রামু ট্রাজেডি : ৯ বছরেও বিচার পায়নি বৌদ্ধ সম্প্রদায়

কক্সবাজার প্রতিনিধি

প্রকাশিত: ১১:১৯, ২৯ সেপ্টেম্বর ২০২১
রামু ট্রাজেডি : ৯ বছরেও বিচার পায়নি বৌদ্ধ সম্প্রদায়

রামু সহিংসতার নয় বছর আজ। হামলার শিকার বৌদ্ধ পল্লীতে আতংক কেটে গেলেও শুকাইনি সে পুরোনো ক্ষত। রামু হামলার মামলায় গ্রেপ্ততার হওয়াদের সবাই জামিনে বেরিয়ে আসলেও আবার অনেক আসামি এখনও ধরাছোয়ার বাইরে। এর ফলে ন্যায় বিচার পাওয়া নিয়ে সংশয় প্রকাশ করেছেন বৌদ্ধ সম্প্রদায়ের লোকজন।   

২০১২ সালে ২৯ সেপ্টেম্বর। উত্তম বড়ুয়া নামের এক বৌদ্ধ যুবকের বিরুদ্ধে পবিত্র কোরান অবমাননার অভিযোগ তুলে রাতের অন্ধকারে রামুর ১২ বৌদ্ধ বিহার ৩০টি বসতঘর এবং পরদিন ৩০ সেপ্টেম্বর উখিয়া ও উখিয়া- টেকনাফে ৭টি বৌদ্ধ বিহার ও ১১টি বসতঘরে হামলা ও অগ্নি সংযোগ করে দুস্কৃতিকারীরা। হামলা ও লুটপাট চালানো হয় আরো ৬টি বৌদ্ধ বিহার ও শতাধিক বসতঘরে।

হামলার ৯ বছর পার হলেও সে সময়ে কেন হামলা, অগ্নিসংযোগ, লুটপাট চালিয়েছিল দুস্কৃতিকারীরা তা এখনও অজানা বৌদ্ধ সম্প্রদায়ের লোকজনের কাছে।

জানা গেছে, রামু হামলায় মামলা হয়েছে ১৯ টি। বাদীর আপোষের ভিত্তিতে একটি মামলা তুলে নেয়া হলেও বাকী সবকটি মামলার অভিযোগ পত্র জমা দিয়েছে পুলিশ। 

রাষ্ট্র পক্ষের আইনজীবী অ্যাড. ফরিদুল আলম জানিয়েছেন, স্বাক্ষীদের সাক্ষ্য প্রদানে অনীহা দেখা দিয়েছে এই মামলায়। আমরা সব ধরনের নিরাপত্তা দেওয়ার কথা বললেও তারা আসছে না।

বিচারিক কাজে দীর্ঘ সূত্রিতা দেখে অনেকটা নিরাশ কক্সবাজার জেলা বৌদ্ধ সুরক্ষা পরিষদের সভাপতি ও  কেন্দ্রীয় সীমা বিহারের আবাসিক অধ্যক্ষ প্রজ্ঞানন্দ ভিক্ষু। তিনি মামলার রাষ্ট্রপক্ষ এবং সাক্ষীদের মধ্যে সমন্বয়ের অভাবকে দায়ী করেছেন।  

বৌদ্ধ সম্প্রদায়ের নেতা সুমথ বড়ুয়া বলেন, ২৯ সেপ্টেম্বর আসলে শুধুমাত্র তৎপরতা দেখা যায়৷ এরপর আর কথা হয় না। প্রকৃতপক্ষে প্রশাসন কোন উদ্যোগ নেয়না। সেই সময় ইউএনও, ওসি, ডিসি, এসপি যারা ছিলেন তাদের দায়িত্ব অবহেলার কারণে বিচারের আওতায় আনা হয়েছে কিনা, জবাবদিহিতার আওতায় আনা হয়েছে কিনা সেটি বৌদ্ধ সমাজ আদৌও জানতে পারেনি। কিন্তু এগুলোতো জানা দরকার।

তিনি আরো বলেন, নতুন করে সম্প্রীতি করার প্রত্যয়ে এগিয়ে যাচ্ছি৷ কিন্তু ক্ষত যেটা হয়েছে সেটা  শোকায়নি। এই ক্ষত থাকবেই।

রামু উপজেলা যুবলীগের সাধারণ সম্পাদক নীতিশ বড়ুয়া বলেন, কেন এই মন্দির পোড়ানো হয়েছে সেটি তদন্তে আছে৷ কিন্তু আমরা এখনো জানিনা কেনো হামলা হয়েছে। সেদিন অনেক নিরপরাধ মানুষও আসামি হয়েছে। আবার অনেক অপরাধী পার পেয়ে গিয়েছিল। এনিয়ে একটা সংশয় রয়েই গেছে। তারপরও আমরা চাই প্রকৃত ঘটনা উদঘাটন করে রামুর সম্প্রীতি ধরে রাখতে। 

তিনি বলেন, মামলার অগ্রগতি নিয়ে সন্তুষ্ট নয়। তবে বিশ্বাস করি সরকার দ্রুত বিচার শেষ করবে।

উল্লেখ্য, রামু, উখিয়া ও টেকনাফে সহিংসতার  ঘটনায় এজাহারভুক্ত ৩৭৫ জনসহ ১৫ হাজার ১৮২ জনের বিরুদ্ধে ১৯টি মামলা দায়ের করা হলেও পরবর্তীতে এসব মামলায় ৯৪৫ জনের বিরুদ্ধে আদালতে অভিযোগপত্র জমা দেয় পুলিশ।

সর্বশেষ

পাঠকপ্রিয়