Cvoice24.com

তুমব্রুর প্রাইমারি স্কুল রোহিঙ্গাদের দখলে, পাঠদান ব্যাহত বিব্রত স্থানীয়রা

কক্সবাজার প্রতিনিধি

প্রকাশিত: ১৪:০৫, ২৬ জানুয়ারি ২০২৩
তুমব্রুর প্রাইমারি স্কুল রোহিঙ্গাদের দখলে, পাঠদান ব্যাহত বিব্রত স্থানীয়রা

বান্দরবানের নাইক্ষ্যংছড়ির ঘুমধুম-তুমব্রু সীমান্তের শূন্যরেখায় রোহিঙ্গা ক্যাম্পে মিয়ানমারের সশস্ত্র বিদ্রোহী গোষ্ঠী আরাকান স্যালভেশন আর্মি (আরসা) ও আরাকান রোহিঙ্গা সলিডারিটি অর্গানাইজেশন (আরএসও) মধ্যে সংঘর্ষের বেশ কদিন পেরিয়ে গেলেও এখনো নিজ ঘরে ফিরে যায়নি বাংলাদেশে পালিয়ে আসা কয়েক হাজার রোহিঙ্গা। ঘটনার পর অধিকাংশ রোহিঙ্গাই বাংলাদেশের স্থানীয় তুমব্রু সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়সহ এর আশপাশে বিছিন্নভাবে বসতি গড়েছে। এতে ঐ বিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীদের পড়ালেখা কার্যত বন্ধই রয়েছে। তবে স্কুল রাখলেও আতঙ্কে ক্ষুদের শিক্ষার্থীর উপস্থিতির সংখ্যা দিন দিন কমে যাচ্ছে। একই সাথে ধেয়ে আসা রোহিঙ্গাদের যত্রতত্র মল-মূত্র ত্যাগের কারণে পরিবেশ নষ্টের পাশাপাশি বিব্রতকর অবস্থায় রয়েছে স্থানীয়রাও। 

স্থানীয় জনপ্রতিনিধিরা জানান, ২০১৭ সালের ২৫ আগস্টের পর মিয়ানমারের রাখাইন রাজ্য থেকে নির্যাতিত হয়ে কয়েক হাজার রোহিঙ্গা শূন্যরেখার এই আশ্রয়শিবিরে আশ্রয় নেয়। গত ১৭ জানুয়ারি পর্যন্ত ৬২১টি পরিবারে ওই সংখ্যা ছিল ৪ হাজার ৩০০। পরদিন ১৮ জানুয়ারি গোলাগুলি ও বাড়িতে অগ্নিসংযোগের পর রোহিঙ্গারা কোনাপাড়া খাল পাড় হয়ে বাংলাদেশের তুমব্রু সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে আশ্রয় নেয়। কিছু রোহিঙ্গা পরিবার পালিয়ে যায় অন্যত্র। 

স্থানীয় লোকজন  জানান, বর্তমানে তুমব্রু সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় ও আশপাশের কয়েকটি জঙ্গল এলাকায় প্রায় ৩ হাজার রোহিঙ্গা অবস্থান করছে। বসবাস করা এসব রোহিঙ্গার যত্রতত্র মূল-মূত্র ত্যাগসহ বিভিন্ন অপকর্মের কারণে বিদ্যালয়টিতে ছাত্রছাত্রীদের উপস্থিতি দিন দিন কমে যাচ্ছে। প্রায় বন্ধই রয়েছে শিক্ষা কার্যক্রম। 

তুমব্রু সরকারী প্রাথমিক বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক আবদুর রহিম বলেন, ‘ঘর থেকে বিতাড়িত রোহিঙ্গারা আমাদের বিদ্যালয়ে অবস্থান করছে। ফলে রোহিঙ্গাদের অবস্থানের কারণে শিক্ষার্থীরা বিদ্যালয়ে আসতে ভয় পাচ্ছে। 

তিনি বলেন, শুক্র-শনি দুদিন স্কুল বন্ধ থাকায় অবস্থা তেমন বুঝা যায়নি। কিন্তু রবিবার শিক্ষার্থী উপস্থিত হন মাত্র ২শ। পরের দিন সোমরার ৩ শ। তবে সরকারের জাতীয় কৃমিনাশক ট্যাবলেট খাওয়ার ডাকে সাড়া দিয়ে মঙ্গলবার ৪৯০ জন শিক্ষার্থী স্কুলে আসে।

তিনি উদ্বেগ প্রকাশ করে বলেন, এভাবে শিক্ষা প্রতিষ্ঠান ঘেঁষে এতো রোহিঙ্গা আশ্রয় নিলে শিক্ষার মারাত্মক ক্ষতি হবে। বাচ্চা আসতে চাচ্ছে না। এ বিষয়ে দ্রুত ব্যবস্থা দরকার।’

নাইক্ষ্যংছড়ি উপজেলা মুক্তিযোদ্ধা কমান্ডার রাজা মিয়া জানান, ৬ দিন অতিবাহিত হলেও সোয়া ৪ হাজার রোহিঙ্গা তুমব্রু গ্রামে অবস্থান করছে। বিতাড়িত এসব রোহিঙ্গারা অপরিকল্পিতভাবে বসতি নির্মাণ করে থাকছে। এ কারণে তারা খোলা জায়গায় যত্রতত্র প্রাকৃতিক কর্ম সারছে। সর্বত্র দুর্গন্ধ ছড়িয়ে পড়ছে। ছোট্ট তুমব্রু গ্রামে এতো রোহিঙ্গার বসবাস মারাত্মকভাবে নষ্ট হচ্ছে পরিবেশ। এছাড়াও রয়েছে মাদকাসক্ত রোহিঙ্গাদের তাণ্ডবও।

নাইক্ষ্যংছড়ি উপজেলা নির্বাহী অফিসার রোমেন শর্মা এ বিষয়ে বলেন, ‘দুটো বিষয়ই অতিগুরুত্বপূর্ণ। একটি রাষ্ট্রীয় অপরটি শিশু শিক্ষার্থীর স্বার্থ। সুতরাং তিনি তুমব্রু সরকারী প্রাথমিক বিদ্যালয় ক্যাম্পাস এলাকা থেকে এসব আশ্রিত রোহিঙ্গাদের পাশে কোথাও সরাতে দ্রুত ব্যবস্থা নেবেন বলে জানান। তবে তা হবে ঊর্ধ্ব মহলের সাথে আলোচনা করে।’
 

সর্বশেষ

পাঠকপ্রিয়