থেকে ৩১ ডিগ্রি সেলসিয়াস পর্যন্ত উঠানামা করছে।
কিন্তু এ সময়ে স্বাভাবিক সর্বোচ্চ তাপমাত্রা থাকার কথা ছিল ২৬ দশমিক ৭ ডিগ্রি সেলসিয়াস আর সর্বনিম্ন তাপমাত্রা ১৫ দশমিক ২ ডিগ্রি সেলসিয়াস। অথচ ১৯৯০ সালে ডিসেম্বর মাসের সর্বোচ্চ তাপমাত্রা ছিল ২৬ দশমিক ৯ আর সর্বনিম্ন ১৪ দশমিক ২। ওই সময়ের গড় তাপমাত্রা ছিল ২১ দশমিক ১ ডিগ্রি সেলসিয়াস আর সর্বনিম্ন তাপমাত্রা ছিল ১৪ দশমিক ২ ডিগ্রি সেলসিয়াস। কিন্তু ২০২০ সালে এসে ডিসেম্বর মাসের সর্বোচ্চ তাপমাত্রা দাঁড়ায় ৩১ দশমিক ৮ ডিগ্রি সেলসিয়াসে আর সর্বনিম্ন তাপমাত্রা ১৩ দশমিক ৪ ডিগ্রি সেলসিয়াসে। আর এসময়ের গত তাপমাত্রা ছিল ২০ দশমিক ৮ ডিগ্রি সেলসিয়াস। অর্থাৎ গত ৩০ বছরে চট্টগ্রামের গড় তাপমাত্রা বদলেছে শূন্য দশমিক ৩ ডিগ্রি সেলসিয়াস। কিন্তু সর্বোচ্চ তাপমাত্রার বেলায় বদলেছে ৫ ডিগ্রি সেলসিয়াস করে।
জলবায়ু পরিবর্তনের কারণে বদলে গেছে মৌসুমি বৃষ্টিপাতের ধরনও। সেইসাথে সমুদ্রপৃষ্ঠের উচ্চতা বৃদ্ধি ও উপকূলে ঘূর্ণিঝড়ের তাণ্ডবও বেড়ে গেছে। গত কয়েক দশকে চট্টগ্রামে বৃষ্টিপাত ও তাপমাত্রার পরিবর্তন ঘটেছে। সর্বোচ্চ তাপমাত্রা উঠানামা করছে ৩২ থেকে ৩৬ ডিগ্রি সেলসিয়াস পর্যন্ত। ২০২১ সালে আন্তর্জাতিক একটি গবেষণাতেও বলা হয়েছে— দিবারাত্রির তাপমাত্রার তারতম্য সবচেয়ে বেশি চট্টগ্রামে। আবার বছরজুড়ে স্বাভাবিকের চেয়ে বৃষ্টিপাতের হার কমেছে। বিশেষ করে চট্টগ্রাম শহরে তাও বর্ষাকালে। তবে অসময়ে কিংবা গড় বৃষ্টিপাতের পরিমাণও একইসাথে বেড়েছে।
বাংলাদেশ আবহাওয়া অফিসের তথ্যানুযায়ী গত তিন দশকে (১৯৯০ থেকে ২০২০ সাল পর্যন্ত) চট্টগ্রামের আবহাওয়া কতখানি পরিবর্তন ঘটেছে তার তুলনামূলক চিত্র পর্যালোচনা করে দেখা যায়, তাপমাত্রা বেড়েছে তিন ডিগ্রি সেলসিয়াস আর বৃষ্টিপাতের পরিমাণ কমেছে স্বাভাবিকের চেয়ে ১২০ মিলিমিটার।
গত ৩০ বছরের চট্টগ্রামের চারটি পর্যবেক্ষণাগারের (চট্টগ্রাম, আমবাগান, সীতাকুণ্ড এবং সন্দ্বীপ) তথ্য বিশ্লেষণ করে দেখা যায় যে, ১৯৯০ সালের চট্টগ্রাম পর্যবেক্ষণাগারে মোট বৃষ্টিপাত রেকর্ড হয় ২ হাজার ৮৫২ মিলিমিটার, যেখানে স্বাভাবিক বৃষ্টিপাত হচ্ছে ২ হাজার ৯১৯ দশমিক ১ মিলিমিটার। সন্দ্বীপে ছিল ৩ হাজার ৬১৪ মিলিমিটার এবং সীতাকুণ্ডে ৩ হাজার ৯৮৫ মিলিমিটার। ওই বছরে গড়ে বৃষ্টিপাত হয়েছিল চট্টগ্রামে ৭ দশমিক ৮ মিলিমিটার, সন্দ্বীপে ৯ দশমিক ৯ মিলিমিটার ও সীতাকুণ্ডে ১১ মিলিমিটার। সে বছর সর্বোচ্চ বৃষ্টিপাত রেকর্ড হয় জুন-জুলাইতে। ওই সময় ১৮৩ মিলিমিটার বৃষ্টি হয় চট্টগ্রামে। আর সন্দ্বীপ ও সীতাকুণ্ডে বেশি বৃষ্টিপাত হয় অক্টোবরে। এরমধ্যে সন্দ্বীপে ১৫৩ মিলিমিটার এবং সীতাকুণ্ডে ৩২৯ মিলিমিটার।
আমবাগান পর্যবেক্ষণাগারের রেকর্ডে ১৯৯০ থেকে ১৯৯৯ এর মার্চ পর্যন্ত কোনো তথ্য নেই। অর্থাৎ তার আগে এই পর্যবেক্ষণাগার প্রতিষ্ঠিত হয়নি। ১৯৯৯ সালে মোট বৃষ্টিপাত হয় ৩২৭৭ মিলিমিটার, ২০০০ সালে ৩২৩৫ মিলিমিটার, ২০০১ সালে ২২৮৮ মিলিমিটার, ২০০২ সালে ২৭৬৪ মিলিমিটার, ২০০৩ সালে ২৬৯৬ মিলিমিটার, ২০০৪ সালে ২৯২৪ মিলিমিটার, ২০০৫ সালে ২৩৩১ মিলিমিটার, ২০০৬ সালে ২৩৭৫ মিলিমিটার, ২০০৭ সালে ৪৩৪০ মিলিমিটার, ২০০৮ সালে ৩২৭০ মিলিমিটার, ২০০৯ সালে ৩১৩০ মিলিমিটার, ২০১০ সালে ২৪০৫ মিলিমিটার, ২০১১ সালে ৩১২৮ মিলিমিটার, ২০১২ সালে ৩২৭৫ মিলিমিটার, ২০১৩ সালে ২৩৭৯ মিলিমিটার, ২০১৪ সালে ৩১৫৬ মিলিমিটার, ২০১৫ সালে ৩৯২৬ মিলিমিটার, ২০১৬ সালে ২২৭৪ মিলিমিটার, ২০১৭ সালে ৩৯২৫ মিলিমিটার, ২০১৮ সালে ৩০৩২ মিলিমিটার, ২০১৯ সালে ২৮৭০ মিলিমিটার এবং ২০২০ সালে রেকর্ড হয় ২৬৭০ মিলিমিটার।
চট্টগ্রাম (পতেঙ্গা আবহাওয়া অফিস) পর্যবেক্ষণাগারের হিসাবে ১৯৯০ সালে মোট বৃষ্টিপাত রেকর্ড হয় ২৮৫২ মিলিমিটার, ১৯৯১ সালে ৩০৬৫ মিলিমিটার, ১৯৯২ সালে ২২৭৫ মিলিমিটার, ১৯৯৩ সালে ৩৩৫২ মিলিমিটার, ১৯৯৪ সালে ২২৫৮ মিলিমিটার, ১৯৯৫ সালে ২৪৪৪ মিলিমিটার, ১৯৯৬ সালে ২৯০৪ মিলিমিটার, ১৯৯৭ সালে ৩০১৫ মিলিমিটার, ১৯৯৮ সালে ৩৮৩৩ মিলিমিটার, ১৯৯৯ সালে ৩১৯৪ মিলিমিটার, ২০০০ সালে ৩৫০৩ মিলিমিটার, ২০০১ সালে ২২১৪ মিলিমিটার, ২০০২ সালে ছিল ২৭৪৫ মিলিমিটার, ২০০৩ সালে ২৭৬৯ মিলিমিটার। পরবর্তীতে ২০০৪ সাল থেকে ২০০৭ পর্যন্ত এ স্টেশনের কোনো তথ্য পাওয়া যায়নি। তার পরের বছর বৃষ্টিপাত রেকর্ড হয় ৩০৩২ মিলিমিটার, ২০০৯ সালে ৩৪৬১ মিলিমিটার, ২০১০ সালে ২৪৩৭ মিলিমিটার, ২০১১ সালে ৩১০১ মিলিমিটার, ২০১২ সালে ৩৬৪৩ মিলিমিটার, ২০১৩ সালে ২৫৬১ মিলিমিটার, ২০১৪ সালে ৩৪৫০ মিলিমিটার, ২০১৫ সালে ৩৭১১ মিলিমিটার, ২০১৬ সালে ২২০৮ মিলিমিটার, ২০১৭ সালে ৩৭৫১ মিলিমিটার, ২০১৮ সালে ২৭৫২ মিলিমিটার, ২০১৯ সালে ২৬০১ মিলিমিটার এবং ২০২০ সালে ২৭৯৯ মিলিমিটার বৃষ্টিপাত রেকর্ড হয়।
এ দুই স্টেশনের আবহাওয়ার তথ্য বিশ্লেষণ করা দেখা যায়, গত তিন দশকে চট্টগ্রামের বৃষ্টিপাতের পরিমাণ কমেছে।
সন্দ্বীপ পর্যবেক্ষণাগারের হিসাবে ১৯৯০ সালে মোট বৃষ্টিপাত রেকর্ড হয় ৩৬১৪ মিলিমিটার, ১৯৯১ সালে ২৯৬৮ মিলিমিটার, ১৯৯২ সালে ২৮৮১ মিলিমিটার, ১৯৯৩ সালে ৩৪২২ মিলিমিটার, ১৯৯৪ সালে ২৯২৪ মিলিমিটার, ১৯৯৫ সালে ২২৩৪ মিলিমিটার, ১৯৯৬ সালে ৩৩০৭ মিলিমিটার, ১৯৯৭ সালে ৩১৪৩ মিলিমিটার, ১৯৯৮ সালে ৪২৫৪ মিলিমিটার, ১৯৯৯ সালে ৪০৯৯ মিলিমিটার, ২০০০ সালে ৪২৫২ মিলিমিটার, ২০০১ সালে ৬০৯৫ মিলিমিটার, ২০০২ সালে ছিল ৪৩২৫ মিলিমিটার, ২০০৩ সালের তথ্য নেই। পরবর্তীতে ২০০৪ সালে ৪৬৭০ মিলিমিটার, ২০০৫ সালে ৩০৬৭ মিলিমিটার, ২০০৬ সালে ৩১১১ মিলিমিটার, ২০০৭ সালে ৪৩০৫ মিলিমিটার, ২০০৮ সালে ৩৭০২ মিলিমিটার, ২০০৯ সালে ৩৬১৪ মিলিমিটার, ২০১০ সালে ৩৫০৯ মিলিমিটার, ২০১১ সালে ৪২৬০ মিলিমিটার, ২০১২ সালে ৪০৮১ মিলিমিটার, ২০১৩ সালে ৩১৮৩ মিলিমিটার, ২০১৪ সালে ৩৪৬৮ মিলিমিটার, ২০১৫ সালে ৪০২৩ মিলিমিটার, ২০১৬ সালে ৩৭৪৩ মিলিমিটার, ২০১৭ সালে ৫০৭২ মিলিমিটার, ২০১৮ সালে ৩৯৩০ মিলিমিটার, ২০১৯ সালে ২৭৩৬ মিলিমিটার এবং ২০২০ সালে ৩৮৫০ মিলিমিটার বৃষ্টিপাত রেকর্ড হয়। অথচ এ অঞ্চলের বার্ষিক স্বাভাবিক বৃষ্টিপাত হচ্ছে ৩৪৭৭ দশমিক ৭ মিলিমিটার।
আবহাওয়ার তথ্য বিশ্লেষণ করা দেখা যায়, গত ৩০ বছরে বৃষ্টিপাতের পরিমাণ বেড়েছে সন্দ্বীপে। যেখানে ১৯৯০ সালে মোট বৃষ্টিপাতের পরিমাণ ছিল ৩ হাজার ৬১৪ মিলিমিটার। ২০২০ সালে তা হয় ৩ হাজার ৮৫০ মিলিমিটার।
সীতাকুণ্ড পর্যবেক্ষণাগারের হিসাবে ৯০’র দশকে বৃষ্টিপাত রেকর্ড হয় যথাক্রমে— ৩১৫৬, ২৩১০, ৩৬০৫, ২৫২৪, ২৪৫৯, ২৯৬৪, ৩১৪০, ৪৪৮৬, ৩২৬৩, এবং ৩৪৫৬ মিলমিটার। ২০০১ থেকে ২০১০ পর্যন্ত এ অঞ্চলের বৃষ্টিপাতের পরিমাণ ছিল ২৭২৬, ৪৩৬১, ২৯৭৬, ৩২৪৭, ৩০৩০, ২০৩১, ৪০০৪, ২৯৪৫, ৩১১৯, এবং ২৮৬৮ মিলিমিটার। পরবর্তীতে ২০১১ থেকে ২০২০ সাল পর্যন্ত বৃষ্টিপাতের পরিমাণ ছিল ৩৭৫৮, ৩৯৩৩, ২৫৯৮, ২৯৬৪, ৩৮১১, ২৭৫৩, ৪৮৬৮, ৩৫২৭, ৩৩৪০ এবং ৩৩৪৯ মিলিমিটার পর্যন্ত বৃষ্টিপাত রেকর্ড করা হয়। এ অঞ্চলের বার্ষিক স্বাভাবিক বৃষ্টিপাত হলো ৩০৯২ দশমিক ২ মিলিমিটার।
এছাড়াও মানবাধিকার বিষয়ক ওয়েবসাইট রিলিফওয়েভের তথ্যমতে, গত তিন দশকে বাংলাদেশে ছোটবড় ২৭টি ঘূর্ণিঝড় আঘাত হেনেছে। তারমধ্যে গত এক দশকে অর্থাৎ দশ বছরে চট্টগ্রামে সরাসরি আঘাত করেছে ৬টি ঘূর্ণিঝড়। সর্বশেষ ঘূর্ণিঝড় হামুন চট্টগ্রামে আঘাত না করলেও এর প্রভাবে কোটি টাকার ক্ষয়ক্ষতি হয়েছে।
এদিকে, চট্টগ্রামের মাসিক স্বাভাবিক সর্বোচ্চ তাপমাত্রা জানুয়ারি মাসে থাকে ২৬ ডিগ্রি সেলসিয়াস, ফেব্রুয়ারিতে ২৮ ডিগ্রি সেলসিয়াস, মার্চে ৩০ দশমিক ৬ ডিগ্রি সেলসিয়াস, এপ্রিলে ৩১ দশমিক ৮ ডিগ্রি সেলসিয়াস, মে মাসে ৩২ দশমিক ৩ ডিগ্রি সেলসিয়াস, জুনে ৩১ দশমিক ৫ ডিগ্রি সেলসিয়াস, জুলাইতে ৩০ দশমিক ৯ ডিগ্রি সেলসিয়াস, আগস্টে ৩১ দশমিক ১ ডিগ্রি সেলসিয়াস, সেপ্টেম্বরে ৩১ দশমিক ৬ ডিগ্রি সেলসিয়াস, অক্টোবরে ৩১ দশমিক ৫ ডিগ্রি সেলসিয়াস, নভেম্বরে ২৯ দশমিক ৮ ডিগ্রি সেলসিয়াস এবং ডিসেম্বরে ২৭ ডিগ্রি সেলসিয়াস।
অন্যদিকে, চট্টগ্রামের মাসিক স্বাভাবিক সর্বনিম্ন তাপমাত্রা জানুয়ারি মাসে থাকে ১৩ দশমিক ৯ ডিগ্রি সেলসিয়াস, ফেব্রুয়ারিতে ১৬ দশিমিক ২ ডিগ্রি সেলসিয়াস, মার্চে ২০ ডিগ্রি সেলসিয়াস, এপ্রিলে ২৩ দশমিক ৪ ডিগ্রি সেলসিয়াস, মে মাসে ২৪ দশমিক ৭ ডিগ্রি সেলসিয়াস, জুনে ২৫ দশমিক ২ ডিগ্রি সেলসিয়াস, জুলাই থেকে সেপ্টেম্বর পর্যন্ত স্বাভাবিক সর্বনিম্ন তাপমাত্রা থাকে ২৫ দশমিক ১ ডিগ্রি সেলসিয়াস। অক্টোবরে ২৪ ডিগ্রি সেলসিয়াস, নভেম্বরে ২০ দশমিক ৩ ডিগ্রি সেলসিয়াস এবং ডিসেম্বরে ১৫ দশমিক ৬ ডিগ্রি সেলসিয়াস।
চট্টগ্রামের মাসিক স্বাভাবিক বৃষ্টিপাতের মধ্যে জানুয়ারি মাসে থাকে ৫ দশমিক ৬ মিলিমিটার, ফেব্রুয়ারিতে ২৪ দশমিক ৪ মিলিমিটার, মার্চে ৫৪ দশমিক ৪ মিলিমিটার, এপ্রিলে ১৪৭ দশমিক ৪ মিলিমিটার, মে মাসে ২৯৮ দশমিক ৬ মিলিমিটার, জুনে ৬০৭ দশমিক ৩ মিলিমিটার, জুলাইয়ে ৭২৭ মিলিমিটার, আগস্টে ৫৩০ দশমিক ৬ মিলিমিটার, সেপ্টেম্বরে ২৫৯ দশমিক ৩ মিলিমিটার, অক্টোবরে ১৮৪ দশমিক ৮ মিলিমিটার, নভেম্বরে ৬৭ দশমিক ৫ মিলিমিটার এবং ডিসেম্বরে ১১ দশমিক ৯ মিলিমিটার।
তিন দশকের তাপমাত্রার চিত্র
১৯৯৯ সালের মার্চ থেকে এপ্রিল পর্যন্ত সময়ে আমবাগান পর্যবেক্ষণাগারে রেকর্ড অনুসারে চট্টগ্রামের সর্বোচ্চ তাপমাত্রা ছিল ৩১ দশমিক ৬ ডিগ্রি সেলসিয়াস থেকে ৩৩ দশমিক ৬ ডিগ্রি সেলসিয়াস। একইসময়ে চট্টগ্রাম পর্যবেক্ষণাগারে রেকর্ড হয় সর্বোচ্চ ৩২ দশমিক ৩ ডিগ্রি সেলসিয়াস থেকে ৩৩ দশমিক ৮ ডিগ্রি সেলসিয়াস।
অন্যদিকে, ১৯৯০ সালের গ্রীষ্মে (মার্চ, এপ্রিল ও মে) চট্টগ্রামে সর্বোচ্চ তাপমাত্রা ছিল ২৮ দশমিক ৭ ডিগ্রি সেলসিয়াস থেকে ৩২ দশমিক ৪ ডিগ্রি সেলসিয়াস। ২০০০ সালে এসে তাপমাত্রা দাঁড়ায় ৩০ দশমিক ৯ ডিগ্রি সেলসিয়াস থেকে ৩২ দশমিক ৬ ডিগ্রি সেলসিয়াস। ২০১০ সালে একই সময়ে তাপমাত্রা রেকর্ড হয় ৩১ দশমিক ৩ ডিগ্রি সেলসিয়াস থেকে ৩২ ডিগ্রি সেলসিয়াস।
পরবর্তীতে ২০২০ সালে তিন ডিগ্রি বেড়ে তাপমাত্রা দাঁড়ায় ৩৫ ডিগ্রি থেকে ৩৬ দশমিক ৩ ডিগ্রি সেলসিয়াস। গত ৩০ বছর আগে যেখানে মার্চ মাসে তাপমাত্রা ছিল ২৮ দশমিক ৭ ডিগ্রি সেলসিয়াস। সেখানে ৩০ বছর পর এসে দাঁড়ায় ৩৫ দশমিক ৭ ডিগ্রি সেলসিয়াস। একইভাবে ১৯৯০ সালের এপ্রিলে তাপমাত্রা ছিল ৩১ দশমিক ১ ডিগ্রি সেলসিয়াস, ২০২০ সালে তা বেড়ে দাঁড়ায় ৩৫ ডিগ্রি সেলসিয়াস। ১৯৯০ সালের মে মাসের সর্বোচ্চ তাপমাত্রা ছিল ৩২ দশমিক ৪ ডিগ্রি সেলসিয়াস আর ২০২০ সালের একইসময়ে তা হয় ৩৬ দশমিক ৩ ডিগ্রি সেলসিয়াস। অর্থাৎ গত তিন দশকে চট্টগ্রামে গড়ে তিন ডিগ্রি সেলসিয়াস তাপমাত্রা বেড়েছে।
অর্থাৎ গত তিন দশকে চট্টগ্রামের উপকূলীয় ও অভ্যন্তরীণ অঞ্চলগুলোতে তাপমাত্রা ও বৃষ্টিপাতের পরিবর্তনশীলতা ব্যাপক। যার ফলে বাড়ছে নতুন নতুন দুর্যোগ, বাড়ছে রোগবালাইয়ের প্রকোপ। কিন্তু জলবায়ু পরিবর্তন ট্রাস্ট ফান্ডের অর্থায়নে যত প্রকল্প নেওয়া হয়েছে তার প্রায় সবখানেই উপেক্ষিত আবহাওয়ার তথ্য। অর্থাৎ যে পরিবর্তনের দোহাই দিয়ে প্রকল্প নেওয়া হয়েছে সেই পরিবর্তনের তথ্য উপাত্ত কিংবা বিশেষজ্ঞদের মতামত যাচাই করে না প্রকল্প বাস্তবায়নকারী কর্তৃপক্ষ।
এ বিষয়ে আবহাওয়া অফিসের আবহাওয়া পূর্বাভাস কর্মকর্তা বিশ্বজিৎ চৌধুরী বলেন, জলবায়ু পরিবর্তনের বড় বিপদে রয়েছে চট্টগ্রাম। বর্ষাকালে যেমন বৃষ্টি হওয়ার প্রয়োজন তেমন হয় না। আবার দেখা যায় অসময়ে বৃষ্টিপাতের পরিমাণও বেড়ে যায়। দিনে দিনে তাপমাত্রা বাড়ছে। এসব জলবায়ু পরিবর্তনের কারণে হচ্ছে। আমাদের মতো দুর্যোগপ্রবণ দেশে সঠিকভাবে কৌশল নির্ধারণ করে মোকাবিলা করতে হবে। তা না করলে সুফল পাওয়া তো দূরের থাক উল্টো বিপর্যয় ডেকে আনবে।’
এদিকে, চলতি বছরের নভেম্বরে দেশের আবহাওয়াবিদেরা প্রথমবারের মতো শীত ঋতুর দীর্ঘমেয়াদি পূর্বাভাস চূড়ান্ত করেছেন। বাংলাদেশ আবহাওয়া অধিদপ্তরের আবহাওয়াবিদ ও যুক্তরাজ্যভিত্তিক আবহাওয়া গবেষণা সংস্থা রাইমস যৌথভাবে ওই পূর্বাভাস তৈরি করেছে। গত ১২ নভেম্বর রাজধানীর একটি হোটেলে ওই পূর্বাভাসের ফলাফল নিয়ে দেশের শীর্ষ আবহাওয়াবিদ ও গবেষকেরা আলোচনা করেন। তাতে এবারের শীতকাল সস্পর্কে পূর্বাভাস দেওয়া হয়েছে।
ওই পূর্বাভাসে বলা হয়েছে, এ বছরের শীতকালে তাপমাত্রা বেশি থাকতে পারে। এরই মধ্যে অতিরিক্ত উষ্ণতার প্রভাবে বঙ্গোপসাগরে তাপমাত্রা স্বাভাবিকের চেয়ে এক থেকে দুই ডিগ্রি সেলসিয়াস বেড়ে গেছে। এ সময়ে সাগরের তাপমাত্রা থাকে ২৭ থেকে ২৮ ডিগ্রি সেলসিয়াস। সেখানে তাপমাত্রা থাকছে ২৮ থেকে ৩০ ডিগ্রি সেলসিয়াস। ফলে সাগরে প্রচুর জলীয় বাষ্প ও চাপ তৈরি হচ্ছে।