চসিক নির্বাচনে ভোট দিবেন হিজড়ারাও!

সিভয়েস প্রতিবেদক

প্রকাশিত: ১১:৫৪, ২২ জানুয়ারি ২০২১
চসিক নির্বাচনে ভোট দিবেন হিজড়ারাও!

চট্টগ্রামে অন্তত ১৬৫ জন হিজড়া চসিক নির্বাচনে ভোট দিবেন।

২০২১ সালের ১৭ জানুয়ারি বাংলাদেশ নির্বাচন কমিশন ১১ কোটি ১২ লাখ ৮৪ হাজার ১৫৮ জনের যে ভোটার তালিকা প্রকাশ হয়েছে তাতে হিজড়ার সংখ্যা রয়েছে ৩৭৫ জন। কিন্তু চট্টগ্রাম সিটি করপোরেশন নির্বাচনে ১৯ লাখ ৩৮ হাজার ৭০৬ জন ভোটারের মধ্যে হিজড়ার সংখ্যা কত তার সুনির্দিষ্ট কোন তালিকা নেই। এখন প্রশ্ন উঠছে চট্টগ্রাম সিটির জনপ্রতিনিধি নির্বাচনে তৃতীয় লিঙ্গের ভোটাধিকার নিশ্চিত হবে কিনা? 

তবে চট্টগ্রাম আঞ্চলিক নির্বাচন অফিস সুনির্দিষ্ট করে হিজড়াদের নামের কথা বলতে না পারলেও নারী ও পুরুষ ভোটারের তালিকায় নাম রয়েছে বলে জানিয়েছে। অন্যদিকে চট্টগ্রাম মহানগরে থাকা হিজড়াদের নেতারা জানিয়েছেন, নগরের তিন এলাকায় হিজড়ার ভোট সংখ্যা ১৬৫। এদের মধ্যে যারা নারী যেসব হিজড়া পুরুষের মতো চলাফেরা করে তারা পুরুষ হিসেবে এবং যেসব হিজাড়া মেয়েদের মতো চলাফেরা করে তারা নারী হিসেবে ভোট দিবেন।

জানা যায়, পুরুষ ও মহিলার মতো তৃতীয় লিঙ্গের এ জনগোষ্ঠীও দেশের নাগরিক। এরপরেও নাগরিক অধিকার নিয়ে রয়েছে নানা সংশয়। রাষ্ট্রের নাগরিক হিসেবে তারা এতোদিন ভোটাধিকার প্রয়োগ করেছিলেন নারী ও পুরুষ হিসেবে। স্বতন্ত্র পরিচিতির জন্য ভোটারদের তথ্য সংগ্রহে নিবন্ধন ফরমের ১৭ নম্বর ক্রমিকে লিঙ্গ পরিচয় ছকে হিজড়া যোগ করা হয় গত ২০১৪ সালে। কিন্তু চট্টগ্রামে এখনো হিজড়ার আলাদা ভোটার সংখ্যা প্রকাশ করেনি চট্টগ্রাম আঞ্চলিক নির্বাচন কার্যালয়।

এ প্রসঙ্গে কোতোয়ালী এলাকার হিজড়া শেফালী সিভয়েসকে বলেন, ‘আমরা গতবারের জাতীয় নির্বাচন ও সিটি নির্বাচনে ভোট দিয়েছি। তবে নারী বা পুরুষ হিসেবে ভোট দিয়েছি। মানে যেসব হিজড়া পুরুষের মতো চলাফেরা করে তারা পুরুষ হিসেবে এবং যেসব হিজড়া মেয়েদের মতো চলাফেরা করে তারা নারী হিসেবে ভোট দিতো। কিন্তু আমাদের ভোটার আইডি কার্ডে হিজড়া পরিচয় দেয়ার কথা থাকলেও সে পরিচয় দেয়া হয়নি।’ 

আকবরশাহ এলাকার দায়িত্বে থাকা হিজড়া ফাল্গুনি বলেন, ‘আমাদের এখানে ৮০ জনের মতো হিজড়া আছে। তবে ভোটার কে কে হয়েছে তা আমরা জানি না। শুধু এটা জানি লাল দোকান এলাকার ৬ জন ভোটার হওয়ার জন্য আবেদন করেছে। কিন্তু তারা এখনো আইডি কার্ড পায়নি। তবে তাদের কাছে স্লিপ আছে।’

কতজন হিজড়া ভোটার আছে জানতে চাইলে আরেক হিজড়া নেত্রী সিনথিয়া বলেন, ‘আমরাতো চট্টগ্রামে তিন ভাগে থাকি। আমরা কোতোয়ালীতে থাকি, এছাড়াও বাকি দুইটা গ্রুপ পাহাড়তলী ও আকবরশাহতে থাকে। আমাদের এখানে ৬০ জন হিজড়ার মধ্যে ৪০ জন হিজড়া ভোটার হয়েছে। বাকিরা এখনো বয়সের কারণে ভোটার হতে পারেনি। এছাড়া বাকি দুইটা এলাকায় প্রায় ১২৫ জনের মতো ভোটার আছে।’

পুরো চট্টগ্রামে ১৬৫ জন ভোটার আছে কিনা জানতে চাইলে তিনি বলেন, ‘দেখেন, আমাদের শিক্ষার কোনো সুযোগ নেই। তাই আমাদের মধ্যে কয়েকজন ছাড়া আর কেউ লেখাপড়া জানে না। তাই আমাদের এ হিসেব রাখা সম্ভব না। তবে এটা বলতে পারি, পুরো চট্টগ্রামে প্রায় ৪৫০ জনের মতো হিজড়া আছে। ১৬৫ জন ছাড়া বাকি হিজড়ারা তাদের পরিবারের সাথে থাকে। তাই তাদের হিসেব আমাদের পক্ষে বলা সম্ভব না।’

চট্টগ্রামে হিজড়ার তথ্য হালনাগাদ না থাকা প্রসঙ্গে চট্টগ্রাম আঞ্চলিক নির্বাচন কর্মকর্তা মুহাম্মদ হাসানুজ্জামান সিভয়েসকে বলেন, ‘সংবিধানে আমাদের নাগরিকতা ও ভোটার বিষয়ে স্পষ্ট বলা আছে, ভোটার তালিকায় ধর্ম, জাত, বর্ণ, নারী-পুরুষ ভেদের ভোটার তালিকা বিন্যস্ত করে কোনো বিশেষ ভোটার তালিকা প্রণয়ন করা হবে না।’

হিজড়াদের আলাদা করে তালিকার করা প্রসঙ্গে জানতে চাইলে তিনি বলেন, ‘যারা বছর খানেকের মধ্যে তথ্য হালনাগাদ করেছে, তাদেরটা নতুনভাবে করা হয়েছে। তবে এরমধ্যে চট্টগ্রামে হিজড়া ভোটারের কোনো আলাদা তথ্য নেই।’

আগামী ২৭ জানুয়ারি চট্টগ্রাম সিটি করপোরেশনের মেয়র, সাধারণ কাউন্সিলর ও সংরক্ষিত কাউন্সিলর নির্বাচন অনুষ্ঠিত হবে। এতে লড়বেন ৭ জন মেয়র প্রার্থীসহ মোট ২২৩ জন কাউন্সিলর প্রার্থী। এ নির্বাচনে পুরুষ ৯ লাখ ৯২ হাজার ৩৩ জন ও নারী ভোটার ৯ লাখ ৪৬ হাজার ৬৭৩ জন মিলে ১৯ লাখ ৩৮ হাজার ৭০৬ জন ভোটার অংশ নিবে। ৭৩৫টি ভোটকেন্দ্রের ৪ হাজার ৮৮৬টি ভোটকক্ষে হিজড়ারা এবারও নারী ও পুরুষ সারিতে দাঁড়িয়ে নির্বাচনে অংশগ্রহণ করবেন।

সিভয়েস/এসবি

সম্পর্কিত বিষয়:

সর্বশেষ

পাঠকপ্রিয়