সিভয়েস অনুসন্ধান/
মোহরায় বিদ্যুৎ কেন্দ্র নির্মাণ করতে পিডিবির পুকুর চুরি
শারমিন রিমা

পাশে দুই একরের বেশি খালি জায়গা। আছে সরকারি খাস জমিও। তবুও বিদ্যুৎ উপকেন্দ্র (সাবস্টেশন) হচ্ছে একটি পুকুরের ওপর। চট্টগ্রাম নগরের মোহরার ওয়াসা বালুরটাল এলাকার শতবর্ষী এই পুকুরটি শতাধিক মানুষের ব্যবহারযোগ্য পানির উন্মুক্ত উৎস। অথচ পুকুরটিকে ‘পরিত্যক্ত’ দেখিয়ে সরকারের পাঁচটি দফতরের চোখ ফাঁকি দিয়ে জমি অধিগ্রহণের কাজও শেষ করে ফেলেছে চট্টগ্রাম বিদ্যুৎ উন্নয়ন বোর্ড (পিডিবি)। এতে পুকুর ভরাট, সয়েল টেস্ট, পাইলিংসহ এই বিদ্যুৎ উপকেন্দ্রের খরচ বেড়ে দাঁড়াবে দ্বিগুণ।
অনুসন্ধানে বেরিয়ে এসেছে, চট্টগ্রাম বিদ্যুৎ উন্নয়ন বোর্ডের সাবেক প্রধান প্রকৌশলীর এক আত্মীয়কে সুবিধা পাইয়ে দিতেই এত আয়োজন। একইসঙ্গে কেবল অধিগ্রহণের নামে ক্ষতিপূরণেই সাড়ে ১০ কোটি টাকার হরিলুট হতে যাচ্ছে। এ যেন পুকুর নিয়েই পুকুর চুরি।
মন্ত্রণালয়ের প্রভাব খাটিয়ে আঞ্চলিক কার্যালয়কে পাশ কাটিয়ে পরিবেশের ছাড়পত্র নেয়া হয় পরিবেশ অধিদপ্তরের প্রধান কার্যালয় থেকে। একইভাবে ছাড়পত্র নেয়া হয়, চট্টগ্রাম উন্নয়ন কর্তৃপক্ষ ও নগর উন্নয়ন অধিদপ্তর থেকেও। প্রতিটি চিঠিতে শতবর্ষী পুকুরের তথ্য গোপন রাখার পাশাপাশি দোহাই দেয়া হয়েছে জনস্বার্থের। অথচ, চট্টগ্রাম শহরের মোহরার ওয়াসার বালুর টাল এলাকায় এই বিদ্যুৎ উপ-কেন্দ্রটি নির্মিত হলে জলাবদ্ধতা সৃষ্টি, মিঠা পানির স্বল্পতা ও পরিবেশ বিপর্যয়সহ নানান ধরণের ক্ষতিরমুখে পড়বে এলাকাবাসী। তাতে ‘জনস্বার্থ’ নয় বরং ‘জনদুর্ভোগ’ বাড়বে বলে আশঙ্কা প্রকাশ করছেন বিশেষজ্ঞরা।
চট্টগ্রামের বিদ্যুৎ বিতরণ ব্যবস্থার উন্নয়নে ২০১৮ সালে বিদ্যুৎ ‘বিতরণ ব্যবস্থা উন্নয়ন চট্টগ্রাম জোন (২য় পর্যায়)’ নামে একটি প্রকল্প একেনেকে অনুমোদন পায়। এটি বাস্তবায়নে ব্যয় ধরা হয় ২ হাজার ৫৫১ কোটি ৯০ লাখ ৫৫ হাজার টাকা। প্রকল্পের মেয়াদ ২০২২ সালের জুন পর্যন্ত থাকলেও, কোভিডের কারণে সেটি বাড়িয়ে ২০২৫ সালের জুন পর্যন্ত করা হয়। ৩৩/১১ কেভি সক্ষমতার ২৫টি নতুন সাবস্টেশন, ৯টি পুরনো সাবস্টেশনের সক্ষমতা বৃদ্ধিসহ বেশ কিছু কাজ হচ্ছে এই প্রকল্পের অধীনে। এরমধ্যে একটি সাবস্টেশন হচ্ছে চট্টগ্রামের মোহরার বামেশ্বর মহাজনের বাড়ির সেই শতবর্ষী পুকুরটিতে।
পুকুর নির্বাচনে পিডিবির সাবেক প্রধান প্রকৌশলীর ‘আত্মীয়করণ’
সরেজমিনে দেখা গেছে, পুকুরটির আয়তন ৪৯ শতাংশ। অধিগ্রহণ করা হয়েছে ২৩ শতাংশ। যেটি পুরোপুরি পুকুরের ওপর। পুকুরের ২৩ শতাংশ বালু দিয়ে ভরাট করা হলেই বাকি অংশ পরিত্যক্ত হয়ে যাবে। কাটা যাবে পুকুর পাড়ের বেশ কয়েকটি বড় বড় পুরনো গাছ। অথচ, এই পুকুর থেকে মাত্র ৫০ গজ দূরত্বে আছে দুই একরের মতো খালি জায়গা। সেটা বাদ দিয়ে কেন পুকুর নির্বাচন করা হলো? এর কারণ জানতে গিয়ে বেরিয়ে এসেছে চাঞ্চল্যকর সব তথ্য।
পুকুরের মালিকানায় আছেন ১৯ জন। মালিকানা নিয়ে ১৪ বছর ধরে আদালতে মামলাও চলছে একাধিক। বেশির ভাগ মামলা এখনো আদালতে বিচারাধীন। সেই ১৯ জনের একজন সঞ্জয় চৌধুরী, যিনি বিদ্যুৎ উন্নয়ন বোর্ডের সাবেক প্রধান প্রকৌশলী প্রবীর কুমার সেনের দূরসম্পর্কের আত্মীয় তাদের দুজনের মধ্যে মধ্যস্থতাকারী হিসেবে কাজ করেছেন তাদের আরেক ঘনিষ্ঠ আত্মীয় মিশু। যিনি ছিলেন মূল ভূমিকায়।
পুকুরের মালিকানা দাবিদার ১৯ জনের একজন পুলক। তিনি বলেন, ‘আমাদের খতিয়ানে ৭টি মামলা আদালতে এখনো চলমান। ২ ধারার নোটিশ যখন আসে, তখন আমরা পিডিবিতে মামলার নথি জমা দেই। তাৎক্ষণিক তারা আমাদের পুকুরের অংশটি বাদ দিয়ে দেবে বলে জানায়। আশ্চর্যজনকভাবে ৮ ধারার নোটিশে দেখি, সেটি বাদ দেয়া হয়নি। গোপনে কাজটি শেষ করতে চেয়েছিল। এরপর বিষয়টি জেলা প্রশাসক কার্যালয়ের এলএ শাখাকে জানালেও কোন কাজ হয়নি।’
জানা যায়, ২০১৮ সালে যখন প্রকল্পটি হাতে নেয়া হয়, তখন প্রবীর কুমার সেন নিজে সরজেমিনে এসে পুকুরটি নির্বাচন করেন। পরে জমি অধিগ্রহণের জন্য জেলা প্রশাসকের কাছে প্রস্তাব পাঠান। প্রস্তাবনায় পুকুরটিকে ‘পরিত্যক্ত’ হিসেবে উল্লেখ করা হয়। আর এ সবকিছুর পেছনে ঢাল হয়ে দাঁড়ায় জেলা প্রশাসনের এল এ শাখা। এতে পুকুরের অংশীদার সঞ্জয় বাকি অংশীদারদের না জানিয়ে গোপনে ভূমি অধিগ্রহণের সমস্ত প্রক্রিয়া শেষ করে নেয়। পরবর্তীতে ঘটনা জানাজানি হলে নয়ছয় বুঝিয়ে নামমাত্র টাকায় পুকুরের বায়না করে নেন, যাতে ক্ষতিপূরণের পুরো অংশটাই নিজেদের পকেটে যায়। যে কারণে নিয়মানুযায়ী জেলা প্রশাসন থেকে দেওয়া ‘আপত্তি জানানোর নোটিশ’ও গায়েব করে দেওয়া হয় সুকৌশলে।
নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক পিডিবির এক কর্মকর্তা বিষয়টি স্বীকার করে বলেন, ‘মিশুর পরামর্শেই পুকুরের জায়গাটিকে বিদ্যুৎকেন্দ্রের জন্য বেছে নিতে ভূমিকা রাখেন প্রধান প্রকৌশলী নিজেই। এমনকি প্রথমবার পুকুরের অংশ বাদ দেওয়া হলেও পরবর্তীতে গোপনে সেটি প্রকল্পে যুক্ত করে দেওয়ার ব্যাপারে ভূমিকা রাখেন তিনি।’
অভিযোগ প্রসঙ্গে সাবেক প্রধান প্রকৌশলী প্রবীর কুমার সেনের আত্মীয় ও জায়গার মধ্যস্থতাকারীর বিষয়টি স্বীকার করে পুকুরের অংশীদার সঞ্জয় চৌধুরী বলেন, ‘আমরা চেয়েছিলাম সবাই দৌঁড়াদৌঁড়ি না করে দুইজন টাকাটা পাবে। পরে যার যতটুকু সবাইকে তা দিয়ে দিবে এমন কথা ছিল। রেকর্ড আছে আমার দাদাদের নামে। কিন্তু এখন যদি বলি আমরা পাবো তাহলে আমাদের নামে বিএস করতে হবে। এখন যদি নিজের নামে নেওয়ার জন্য আরগুমেন্ট করি তাহলে টাকাটা তো পরে আসবে।’
এক প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, ‘যেসমস্ত মানুষ আপনাকে অভিযোগ করছে বা আপনি পাইছেন তাদের কারোই কোনো স্ট্যাটাস নেই। তাদের কথার কোনো গ্রাউন্ডই নাই। আজকে আমি তিনঘণ্টা বকাবকি করেছি তাদেরকে। তার কারণ হলো টাকাগুলো সরকারের কাছ থেকে আসছে।এখন এক গ্রুপ বলছে আরেক গ্রুপ জায়গা বেশি নিয়ে নিচ্ছে। ধরেন, এখানে ৪২ শতক জায়গা নিচ্ছে সেখানে আমি পাবো এক বা দুই কড়া। সবাই চাচ্ছে ভরাট করে বিক্রি করার জন্য। পরে সরকার এসে জায়গাটা পছন্দ করে অধিগ্রহণ করছে।’
তবে পুকুরের মালিক সঞ্জয় চৌধুরীর সঙ্গে আত্মীয়তার সম্পর্কটি অস্বীকার করেছেন সাবেক প্রধান প্রকৌশলী প্রবীর কুমার সেন। তিনি বলেন, ‘এ ব্যাপারে আমি কিছুই জানি না। সে আমার আত্মীয় (সঞ্জয়) না। এ নামে কাউকে আমি চিনি না। মোহরাতে আমার কোনো আত্মীয় নেই। তবে আমার কাছে সেসময় কয়েকজন আসছিল প্রজেক্টের ব্যাপারে। বললো তাদের কাছে জায়গা আছে। এরপর আমি প্রকল্প পরিচালককে বলে দেই। ওই জায়গায় আমি কখনো যাইনি। আমি চিনিও না।’
অতিরিক্ত দাম দেখিয়ে জমি অধিগ্রহণ
জেলা প্রশাসক কার্যালয়ের সূত্র জানায়, পুরো সাবস্টেশন নির্মাণের জন্য পিডিবি জমি অধিগ্রহণের জন্য ৫০ শতাংশ জমি নির্বাচন করে প্রস্তাব পাঠায়। এরমধ্যে পুকুর ২৩ শতাংশ, পুকুর পাড় ১৮ শতাংশ এবং নাল শ্রেণির জমি ৯ শতাংশ। এ বিদ্যুৎকেন্দ্র নির্মাণের জন্য পুকুরভরাটসহ মোট ৫০ শতাংশ জায়গা অধিগ্রহণেই সরকারের গচ্চা যাচ্ছে ১০ কোটি ৪৬ লাখ ৮৩ হাজার ৩০৯ টাকা।
জেলা প্রশাসনের এলএ শাখা ‘পুকুর’ শ্রেণির জমির মূল্য দেখিয়েছে প্রতি একর ৬ কোটি ২০ লাখ ৩৯ হাজার ৫৫ টাকা। অর্থাৎ, তিনগুণ ক্ষতিপূরণে ওই ২৩ শতাংশ পুকুরের মূল্য ৪ কোটি ২৮ লাখ ৬ হাজার ৯৪৭ টাকা। আর প্রতি একর পুকুরপাড় শ্রেণির জমির মূল্য দেখিয়েছে ৭ কোটি ৭৫ লাখ ৪৮ হাজার ৮২০ টাকা। তিনগুণ ক্ষতিপূরণে যা দাঁড়াবে ৪ কোটি ১৮ লাখ ৭৬ হাজার ৩৬২ টাকা। একইভাবে ৯ শতাংশ নাল জায়গার জন্য সরকারের গুণতে হবে প্রায় ২ কোটি টাকা।
সাব-রেজিস্ট্রার কার্যালয়ের তথ্যমতে, ওই মৌজার পুকুর শ্রেণির প্রতি শতাংশের মূল্য ৪ লাখ ৭৫ হাজার ১০০ টাকা। সে হিসেবে ২৩ শতাংশের দাম পড়বে ১ কোটি ৯ লাখ ২৭ হাজার ৩০০ টাকা। অথচ, জেলা প্রশাসকের এলএ শাখা দেখিয়েছে ১ কোটি ৪২ লাখ ৬৮ হাজার ৯৮২ টাকা। জমির প্রকৃত দাম থেকে যা ৩৩ লাখ ৪১ হাজার ৬৮২ টাকা বেশি। কেবল পুকুরের অংশ থেকে ১ কোটি ২৫ হাজার ৪৬ টাকা বেশি দেখিয়ে সরকারের টাকা আত্মসাত করার পরিকল্পনা করা হয়। একইভাবে আবার পুকুরপাড় শ্রেণির জমির প্রকৃত মূল্য আর নাল শ্রেণির প্রকৃত দামে বিস্তর ফারাক পাওয়া গেছে। আর এ টাকার পুরোটাই যাচ্ছে পিডিবির সাবেক প্রধান প্রকৌশলীর আত্মীয় সঞ্জয় চৌধুরীর পকেটে। সঙ্গে আছে জেলা প্রশাসনের এলএ শাখা। কেবলমাত্র একটি সাবস্টেশনের জায়গায় এ পরিমাণ হরিলুট হলে, সেখানে আরও ২৪টি সাবস্টেশনের ভূমি অধিগ্রহণের পিছনে কী পরিমাণ হরিলুট হতে পারে— তা সহজেই অনুমেয়।
বিকল্প অনেক, তবু দ্বিগুণ খরচে পুকুর ভরাটে মরিয়া
সরেজমিন অনুসন্ধানে দেখা গেছে, প্রকল্প উপযুক্ত জায়গা ছাড়াও প্রস্তাবিত এ সাবস্টেশনের জায়গা থেকে প্রায় এক কিলোমিটার দূরে ৩৩/১১ কেভি সক্ষমতার একটি সাবস্টেশন রয়েছে। সেই সাবস্টেশনের পাশে পর্যাপ্ত খালি জায়গাও রয়েছে। চাইলে সহজে বর্তমান সাবস্টেশনের সক্ষমতা বৃদ্ধি করা সম্ভব ছিল। প্রায় হাজার হাজার কোটি টাকার এই প্রকল্পে ৯টি পুরনো সাবস্টেশনের সক্ষমতা বৃদ্ধির কাজ করার প্রস্তাব রয়েছে। স্থানীয় জনপ্রতিনিধিদের দেওয়া তথ্যমতে, ওই এলাকাতে সরকারি খাস জমি রয়েছে প্রায় ১০০ গণ্ডা। এর মধ্যে প্রকল্প উপযুক্ত কম মূল্যের জায়গাও রয়েছে অনেক।
পুকুরের জায়গা ছাড়াও বিকল্প জায়গা থাকার উল্লেখ করে চট্টগ্রাম সিটি করপোরেশনের ৫ নম্বর ওয়ার্ড কাউন্সিলর কাজী নুরুল আমিন মামুন বলেন, ‘এই মৌজায় অনেক খাস জমি ছিল। সেখান থেকে ৫০ শতাংশ জমি নিলে সরকারের এক টাকাও খরচ হত না।’
স্থানীয় এ জনপ্রতিনিধির মতো জমি অধিগ্রহণে ‘গিভ এন্ড টেকের’ ব্যাপার থাকতে পারে— এমন আশঙ্কার কথা জানিয়েছেন মোহরা ওয়ার্ডের বাসিন্দা শিল্পপতি সুকুমার চৌধুরীও।
পুকুর ভরাটে খরচ কেমন হবে সে প্রসঙ্গে সরকারি প্রকল্পে কাজ করার অভিজ্ঞতাসম্পন্ন ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান মেসার্স সৈকত এন্টারপ্রাইজের স্বত্ত্বাধিকারী শাহ আলম বলেন, ‘সাধারণ জায়গা থেকে পুকুর ভরাটের ক্ষেত্রে খরচ বেশি হবে। এখানে প্লেইন ল্যান্ডের উপর স্থাপনা করলে সেটার খরচ প্রায় সব জায়গায় সমান। কিন্তু পুকুরের জায়গার ক্ষেত্রে পাইলিংটাই মূলত মেইন। স্থাপনার ভিত্তি মুজবুত না হলে আবার সেটা ঝুঁকিপূর্ণ হবে। কিন্তু প্রপার ট্রিটমেন্ট না করে যদি স্থাপনা করা হয়, তাহলে দেখা যাবে ৫-১০ বছর পর সেটা হেলে বা দেবে যাবে। তখন ইতিহাস ঘাঁটলে দেখা যাবে সেই জায়গায় ডোবা বা পুকুর ছিল।’
সাবস্টেশন নির্মাণে খরচের বিষয়ে জানতে চাওয়া হয় চট্টগ্রাম প্রকৌশল ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের (চুয়েট) ইলেকট্রিক্যাল এন্ড ইলেকট্রনিক ইঞ্জিনিয়ারিং (ইইই) বিভাগের অধ্যাপক ড. কাজী দেলোয়ার হোসেনের কাছে। তিনি বলেন, ‘পুকুরের জায়গায় স্থাপনা হলে অবশ্যই বেশি খরচ হবে। এখানে মাটি ভরাট করতে হবে। যদি কোনো ভবনের স্ট্রাকচার করতে চায় তবে অবশ্যই পাইল করতে হবে। অথবা অন্য কোনো ওয়েতে যেতে হবে। এসবের জন্য খরচ বাড়বে— সেটা স্বাভাবিক।’
এদিকে, এ প্রকল্পে একটি সাব-স্টেশন নির্মাণে ভূমি অধিগ্রহণ, ভবন নির্মাণ, পরামর্শক সম্মানিসহ কোন খাতে কত টাকা ব্যয় নির্ধারণ করা আছে, সেটি জানতে সরাসরি যোগাযোগ করা হলেও প্রতিবেদক ব্যর্থ হন। এরপর গত ১৮ জুলাই তথ্য অধিকার আইনে চট্টগ্রাম বিদ্যুৎ উন্নয়ন বোর্ডে আবেদন করা হয়। ২০ কার্যদিবসের সময় শেষ করে গত ১০ আগস্টে কুরিয়ারের মাধ্যমে সংস্থাটির সহকারী প্রধান প্রকৌশলী সম্পা নন্দী স্বাক্ষরিত ফিরতি এক চিঠিতে জানানো হয়— ‘আপনার আবেদনের চাহিত তথ্যসমূহ প্রকৌশলীর দপ্তর বিতরণ দক্ষিণাঞ্চল বিউবো চট্টগ্রাম এর কার্যবিবরণীর আওতাভুক্ত নয় বিধায় উক্ত তথ্য প্রদান সম্ভব নয়।’
পুকুর ভরাট করে নেওয়া প্রকল্পের ভূমি অধিগ্রহণ ও প্রস্তাবিত জায়গা পরিদর্শনের তথ্য জানতে তথ্য অধিকার আইনে চট্টগ্রাম জেলা প্রশাসনে আবেদন করা হলে কর্তৃপক্ষ তথ্য সরবরাহে অপরাগতা জানিয়ে ৩১ জুলাই একটি ই-মেইল পাঠিয়ে সেখানে ‘ভূমি অধিগ্রহণের মামলা নম্বর ও তারিখ এবং এলাকার ঠিকানা সুনির্দিষ্টভাবে উল্লেখ না থাকা’র অজুহাত দেখায়। অথচ আবেদনে পুরো প্রকল্পের ভূমি অধিগ্রহণ ও পরিদর্শনের বিষয় সুস্পষ্টভাবে উল্লেখ করা ছিল। একইভাবে বিদ্যুৎ উন্নয়ন বোর্ডের প্রধান অফিসে তথ্য অধিকার আইনে আবেদনের দুই মাস পর গত ২২ সেপ্টেম্বর বাংলাদেশ বিদ্যুৎ উন্নয়ন বোর্ড 'প্রকল্পের ভূমি অধিগ্রহণ ও পরিদর্শনসংক্রান্ত যাবতীয় তথ্যসমূহ' তথ্য অধিকার আইনের ৭ ধারার (ত) অনুযায়ী প্রদান করা সম্ভব নয় বলে ইমেইল করে জানায়।
তথ্য গোপন ও আইনভঙ্গ
নথিপত্র ঘেঁটে দেখা গেছে, পুকুরটিকে ‘পরিত্যক্ত’ দেখিয়ে ছাড়পত্রের জন্য সরকারের সংশ্লিষ্ট দপ্তরগুলোতে চিঠি পাঠায় বিদ্যুৎ উন্নয়ন বোর্ড। তার প্রমাণ মেলে ২০১৯ সালের ২৪ নভেম্বর, ২০২০ সালের ২৯ এপ্রিল এবং চলতি বছরের ১ ফেব্রুয়ারিতে গৃহায়ণ ও গণপূর্ত মন্ত্রণালয়ের নগর উন্নয়ন অধিদপ্তরকে পাঠানো চিঠিতে। অথচ, সরেজমিনে গিয়ে দেখতে পাওয়া গেছে, মাছ চাষের পাশাপাশি এলাকাবাসী পুকুরটি ব্যবহার করছে পানির উন্মুক্ত উৎস হিসেবে। কেউ গোসল করছে, কেউবা গৃহস্থালির কাজ করছে।
গোসল করতে আসা দেবব্রত বলেন, ‘এই পুকুরের ওপর ২০টি পরিবার নির্ভরশীল। সবাই এখানে স্নান (গোসল) করে। এখানে মাছ চাষও হয়। পুকুর ভরাট হলে আমরা কোথায় যাবো?’
অনুসন্ধানে দেখা গেছে, পরিবেশের ক্ষতি করে নেওয়া এই প্রকল্পে অন্তত পাঁচটি সেবাসংস্থার সরাসরি গাফিলতি ও দায়িত্বহীনতা রয়েছে। এর মধ্যে মূল কলকাঠি নেড়েছে বিদ্যুৎ উন্নয়ন বোর্ড। সংস্থাটিকে বেপরোয়াভাবে সহায়তা করেছে জেলা প্রশাসন, পরিবেশ অধিদপ্তর, চট্টগ্রাম উন্নয়ন কর্তৃপক্ষ ও গৃহায়ণ ও গণপূর্ত মন্ত্রণালয়ের নগর উন্নয়ন অধিদপ্তর। শুধুমাত্র সরকারি প্রকল্প বলেই জনস্বার্থের দোহাই দিয়ে যাচাই-বাছাই ছাড়াই রীতিমতো চোখ বন্ধ করে প্রয়োজনীয় সব অনুমোদন দিয়েছেন সংশ্লিষ্ট এসব দপ্তরের কর্মকর্তারা।
যেখানে প্রাকৃতিক জলাধার সংরক্ষণ আইন-২০০০ অনুযায়ী— কোনো পুকুর, জলাশয়, নদী, খাল ইত্যাদি ভরাট করা বেআইনি। আইনের ৫ ধারা অনুযায়ী, প্রাকৃতিক জলাধার হিসেবে চিহ্নিত জায়গার শ্রেণি পরিবর্তন বা অন্য কোনোভাবে ব্যবহার, ভাড়া, ইজারা বা হস্তান্তর বেআইনি। কোনো ব্যক্তি এ বিধান লঙ্ঘন করলে আইনের ৮ ও ১২ ধারা অনুযায়ী পাঁচ বছরের কারাদণ্ড বা অনধিক ৫০ হাজার টাকা অর্থদণ্ড অথবা উভয় দণ্ডে দণ্ডিত হবেন। একই সঙ্গে পরিবেশ সংরক্ষণ আইন (২০১০ সালে সংশোধিত) অনুযায়ী, যেকোনো ধরনের জলাশয় ভরাট করা নিষিদ্ধ। অথচ, সরেজমিনে না গিয়েই বিদ্যুৎ বিভাগকে ছাড়পত্র দিয়ে দেয় পরিবেশ অধিদপ্তর।
কীভাবে দেয়া হলো ছাড়পত্র? এটা জানতে গিয়ে বেরিয়ে এলো আরও অবাক করা তথ্য। এলাকাবাসীর অভিযোগ পেয়ে ঘটনাস্থল পরিদর্শনে যায় পরিবেশ অধিদপ্তরের চট্টগ্রাম মহানগর কার্যালয়ের একটি দল। সরেজমিনে গিয়ে হতভম্ব হয়ে পড়ে পুরো দল। পুকুরের ওপর বিদ্যুৎ বিভাগ ছাড়পত্র পেল কীভাবে— প্রশ্ন তুলে তারাও। পরে তদন্ত করে দলটি দেখতে পায়, এই ছাড়পত্র নেয়া হয়েছে পরিবেশ অধিদপ্তরের প্রধান অফিস থেকে। আর এটি দিয়েছেন, পরিবেশ অধিদপ্তরের পরিদর্শক আবুল মনসুর মোল্লা। তিনি বদলি হয়ে এখন হবিগঞ্জের সহকারি পরিচালক।
মুঠোফোনে আবুল মনসুর মোল্লার সঙ্গে যোগাযোগ করা হলে তিনি বলেন, ‘বিষয়টি পুরোটা মনে পড়ছে না। তবে আমরা বলেছিলাম, এটা হবে না। পরে তারা মন্ত্রণালয় থেকে ‘জনস্বার্থে’ শব্দটি উল্লেখ করে একটি চিঠি নিয়ে আসে। পরে তাদের ছাড়পত্র দিয়ে দেয়া হয়।’
অনেকটা একই বক্তব্য পরিবেশ অধিদপ্তর চট্টগ্রাম মহানগরের উপ-পরিচালক মিয়া মাহমুদুল হকেরও। তিনি বলেন, ‘মন্ত্রণালয় যে প্রজেক্টে অনুমোদন দিয়ে দিয়েছে, সেখানে তো আমাদের বলার কিছু নেই।’
বাংলাদেশ পরিবেশ আইনজীবী সমিতির (বেলা) প্রধান নির্বাহী সৈয়দা রিজওয়ানা হাসান এ প্রসঙ্গে বলেন, ‘পরিবেশ অধিদপ্তর একটা বাজে দৃষ্টান্ত স্থাপন করলো। ২০১৯ সালে উচ্চ আদালত একটা রায়ে বলেছেন, পুকুর যদি ব্যক্তিগতও হয় সেটারও শ্রেণি পরিবর্তন করা যাবে না। এখানে জাতীয় প্রয়োজন অপরিহার্য। কিন্তু পুকুরের জায়গা তো অপরিহার্য না। বিদ্যুতের উপকেন্দ্র হবে খাস জমিতে বা খালি জমিতে। পুকুরেই কেন করতে হবে?’
প্রকল্পে অনাপত্তিপত্র দেয় চট্টগ্রাম উন্নয়ন কর্তৃপক্ষ (সিডিএ) ও নগর উন্নয়ন অধিদপ্তরও। অনাপত্তিতে স্বাক্ষর থাকা সিনিয়র প্ল্যানার আহমেদ আখতারুজ্জামানের সাথে একাধিকবার যোগাযোগের চেষ্টা করা হলেও তাকে পাওয়া যায়নি। তবে নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক একজন কর্মকর্তা বলেন, ‘আমরা মূলত কাগজ দেখেই স্বাক্ষর করে দেই। সরেজমিনে যাওয়া হয় না। তবে জলাধার আইন মেনে চলাসহ ৯টি শর্ত দেয়া হয়েছে এই অনাপত্তিপত্রে।’
অনাপত্তি দেওয়ার প্রসঙ্গে চট্টগ্রাম উন্নয়ন কর্তৃপক্ষের (সিডিএ) ডেপুটি চিফ টাউন প্ল্যানার ঈশা আনসারীর কাছে জানতে চাইলে তিনি বলেন, ‘আমাদের কাছে পারমিশন পাওয়ার কথা না। আমি যতটুকু জানি, ওরা একবার জমি অধিগ্রহণের অনাপত্তি পত্রের (এনওসি) জন্য আবেদন করে। আমরা যখন দেখছি এটা গভর্মেন্ট প্রজেক্ট। তখন আমরা বলে দেই জলাধার আইন ফলো করতে হবে। জলাধার আইন যদি কাভার করে তবে পারবে, নতুবা পারবে না। এখন ওরা জলাধার আইন ফলো করছে কিনা সেটা তাদের এখতিয়ারের ব্যাপার।’
কিন্তু সরেজমিন গিয়ে দেখা যায়, এই প্রকল্প বাস্তবায়ন হলে জলাধার আইন মানতে পারবে না বিদ্যুৎ বিভাগ। উপকেন্দ্র নির্মিত হলে পুকুরের চারপাশের বাসিন্দারা অনেকটা বন্দি হয়ে যাবে। বিঘ্নিত হবে পানি চলাচলের প্রবাহ। সৃষ্টি হবে স্থায়ী জলাবদ্ধতা। জনমানুষের নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে বিদ্যুৎকেন্দ্র তৈরি করা হয় জনবসতি থেকে অন্তত ৩০০ ফুট দূরে। কিন্তু পুকুর ভরাট করে বিদ্যুৎ কেন্দ্র নির্মাণের অতি উৎসাহে সেই নিয়মও হয়েছে উপেক্ষিত। তা করতে গিয়ে পুকুরের পাশেই অবস্থিত অন্তত তিনটি বহুতল ভবনের কথাও বেমালুম চেপে যাওয়া হয়েছে।
এ বিষয়ে চট্টগ্রাম প্রকৌশল ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের(চুয়েট) ইলেকট্রিক্যাল এন্ড ইলেকট্রনিক ইঞ্জিনিয়ারিং বিভাগের অধ্যাপক ড. কাজী দেলোয়ার হোসেন বলেন, ‘সাবস্টেশন সাধারণত একটু রিমোট এরিয়ায় করতে হয়। রিমোট এরিয়ায় করা ভালো। তার আগে নির্ভর করবে এটা লোকালি সাপ্লাই দেওয়ার জন্য, নাকি নির্দিষ্ট কয়েকটি ভবনের জন্য। তবে সাবস্টেশন যেখানেই করা হোক না কেন স্বাভাবিকভাবে একটু আইসোলেটেড থাকা ভালো। আর ঘনবসতিপূর্ণ এরিয়ায় যদি করতেই হয় তাহলে নির্দিষ্ট একটা দূরত্ব রাখতেই হবে। যাতে বড় ধরনের দুর্ঘটনা না ঘটে। এ কারণেই ডিসটেন্স মেইনটেইন করা জরুরি।’
একের দোষ অন্যের ঘাড়ে
মোহরা এলাকায় প্রকল্প উপযোগী আরও অসংখ্য জায়গা থাকার পরও কেন পুকুর ভরাট করে বিদ্যুৎকেন্দ্র নির্মাণ করতে হচ্ছে— এমন প্রশ্নে চট্টগ্রাম জেলা প্রশাসনের ঘাড়ে দায় তুলে দিয়ে বিদ্যুৎ উন্নয়ন বোর্ড চট্টগ্রামের উপ-প্রকল্প পরিচালক প্রকৌশলী মোরশেদ মনজুরুল ইসলাম বলেন, ‘প্রাইমারি সার্ভের পর একটা যৌথ সার্ভে হয় সেখানে প্রত্যাশী সংস্থার সবাই ছিল। ভূমি অধিগ্রহণের মূল দায়িত্ব জেলা প্রশাসনের। আমরা তো জমি চাইবো। তারা আমাদের প্রাইমারি সিলেক্ট করতে বলে পরে বাকিটা তারা দেখবে। অফিসিয়ালি আমরা ভূমি অধিগ্রহণের দায়িত্বে না। এটার সম্পূর্ণ দায়িত্ব ডিসির। আমরা তাকে অ্যাপ্লিকেশন দেই। তারা জমি অধিগ্রহণের ব্যবস্থা করবে। আপনি যে প্রশ্ন করছেন সেটা করা উচিত ডিসি অফিসকে। আমাদেরকে না। কারণ হলো এ সমস্ত দায়দায়িত্ব সব ডিসি অফিসের। আমরা শুধু ক্যারিয়ার (চিঠি প্রদানকারী) হিসেবে আছি।’
যদিও শুরুতে ‘বিদ্যুৎ বিতরণ ব্যবস্থা উন্নয়ন চট্টগ্রাম জোন (২য় পর্যায়)’ প্রকল্পটির পরিচালক ছিলেন প্রকৌশলী মকবুল হোসেন। তিনি অবসরোত্তর ছুটিতে যাওয়ার পর প্রকল্প পরিচালকের দায়িত্ব নেন মো. শামছুদ্দিন।
মো. শামছুদ্দিনের কাছে প্রকল্পের বর্তমান অবস্থা নিয়ে জানতে চাইলে তিনি প্রথমে পুনরায় পরিদর্শন ও যাচাই করে জানানোর আশ্বাস দিয়ে বলেন, ‘জনস্বার্থে সরকার যে কোনো জায়গা অধিগ্রহণ করতে পারেন। আমি মনে করি পুকুর অত্যধিক প্রয়োজনীয়। জলাধার ভরাট করা কোনোভাবে সমীচিন না। আপনি যেহেতু বলছেন আমি আমলে নিয়ে আবার ভিজিট করবো।’
তবে পরদিনই সুর পাল্টে যায় এই কর্মকর্তার। মুঠোফোনে তিনি এই প্রতিবেদককে বলেন, ‘আমি সেখানে গেছি। সত্যিকারভাবে এ পুকুর ব্যবহারের কোনো প্রমাণ পাইনি। এটাতে তো দূষিত পানি। এটা ব্যবহার করা মানে তো মানুষ মারা যাবে। আমি ফিজিক্যালি দেখেছি। এটা পুকুর নয়। এটার গভীরতাও নাই। এখানে সব যথাযথ আইন মেনে করা হচ্ছে। মনে করেন যে, এই জায়গাটা আপনার দরকার। এভাবে ভাবেন। আমি মনে করি, যে অভিযোগ আনা হচ্ছে তা পুরোটাই বানোয়াট, মিথ্যা অসৎ উদ্দেশ্য। আমার প্রকল্পকে বাধাগ্রস্থ করা, সরকারের উন্নয়নকে বাধাগ্রস্থ করার উদ্দেশ্যে এগুলো করা হচ্ছে।’
যদিও খোলা জায়গার পরিবর্তে পুকুর ভরাট করে স্থাপনা করলে খরচ বেশি হবে— এটি স্বীকার করে উপ-প্রকল্প পরিচালক বলেন, ‘অবশ্যই পুকুরের জায়গাটা ভরাট করতে খরচ বেশি হবে। সেটা আমিও মানি, আপনিও মানেন। একটা প্ল্যান ল্যান্ডে (সমতল ভূমি) যে টাকা খরচ হবে আর পুকুরের তিন ফুট বা চার ফুট যাই হোক সেটুকু লেভেল করতে অবশ্যই আলাদা এবং বাড়তি খরচ হবে। কিন্তু কী কারণে কেন এইটা হইছে, কারা করছেন বা ডিসি অফিসের যারা বা আমাদের লোকজন ছিল আসলে সেটা ওই সময়ের ব্যাপার।’
এ বিষয়ে চট্টগ্রাম জেলা প্রশাসনের সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তা অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক মাসুদ কামালের সঙ্গে যোগাযোগের চেষ্টা করেও ব্যর্থ হয়ে মুঠোফোনে বিষয়টি সম্পর্কে চট্টগ্রামের জেলা প্রশাসক মোহাম্মদ মমিনুর রহমানকে অবহিত করা হলে তিনি বলেন, ‘আমার তো চট্টগ্রামে প্রায় ২৩ হাজার ৭১৩টি ভূমি অধিগ্রহণের মামলা। এখন এটা তো মুখস্ত বলতে পারবো না। আমাকে এখন দেখে জানাতে হবে।’
তবে তিনি বলেন, ‘পুকুরের মালিক যারা আছে, তাদের বলেন আমার বরাবর আবেদন করতে। আমি রিলিজ করে দিবো। আইন অনুসারে আমার সে ক্ষমতা আছে। অবশ্যই পুকুরের মালিকদের আবেদন করতে হবে।’
এদিকে ব্যক্তি মালিকানাধীন পুকুর ভরাট বন্ধ করার যথাযথ ব্যবস্থা গ্রহণের জন্য মন্ত্রণালয়কে সুপারিশ করেছে একাদশ জাতীয় সংসদের মৎস্য ও প্রাণিসম্পদ মন্ত্রণালয় সম্পর্কিত সংসদীয় স্থায়ী কমিটি। গত ২৬ জুলাই স্থায়ী কমিটির ১৭তম বৈঠকে এ সুপারিশ করা হয়।
পুকুর বা জলাধার শ্রেণির জমির প্রকৃতি পরিবর্তন করে কোনো স্থাপনা করা বেআইনি উল্লেখ করে মন্তব্য করেন ঢাকাভিত্তিক গবেষণা সংস্থা রিভার এন্ড ডেলটা রিসার্চ সেন্টারের (আরডিআরসি) চেয়ারম্যান মোহাম্মদ এজাজ। তিনি বলেন, ‘সেখানে যেহেতু প্রকল্প উপযুক্ত জায়গা রয়েছেই তাহলে বিদ্যমান একটা পুকুরকে গলাটিপে হত্যা করার কোনো মানেই দেখি না।’
একই বিষয়ে চট্টগ্রাম প্রকৌশল ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের (চুয়েট) নগর ও অঞ্চল পরিকল্পনা বিভাগের বিভাগীয় প্রধান ড. মুহাম্মদ রাশিদুল হাসান বলেন, ‘সিএস-বিএস-আরএস দাগে যদি পুকুর হিসেবে চিহ্নিত থাকে এবং চট্টগ্রাম মহানগরের মাস্টারপ্ল্যানে সেটাকে পুকুর হিসেবে চিহ্নিত করা আছে তাহলে কোনো অবস্থায় তার ভূমি ব্যবহার পরিবর্তনযোগ্য নয়। পুকুরের অর্ধেক বা পরিপূর্ণ অংশ নিয়ে যেটাই করতে চাক না কেন, সেটা গ্রহণযোগ্য নয়। আমি মনে করি, পুকুরের সংখ্যা দিন দিন কমছে, যা আশংকাজনক। তাই বিদ্যমান পুকুর সংরক্ষণ করা জরুরি বিধায় এ পুকুর অপরিবর্তিত রেখে বিকল্প স্থানে এ প্রকল্প স্থানান্তর করা জরুরি।’
পুকুর ভরাট করে স্থাপনা করলে কেমন ক্ষতি হতে পারে, সে প্রসঙ্গে আগ্রাবাদ ফায়ার সার্ভিসের সহকারী পরিচালক ফারুক হোসেন শিকদার বলেন, ‘পরিবেশ আইনেই আছে পুকুর ভরাট করা যাবে না। বর্তমানে বন্যা, অতিবৃষ্টি হলে এসবের পানি কোথায় যাবে? কারণ নদীর পানির নাব্যতা তো দিনে দিনে কমে এসেছে। আর এ কারণে পানিগুলো যাওয়ার জায়গা তো পাচ্ছে না। আর এই পানি নিষ্কাশনের জন্য একমাত্র ব্যবস্থা এলাকার পুকুরগুলো। তাই এই পুকুরগুলোর ভরাট কোনোভাবেই করা যাবে না। যারা করে বা করছে তা মারাত্মক ভুল করছে।’
বিশেষ আয়োজন সব খবর