Cvoice24.com

বিদেশযাত্রায় চট্টগ্রামের নারীদের সৌদি আরব ওমানের পর আগ্রহ জর্দানে

সিভয়েস প্রতিবেদক

প্রকাশিত: ১৫:২৩, ৪ ফেব্রুয়ারি ২০২৩
বিদেশযাত্রায় চট্টগ্রামের নারীদের সৌদি আরব ওমানের পর আগ্রহ জর্দানে

রক্ষণশীল সমাজ ব্যবস্থার বৃত্ত ভেঙে চট্টগ্রাম থেকে নারী শ্রমিকদের বিদেশযাত্রা বেড়েছে। করোনার কারণে কিছুটা স্থবিরতা নেমে আসলেও বর্তমানে তা অনেকটাই চাঙ্গা। বছরের ব্যবধানে নারী শ্রমিকের বিদেশযাত্রা বেড়েছে প্রায় ২৫ হাজার। চট্টগ্রামের নারীদের বিদেশ যাওয়ার এই মানসিকতাকে ইতিবাচক হিসেবে দেখছেন সংশ্লিষ্টরা। তবে বিদেশ যাওয়ার ক্ষেত্রে নারীদের প্রথম পছন্দ সৌদি আরব। এরপরে গতবছর জর্দানকে টপকে দ্বিতীয় তালিকায় রয়েছে ওমান। 

২০১৫ সালে সৌদি আরব অভিবাসন ব্যয় শুন্যে নামিয়ে আনার পর থেকে নারী শ্রমিকের বিদেশেযাত্রায় নতুন মাত্রা যুক্ত করেছে। গতবছর চট্টগ্রামের প্রায় ৬৭ ভাগ নারী সৌদি আরব, ১৬ ভাগ ওমান ও ১১ ভাগ নারী জর্দানে গিয়েছেন। 

জনশক্তি ও কর্মসংস্থান ব্যুরোর তথ্যানুযায়ী, ২০২১ সালে চট্টগ্রাম ছেড়ে বিদেশ যান ৮০ হাজার ১৪৩ জন নারী। অপরদিকে গতবছর জীবিকার তাগিদে বিশ্বের বিভিন্ন দেশে পাড়ি জমিয়েছেন ১ লাখ ৫ হাজার ৪৬৬ জন। এরমধ্যে গতবছর ৭০ হাজার ২৭৯ জন নারী সৌদি আরব যান। তার আগের বছর ওই দেশে পাড়ি জমিয়েছেন ৫৩ হাজার ৮২ জন নারী। এদিকে গতবছর সৌদি আরবে পর জর্দানকে ছাড়িয়ে বেশিসংখ্যক নারী ওমানে গেছেন। ২০২১ সালে জর্দানে যান ১৩ হাজার ৬৪৩ জন এবং গতবছর দেশটিতে যান ১১ হাজার ৮৭৯ জন। অপরদিকে ওমানে ২০২১ সালে ১০ হাজার ৩৫ জন ও গত বছর ১৬ হাজার ৫৪৪ জন নারী। 

জনশক্তি ও কর্মসংস্থান ব্যুরোর তথ্য পর্যালোচনা করে দেখা গেছে, সৌদি আরব, ওমান, জর্দান ছাড়াও গত বছর কাতারে ১ হাজার ৯৮২ জন, সংযুক্ত আরব আমিরাতে ১ হাজার ৭৬১ জন, মরিসাসে ৮৯৪ জন, কুয়েতে ৬৮৯ জন, যুক্তরাজ্যে ২৮৩ জন, সিঙ্গাপুর ৭৪ জন, ইতালিতে ৬১ জন, জাপান ৪৩ জন, হংকংয়ে ৩৬ জন, মালয়েশিয়ায় ২৫ জন, সাইপ্রাসে ২১ জন, দক্ষিণ কোরিয়ায় ১৮ জন, ব্রুণাইয়ে ৩ জন, লিবিয়ায় ২ জন, বাহরাইনে ১ জনসহ মোট ১ লাখ ৫ হাজার ৪৬৬ জন নারী জীবিকার তাগিদে প্রবাসে পাড়ি জমান।  

অপরদিকে ২০২১ সালে কাতারে ১ হাজার ৯৯৭ জন, সংযুক্ত আরব আমিরাতে ৭৭৭ জন, লেবাননে ১৪৭ জন, কুয়েতে ৩৫ জন, সেঙ্গাপুরে ২৫ জন, হংকংয়ে ২৪ জন, সাইপ্রাসে ১৪ জন, যুক্তরাজ্যে ৮ জন, মরিসাসে ৮ জন, ইতালিতে ৭ জন, মালয়েশিয়াতে ৩ জন ও দক্ষিণ কোরিয়াতে ৩ জনসহ মোট ৮০ হাজার ১৪৩ জন নারী শ্রমিক জীবিকার তাগিদে দেশ ছাড়েন। 

সংযুক্ত আরব আমিরাত প্রবাসী পরিষদের প্রধান সমন্বয়ক ইয়াছিন চৌধুরী সিভয়েসকে বলেন, আমাদের দেশের বেশিরভাগ নারীরা সৌদি আরব যেতে স্বাচ্ছন্দ্যবোধ করেন। কারণ সেখানে নারীরা গৃহপরিচারিকার কাজ পান বেশি। তবে সংযুক্ত আরব আমিরাতে চট্টগ্রাম থেকে বেশিরভাগ পুরুষই কর্মসংস্থানের জন্য আসেন। এখানে নারীর সংখ্যা খুবই কম। বিভিন্ন দোকানের পাশাপাশি ড্রাইভিং, নির্মাণকাজ বা ইলেকট্রনিক কাজের চাহিদা বেশি। এসব কাজে প্রশিক্ষণ নিয়ে আসতে পারলে নারীরা কাজের সুযোগ তৈরি করতে পারবেন।

এবিষয়ে জানতে চট্টগ্রাম জেলা কর্মসংস্থান ও জনশক্তি অফিসের সহকারী পরিচালক মোহাম্মদ আলীকে ফোন করলে তিনি রিসিভ করেননি। 

তবে চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের অর্থনীতি বিভাগের সাবেক অধ্যাপক ড. জ্যোতি প্রকাশ দত্ত সিভয়েসকে বলেন, এক সময় প্রবাস বলতে পুরুষরাই পাড়ি জমাতো সেখানে। এখন নারীরা সে পথে হাঁটছেন। আমাদের দেশের পাশাপাশি নারীরা বিদেশগমনেও এগিয়ে যাচ্ছেন, অবদান রাখছেন রেমিট্যান্সে। নারীদর উৎসাহিত করার পাশাপাশি পর্যাপ্ত প্রশিক্ষণ ও নিরাপদ পরিবেশ পেলে নারীদের বিদেশযাত্রার প্রবণতা আরো বাড়বে। 

বাংলাদেশ অ্যাসোসিয়েশন অব ইন্টারন্যাশনাল রিক্রুটিং এজেন্সির সচিব (অর্থ) ড. আবদুল জলিল সিভয়েসকে বলেন, ২০২০ সালে করোনার কারণে নারীদের বিদেশযাত্রা বাধাপ্রাপ্ত হয়েছিল। এদিকে ২০২১ সালের তুলনায় গতবছর নারী শ্রমিকদের অভিবাসন বেড়েছে। এটা অবশ্যই ইতিবাচক দিক। কারণ আমাদের নারী শক্তিতে কাজে লাগাতে পারছি। আমাদের মাধ্যমে যেসব নারী বিদেশ যাচ্ছেন তারা ৩০ থেকে ৪০ হাজার টাকা উপার্জন করছেন। সরকারের সাথে মালয়েশিয়ার জি টু জি চুক্তি হওয়ার পর সেখানেও নারীরা যাচ্ছেন। সবমিলিয়ে নারীদের বিদেশযাত্রার যে পরিবেশ তৈরি হয়েছে তা অব্যাহত থাকলে আমাদের দেশ আরো এগিয়ে যাবে বলে আমি মনে করি।

সর্বশেষ

পাঠকপ্রিয়