নির্বাচন নয়, ব্যক্তি স্বার্থ সিদ্ধির প্রয়োজনে চবির ২০১ শিক্ষকের চিঠি

চবি প্রতিনিধি

প্রকাশিত: ১৪:২০, ১৪ নভেম্বর ২০২২
নির্বাচন নয়, ব্যক্তি স্বার্থ সিদ্ধির প্রয়োজনে চবির ২০১ শিক্ষকের চিঠি

চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ে (চবি) আওয়ামী-বামপন্থী শিক্ষকদের সংগঠন হলুদ দলের নীতিনির্ধারণী পর্ষদ ‘স্ট্যান্ডিং কমিটি’ নিয়ে বিতর্ক তৈরি হয়েছে। এর মধ্যে ১২ নভেম্বর দ্রুত সময়ের মধ্যে স্ট্যান্ডিং কমিটির নির্বাচনের জন্য আহ্বায়ক বরাবর চিঠি দিয়েছেন হলুদ দলের ২০১ শিক্ষক। তবে ওই চিঠির পাল্টা জবাব দিয়েছে হলুদ দলের স্ট্যান্ডিং কমিটির সদস্যরা।

চিঠিতে ২০১ সদস্যের মূল উদ্দেশ্য নির্বাচন নয় বরং বিশ্ববিদ্যালয় সিন্ডিকেট নির্বাচন বিলম্বিত করে বিশেষ বিশেষ ব্যক্তি স্বার্থ সিদ্ধি করার দাবি করা হয়েছে। 

সোমবার (১৪ নভেম্বর) দুপুরে দলটির আহ্বায়ক অধ্যাপক  ড. মোহাম্মদ সেকান্দর চৌধুরী স্বাক্ষরিত গণমাধ্যম পাঠানো এক প্রেস বিজ্ঞপ্তিতে এমন দাবি করেন স্ট্যান্ডিং কমিটির সদস্যরা। বিষয়টি সিভয়েসেকে নিশ্চিত করেছেন হলুদ দলের আহ্বায়ক অধ্যাপক  ড. মোহাম্মদ সেকান্দর চৌধুরী।

বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়, চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষকদের মতাদর্শিক একটি ফ্লাটফর্মের (হলুদ দল) প্রক্রিয়াধীন অভ্যন্তরীণ নির্বাচনের আগে বিশ্ববিদ্যালয় সিন্ডিকেটসহ সকল বিধিবদ্ধ পর্ষদের নির্বাচন বন্ধ রাখার দাবিতে দলের সদস্য নয় এমন প্রায় ৪০ জনসহ কতিপয় শিক্ষকের একটি চিঠি দলের আহ্বায়কের কাছে সম্প্রতি প্রেরণ করা হয়েছে। 

স্বাক্ষরকারীদের তালিকায় জামাত-বিএনপিপন্থী সাদা দলের শিক্ষকদেরও নাম রয়েছে (অধিকতর যাচাই সাপেক্ষে এ বিষয়ে পরবর্তীতে তথ্য তুলে ধরা হবে)। জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান প্রণীত চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয় আইন ১৯৭৩ অনুযায়ী সিন্ডিকেটসহ সকল বিধিবদ্ধ পর্ষদের মেয়াদোত্তীর্ণ নির্বাচন বন্ধ করা এবং বাঙালি জাতীয়তাবাদ ও মুক্তিযুদ্ধের চেতনায় উদ্বুদ্ধ প্রগতিশীল শিক্ষক সমাজকে বিভক্ত করার অভিপ্রায়ে বিশ্ববিদ্যালয়ের কর্তাব্যক্তিদের সরাসরি ইন্ধন ও সার্বিক তত্ত্বাবধানে এ চিঠি দেওয়া হয়েছে বলে হলুদ দলের স্ট্যান্ডিং কমিটি জানতে পেরেছে।

এ চিঠি হাজার বছরের শ্রেষ্ঠ বাঙালি বঙ্গবন্ধুর নেতৃত্বে ১৯৭১ সালে মহান মুক্তিযুদ্ধের মাধ্যমে অর্জিত স্বাধীনতার সুফল বঙ্গবন্ধু প্রদত্ত চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়। আইন ১৯৭৩ এর পরিপন্থী।

উল্লেখ্য যে, উক্ত চিঠিতে স্বাক্ষরকারী ও বিভিন্ন গণমাধ্যমে মন্তব্যকারী দু'জন শিক্ষকের মধ্যে একজন সম্প্রতি অনুষ্ঠিত ডিন নির্বাচনে দলীয় প্রার্থীর কাছে পরাজিত হয়েছেন এবং আরেকজন নিজে দলের বিদ্রোহী হয়ে অপর বিদ্রোহী প্রার্থীর কাছে পরাজিত হয়েছেন। চিঠিতে স্বাক্ষরকারী দু’জন সম্মানিত ডিন বিশ্ববিদ্যালয়ের অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ একাডেমিক পর্ষদের প্রতিনিধিত্ব করা সত্ত্বেও স্ট্যান্ডিং কমিটির নির্বাচন না হওয়া পর্যন্ত সিন্ডিকেট নির্বাচন আটকে রাখার মতো বিশ্ববিদ্যালয়ের আইন বিরোধী কথা বলেছেন। অথচ তাঁরা কিছুদিন পূর্বে উপাচার্যকে চিঠি দিয়ে নির্বাচনের দাবি জানিয়েছিলেন, যা স্ববিরোধী।

চিঠিতে স্বাক্ষরকারী এমন কয়েকজন রয়েছেন যারা বিশ্ববিদ্যালয়ের বিভিন্ন বিধিবদ্ধ পর্ষদের দায়িত্বে থেকে বিধিবদ্ধ শূন্য পদগুলিতে নির্বাচনের বিরোধীতা করে চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয় আইনকে অবজ্ঞা করেছেন। তদুপরি, চিঠিতে স্বাক্ষরকারী বেশিরভাগই বর্তমান বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসনের বিভিন্ন পদে দায়িত্ব পালন করছেন।

চিঠিতে অভিযোগ করা হয়েছে বর্তমান স্ট্যান্ডিং কমিটির কারণে অতীতের নির্বাচনে ফলাফল বিপর্যয় হয়েছে। বাস্তবতা হচ্ছে, প্রশাসনের সমর্থনে দলের প্রার্থীদের বিরুদ্ধে বিদ্রোহী প্রার্থী দেওয়া সত্ত্বেও বিগত শিক্ষক সমিতি ও ডিন নির্বাচনে স্ট্যান্ডিং কমিটি মনোনীত সংখ্যাগরিষ্ঠ প্রার্থী জয়লাভ করেছেন। দুঃখজনক হলেও সত্য হচ্ছে, মেরিন সায়েন্সেস এন্ড ফিসারিজ অনুষদে দলীয় প্রার্থীর বিরুদ্ধে এবং জামাত-বিএনপি সমর্থক সাদা দলের প্রার্থীর পক্ষে ভোট দেওয়ার জন্য বিশ্ববিদ্যালয়ের সর্বোচ্চ কর্তাব্যক্তিদের প্রত্যক্ষ হস্তক্ষেপের কারণে দলীয় প্রার্থী হেরে যান বলে উক্ত অনুষদের ডিন প্রার্থীসহ কয়েকজন শিক্ষক স্ট্যান্ডিং কমিটির কাছে মৌখিকভাবে অভিযোগ করেছেন।

চিঠি প্রদানকারীদের মূল উদ্দেশ্য স্ট্যান্ডিং কমিটির নির্বাচন নয় বরং বিশ্ববিদ্যালয় সিন্ডিকেট নির্বাচন বিলম্বিত করে বিশেষ বিশেষ ব্যক্তি স্বার্থ সিদ্ধি করা। কেননা, শিক্ষকদের আদর্শিক ফ্লাটফরমের অভ্যন্তরীণ নেতৃত্ব নির্বাচনের অজুহাতে বিধিবদ্ধ ও অলংঘনীয় নির্বাচন বন্ধ রাখার কোন সুযোগ বা যৌক্তিকতা নেই। চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয় আইন ১৯৭৩ অনুযায়ী নির্ধারিত সময়ে বিশ্ববিদ্যালয় সিন্ডিকেটসহ সকল পর্ষদে শিক্ষক প্রতিনিধি নির্বাচন বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসনের অলংঘনীয় দায়িত্ব এবং শিক্ষকদের আইনগত ন্যায্য অধিকার।

হলুদ দলের স্ট্যান্ডিং কমিটির আহ্বায়ক অধ্যাপক ড. মোহাম্মদ সেকান্দর চৌধুরী  বলেন, গত ৯ নভেম্বর স্ট্যান্ডিং কমিটির সভায় একটি চিঠি দিয়েছিল। এটা গণতান্ত্রিক পন্থা। যেকেউ চিঠি দিতে পারে। তাঁদের চিঠি আমলে নিয়ে আমরা নির্বাচনের দিকে আগাচ্ছিলাম। কিন্তু বিষয়টিকে এক তরফা আমাদের ওপর দায় চাপিয়ে বক্তব্য গণমাধ্যমে বক্তব্য দিয়েছে। দলের ইতিহাসে প্রথম হলুদ দলের অভ্যন্তরীণ বিষয় গণমাধ্যমে এসেছে। এজন্য আমাদের বক্তব্য ক্লিয়ার করতে আজ আমরাও বিজ্ঞপ্তি দিয়েছি। তাদের চিঠিতে অনেক কিছু আইনের সাথে সাংঘর্ষিক। বিশ্ববিদ্যালয় চলবে ৭৩ এর অধ্যাদেশ অনুযায়ী। কিন্তু হলুদ দল আদর্শিক মতাদর্শের একটি প্রতিষ্ঠান। বিশ্ববিদ্যালয় পরিচালনার সাথে এটার কোনো সম্পর্ক নেই।

এদিকে নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক একাধিক হলুদ দলের সমর্থিত শিক্ষক সিভয়েসকে বলেন, 'স্ট্যান্ডিং কমিটির বিজ্ঞপ্তিতে ২০১ শিক্ষকের মধ্যে কিছু শিক্ষককে জামায়াত ও বিএনপিপন্থী শিক্ষক হিসেবে অভিযোগ তুলেছে। কিন্তু তারা কারা সেই তথ্য দেয় নাই। এতে মূলত চিঠিকে বিতর্কিত করতে স্ট্যান্ডিং কমিটির একটি পন্থা। আবার ৪০ জন হলুদ দলের সদস্য নয় বলে যেটা দাবি করছে, সেটাও বিভ্রান্তিকর। এখানে সবাই হলুদ দলের। সম্প্রতি নিয়োগ কিংবা কয়েকজন সদস্য ফরম পূরণ না করাই এই প্রশ্ন তোলা হয়েছে। কিন্তু স্ট্যান্ডিং কমিটি মেয়াদোত্তীর্ণের কারণে অনেক শিক্ষক ফরম পূরণ করেনি। এটা কি দোষের?'

তারা আরও বলেন, 'আমাদের মূল বিষয়টি হচ্ছে স্ট্যান্ডিং কমিটির মেয়াদ শেষ। আপনারা নির্বাচন দিন। মেয়াদোত্তীর্ণ দলের নির্বাচন চাওয়া কি অযৌক্তিক? ২০১৯ সাল থেকে বলে আসছি, নির্বাচন দিচ্ছে না। ২০১ কেন এই বিষয়ে ১০ শিক্ষক কথা বললেও নির্বাচন দেওয়া প্রধান দায়িত্ব স্ট্যান্ডিং কমিটির।'

এর আগে, গত ১২ নভেম্বর মেয়াদোওীর্ণ কমিটির সদস্যদের অধীনে আর কোনো নির্বাচন চান না জানিয়ে চিঠি দেন হলুদ দলের সমর্থক ২০১ শিক্ষক। তাদের দাবি হলুদ দলের নীতি নির্ধারণী পর্ষদ 'স্ট্যান্ডিং কমিটি'র সর্বশেষ নির্বাচন ২০১৭ সালের ৭ এপ্রিল অনুষ্ঠিত হয়েছিল। স্ট্যান্ডিং কমিটি গঠিত হয় দুই বছরের জন্য। হলুদ দলের গঠনতন্ত্র অনুযায়ী ২০১৯ সালের ৬ এপ্রিল কমিটির মেয়াদ শেষ হয়েছে। এরপর চার বছর পার হতে চললেও নতুন করে নির্বাচনের উদ্যোগ নেওয়া হচ্ছে না। বর্তমান কমিটির নিজেদের নেতৃত্ব ধরে রাখতেই তাদের এই কৌশল বলেও অভিযোগ করেন তারা।
 

সর্বশেষ

পাঠকপ্রিয়