Cvoice24.com

জলবায়ু তহবিলের টাকায় ‘কমঝুঁকি’ এলাকার উন্নয়ন

শারমিন রিমা

প্রকাশিত: ১২:২৩, ২১ ডিসেম্বর ২০২৩

মেঘনার দাপটে ভেঙে খানখান চট্টগ্রামের দ্বীপ উপজেলা সন্দ্বীপের উড়িরচর। বেড়িবাঁধ ভেঙে ঘরবাড়ি হারাচ্ছে বাঁশখালীর মানুষ। আনোয়ারা ও সীতাকুণ্ডের বিভিন্ন এলাকার জমিতে বেড়েছে লবণাক্ততা। মিরসরাইয়ে ভূ-গর্ভস্থ পানির স্তর নিচে নেমে বিশুদ্ধ পানির সংকটে ভুগছে তিন লাখের বেশি বাসিন্দা। ভূ-গর্ভস্থ পানিতে মিলছে আর্সেনিকও। 

চট্টগ্রামের পাঁচ উপকূলবর্তী এসব উপজেলায় জলবায়ু পরিবর্তনের এমন ক্ষতি বেশি হলেও জলবায়ু তহবিলের প্রকল্পে গুরুত্ব পায়নি মোটেও। উল্টো জলবায়ু পরিবর্তন মোকাবিলার নামে এই তহবিলের টাকা দিয়ে হচ্ছে কমঝুঁকিতে থাকা উপজেলার সৌরবাতি স্থাপন, সড়ক নির্মাণ, সংস্কার, মেরামত ও উন্নয়নকাজ। প্রকল্পগুলো নেওয়া হয় আবার কয়েক দফায়।

ক্লাইমেট চেন্জ ট্রাস্ট ফান্ডের (সিসিটিএফ) নথি ঘেঁটে দেখা গেছে, জলবায়ু পরিবর্তন ট্রাস্ট ফান্ড তৈরি হওয়ার পর এ পর্যন্ত চট্টগ্রাম জেলায় ৬২টি প্রকল্প নেওয়া হয়েছে। এসব প্রকল্পের অনুকূলে বরাদ্দ ছিল ৩৫৩ কোটি ৭৮ লাখ টাকা। এর মধ্যে বর্তমানে ১১ প্রকল্পের কাজ চলমান রয়েছে। তবে চট্টগ্রামের উপকূলবর্তী পাঁচ উপজেলার (মিরসরাই, সীতাকুণ্ড, আনোয়ারা, বাঁশখালী ও সন্দ্বীপ) জন্য প্রকল্প ছিল মাত্র হাতেগোনা দুয়েকটি। তাও আবার জলবায়ু ফান্ড গঠনের পরপরই বাস্তবায়ন করা হয়। বাস্তবে সেই প্রকল্প কতটুকু কার্যকর সেটাও বিবেচনায় নেয়নি সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষ।

যার ক্ষতি বেশি তার জন্য নেই এই ফান্ডের বরাদ্দ। বরং জলবায়ু পরিবর্তনজনিত ঝুঁকি মোকাবেলার নামে অপেক্ষাকৃত কমঝুঁকিতে থাকা উপজেলা ও নগর উন্নয়নে যাচ্ছে এই ট্রাস্ট ফান্ডের টাকা। যা দিয়ে পৌর এলাকার ড্রেনেজ ব্যবস্থা, সড়ক নির্মাণ, সংস্কার, মেরামত, সৌর বাতি স্থাপনের কাজ এমনকি সড়ক অবকাঠামোও গড়ে তোলা হয়েছে। তবে প্রকল্পগুলো প্রত্যক্ষভাবে জলবায়ু পরিবর্তনরোধে সহায়ক না হলেও পরোক্ষভাবে কাজ করছে বলে মন্তব্য জলবায়ু ট্রাস্ট ফান্ড কর্তৃপক্ষের। 

এদিকে, জলবায়ু ট্রাস্ট ফান্ডের টাকা দিয়ে সবচেয়ে বেশি প্রকল্প বাস্তবায়ন করেছে পানি উন্নয়ন বোর্ড (পাউবো), স্থানীয় সরকার প্রকৌশল অধিদপ্তর (এলজিইডি) এবং বিভিন্ন উপজেলার পৌরসভা। তারমধ্যে ১৩টি প্রকল্প পানি উন্নয়ন বোর্ড এবং ১০টি প্রকল্প বাস্তবায়ন করেছে স্থানীয় সরকার প্রকৌশল অধিদপ্তর (এলজিইডি)। বাকি প্রকল্পগুলোর মধ্যে কিছু বিভিন্ন পৌরসভা, বন বিভাগ, চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়, ও কৃষি অধিদপ্তরসহ অন্যান্য কয়েকটি সরকারি সংস্থা বাস্তবায়ন করেছে। 

এক যুগে উপকূলীয় জনপদে যেটুকু কাজ হয়েছে, তাতেও রয়েছে অনিয়মের বিস্তর অভিযোগ। সংশ্নিষ্ট দপ্তরগুলো নিজস্ব তহবিল থেকে টাকা বরাদ্দ না পেয়ে সাধারণ কাজেও খরচ করেছে জলবায়ু তহবিলের টাকা। গেল দুই মাস প্রকল্পগুলোর হালহকিকত জানার চেষ্টা করেছে সিভয়েস।

প্রকল্প পর্যালোচনায় দেখা যায়, জলবায়ু পরিবর্তনে নারী ও শিশুরা বেশি ঝুঁকিতে থাকলেও চট্টগ্রামের উপকূলবর্তী উপজেলার নারী-শিশুদের জন্য নেই কোনো প্রকল্প। এমনকি প্রকল্প বাছাইয়ে স্বাস্থ্য সর্বোচ্চ গুরুত্ব পাওয়ার কথা থাকলেও স্বাস্থ্যখাতেও নেওয়া হয়নি কোনো প্রকল্প। অপরদিকে ঝুঁকি মোকাবেলার নামে এই তহবিলের প্রায় পুরো অংশ ব্যবহার হয়েছে অবকাঠামোগত উন্নয়ন প্রকল্পের পেছনে। এছাড়া, জলবায়ু ঝুঁকি মোকাবেলায় গবেষণাকে অগ্রাধিকার দেওয়ার কথা থাকলেও গত ১৩ বছরে গবেষণা প্রকল্প নেওয়া হয়েছে মাত্র ৫টি। বরং জলবায়ু তহবিলের প্রকল্পে বরাদ্দ আসে স্থানীয় সংসদ সদস্য বা রাজনৈতিক ব্যক্তিদের প্রভাবের কারণে-এমনটিই বলছেন জলবায়ু ট্রাস্ট ফান্ড কর্তৃপক্ষ। এমনকী উপজেলাগুলোতে জলবায়ু পরিবর্তনের কারণে শিক্ষা থেকে ঝরে পড়া শিশুর সংখ্যা, ঘরবাড়ি হারানো মানুষের হিসাব, কোন কোন রোগের প্রাদুর্ভাব বেড়েছে সে হিসাব রাখেনি সরকারি কোনো কর্তৃপক্ষ। 

সন্দ্বীপের ভাগ্যে জুটেছে জলবায়ু তহবিলের কেবল ২ প্রকল্প

‘জন্মের পর থেকে দেখছি উড়িরচর ভাঙ্গছে। চারমাস আগে আমাদের বাড়িটাও নদীতে ভেঙ্গে গেছে। দক্ষিণ দিক থেকে ভাঙ্গছে তাই এখন আমরা কলোনী বাজারের উত্তর দিকে আসছি। আমাদের একশ কড়া জমি নদীতে নাই হয়ে গেছে। চোখের সামনে সব হারিয়ে পড়াশোনাটাও বন্ধ হয়ে গেছে। এখন দোকান করছি’—কথাগুলো উড়িরচরের ভিটেমাটি হারানো ১৮ বছর বয়সী মোশাররফ অভির।

মেঘনার দাপটে ভেঙ্গে যাওয়া উড়িরচরের প্রায় সাড়ে ৭ মাইলের মধ্যে মোশাররফদের বাড়িটাও ছিল। যে মেঘনার বুক চিড়ে জেগেছিল উড়ির চর, সেই মেঘনার গ্রাসে মানচিত্র থেকে বিলীন হতে বসেছে এই দ্বীপ। অথচ ২০১০ সালের ১৩ অক্টোবর জলবায়ু পরিবর্তনের ঝুঁকি মোকাবিলায় স্থানীয় মানুষের সক্ষমতা বাড়ানো, জলবায়ু-সহিষ্ণু প্রযুক্তি উদ্ভাবন,ও ক্ষতিগ্রস্ত মানুষের জন্য গঠন করা হয় জলবায়ু পরিবর্তন ট্রাস্ট ফান্ড (সিসিটিএফ)। ১৭ কোটি টাকা ব্যয়ে ২০১৩ সালে একটি এবং এরপর ২০২০ সালে ২ কোটি টাকা ব্যায়ে আরেকটি প্রকল্প নেওয়া হয় দ্বীপ উপজেলা সন্দ্বীপের জন্য। এ দুটি প্রকল্প ছাড়া জলবায়ু তহবিলের আর কোনো প্রকল্প জোটেনি পরিবেশগত ঝুঁকিতে থাকা এ দ্বীপ উপজেলার ভাগ্যে।

২০১২ সাল থেকে উড়িরচরের ভাঙন শুরু। ভাঙতে ভাঙতে মেঘনাগর্ভে সাড়ে ৭ মাইল এলাকা। গোলচিহ্নিত ছবি ভাঙন কবলিত উড়িরচর। ছবি: গুগল আর্থ

প্রকল্প দুটি হল, সন্দ্বীপের দক্ষিণ পশ্চিমের ভেঙে যাওয়া বেড়িবাঁধ পুনর্নিমাণ, মেরামত ও পুনর্বাসনের জন্য ২০১৩ সালে পানি উন্নয়ন বোর্ডের নেওয়া একটি প্রকল্প। ‘চট্টগ্রাম জেলার সন্দ্বীপ উপজেলার পোল্ডার নম্বর ৭২ এর দক্ষিণ পশ্চিমের ভেঙে যাওয়া বেড়িবাঁধ পুনর্নিমাণ মেরামত ও পুনর্বাসন কাজ’ নামের প্রকল্পটির কাজ শেষ হয় ২০১৭ সালে। মূলত ১৭ কোটি টাকা ব্যয়ে ওই একটি প্রকল্পই জুটেছে মূল ভুখণ্ড থেকে বিচ্ছিন্ন এই দ্বীপের বাসিন্দাদের ভাগ্যে।

দীর্ঘ বিরতির পর ২০২০ সালে সন্দ্বীপ পৌরসভা ৩ কোটি টাকা ব্যয়ে ‘জলবায়ু পরিবর্তনজনিত প্রভাব মোকাবেলার জন্য পৌর এলাকায় আধুনিক প্রোগ্রামেবল সোলার স্ট্রিট লাইট স্থাপন’ নামের একটি প্রকল্প নেয়। এ প্রকল্পের কাজ শেষ হয় ২০২২ সালের জুনে। অথচ গত ১০ বছরে জলবায়ু পরিবর্তনজনিত কারণে সবচেয়ে বেশি ঝুঁকিতে রয়েছে দ্বীপ উপজেলাটির বাসিন্দারা। 
বিষয়টি স্বীকার করেছেন সন্দ্বীপের উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা সম্রাট খীসা, স্থানীয় সরকার মন্ত্রণালয়ের প্রকৌশলী এবং পানি উন্নয়ন বোর্ডের কর্মকর্তারাও।

অন্যদিকে পাউবোর তথ্যমতে, সন্দ্বীপে বেড়িবাঁধের দৈর্ঘ্য ৫৫ কিলোমিটার। ইতিমধ্যে সিসি ব্লক দ্বারা ৯ দশমিক ৬৬ কিলোমিটার বেড়িবাঁধ সুরক্ষিত আছে। অধিক ভাঙনের ঝুঁকিতে আছে ২৯ দশমিক ৬৬ কিলোমিটার বেড়িবাঁধ। এছাড়া উড়ির চরের ৭ দশমিক ৫ কিলোমিটার এলাকায় তীব্র ভাঙন আছে। তাই সন্দ্বীপ উপকূল রক্ষায় জলবায়ু পরিবর্তন ফান্ডের অর্থায়নে প্রকল্প খুবই দরকার বলে মনে করেন বিশেষজ্ঞরা।

উপকূলীয় উপজেলার কৃষিতে নজর নেই কারও

মাটির লবণাক্ততা কৃষির জন্য অভিশাপের মত। অথচ পরিবেশ পরিবর্তনের ফলে লবণাক্ত ভূমির পরিমাণ দিনে দিনে বাড়ছে। লবণাক্ততা কৃষিকে যেমন হুমকিতে ফেলেছে, তেমনি বাস্তুচ্যুত করেছে কৃষকদের। সয়েল রিসোর্সেস ডেভেলপমেন্টের (এসআডিআই) তথ্যমতে ১৯৭৩ সালে দেশের ৮ কোটি ৩৩ লাখ হেক্টর জমিতে লবণাক্ততা ছিল ২০০৯ সালে সেটি বেড়ে দাঁড়িয়েছে ১০ কোটি ৫৬ লাখ হেক্টর জমিতে।

কৃষি অধিদপ্তরের তথ্যমতে, চট্টগ্রামে উপকূলবর্তী উপজেলার মধ্যে মিরসরাইয়ে মোট জমি ১৩ হাজার ৪২০ হেক্টর, লবণাক্ত জমি ১ হাজার ৫০০ হেক্টর, আবাদি জমি ১০ হাজার ৭৫০ হেক্টর, আবাদ হচ্ছে এমন লবণাক্ত জমি ১ হাজার ৩০ হেক্টর, আবাদযোগ্য পতিত লবণাক্ত জমি ৩০০ হেক্টর, এবং আবাদযোগ্য নয় এমন লবণাক্ত জমি ১৭০ হেক্টর। 

জুন-জুলাইয়ে বৃষ্টিতে জমির লবণাক্ততা কমলে  বীজতলা তৈরি, ফসল লাগানোর কাজ শুরু করে কৃষকেরা। তবে এবার আগস্টের অতিবৃষ্টিতে ক্ষতিগ্রস্ত ফসলের মাঠ। সন্দীপের একটি কৃষি জমি।

আনোয়ারা উপজেলায় মোট জমি ১৫ হাজার ৮৭১ হেক্টর। এর মধ্যে মোট আবাদি জমি ৮ হাজার ৯০০ হেক্টর, লবণাক্ত জমি ২ হাজার ১৫০ হেক্টর, আবাদ হচ্ছে এমন লবণাক্ত জমি ১ হাজার হেক্টর, আবাদযোগ্য পতিত লবণাক্ত জমি ৭৬০ হেক্টর, এবং আবাদযোগ্য নয় এমন লবণাক্ত জমি ৩৯০ হেক্টর। 

সীতাকুণ্ড উপজেলায় মোট জমি ২১ হাজার ৭৫১ হেক্টর। এর মধ্যে লবণাক্ত জমি ১ হাজার ৫০০ হেক্টর, আবাদি জমি ৭ হাজার ৫৫৫ হেক্টর, আবাদ হচ্ছে এমন লবণাক্ত জমি ১ হাজার ৩৫০ হেক্টর, আবাদযোগ্য পতিত লবণাক্ত জমি ১৫০ হেক্টর, এবং আবাদযোগ্য নয় এমন লবণাক্ত জমি এই উপজেলায় নেই। 

বাঁশখালীর মোট জমির পরিমাণ ৩৯ হাজার হেক্টর। এরমধ্যে লবণাক্ত জমির পরিমাণ ৪ হাজার ২৬০ হেক্টর, আবাদি জমির পরিমাণ ১৯ হাজার ৪৯০ হেক্টর, আবাদ হচ্ছে এমন লবণাক্ত জমির পরিমাণ ২ হাজার ২১০ হেক্টর, আবাদযোগ্য পতিত লবণাক্ত জমির পরিমাণ ৩৯০ হেক্টর, এবং আবাদযোগ্য নয় এমন লবণাক্ত জমির পরিমাণ ১ হাজার ৫৬০ হেক্টর।

সন্দ্বীপের মোট জমি ৩৮ হাজার ৮০০ হেক্টর। এরমধ্যে লবণাক্ত জমি ১৩ হাজার ৪৯৯ হেক্টর, আবাদি জমি ২৩ হাজার ৫৪০ হেক্টর, আবাদ হচ্ছে এমন লবণাক্ত জমি ১১ হাজার হেক্টর, আবাদযোগ্য পতিত লবণাক্ত জমি ২ হাজার ১৫৭ হেক্টর, এবং আবাদযোগ্য নয় এমন লবণাক্ত জমি ২৯২ হেক্টর। 

উপকূলীয় উপজেলাগুলোর মধ্যে সবচেয়ে বেশি কৃষিজমি রয়েছে বাঁশখালী উপজেলায় অন্যদিকে সন্দ্বীপের ৫০ দশমিক ৮ শতাংশ মানুষ কৃষিকাজ করে। সন্দ্বীপ উপকূল অরক্ষিত হওয়ায় নিয়মিত চাষাবাদ থেকে বিরত থাকেন বেশিরভাগ কৃষক। এতে ফসল উৎপাদনও কম হয়।
কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তর চট্টগ্রাম অঞ্চলের উপ-পরিচালক মোহাম্মদ আবদুচ ছোবহান বলেন, ‘জলবায়ু পরিবর্তনের ফলে উপকূলীয় অঞ্চলের বাইরেও ছড়িয়ে গেছে মাটির স্যালাইনিটি, এতে বেশি ক্ষতিগ্রস্ত উপকূলীয় অঞ্চল। এ অঞ্চলের কৃষি বাড়াতে ও লবণাক্ত জমিকে আবাদযোগ্য করতে হবে।’ 

হাটহাজারীতেই ৭ প্রকল্প 

গত ১০ বছরে জলবায়ু পরিবর্তনজনিত প্রভাব মোকাবেলায় কেবল চট্টগ্রামের হাটহাজারীতেই সরকারের তিন সংস্থা বাস্তবায়ন করেছে ৭টি প্রকল্প। এসব প্রকল্পে ব্যয় হয়েছে জলবায়ু ট্রাস্ট ফান্ডের ২৮ কোটি ৪৮ লাখ টাকা। এর মধ্যে পানি উন্নয়ন বোর্ড বাস্তবায়ন করেছে ২টি, স্থানীয় সরকার প্রকৌশল অধিদপ্তর ৩টি এবং হাটহাজারী পৌরসভা বাস্তবায়ন করেছে ২ প্রকল্প। ২০১৩ সালের জুলাইতে শুরু হয়ে ২০১৭ সালের জুনে শেষ হওয়া পানি উন্নয়ন বোর্ড একটি প্রকল্প বাস্তবায়ন করে হালদা নদী প্রতিরক্ষা কাজের জন্য। ওই প্রকল্পে ব্যয় হয় ২ কোটি ৯০ লাখ।

আগের প্রকল্পকাজ শেষ হওয়ার আগেই ২০১৪ সালের জুলাইতে হাটহাজারীতে আরেকটি প্রকল্প নেয় পানি উন্নয়ন বোর্ড। এর ব্যয় ছিল ৪ কোটি টাকা। ওই প্রকল্পের নাম—জলবায়ু পরিবর্তনের ঝুঁকি মোকাবিলায় চট্টগ্রাম জেলার হাটহাজারী উপজেলার গুমানমর্দন এলাকা ও চট্টগ্রাম সিটি কর্পোরেশনের মোহরা ওয়ার্ডে হালদা নদীর ডানতীরে ক্ষতিগ্রস্ত বাঁধ সংরক্ষণ প্রকল্প। প্রকল্পটির কাজ শেষ হয় ২০১৭ সালের জুনে। 

২০১৫ সালের জুলাইতে হাটহাজারী পৌর এলাকায় ড্রেন নির্মাণ এবং খুঁটিসহ সৌর বিদ্যুৎতায়িত সড়কবাতি স্থাপনের প্রকল্প পায় হাটহাজারী পৌরসভা। ২০১৭ সালের জুনে প্রকল্পের মূল মেয়াদ শেষ হয়। পরবর্তীতে আরও ২ বছর মেয়াদ বাড়িয়ে ২০১৯ সালের জুনে ৩ কোটি টাকা ব্যয়ের এ প্রকল্পটি শেষ হয়।

জলবায়ু ফান্ডের টাকায় হাটহাজারী পৌরসভায় নির্মিত ড্রেন। ছবি: সংগৃহীত

তবে প্রকল্প সংশ্লিষ্টরা জানান, জলাবদ্ধতা নিরসনের জন্য এ প্রকল্প বাস্তবায়ন করা হলেও আরসিসি স্ল্যাবের মাধ্যমে প্রাইমারি ড্রেন নির্মাণের কারণে জলাবদ্ধতা আরও বেড়ে যাওয়ায় পরে আরেকটি প্রকল্প নেওয়া হয় ২০১৭ সালের নভেম্বরে। সে সময় জলবায়ু পরিবর্তনজনিত প্রভাব মোকাবেলায় হাটহাজারী পৌর এলাকায় আরসিসি ড্রেন নিমার্ণের নামে প্রকল্পটি নেওয়া হয়। এ প্রকল্পের ব্যয় ছিল ৬ কোটি টাকা। ২০১৯ সালের জুনে শেষ হওয়ার কথা থাকলেরও মেয়াদ বাড়িয়ে ২০২১ সালের জুনে শেষ হয় প্রকল্পের কাজ। 

৩ কোটি ৮৩ লাখ টাকা ব্যয়ে জলবায়ু পরিবর্তন সহনীয় হাটহাজারী উপজেলায় গুমানমর্দন ইউনিয়নের কুমারী খালে ড্রেন নির্মাণ (০০.১৩২৪ মিটার) প্রকল্পটি বাস্তবায়ন করে স্থানীয় সরকার প্রকৌশল অধিদপ্তর। প্রকল্পটি নেওয়া হয় ২০১৮ সালের মে মাসে। ২০২০ সালের এপ্রিলে শেষ হওয়ার কথা থাকলেও মেয়াদ বাড়িয়ে এ প্রকল্পের কাজ শেষ হয় ২০২২ এর ডিসেম্বরে। একই সময়ে একই উপজেলার রাস্তাঘাটের উন্নয়নের জন্য আরেকটি প্রকল্প নেয় স্থানীয় সরকার প্রকৌশল অধিদপ্তর। জলবায়ু সহনীয় সড়ক নির্মাণ/পুনর্বাসন শীর্ষক নামের ওই প্রকল্পটি নেওয়া হয় ২০১৮ সালের অক্টোবরে। ২০২০ সালের সেপ্টেম্বরে প্রায় ৫ কোটি (৪ কোটি ৯৮ লাখ) টাকা ব্যয়ে এ প্রকল্পটির কাজ শেষ হওয়ার কথা থাকলেও মেয়াদ বাড়িয়ে ২০২২ সালের ডিসেম্বরে শেষ হয়। 

তার পরের বছর একইভাবে ২০১৯ সালের জানুয়ারিতে জলবায়ু পরিবর্তন সহনীয় চট্টগ্রাম জেলার হাটহাজারী উপজেলায় সড়ক পুনর্বাসন (২য় পর্যায়) নামে ৩ কোটি ৭৫ লাখ টাকা ব্যয়ে আরেকটি প্রকল্প নেয় এলজিইডি। ২০২১ সালের ডিসেম্বরে এ প্রকল্পের কাজ শেষ হয়। অর্থাৎ জলবায়ু পরিবর্তনের ঝুঁকি মোকাবেলার জন্য পরপর ৩ বছর এক হাটহাজারীতেই তিনটি প্রকল্প নেয় স্থানীয় সরকার প্রকৌশল অধিদপ্তর।

কোমেনের প্রভাব মোকাবেলায় রাঙ্গুনিয়াও পেল জলবায়ু তহবিল

২০১৫ সালে হওয়া ঘূর্ণিঝড় কোমেনের পর ২০১৬ সালের ডিসেম্বরে ‘কোমেনের প্রভাবে সংঘটিত বন্যা ও ফ্লাশ ফ্লাডে ক্ষতিগ্রস্ত সড়ক ও সেতুর সংস্কার ও উন্নয়ন’ নামের প্রকল্প নেয় স্থানীয় সরকার প্রকৌশল অধিদপ্তর। এ প্রকল্পে ব্যয় হয়েছিল প্রায় ৫ কোটি। 
প্রকল্প চলাকালীন সময়েই আবারও ৪ কোটি ৯৫ লাখ টাকা ব্যয়ে ২০১৮ সালের মার্চে রাঙ্গুনিয়া উপজেলায় ঘূর্ণিঝড় কোমেনের প্রভাবে সংঘটিত বন্যা ও ফ্লাশ ফ্লাডে ক্ষতিগ্রস্ত সড়ক/সেতুর সংস্কার, ও উন্নয়ন (২য় পর্যায়) শীর্ষক আরেকটি প্রকল্প নেওয়া হয়। প্রকল্পটির মেয়াদ বাড়ানোর পর ২০২৪ সালের ডিসেম্বরে শেষ হওয়ার কথা রয়েছে। পরবর্তীতে আবারও একই নামে ২০২১ সালের ডিসেম্বরে রাঙ্গুনিয়া উপজেলায় ফ্লাশ ফ্লাড এলাকায় জলবায়ু সহনশীল সড়ক অবকাঠামো উন্নয়ন নামে আরও একটি প্রকল্প নেওয়া হয়। এই প্রকল্পেরও মেয়াদ ২০২৪ সালের ডিসেম্বরে শেষ হবে।

এর আগে ৫ কোটি টাকা ব্যয়ে জলবায়ু ট্রাস্ট ফান্ডের অর্থায়নে চট্টগ্রাম জেলার রাঙ্গুনিয়া ও বোয়ালখালী উপজেলায় পানি প্রবাহ সমস্যা সমাধান প্রকল্পের কাজ শেষ হয় ২০১২ সালের জুনে। প্রকল্পটিও বাস্তবায়ন করে স্থানীয় সরকার প্রকৌশল অধিদপ্তর। এছাড়া ‘চট্টগ্রাম জেলার ফ্লাশ ফ্লাড এলাকায় জলবায়ু সহনশীল সড়ক অবকাঠামো উন্নয়ন’ শীর্ষক প্রকল্প নেওয়া হয় ২০১৫ সালের জুলাইতে। প্রকল্পের মেয়াদ শেষ হয় ২০১৭ সালের জুনে। আরও দুই বছর মেয়াদ বাড়িয়ে এ প্রকল্পটি শেষ হয় ২০১৯ সালের ডিসেম্বরে। এ প্রকল্পের ব্যয় ছিল ৭ কোটি টাকা।

জলবায়ুর চলমান ১১ প্রকল্পের ৫টিই সৌরবাতির

ভাঙন আক্রান্ত ও দ্বীপ উপজেলাকে এড়িয়ে জলবায়ু তহবিলের চলমান ১১ প্রকল্পের প্রায় সবই নগর ও পৌর শহরকেন্দ্রিক। এরমধ্যে সবচেয়ে বেশি বরাদ্দ ধরা হয়েছে পার্ক নির্মাণ খাতে। চলতি বছরের জুলাই মাসে চট্টগ্রাম জেলা প্রশাসন ৮ কোটি টাকা ব্যয়ে চট্টগ্রামের সীতাকুণ্ড উপজেলার জঙ্গল সলিমপুরে ‘জলবায়ু পরিবর্তন সহনীয় উপকূলবর্তী পার্ক নির্মাণ এবং জীববৈচিত্র্য রক্ষার্থে বৃক্ষরোপণ এবং প্রাকৃতিক জলাধার সংরক্ষণ’ নামের একটি প্রকল্প হাতে নেয়। ২০২৪ সালের জুন পর্যন্ত এ প্রকল্পের মেয়াদ ধরা হয়েছে।

জলবায়ু ফান্ডের টাকায় লাগানো সৌরবাতি। ছবি: গুগল

একইসাথে চলছে চট্টগ্রামের চার উপজেলায় সৌরবাতি লাগানোর ৫ প্রকল্প। দেড় কোটি করে সৌরবিদ্যুত প্রকল্পে ব্যয় ধরা হয়েছে সর্বমোট সাড়ে সাত কোটি টাকা। ওই উপজেলাগুলো হল বাঁশখালী, ফটিকছড়ি, চন্দনাইশ ও মিরসরাই। এর মধ্যে ফটিকছড়িতে দুটি প্রকল্প বাস্তবায়িত হচ্ছে। এ পাঁচ প্রকল্পের শিরোনাম দেওয়া হয়েছে ‘জলবায়ু পরিবর্তনজনিত প্রভাব মোকাবিলার জন্য ওই উপজেলায় কার্বন নির্গমণ হ্রাস ও পরিবেশ উন্নয়ন শীর্ষক সৌরবাতি স্থাপন’। 

১১২টি সৌরবাতি জলবায়ু পরিবর্তন রোধে সরাসরি কোনো ভূমিকা রাখবে কী না সে বিষয়ে সদুত্তরও দিতে পারেননি প্রকল্প সংশ্লিষ্ট কেউ। যদিও বিশেষজ্ঞরা বলছেন, সুনির্দিষ্ট গবেষণা নেই বলেই জলবায়ু পরিবর্তনে কোনো ভূমিকা রাখছে না কোটি কোটি টাকার এসব প্রকল্প।

চট্টগ্রাম প্রকৌশল ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের (চুয়েট) সিভিল ইঞ্জিনিয়ারিং বিভাগের অধ্যাপক ও জলবায়ু বিশেষজ্ঞ ড. মো. রিয়াজ আক্তার মল্লিক সিভয়েসকে বলেন, ‘একটি স্থানে কিছু সোলার লাইট বসিয়ে দিলেই তা কার্বন নিঃসরণ কমাবে বা জলবায়ু পরিবর্তনজনিত প্রভাব কমিয়ে দেবে, তা একেবারেই বলা যায় না। কার্বন নিঃসরণের পরিমাণ এত বেশি যে ওজোন স্তর ফুটো হয়ে যাচ্ছে, সেখানে ১১২টি সোলার লাইট কী ভূমিকা রাখবে? এখানে আরও বড় প্রশ্নটা হল কার্বন নিঃসরণের জন্য মূলত দায়ী তৃতীয় বিশ্ব, বাংলাদেশের মত উন্নয়নশীল দেশগুলো নয়। বাংলাদেশে এখন প্রকল্পগুলো আছে তাতে সিগনেফিকেন্ট কোনো পরিবর্তনই হবে না।’

এছাড়া ক্লাইমেট চেন্জ ট্রাস্ট ফান্ডের (সিসিটিএফ) টাকায় নির্মাণ হচ্ছে সড়ক ও নর্দমা অথচ সন্দ্বীপের উড়ির চরের উপকূলের মানুষ সবচেয়ে বেশি ভুগছে নদীভাঙ্গন নিয়ে। সৌরবাতির জন্য একের পর এক প্রকল্প থাকলেও দুর্দশাগ্রস্ত উড়ির চরের উপকূলের মানুষের জন্য জলবায়ু ফান্ডের কোনো প্রকল্প নেই।

চলমান প্রকল্পের মধ্যে রাউজান, রাঙ্গুনিয়া এবং বোয়ালখালী উপজেলার সড়ক, নর্দমা নির্মাণ, সড়ক অবকাঠামো উন্নয়ন, রাস্তা উঁচুকরণ ও আরসিসি ড্রেন নির্মাণের জন্য ৫ কোটি টাকার প্রকল্প চলছে। এর মধ্যে ২০২২ সালের মার্চে রাউজানে জলবায়ু সহনীয় সড়ক/ড্রেন নির্মাণ নামে ২ কোটি টাকা ব্যয়ে প্রকল্পটি নিয়েছে এলজিইডি। প্রকল্পের মেয়াদ ২০২৪ সালের মার্চে শেষ হওয়ার কথা রয়েছে। রাঙ্গুনিয়া উপজেলায় ফ্লাশ ফ্লাড এলাকায় জলবায়ু সহনশীল সড়ক অবকাঠামো উন্নয়ন (তৃতীয় পর্যায়) নামে ২০২১ সালের ডিসেম্বরে ২ কোটি টাকা ব্যয়ে আরেকটি প্রকল্প নেওয়া হয়। ২০২৪ সালের ডিসেম্বরে এ প্রকল্পের কাজ শেষ হওয়ার কথা রয়েছে। এছাড়াও বোয়ালখালী পৌরসভা ১ কোটি টাকা ব্যয়ে জলবায়ু পরিবর্তনজনিত প্রভাব মোকাবেলায় চট্টগ্রাম জেলার বোয়ালখালী পৌরসভার অন্তর্গত বিভিন্ন রাস্তা উঁচুকরণ আরসিসি ড্রেন নির্মাণ ও চন্দরিয়া খালের পাড়ে ব্লক পিচিং নামের প্রকল্পটি নেওয়া হয় ২০১৬ সালের সেপ্টেম্বরে। ২০১৮ সালের মে মাসে প্রকল্প শেষ হওয়ার কথা থাকলেও দুই দফায় মেয়াদ বাড়িয়ে ২৩ সালের ডিসেম্বরে শেষ হওয়ার কথা রয়েছে।

এছাড়া ২ কোটি টাকা ব্যয়ে বাংলাদেশ চা বোর্ড টেকসই ও গুণগতমান সম্পন্ন চা উৎপাদনের লক্ষ্যে জলবায়ু পরিবর্তন মোকাবেলায় উপযুক্ত অভিযোজন কৌশল উন্নয়ন নামে একটি প্রকল্প নিয়েছে। চলতি বছরের জুলাই থেকে ২০২৫ সালের জুন পর্যন্ত এ প্রকল্পের মেয়াদ ধরা হয়েছে।

চট্টগ্রামের ৮ উপজেলায় জলবায়ুর ১৪ প্রকল্প

জলবায়ু পরিবর্তন ট্রাস্ট ফান্ডের অর্থায়নে নানা প্রকল্প নিয়েছিল বাংলাদেশ পানি উন্নয়ন বোর্ড। প্রকল্প এলাকাগুলো হল চট্টগ্রামের রাঙ্গুনিয়া, কর্ণফুলী, সাতকানিয়া, লোহাগাড়া, মিরসরাই, পটিয়া, রাউজান ও বাঁশখালী। এসব এলাকার নদী ভাঙনরোধ ও প্রতিরক্ষামূলক অবকাঠামো নির্মাণ করতে এসব প্রকল্প বাস্তবায়ন করা হয়।

১ কোটি টাকা ব্যয়ে রাঙ্গুনিয়া পৌরসভা এলাকায় সৌর বিদ্যুৎ উন্নয়ন নামের একটি প্রকল্পের কাজ শেষ হয় ২০২২ সালের জুনে। ৫ কোটি ৫০ লাখ টাকা ব্যয়ে চট্টগ্রামের রাউজানে হালদা নদীর বাম তীরে বিভিন্ন এলাকায় প্রতিরক্ষা কাজের প্রকল্প শেষ হয় ২০১৯ সালের ডিসেম্বরে, একই বছরে রাউজানের দেওয়ানজী ঘাট, মোকামিপাড়াসহ হালদা নদীর বামতীরের বিভিন্ন এলাকায় প্রতিরক্ষা কাজের প্রকল্পে ব্যয় করা হয় ৫ কোটি টাকা। 

২০১৮ সালের জুলাইতে ২ কোটি টাকা ব্যয়ে মিরসরাইয়ের বারইয়ারহাট পৌর এলাকায় জলাবদ্ধতা নিরসন ও পরিবেশ উন্নয়ন নামের এ প্রকল্পটির মেয়াদ ২০১৯ সালের ডিসেম্বরে শেষ হলেও সময় বাড়িয়ে ২০২২ সালের ডিসেম্বরে কাজ শেষ হয়। ২০১৮ সালের ডিসেম্বরে ২ কোটি টাকা ব্যয়ে জলবায়ু পরিবর্তনজনিত প্রভাব মোকাবিলার জন্য চট্টগ্রাম জেলার রাউজান পৌর এলাকায় কার্বন নিগর্মন হ্রাস ও পরিবেশ উন্নয়ন নামে একটি প্রকল্প বাস্তবায়ন করে। প্রকল্পটি শেষ হয় ২০২১ সালের জুনে। ২০১৮ সালে পটিয়ার মালিয়ারা-বাঁকখাইন ভান্ডারগাঁওয়ে বন্যা নিয়ন্ত্রণ, নিষ্কাশন ও সেচ (প্রথম পর্যায়) নামের প্রকল্পটির ব্যয় ছিল প্রায় ৭ কোটি। ২০১৮ সালের জুনে শেষ হওয়া বাঁশখালীর গন্ডামারা ও সরল ইউনিয়নে উপকূলীয় বাঁধের বিভিন্ন অংশ ভাঙন বন্ধ ও প্রতিরক্ষা প্রকল্পের কাজে ব্যয় ছিল ১ হাজার ২শ কোটি টাকা।

২০১৬ সালে সাতকানিয়া ও লোহাগাড়ার ডলু নদীর বিভিন্ন ভাঙন কবলিত জনপদ রক্ষায় ভাঙনরোধ ও প্রতিরক্ষামূলক কাজ নামের প্রকল্পের কাজে ব্যয় হয়েছে ৩ কোটি টাকা, সাতকানিয়ার সাঙ্গু নদীর বামতীরে চরতির উত্তর ব্রাহ্মণডাঙ্গা ও তুলাতুলি নামের স্থান রক্ষায় শুরু হওয়া প্রকল্পে ব্যয় ছিল ৪ কোটি টাকা। ২০১৫ সালের ডিসেম্বরে সাতকানিয়ার সাঙ্গু নদীর বামতীরে দক্ষিণ চরতি এবং উত্তর ব্রাহ্মণডাঙ্গায় ভাঙন কবলিত অংশে প্রতিরক্ষা কাজ নামে আরেকটি প্রকল্পে ব্যয় হয় ১ কোটি ৭৮ লাখ ৫২ হাজার টাকা এবং একই সময়ে মিরসরাইয়ের উপকূলবর্তী এলাকায় সেচ যোগাযোগ ব্যবস্থার উন্নয়ন এবং মুহুরী একরিটেড এলাকায় বেড়িবাঁধ উন্নতীকরণ নামে একটি প্রকল্পে ব্যয় করা হয় ১ হাজার ৭শ ৫৬ কোটি ৫২ লাখ টাকা। চট্টগ্রামের বিভিন্ন উপজেলায় কর্ণফুলী, হালদা, ইছামতি নদী ও শিলক খাল এবং ইহাদের শাখা নদীর বিভিন্ন ভাঙন কবলিত অংশে প্রতিরক্ষামূলক ও অবকাঠামো নির্মাণ কাজ নামে ১ হাজার ৯শ ৯৯ কোটি ৫০ লাখ টাকা ব্যয়ে আরেকটি প্রকল্পের কাজ শেষ হয় ২০১৪ সালের জুনে। এছাড়াও ২০১৩ সালে কর্ণফুলী নদীর বামতীরে সফরভাটা, ডানতীরে মরিয়ম নগর ও বেতাগী এবং ইছামতী নদীর বামতীরে পশ্চিম শান্তি নিকেতন ও ডানতীরে উল্টর পাড়, পূর্ব সাহাদ্বীননগর গোয়াজপাড়া ভাঙন কবলিত এলাকার প্রকল্পের ব্যয় ছিল ২১ কোটি টাকা। ২০১৩ সালে পটিয়া পৌরসভায় ড্রেজিং সিস্টেম উন্নতকরণের জন্য ২ কোটি ৮৭ লাখ ৫৬ হাজার টাকা ব্যয়ে বাস্তবায়ন করে আরও একটি প্রকল্প।

২০১৩ সাল থেকে সবশেষ ২০১৯ সাল পর্যন্ত চট্টগ্রামের বিভিন্ন উপজেলায় জলবায়ু পরিবর্তনরোধে বিভিন্ন প্রকল্পে সর্বমোট  প্রায় ৩৫৩ কোটি ৭৮ লাখ টাকা ব্যয় হয়েছে অথচ কোনো সুফল পাননি এলাকার ক্ষতিগ্রস্ত মানুষ। অভিযোগ রয়েছে, জলবায়ু পরিবর্তনের প্রভাব মোকাবিলার প্রকল্প বাস্তবায়নের চেয়ে দ্রুত বরাদ্দের টাকা পাওয়াই ছিল মূল উদ্দেশ্য। নামে প্রকল্প কাজও নামেই সেরে টাকা লোপাট হয়েছে অভিযোগ এলাকাবাসীর।

সন্দ্বীপের সারিকাইত ইউনিয়নের মোশারফ হোসেন সিভয়েসকে বলেন, ‘আমাদের সন্দ্বীপের উপকূল রক্ষায় বেড়িবাঁধটি টেকসইভাবে নির্মাণের দাবি অনেক বছরের। আমাদের কথা কেউ শুনতে পায় না। ভয়ের কথা হল, যে বেড়িবাঁধ আছে তা অনেক পুরনো। এর মধ্যে প্রায় ৩০ কিলোমিটার বেড়িবাঁধের অবস্থাও নড়বড়ে। দ্বীপের পশ্চিম অংশের বিভিন্ন ইউনিয়ন ছাড়াও পৌরসভার পশ্চিম অংশের বেড়িবাঁধও নাজুক অবস্থায়। যখন তখন ভেসে যেতে পারে। এখানে যে প্রকল্পটা বাস্তবায়ন হয়েছে তা পানি উন্নয়ন বোর্ড করেছে। নিম্নমানের ব্লক দিয়ে কাজের কারণে আমরা কোনো সুফল পাইনি।’

চট্টগ্রাম পানি উন্নয়ন বোর্ডের নির্বাহী প্রকৌশলী (পওর-২) ড. তানজির সাইফ আহমেদ সিভয়েসকে বলেন, ‘উপকূলবর্তী সন্দ্বীপে জলবায়ু ট্রাস্ট ফান্ডের অর্থায়নে এ যাবতকালে কোনো প্রকল্প হয়েছে কিনা বলতে পারব না, তবে এখন কোনো প্রকল্প চলমান নেই। এর আগেও উন্নয়ন বাজেটের একটা প্রকল্প ছিল। সম্প্রতি (গত ১০ নভেম্বর) এডিপি (সরকারি উন্নয়ন প্রকল্প) অর্থায়নে অন্য একটা প্রকল্পের উদ্বোধন করা হয়েছে। সামনে কাজ শুরু হবে। আর উড়ির চরের জন্য আমরা একটা ডিপিপি বানাচ্ছি। এটা সাবমিট করব।’   
এক প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, ‘আমরা যেটা মনে করি আবহাওয়া বিভাগ থেকে যে ফোরকাস্টটা দেয় একই বিষয় কিন্তু আমাদের সমীক্ষায় থাকে। সরাসরি হয়তো তাদের সঙ্গে আমাদের যোগাযোগ করা হয়নি। কিন্তু আমাদের সমীক্ষায় আবহাওয়ার বিষয়টা অনুর্ভূক্ত করে প্রকল্প নেওয়া হয়।’

বাঁশখালী উপকূলবর্তী এলাকা প্রসঙ্গে তিনি বলেন, ‘আগে হয়তো জলবায়ু ট্রাস্ট ফান্ডের অর্থায়নে ছোটখাটো কিছু কাজ হতে পারে। কিন্তু বর্তমানে কোনো প্রকল্প নেই। কিন্তু বাঁশখালী তো অনেক বড় জায়গা। সেখানেরও সমুদ্রতীরবর্তী কিছু কিছু জায়গা অন্তর্ভূক্ত করে পরিকল্পনা কমিশনে পাঠানো হয়েছে। নতুন সরকার গঠন হলে তখন হয়তো একনেকে অনুমোদন হওয়ার সম্ভাবনা আছে।’
হাসমত আলীর বাড়ি বাঁশখালীর কদমরসুল এলাকায়। একান্নব্বইয়ের ঘূর্ণিঝড়ের পরে নদী ভাঙ্গনে ভিটেমাটি হারিয়েছেন আরও পাঁচবার। ভাঙন ঠেকাতে ৭ বছর আগে উপকূলে বেড়িবাঁধ নির্মাণের কাজ শুরু করে পানি উন্নয়ন বোর্ড (পাউবো)। বেড়িবাঁধ নির্মাণের পর ভালোভাবে বেঁচে থাকার স্বপ্ন বুনেছিলেন ভিটামাটিহারা এ এলাকার মানুষেরা। কিন্তু বছর না ঘুরতেই আবারও সেই পুরনো আতংক। কেননা নির্মাণের ১৮ মাস ফুরানোর আগেই সাগরে বিলীন হতে বসেছে ৩০০ কোটি টাকা ব্যয়ের এই বেড়িবাঁধ। এরইমধ্যে বঙ্গোপসাগরে বিলীন হয়ে গেছে কদমরসুল এলাকার খানখানাবাদ ইউনিয়ন পরিষদ ভূমি অফিসের পশ্চিমের প্রায় এক কিলোমিটারজুড়ে থাকা ব্লক ও বাঁধ। জিওব্যাগ ফেলে ভাঙন ঠেকানোর চেষ্টা করছে পানি উন্নয়ন বোর্ড।

জলবায়ু তহবিল বিষয়ে বিশেষজ্ঞরা যা বললেন

জলবায়ু পরিবর্তন ট্রাস্ট ফান্ডের এমন কার্যক্রমকে ন্যায়বিচারের পরিপন্থী বলে মন্তব্য করে চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের বন ও পরিবেশ বিজ্ঞান ইনস্টিটিউটের অধ্যাপক ড. মোহাম্মদ আল আমিন বলেন, ‘এখন উন্নয়ন প্রকল্পকে জলবায়ু অভিযোজন নামে বাস্তবায়ন করা হচ্ছে। এটার মূল কারণ হল স্থানীয়ভাবে সুনির্দিষ্ট তথ্য বা গবেষণার অভাব। সুতরাং যে প্রকল্পগুলো যাচ্ছে সেগুলো আদৌ জলবায়ু অভিযোজনের প্রকল্প কিনা তারা জানেন না। প্রশ্নটা থেকেই যাচ্ছে যে ট্রাস্ট ফান্ডের টাকায় নেওয়া প্রকল্পগুলো ক্ষতিগ্রস্তদের জন্য কতটা নেওয়া হয়েছে বা আদৌ ক্ষতিগ্রস্তরা এর অংশীদার হচ্ছে কিনা।’

চট্টগ্রাম প্রকৌশল ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের (চুয়েট) সিভিল ইঞ্জিনিয়ারিং বিভাগের অধ্যাপক ও জলবায়ু বিশেষজ্ঞ ড. মো. রিয়াজ আক্তার মল্লিক সিভয়েসকে বলেন, ‘আমাদের ম্যানেজমেন্ট তো সব জায়গাতে দুর্বল।  এর উপর আমাদের সলিড ওয়েস্ট ম্যানেজমেন্টও দুর্বল। আগে যে ড্রেন দিয়ে ১০০ লিটার পানি যেতে পারত, এখন দেখা যাবে সেখানে ৫০ লিটারও ক্যাপাসিটি নেই। জলবায়ু পরিবর্তনে বৃষ্টি বেশি হচ্ছে তাই ড্রেনের ক্যাপাসিটি বাড়াতে হবে। দেখা গেল জলবায়ু তহবিল থেকে সেখানে প্রকল্প পেয়েও গেল। আদৌ সেখানে কতটুকু বৃষ্টি হচ্ছে, আদৌ ওই ড্রেনের ক্যাপাসিটি বাড়াতে হবে কিনা সেটার কোনো এনালাইসিস নেই। মূলকথা ম্যানমেইড সমস্যাকে কখনো জলবায়ু পরিবর্তন বলা উচিত না।’

এ বিশেষজ্ঞ আরও বলেন, ‘চাইলে জলবায়ু পরিবর্তনের সঙ্গে পরোক্ষভাবে সবকিছুকে মিলিয়ে দেখানো সম্ভব। এখানে গবেষণা প্রয়োজন কোথায় তহবিলটা বেশি জরুরি। কিন্তু সরকার কিংবা কোনো মন্ত্রণালয়ই গবেষণাতে আগ্রহ দেখান না। এ কারণে শেষ পর্যন্ত প্রকল্পগুলোর নয়ছয় হয় নতুবা মুখ থুবড়ে পড়ে। কাজের কাজ কিছু হয় না উল্টো এ তহবিলের টাকাটা জলে যায়।’ 

তিনি আরও বলেন, ‘যারা জলবায়ু পরিবর্তন নিয়ে আসলেই কাজ করছে তাদেরকে কিন্তু এই ধরনের কাজের সঙ্গে যুক্ত করা হয় না। অথবা তাদের পরামর্শও নেওয়া হয় না। যে গত কয়েক দশকে এই অঞ্চলের আবহাওয়া এতখানি পরিবর্তন হয়েছে, আমাদের আরও ২০-৩০ বছরের জন্য একটা মেগা প্রকল্প নিতে হবে যেটা আসলেই উপকূলের মানুষের জন্য ভূমিকা রাখবে।’

জলবায়ু অর্থায়ন বিশেষজ্ঞ ও ট্রান্সপারেন্সি ইন্টারন্যাশনাল বাংলাদেশের (টিআইবি) জলবায়ুর অর্থায়নে সুশাসন সেলের সাবেক সিনিয়র প্রোগ্রাম ম্যানেজার জাকির হোসেন খান বলেন, ‘বাংলাদেশে জলবায়ু তহবিল ব্যবস্থাপনার সবচেয় বড় চ্যালেঞ্জ হলো আমাদের কোনো জাতীয় জলবায়ু তহবিল কৌশলপত্র নেই। এমনকি জলবায়ু পরিবর্তন নীতিমালাও নেই। যার কারণে জলবায়ু ট্রাস্ট ফান্ড অথবা সরকারের উন্নয়ন তহবিল থেকে জলবায়ু পরিবর্তন সংক্রান্ত বরাদ্দ হচ্ছে সেটা কিসের ভিত্তিতে হচ্ছে কাকে দেওয়া হচ্ছে বা কোথায় অগ্রাধিকার থাকবে এ ব্যাপারে কোনো ধরনের সুনির্দিষ্ট গাইডলাইন নেই। এ কারণে ডিও লেটার বা রাজনৈতিক প্রভাব যাই বলি না কেন, যে যেভাবে পারবে, প্রভাব খাটিয়ে বরাদ্দ নেওয়ার চেষ্টা করবে।’

তিনি আরও বলেন, ‘এজন্য প্রয়োজন স্থানীয়ভাবে প্রত্যেকটা এলাকার জলবায়ু পরিবর্তনের ঝুঁকি ম্যাপিং তৈরি করা। কোন এলাকা সবচেয়ে বেশি ঝুঁকিতে, কোন কারণে ঝুঁকি, সেখানে কী সম্পদ আছে, কারণ এখন বলা হচ্ছে নেচার বেজড সলিউশন। প্যারিস চুক্তির ৭ দশমিক ৫ অনুচ্ছেদে বলা আছে অভিযোজন কীভাবে করতে হবে, স্থানীয় অভিজ্ঞতার জ্ঞানকে কাজে লাগাতে হবে। এগুলো যতক্ষণ পর্যন্ত সিস্টেমের ভেতর আসবে না এবং সেটার জবাবদিহিতা না থাকবে তখন এই ধরনের ঘটনা একটার পর একটা ঘটবে। আমরা বারবার অর্থ পাব না। আমাদের সীমিত অর্থ। এটাকে যদি সঠিকভাবে ব্যবহার না করি আর ম্যাল অ্যাডাপটেশনের ঝুঁকি বাড়িয়ে দিই, তাহলে মানুষ আরও বেশি ঝুঁকিতে পড়বে।’

তিনি আরও বলেন, ‘উন্নয়ন তহবিল আর জলবায়ু তহবিলের মধ্যে পার্থক্য হলো উন্নয়ন তহবিলের মাধ্যমে যে রাস্তাঘাট করা হয় তার ঝুঁকিটা কাটিয়ে উঠার সুযোগ আছে কিন্তু জলবায়ু তহবিলের প্রকল্পে যদি দুর্নীতি হয় তাহলে মানুষের জীবনকে সরাসরি হুমকির মুখে ফেলবে।’

দায়িত্বশীলরা কী বলেন

বিভিন্ন গবেষণাতেও বারংবার চট্টগ্রামকে জলবায়ু পরিবর্তনের কারণে ‘বড় বিপদে’ থাকার তালিকায় রাখা হয়েছে। কিন্তু প্রকল্প নেওয়ার আগে গুরুত্ব দেওয়া হয় না আবহাওয়ার তথ্য উপাত্তকে। যদিও বিষয়টি মানতে নারাজ স্থানীয় সরকার প্রকৌশল অধিদপ্তর। 

আবহাওয়া অফিসের আবহাওয়া পূর্বাভাস কর্মকর্তা বিশ্বজিৎ চৌধুরী বলেন, ‘দুঃখের বিষয় হচ্ছে আমাদেরকে ইনভল্ভ করা হয় না। জলবায়ু পরিবর্তনজনিত প্রভাব মোকাবেলায় যেসব প্রকল্প নেওয়া হয় সেক্ষেত্রে যদি ওই অঞ্চলের আবহাওয়া কেমন পরিবর্তন হয়েছে তার একটা সঠিক চিত্র তুলে ধরে একজন আবহাওয়া বিশেষজ্ঞকে যুক্ত করা হয় তাহলে তারা এই প্রজেক্টে তাদের গুরুত্বপূর্ণ মতামত কিংবা পরামর্শ দিবেন তবেই মানুষ এই সকল প্রকল্পের সুফল পাবে। কিন্তু বাস্তবে তা হয়না। এ কারণে তাদের তৈরি করা ডাটাগুলো কতটুকু অথেনটিক বা কতটা ওই রিজিয়নের জন্য প্রযোজ্য তা জানা যায় না।’ 

৩০ বছরের মোট বৃষ্টিপাতের চিত্র

স্থানীয় সরকার প্রকৌশল অধিদপ্তরের সহকারী প্রকৌশলী তরিকুল ইসলাম বলেন, ‘উপকূলবর্তী কোনো উপজেলায় আমাদের কোনো প্রকল্প নেই। সর্বশেষ মিরসরাইয়ের একটা প্রকল্পের ডিপিপি পাঠানো হয়েছিল। জানামতে তা অনুমোদন পায়নি। ট্রাস্ট ফান্ডের অর্থায়নে নেওয়া প্রকল্পগুলোর ক্ষেত্রে দেখা যায় আমরা ডিপিপি পাঠালে উনারা কিছু সংযোজন বিয়োজন করে এরপর প্রয়োজন হলে দেন নতুবা দেন না। আমার মতে, আমাদের যে প্যার্টানের কাজ তার সঙ্গে আবহাওয়া বিভাগের তথ্য বা তাদের পরামর্শের প্রয়োজন হয় না।’ 

সরাসরি ক্ষতিগ্রস্তদের জন্য প্রকল্প না নিয়ে কম ঝুঁকিতে থাকা উপজেলায় প্রকল্প নেওয়া প্রসঙ্গে এ কর্মকর্তা বলেন, ‘চট্টগ্রাম শহরের নদীগুলো স্রোতের গতি পাল্টে নদী কানেক্টেড উপজেলাগুলোর রাস্তাঘাটের ভীষণ ক্ষতি হয়েছে। বিশেষ করে হালদা নদীর আশপাশ হাটহাজারী, রাউজান, রাঙ্গুনিয়ায়। এই জন্যই হয়তো জলবায়ু ট্রাস্ট ফান্ডের অর্থায়নে প্রকল্পগুলো এই অঞ্চলের জন্য নেওয়া হয়েছে।’ 

বাংলাদেশ জলবায়ু ট্রাস্ট ফান্ডের ব্যবস্থাপনা পরিচালক মো. জয়নাল আবেদীনের সঙ্গে যোগাযোগ করে তাকে না পেয়ে কথা হয় সহকারী পরিচালক (প্রটোকল ও পাবলিক রিলেশন) জানে আলমের সঙ্গে। তিনি সিভয়েসকে বলেন, ‘সংশ্লিষ্ট এলাকার যে এমপি আছেন তাদের ডিও লেটারের (আধা সরকারি পত্র) প্রেক্ষিতে এসব প্রকল্প নেওয়া হয়। আমরা প্রত্যেক মন্ত্রণালয়ে চিঠি দিয়ে থাকি, তখন তারা যে ধরনের প্রকল্প প্রস্তাবনা দেন তারমধ্যে ট্রাস্টি বোর্ডের মাধ্যমে সেগুলো যাচাইবাছাই শেষে অনুমোদন পায়।’

গবেষণাকে কম গুরুত্ব দেওয়া প্রসঙ্গে তিনি বলেন, ‘আমরা তো সরকারের নিদির্ষ্ট একটা আইনে চলি। আবহাওয়া অধিদপ্তর আলাদা একটি প্রতিষ্ঠান, আমরা আলাদা প্রতিষ্ঠান। এখন আমরা যেগুলো বাস্তবায়ন করি সেগুলো অন্যান্য মিনিস্ট্রি হয়ে আমাদের কাছে আসে। আমরা সরাসরি কোনো প্রকল্পই নিই না। আর চাইলেই আমরা যে কাউকেই প্রকল্প দিয়ে ফেলতে পারি না।’

সরাসরি ক্ষতিগ্রস্ত এলাকার চেয়ে কম ঝুঁকির এলাকায় প্রকল্প নেওয়া প্রসঙ্গে তিনি বলেন, ‘এটার উত্তর আমাদের ট্রাস্টি বোর্ডের চেয়ারম্যান দিতে পারবেন। তবে সংশ্লিষ্ট যারা আছেন তারা যদি আমাদেরকে না জানান কিংবা প্রকল্প না দেন তাহলে আমরা তো আর খুঁজে খুঁজে গিয়ে আনব না।’

একই বিষয়ে কথা বলতে পরিবেশ, বন ও জলবায়ু পরিবর্তনবিষয়ক মন্ত্রী মো. শাহাব উদ্দিনকে ফোন করা হলেও তিনি সাড়া দেননি।

সর্বশেষ

পাঠকপ্রিয়