মালদ্বীপে ভারতবিরোধী মুইজ্জুর দলের নিরঙ্কুশ জয়

সিভয়েস২৪ ডেস্ক

প্রকাশিত: ১৫:০৮, ২২ এপ্রিল ২০২৪
মালদ্বীপে ভারতবিরোধী মুইজ্জুর দলের নিরঙ্কুশ জয়

মালদ্বীপের পার্লামেন্ট নির্বাচনে ভারতবিরোধী হিসেবে পরিচিত মোহামেদ মুইজ্জুর নেতৃত্বাধীন দল পিপলস ন্যাশনাল কংগ্রেস (পিএনসি) বেশ বড় জয় পেয়েছে। রোববার (২১ এপ্রিল) অনুষ্ঠিত নির্বাচনের ফলাফল দেখা যাচ্ছে, দেশটির সংসদের মোট আসন সংখ্যা ৯৩। এর মধ্যে ৮৬টির ফলাফল ঘোষণা করা হয়েছে। এতে পিএনসি ৬৬ আসনে জয় নিশ্চিত করেছে, যা সংখ্যাগরিষ্ঠতা অর্জনের জন্য যথেষ্ট।

মালদ্বীপের স্থানীয় সংবাদপত্র ‘মিহারু’র প্রতিবেদন অনুসারে এই নির্বাচনে ৪১ জন নারী প্রার্থী অংশ নেয়। তবে তাদের মধ্যে কেবলমাত্র তিনজন জয়ী হয়ে আসতে পেরেছেন আর তারা মুইজ্জুর দলেরই সদস্য।

এই নির্বাচনকে চীনের সঙ্গে দেশটির ঘনিষ্ঠ অর্থনৈতিক সহযোগিতা স্থাপনে প্রেসিডেন্ট মুইজ্জুর পরিকল্পনার একটি গুরুত্বপূর্ণ পরীক্ষা হিসেবে দেখা হচ্ছিল। এই পরিকল্পনার অংশ হিসেবে ছিল বিতর্কিতভাবে পুনরুদ্ধার করা জমিতে হাজার হাজার অ্যাপার্টমেন্ট নির্মাণের উদ্যোগ।

গত মেয়াদে পিএনসি ও তার মিত্রদের পার্লামেন্টে আসন ছিল মাত্র আটটি। যার কারণে দলটি ছিল কোণঠাসা অবস্থায়। যদিও গত বছরের সেপ্টেম্বরে অনুষ্ঠিত প্রেসিডেন্ট নির্বাচনে এই জোটের প্রার্থী হিসেবে জয়ী হয়েছিলেন মোহামেদ মুইজ্জু।

ফলাফল অনুসারে গত মেয়াদে ‘সুপার মেজরিটির’ তকমাধারী মালদ্বিভিয়ান ডেমোক্রেটিক পার্টি (এমডিপি) মাত্র ডজনখানেক আসন নিয়ে বেশ বেকায়দায়ই পড়েছে। এই দলটি ভারতপন্থি হিসেবেই বেশি পরিচিত যার নেতৃত্বে রয়েছেন সাবেক প্রেসিডেন্ট ইব্রাহিম মোহামেদ সলিহ।

এই নির্বাচনকে মালদ্বীপে ভারত ও চীনের প্রভাব বিস্তারের লড়াই হিসেবে দেখেছিলেন অনেকে। মালদ্বীপের পার্লামেন্ট নির্বাচনের বিশেষ গুরুত্ব ছিল আন্তর্জাতিক পর্যবেক্ষকদের কাছে। ভারতীয় পক্ষ মনে করেছিল, ভারতের সাথে দ্বিপক্ষীয় সম্পর্কের অবনতির ফলে নির্বাচনে মুইজ্জুর দল খারাপ করবে। কিন্তু বাস্তবে ভিন্ন চিত্র দেখা গেছে। অনেকেই বলছেন, মুইজ্জুর চীন-প্রীতির দিকেই ঝুঁকে তার দলকে ভোট দিয়েছেন মালদ্বীপের নাগরিকেরা।

এছাড়া বিশ্বের অনেক দেশের নজর ছিল এই নির্বাচনের দিকে। গত সেপ্টেম্বরেই ‘ভারতপন্থী’ হিসেবে বিবেচিত ওই দেশের সাবেক প্রেসিডেন্ট ইব্রাহিম মোহম্মদ সোলিকে হারিয়ে জয়ী হয়েছিলেন মুইজ্জু। কিন্তু পার্লামেন্টে সংখ্যাগরিষ্ঠতা ধরে রাখে সোলির দল এমডিপি। ফলে পার্লামেন্টে বহু সিদ্ধান্তই কার্যকর করতে পারেনি মুইজ্জুর সরকার। তাই এই ভোটে জিতে তারা মালদ্বীপের পার্লামেন্টেও নিরঙ্কুশ সংখ্যাগরিষ্ঠতা বজায় রাখতে চেয়েছিল।

কূটনৈতিক মহলের একাংশের মতে, এই নির্বাচন মূলত দু’টি কারণে আকর্ষণের কেন্দ্রবিন্দু হয়ে উঠেছিল। মুইজ্জুর ‘ভারতবিরোধী অবস্থান’ এবং ‘চীন ঘেঁষা নীতি’ মালদ্বীপের মানুষের কাছে কতটা গ্রহণযোগ্য তা পরখ করার একটা পরিসর তৈরি করছিল এই নির্বাচন।

মুইজ্জু ক্ষমতায় আসার পর ভারতের সাথে মালদ্বীপের দ্বিপক্ষীয় সম্পর্কের অবনতি হয়েছে। ইতোমধ্যে চীনের সাথেও ঘনিষ্ঠতা বাড়িয়েছেন মুইজ্জু। এমনকি, মালদ্বীপ থেকে ভারতীয় সেনাসদস্যদের সরানোর নির্দেশও দেন তিনি। শেষ পর্যন্ত ভারত সরকার মালদ্বীপ থেকে সেনাসদস্যদের সরিয়ে নেওয়ার প্রক্রিয়া শুরু করে। এই আবহেই এসে পড়ে  দেশটির পার্লামেন্ট নির্বাচন। মালদ্বীপের বিরোধী দলগুলো মুইজ্জু সরকারের ভারতবিরোধী অবস্থানকে তুলে ধরে নির্বাচনী প্রচারণায় অস্ত্র হিসেবেও ব্যবহার করে। কিন্তু তাতেও মইজ্জুর দলের পার্লামেন্টে নিরঙ্কুশ সংখ্যাগরিষ্ঠতা অর্জনে ঠেকাতে পারেনি তারা। 

সর্বশেষ

পাঠকপ্রিয়