শিক্ষার্থীদের জন্য হাফ ভাড়া ‘মুখের বুলি’, চট্টগ্রামে নেই কোনো উদ্যোগ

সিভয়েস প্রতিবেদক

প্রকাশিত: ২২:২৩, ১৯ নভেম্বর ২০২১
শিক্ষার্থীদের জন্য হাফ ভাড়া ‘মুখের বুলি’, চট্টগ্রামে নেই কোনো উদ্যোগ

বাসে ‘হাফ ভাড়া’ বাস্তবায়নের দাবি শিক্ষার্থীদের। ছবিঃ সংগৃহীত

শিক্ষার্থীদের সঙ্গে প্রায় সময় পরিবহন শ্রমিকদের হাফ পাস বা হাফ ভাড়া নিয়ে বাকবিতণ্ডা হচ্ছে। অথচ পরিবহন সংশ্লিষ্টরা মুখে মুখে বুলি আওড়াই, শিক্ষার্থীদের জন্য অর্ধেক ভাড়ার নিয়ম অনুসারেই ভাড়া নিচ্ছেন চালকরা। কিন্তু বাস্তবে সেই চিত্রের কোনো ছিটেফোঁটাও নেই। এছাড়া ডিজেলের মূল্যবৃদ্ধির পর নগরের বিভিন্ন সড়কে চলাচল করা গণপরিবহনগুলো অর্ধেক ভাড়ার পরিবর্তে শিক্ষার্থীদের কাছ থেকে আদায় করে চলেছে পুরো বর্ধিত ভাড়াও। এ যেন রীতিমতো ‘মড়ার উপর খাঁড়ার ঘা’। এদিকে ঢাকায় শিক্ষার্থীদের কাছ থেকে গণপরিবহনে অর্ধেক ভাড়া নেওয়ার দাবি নিয়ে রীতিমতো শোরগোল চললেও চট্টগ্রামের এই চিত্র পুরোটাই ভিন্ন।

ঢাকায় গত দুইদিন ধরে হাফ ভাড়া না নেওয়ার কারণে সড়কে বিক্ষোভ, অবরোধ করছে শিক্ষার্থীরা। আইনগতভাবে হাফ ভাড়ার বিষয়টির কোনো ভিত্তি না থাকলেও ঢাকার গণপরিবহনে সেটি একটি চিরায়ত প্রথা। তবে দেশের বৃহত্তম নগর চট্টগ্রামে সেই ধরনের কোনো উদ্যোগ দেখা যায়নি। শুধুমাত্র চট্টগ্রামের শিক্ষার্থীদের জন্য প্রধানমন্ত্রীর দেওয়া বিআরটিসির ১০টি গাড়িতেই কেবল অর্ধেক (হাফ) ভাড়া নেওয়া হচ্ছে। পাবলিক বাসে ঠিকই বর্ধিত ভাড়া দিয়েই শিক্ষার্থীরা স্কুল-কলেজে যাতায়াত করছে।

চট্টগ্রাম সরকারি মহিলা কলেজের শিক্ষার্থী তাসনুবা আনান বলেন, ‘স্টুডেন্ট দেখেও হেলপাররা কখনও হাফ ভাড়া রাখে না। এরপরও কখনও ভাংতি না থাকায় দু’ এক টাকা কম রাখার কথা বললেও অনেক কথা শুনতে হতো। শুনেছি সরকার শিক্ষার্থীদের জন্য হাফ ভাড়ার নিরর্দেশনা দিয়েছে কিন্তু কার্যকর হতে কখনও দেখি না। এছাড়া এ নিয়ে কখনো অভিযানও চালাতে দেখিনি।  

শামসুন্নাহার নামে এক অভিভাবক জানান, আগের সময়ও শিক্ষার্থীদের কাছ থেকে হাফ ভাড়া নেওয়া হয়নি। কিছুদিন আগে জ্বালানি তেলের দাম বৃদ্ধির কারণে সাধারণ যাত্রীদের পাশাপাশি শিক্ষার্থীরাও বাড়তি ভাড়া দিয়েছে। অথচ সংশ্লিষ্টদের উচিত ছিল অন্তত এ সময়ে হলেও যাতে সকল গণপরিবহনে শিক্ষার্থীদের জন্য হাফ ভাড়া রাখে। এছাড়া আইনগত ভিত্তি না থাকলেও হাফ ভাড়া শিক্ষার্থীদের অধিকার।’

একই প্রসঙ্গে অভিভাবক মিনহাজুল কাইয়ুম বলেন, ‘শিক্ষার্থীদের থেকে ঢাকায় বিভিন্ন গাড়িগুলোতে হাফ ভাড়া নেওয়া হয়। তবে চট্টগ্রামে কখনও দেখিনি। শুধুমাত্র বিআরটিসির ১০টি স্কুলবাসে হাফ ভাড়া নেওয়া হয়। আবার এই ১০টা বাস কিন্তু চট্টগ্রামের সব রুটে চলাচল করে না। তাই এখানে নামে মাত্র কিছু শিক্ষার্থী উপকৃত হচ্ছে। গণপরিবহনে ভাড়া নিয়ে প্রতিদিন একই বিড়ম্বনার শিকার হয় শিক্ষার্থীরা। তাই যথাযথ কর্তৃপক্ষের কাছে আমাদের একটাই কথা ঢাকার মতন চট্টগ্রামেও যেন শিক্ষার্থীদের কাছ থেকে হাফ ভাড়া নেওয়া হয়।’

শিক্ষার্থীদের কাছ থেকে বাড়তি ভাড়া নেওয়ার বিষয়ে জানতে চাইলে ১০ নম্বর রুটের বাস চালক শফিকুল ইসলাম বলেন, ‘আমাদেরকে এই ধরনের কোনো নির্দেশনা দেওয়া হয়নি। এখন যেমন সরকার সাধারণ যাত্রীদের থেকে ভাড়া নেওয়ার তালিকা দিয়েছে। আমরা সেই নির্দেশনা অনুযায়ী ভাড়া নিচ্ছি। এক টাকা বেশিও না আবার কমও না। যেটা আমাদের ন্যায্য।’ সরকারি নির্দেশনা পেলে শিক্ষার্থীদের কাছ থেকে হাফ ভাড়া নিবেন এবং নিতে বাধ্য বলেও জানান তিনি। 

এ প্রসঙ্গে চট্টগ্রাম অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক (শিক্ষা ও আইসিটি) মু. মাহমুদ উল্লাহ মারুফ সিভয়েসকে বলেন, ‘পাবলিক বাসে...আসলে এটা তো আমার নলেজে নাই। এটা বিআরটিএ দেখবে। আমি আসলে বিষয়টা জানি না। এমনিতে আমাদের মাননীয় প্রধানমন্ত্রীর উপহারের যে বাসগুলো আছে এটাতে কোনো বাস ভাড়া বাড়েনি। এটা সেইম থাকবে। আগে ৫ টাকা ছিল এখনও ৫ টাকা থাকবে।’

এক প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, ‘না না না, সব রুট তো কাভার করা সম্ভব না। এটা তো শুধু স্কুল টাইমে চলে। নগরের স্কুলের নির্ধারিত সময়সূচিতে এ বাসগুলো চলাচল করে। এখানে বাড়তি ভাড়া আদায় করার সুযোগ নাই।’

অন্যদিকে বিআরটিএ সূত্রে জানা যায়, অর্ধেক ভাড়া নিয়ে বর্তমানে কোনো লিখিত প্রজ্ঞাপন জারি করা হয়নি। এমনকি মন্ত্রিসভায়ও কোনো ধরনের সিদ্ধান্ত হয়নি। যদিও সড়ক পরিবহন আইন সংসদে পাস হওয়ার পর আইনটির বিধিতে অর্ধেক ভাড়ার বিষয়টি রাখা ছিল। কিন্তু শেষ পর্যন্ত তা আর আলোর মুখ দেখেনি।

এ বিষয়ে জানতে চাইলে বিআরটিসি বাস ডিপোর ম্যানেজার মো. আব্দুল লতিফ সিভয়েসকে বলেন, ‘স্কুল শিক্ষার্থীদের জন্য আগে যা ভাড়া আছে এখনও তাই আছে। তাদের জন্য বিআরটিসির ১০টি গাড়ি দেওয়া আছে এবং ভাড়াও নির্ধারণ করা হয়েছে মাত্র ৫ টাকা। এছাড়া গাড়িগুলোতে নির্দেশনাও দেওয়া আছে হাফ ভাড়া দিয়ে চলবে। তবে পাবলিক গণপরিবহনে শিক্ষার্থীদের কাছ থেকে হাফ ভাড়া নেওয়ার লিখিতভাবে কোনো নিয়ম নেই।’

উল্লেখ্য, আজ বৃহস্পতিবার হাফ ভাড়া নিয়ে ছাত্রদের দাবি পর্যায়ক্রমে বাস্তবায়নের আশ্বাস দিয়েছেন স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান। এর জন্য টাস্কফোর্সও গঠন করা হবে। নির্ধারিত ভাড়ার চেয়ে বাসে অতিরিক্ত ভাড়া আদায় করলে সংশ্ষ্টিদের বিরুদ্ধে আইনি ব্যবস্থা নেওয়া হবে। বাসে শিক্ষার্থীদের জন্য অর্ধেক ভাড়া চালুর দাবির বিষয়ে পদক্ষেপের কথা উল্লেখ করে তিনি বলেন, ‘এই দাবি শিক্ষার্থীতের পুরনো, যা টাস্কফোর্সের মাধ্যমে পর্যায়ক্রমে বাস্তবায়ন করা হবে।’

এর আগে, ২০১৫ সালের অক্টোবরে বিআরটিসির কার্যালয়ে বাস ডিপো ব্যবস্থাপকদের সঙ্গে এক বৈঠকে সেতুমন্ত্রী ওবায়দুল কাদের বলেছিলেন, ‘আমি এই মুহূর্ত থেকে নির্দেশ দিচ্ছি, আরটিসির পাশাপাশি অন্যান্য পরিবহনেও শিক্ষার্থীদের কাছ থেকে হাফ ভাড়া নেবে। আর না নিলে দায়ী পরিবহনের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়া হবে।’ এরপর ২০১৮ সালে শিক্ষার্থীদের সড়ক আন্দোলনে তোলপাড় হয় গোটা দেশ। সে আন্দোলনের শিক্ষার্থীদের ৯ দফা দাবির একটি ছিল, ঢাকাসহ সারা দেশের শিক্ষার্থীদের জন্য হাফ ভাড়ার ব্যবস্থা করতে হবে। সে সময়ই মন্ত্রিসভায় প্রধানমন্ত্রী একটি খসড়া ট্রাফিক আইন অনুমোদন করলেও সেখানে হাফ ভাড়ার বিষয়টি ছিল না।

-সিভয়েস/এসআর/এমএম

সর্বশেষ

পাঠকপ্রিয়