Cvoice24.com

মাদ্রাসা শিক্ষা ‘নিষিদ্ধ’ হচ্ছে ভারতে

সিভয়েস২৪ অনলাইন প্রতিবেদক

প্রকাশিত: ১১:৪৯, ২৪ মার্চ ২০২৪
মাদ্রাসা শিক্ষা ‘নিষিদ্ধ’ হচ্ছে ভারতে

মাদ্রাসা শিক্ষা আইন ২০০৪ এর মাধ্যমে ভারতে মাদ্রাসা শিক্ষা ব্যবস্থা পরিচালিত হত। সারাদেশে ২০ লক্ষাধিক শিক্ষার্থী মাদ্রাসায় পড়াশোনা করে ধর্মভিত্তিক জীবিকার দিকে ধাবিত হত। তবে শুক্রবার (২২ মার্চ) ভারতের এলাহাবাদ আদালত মাদ্রাসা ও ধর্মভিত্তিক শিক্ষা ব্যবস্থাকে নিষিদ্ধ করেছে। আদালত বলেছেন, একটি নির্দিষ্ট ধর্ম অনুসারে পাঠপদ্ধতি শুধু শিক্ষার মানকে ব্যহত করে তা নয় বরং এটি ভারতের ধর্মনিরপেক্ষতাকেও চ্যালেঞ্জ করে।

যদিও জাতীয় নির্বাচনের আগে এমন পদক্ষেপকে অনেকেই ভাল চোখে দেখছেন না। এ রায়টি  নরেন্দ্র মোদির হিন্দু-জাতীয়তাবাদী সরকারের কাছ থেকে মুসলমানদের আরও দূরে সরিয়ে দিতে পারে বলে আশংকাও করছেন তারা৷

শুক্রবারের রায়টি উত্তর প্রদেশের মাদ্রাসা পরিচালনার জন্য ২০০৪ সালের আইন বাতিল করে জানায়, এটি ভারতের সাংবিধানিক ধর্মনিরপেক্ষতাকে লঙ্ঘন করে।  এবং এ সময় আদালত মাদ্রাসা শিক্ষার্থীদের প্রচলিত স্কুলে স্থানান্তর করার আদেশ দেয়।

এলাহাবাদ হাইকোর্টের এ আদেশ ২৫ হাজার মাদ্রাসায় ২০ লাখ ছাত্র এবং ১০ হাজার শিক্ষকের জীবনকে প্রভাবিত করবে। রাজ্যের মাদ্রাসা শিক্ষা বোর্ডের প্রধান ইফতিখার আহমেদ জাভেদ বলেছেন, ভারতের  ১২১ কোটি মানুষের মধ্যে এক পঞ্চমাংশ মুসলমান।

বিচারক সুভাষ বিদ্যার্থী এবং বিবেক চৌধুরী তাদের আদেশে লিখেছেন, ‘রাজ্য সরকার এটাও নিশ্চিত করবে যে ৬ থেকে ১৪ বছর বয়সী শিশুদের যথাযথভাবে স্বীকৃত প্রতিষ্ঠানে ভর্তি করা যাবে।

ভারতে এপ্রিল থেকে জুনের মধ্যে একটি সাধারণ নির্বাচন অনুষ্ঠিত হবে যেখানে মোদির ভারতীয় জনতা পার্টি (বিজেপি) ব্যাপকভাবে জয়ী হবে বলে আশা করা হচ্ছে। মুসলিম এবং অধিকার গোষ্ঠীগুলি বিজেপির কিছু সদস্য এবং সহযোগীদের বিরুদ্ধে ইসলাম বিরোধী বিদ্বেষমূলক বক্তৃতা এবং সতর্কতা প্রচার এবং মুসলিম মালিকানাধীন সম্পত্তি ধ্বংস করার অভিযোগ করেছে।

যদিও ভারতে ধর্মীয় বৈষম্যের কথা অস্বীকার করেছেন মোদি।

বিজেপি বলেছে, এ সরকার অনেক ঐতিহাসিক ভুলকে পূর্বাবস্থায় ফিরিয়ে আনছে, যার মধ্যে সম্প্রতি ১৯৯২ সালে ১৬ শতকের একটি মসজিদ ভেঙে ফেলার জায়গায় একটি হিন্দু মন্দিরের উদ্বোধন করার ঘটনাও রয়েছে ৷ অনেক হিন্দু বিশ্বাস করেন ওই মসজিদ ভগবান রাম যেখানে জন্মগ্রহণ করেছিলেন তা দখল করে মুঘল মাসক বাবর সেখানে মসজিদ গড়েছিলেন।

রাজ্য সরকার পরিচালনাকারী উত্তরপ্রদেশ বিজেপির মুখপাত্র রাকেশ ত্রিপাঠি বলেছেন, আদেশটি মাদ্রাসার বিরুদ্ধে নয় বরং আমরা মুসলিম শিক্ষার্থীদের শিক্ষার মান নিয়ে উদ্বিগ্ন। তিনি বলেন, ‘আমরা কোনো মাদ্রাসার বিরুদ্ধে নই তবে আমরা বৈষম্যমূলক শিক্ষা ও অনুশীলনের বিরুদ্ধে। এবং আমরা অবৈধ অর্থায়নের বিরুদ্ধে।’

এদিকে রয়টার্সের পক্ষ থেকে শনিবার (২৩ মার্চ) মোদির কার্যালয় আদালতের রায়ের বিষয়ে মন্তব্য চেয়ে একটি ইমেল করা হলে জবাব দেয়নি।

‘আমি ভীত’

বিজেপির সংখ্যালঘু শাখার জাতীয় সম্পাদক জাভেদ জানান,  একজন মুসলিম হিসেবে তিনি দলকেই বেশি গুরুত্ব দেন। শুক্রবারের আদেশের পর থেকে তিনি  মুসলমানদের কাছ থেকে অসংখ্য কল পাচ্ছেন।

তিনি বলেন, ‘কখনও কখনও এটা খুব কঠিন হয়ে যায়’। ‘আমাকে অনেক ভারসাম্য রাখতে হবে কারণ, একজন মুসলিম হওয়ার কারণে, পার্টি আমাকে মুসলিমদের কাছে পাঠায় যাতে তারা আমাদের জন্য ভোট দেয় এবং পার্টিতে যোগ দিতে রাজি হয়। আমি ভয় পাই এবং আমি যখনই কোন পাবলিক ইভেন্ট বা প্রোগ্রামে যাই তখন আমি ব্যক্তিগত নিরাপত্তা নিয়ে চলি।’

ফেডারেল সরকারের পক্ষে যুক্তি দেখিয়ে সুধাংশু চৌহান আদালতকে বলেছিলেন, ‘একটি নির্দিষ্ট ধর্মের ধর্মীয় শিক্ষা এবং ধর্মীয় নির্দেশনা স্কুল শিক্ষায় অন্তর্ভুক্ত করা যায় না এবং রাজ্য সরকারের ধর্মীয় অনুমতি দিয়ে সংবিধিবদ্ধ শিক্ষা বোর্ড তৈরি করার ক্ষমতা নেই।’

তিনি বলেছিলেন যে সরকার ২০২২ সালের মার্চে বন্ধ হয়ে যাওয়া একটি ফেডারেল নীতি পুনরুজ্জীবিত করার পরিকল্পনা করছে না যা গণিত ও বিজ্ঞানের মতো বিষয় শেখাতে মাদ্রাসাগুলোতে তহবিল সরবরাহ করে।

অন্যদিকে বিজেপির ত্রিপাঠী বলেছেন,  মুসলিমদের বিজেপি নেতাদের ভয় পাওয়ার কোনও কারণ নেই কারণ তারাও বিভিন্ন সরকারি কল্যাণমূলক কর্মসূচি থেকে অন্য নাগরিকের মত সমানভাবে উপকৃত হয়।

‘আমি হিন্দু এবং আমি প্রায়ই মুসলিমদের কাছে যাই এবং তাদের কাছ থেকে ভাল সমর্থন পাই। বাস্তবতা হল যে বিজেপি এবং সরকার শিক্ষার বিষয়ে গুরুত্ব দেয় এবং শিক্ষার মানের জন্য সর্বোচ্চ চেষ্টা করছে।’

অভিযোগ রয়েছে, বিজেপির ডি ফ্যাক্টো প্যারেন্ট অর্গানাইজেশন মুসলিম ভোট পাওয়ার জন্য ভারতের মুসলিম মাদ্রাসাগুলোর নেতৃত্বের পদে তাদের অনুগত মুসলিমদের বসিয়েছে।

জাভেদ বলেছেন, উত্তরপ্রদেশ সরকার জানুয়ারিতে মাদ্রাসার জন্য তহবিল কর্মসূচি বন্ধ করে দেয়, ফলে ২১ হাজার মাদ্রাসা শিক্ষক বেকার হয়ে পড়েন। এবার আদালতের শুক্রবারের আদেশ রাজ্যের সমস্ত মাদ্রাসার জন্য প্রযোজ্য।

আদালত তার আদেশের জন্য একটি সময়সীমা দেয়নি, তবে জাভেদ বলেছিলেন যে মাদ্রাসাগুলো এখনই বন্ধ হওয়ার সম্ভাবনা নেই। বিজেপি শাসিত উত্তর-পূর্বাঞ্চলীয় রাজ্য আসামও শত শত মাদ্রাসাকে প্রচলিত স্কুলে রূপান্তরিত করছে।

খবর: রয়টার্সের
ভাষান্তর: সিভয়েস অনলাইন

 

সর্বশেষ

পাঠকপ্রিয়